ধর্ম vs ‘গণতন্ত্র’-------------------------------------------- কুকুর মাতার কাছে তার সব সন্তানই সমান সে হলদে কালো যাই হোক এই হল তার মাতৃধর্ম । কিন্তু ভারত মাতার সব সন্তানেরা সমান অধিকার পাবে তো?আমি কারো ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত না দিয়ে জিঞ্জাসা করতে চাই ? হাজার হাজার কোটি কালো টাকার মালিকদের বিরুদ্ধে এফ আই আর হল না? কিন্তু একজন কবি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কবিতা লিখেছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে এফ আই আর হল?এ কোন দেশে আমরা বাস করছি ?
সোশ্যাল মিডিয়াই বুঝিয়ে দিচ্ছে, নিজের কথাটা বলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ,...
সোশ্যাল মিডিয়াই বুঝিয়ে দিচ্ছে, নিজের কথাটা বলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ,...
সোশ্যাল মিডিয়া নেহাতই একটা আয়না। যে আয়নায় দেখতে পাই, বাক্স্বাধীনতার বিকাশ ও শ্রীবৃদ্ধির নাম করে সেই স্বাধীনতার উপর কী ভয়ঙ্কর আক্রমণের তরবারি এই সমাজে নেমে আসছে।
তরুণ কবি, সমাজসচেতন, দ্রুত চলমান কবিমন। মানুষের দুর্গতি নিয়ে তৈরি হওয়া কবিতায় আবেগবিস্ফোরণ হয়। একটি কবিতা লেখার পর কবিতার প্রেক্ষিতটা কী, তা নিয়ে এক বিন্দু না ভেবে কেবল বিচ্ছিন্ন দু’একটি শব্দ নিয়ে এই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। প্রতিবাদী কবিতা, কিন্তু কীসের প্রতিবাদ তা না ভেবেই ‘এত প্রতিবাদ কেন’ প্রশ্ন খড়্গহস্ত হয়ে ওঠে?
কোনও প্রতিবাদী, কখন প্রতিবাদ করবেন, সেটা কি তাঁর নিজের আত্মপ্রকাশের অধিকার নয়? এ ক্ষেত্রে কবি না-হয় বার বার ধারালো কলমে সব রকমের মৌলবাদ ও অসহন বিষয়ে ঘৃণা ও যন্ত্রণা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু তা যদি না-ই হত? যদি কেউ অনেক কিছু সহ্য করতে করতে এক দিন ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার জায়গায় আসতেন? ‘তখন বলিনি তাই এখনও বলব না’ বলে বাধ্যত চুপ করে থাকতেই হত তাঁকে?
যে প্রতিবাদ যখন আগে হয়নি, কবি ভাববেন, থাক বাবা এটা লিখব না, চলচ্চিত্র পরিচালক ভাববেন, থাক বাবা, এ কাহিনি দেখাব না, ইতিহাস বা সমাজতত্ত্বের গবেষক ভাববেন, থাক বাবা এ ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করব না। এর থেকে বেশি অসহিষ্ণুতা, এর থেকে বেশি আত্ম-নিষেধাজ্ঞা (সেলফ-সেন্সরশিপ) আর কী হতে পারে?
যে প্রতিবাদ যখন আগে হয়নি, কবি ভাববেন, থাক বাবা এটা লিখব না, চলচ্চিত্র পরিচালক ভাববেন, থাক বাবা, এ কাহিনি দেখাব না, ইতিহাস বা সমাজতত্ত্বের গবেষক ভাববেন, থাক বাবা এ ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করব না। এর থেকে বেশি অসহিষ্ণুতা, এর থেকে বেশি আত্ম-নিষেধাজ্ঞা (সেলফ-সেন্সরশিপ) আর কী হতে পারে?
বড্ড সংবেদনশীল, আমাদের মতো বিরাট সংখ্যাগুরুর দেশে, সংখ্যালঘু-তোষণের রাজনীতি দিন এখন শেষ,তাই ভেবেচিন্তে পা ফেলা উচিত।
সংবেদনটা কোথায় যে শুরু কোথায় শেষ, ঠিক ধরতে পারব তো আমরা? আজ ত্রিশূল নিয়ে সংবেদন, যদি কাল খাঁড়া নিয়েও সংবেদন হয়? কোথায় থামতে হবে, জানব তো ঠিক?
শিবাজি ও মরাঠা পরাক্রম ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করব না, বহু বাঙালি মুসলিম তাতে প্রবল ক্ষুব্ধ সমালোচনা বলে? কিন্তু শিবাজি ও মরাঠা ইতিহাস তো এ দেশের ইতিহাসের মধ্যেই পড়ে? তাঁরা যদি মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে থাকেন, তাতে ইসলামের অপমান ধরে নিয়ে এই আলোচনা নিষিদ্ধ হবে?
দুশ্চিন্তা ????সহনশক্তি না বাড়ালে সভ্যতা কিন্তু দাঁড়াবে ??? আজ বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু শুনবে কি কেউ? রক্ষণশীল বা লিবারেলরাও কি মানবেন? না, সতর্কতার অজুহাতে লক্ষ্মণরেখার সওয়াল করবেন?
শিবাজি ও মরাঠা পরাক্রম ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করব না, বহু বাঙালি মুসলিম তাতে প্রবল ক্ষুব্ধ সমালোচনা বলে? কিন্তু শিবাজি ও মরাঠা ইতিহাস তো এ দেশের ইতিহাসের মধ্যেই পড়ে? তাঁরা যদি মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে থাকেন, তাতে ইসলামের অপমান ধরে নিয়ে এই আলোচনা নিষিদ্ধ হবে?
