Friday, 17 June 2016

কৃষ্ণ & রাধা

শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন ত্যাগ করার পরে শ্রীরাধার কী হয়েছিল?


রাধাকৃষ্ণের কাহিনিকে সর্বদাই অসম্পূর্ণ বলে মনে হয় কেন? কেন বার বার মনে প্রশ্ন জাগে, শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণের কাহিনি কি বৃন্দাবনেই শেষ? পুরাণ বা অন্য গ্রন্থাদি কী জানায় শ্রীরাধা সম্পর্কে? কৃষ্ণবিহনে তাঁর কী হল?
প্রথমেই বলে রাখা ভাল, কোনও প্রাচীন গ্রন্থেই শ্রীরাধাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। শশীভূষণ দাশগুপ্তের মতে, শ্রীরাধা অনেক পরের কল্পনা। শ্রীময়ীর চরিত্রে একদিকে যেমন মিশেছে পদাবলির কবিদের মরমিয়া প্রেম, তেমনই অন্যদিকে এতে পৃক্ত হয়ে রয়েছে সুফি সাধকদের মর্মভাবনাও। আবার তাতে মিলেমিশে গিয়েছে লোকজীবনের সুখ-দুঃখ। এই সব একাকার হয়েই জন্ম দিয়েছে শ্রীরাধার মতো এক আশ্চর্যময়ীর। তিনি একদিকে যেমন হ্লাদিনীশক্তির প্রকাশ, তেমনই অন্যদিকে তিনি মূর্ত প্রেম।
এসব সত্ত্বেও রাধাকৃষ্ণের কাহিনিকে সর্বদাই অসম্পূর্ণ বলে মনে হয় কেন? কেন বার বার মনে প্রশ্ন জাগে, শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণের কাহিনি কি বৃন্দাবনেই শেষ? বৈষ্ণব কবিরা অবশ্য এমন কথা মানতে নারাজ। কৃষ্ণের মথুরা গমনের পরে তাঁরা রাধার চিত্তে ভাবসম্মিলনের কথা বার বার লিখে গিয়েছেন। কিন্তু সে তো কবিকল্পনা। পুরাণ বা অন্য গ্রন্থাদি কী জানায় শ্রীরাধা সম্পর্কে? কৃষ্ণবিহনে তাঁর কী হল?
কৃষ্ণ মথুরা যাওয়ার আগে রাধাকে কথা দিয়েছিলেন, তিনি ফিরে আসবেন। কিন্তু সেই কথা কি আর রাখা হয়নি? অপেক্ষায় অপেক্ষায় কেটে গিয়েছিল কি শ্রীরাধার জীবন? মথুরায় কৃষ্ণ রুক্মীনিকে বিবাহ করেন। তিনি বিদর্ভ রাজকন্যা। ছোটবেলা থেকেই রুক্মীনি কৃষ্ণের কথা শুনে এসেছিলেন, তাঁর প্রেমে পড়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বিবাহ স্থির হয় রাজা শিশুপালের সঙ্গে। রুক্মীনি কৃষ্ণকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেন তাঁকে উদ্ধার করতে। কৃষ্ণ আসেন এবং রুক্মীনিকে হরণ করে বিবাহ করেন।
মহাভারতের এই কাহিনি থেকে পরে একটা প্রশ্ন উদিত হয়, যদি কৃষ্ণের মনপ্রাণ জুড়ে শ্রীরাধা বিরাজ