দুশ্চিন্তা ????সহনশক্তি না বাড়ালে সভ্যতা কিন্তু দাঁড়াবে ??? আজ বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু শুনবে কি কেউ? রক্ষণশীল বা লিবারেলরাও কি মানবেন? না, সতর্কতার অজুহাতে লক্ষ্মণরেখার সওয়াল করবেন?
ধর্মের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই ‘কিন্তু’ তুলে ধর্মের ‘ভাবাবেগ’ আহত হওয়ার প্রসঙ্গে চলে যান, ধর্মের নামে কিছু বললে উল্টো বিপদ হতে পারে এই যুক্তিতে চলে যান, তাঁরা আসলে বাক্স্বাধীনতা আটকানোতেই জোর জোগান শেষ পর্যন্ত!
আজও কবির বিরুদ্ধে এফআইআর-এর খবর শুনে,সমর্থন এগিয়ে দিচ্ছেন। ভুলে যাচ্ছেন যে, কোনও যুক্তিতেই মুক্ত কথাবার্তার পরিসরটা ছোট করা যায় না। কবিকে যদি লেখার সময় প্রতিটি শব্দ ভাবাবেগে আঘাত করছে কি না দেখে নিতে হয়, তবে সমাজ আর মুক্ত, গণতান্ত্রিক থাকে না।
আজও কবির বিরুদ্ধে এফআইআর-এর খবর শুনে,সমর্থন এগিয়ে দিচ্ছেন। ভুলে যাচ্ছেন যে, কোনও যুক্তিতেই মুক্ত কথাবার্তার পরিসরটা ছোট করা যায় না। কবিকে যদি লেখার সময় প্রতিটি শব্দ ভাবাবেগে আঘাত করছে কি না দেখে নিতে হয়, তবে সমাজ আর মুক্ত, গণতান্ত্রিক থাকে না।
মুক্ত সমাজের কাজই হল নিষেধাজ্ঞার ‘লাল লাইন’টা যথাসম্ভব সরানো। সংখ্যা বাড়ছে, ইসলামি মৌলবাদীদের দাপট বাড়ছে তাই আমি শরিয়তের পরতে পরতে অন্যায়ের কথা মুখেও তুলব না, এই ভাবে যাঁরা ভাবেন, বিপদ এড়াতে গিয়ে তাঁরা বিপদটাকে আরও ঘাড়ের কাছে নিয়ে আসেন। লাল লাইনটাকে একেবারে নাক অবধি টেনে আনেন। হিন্দুত্ববাদী বা ইসলামি মৌলবাদীদের খেলায় নিজেরাও অজান্তে খেলোয়াড় হয়ে যান।
অন্য ধর্মের মৃত নারীদের ধর্ষণ করে বোঝাও তুমি নিজে কত ধার্মিক, তাঁর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার অর্থ কি গোটা ধর্ম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা? যে কবি বলেন, মেয়েদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের হুমকি দিলে ধর্ষককে শাস্তি দেব, তাঁর লক্ষ্য কি ধর্মবিরোধিতা না ধর্মান্ধতা-বিরোধিতা? ধর্ম আর ধর্মান্ধতা কি আলাদা নয়, বিশেষত ভারতের ইতিহাসে? হিন্দু ধর্মের ধার্মিক হিন্দুরা নিজেরা কেন এগিয়ে এসে বলছেন না যে তাঁদের ঐতিহ্য বলে ‘জীবে প্রেম’-এর কথা, বলে ‘যত মত তত পথ’, বলে ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’, ....
নিজের ‘ভাবাবেগ’-এর কথা বলতে গিয়ে অনেকেই ভুলে যান, অন্যেরও ভাবাবেগ আছে। ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার প্রতীকে দূষণ ঘটলে রাগ-বিরক্তি হতে পারে। কিন্তু দেবতার বদলে মানুষকেই যাঁরা ‘ধর্ম’ ভাবেন, তাঁদেরও একটা ‘ভাবাবেগ’ আছে। নারীনির্যাতনের ধর্মবিলাস দেখে তাঁদেরও যন্ত্রণায় শরীর-মন অবশ হয়ে যায়, হয়তো কলম ধরে তাঁরা একটু বেশিই উগ্র হয়ে পড়েন। কবির বিতর্কিত শব্দবন্ধে অনেকে হুমকি আর রাগ দেখছেন, কিন্তু একটু অন্য ভাবে দেখলে ওর মধ্যে একটা গভীর যন্ত্রণাও কি টের পাওয়া যায় না?
ধর্ম না মানার অধিকারটাও কিন্তু একটা অধিকার। ধর্ম, অ-ধর্ম, অল্প-ধর্ম, সবই আছে, থাকবে। এই সব নিয়েই চলতে হবে। এই ‘বাক্স্বাধীনতা’র যুগ। সকলে কেমন সকলের কথা বলতে পারছে, সকলের কথাই কেমন সমান শ্রবণযোগ্য, সকলের কথাই কেমন যত দূর ইচ্ছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। প্রবল গণতন্ত্রের প্রকাশ। কিন্তু এই গত ক’দিনে একটা কুরে কুরে খাওয়া সন্দেহ পাকাপোক্ত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল। ‘প্রকাশ’টা আর যার-ই হোক, ‘গণতন্ত্র’-এর নয়।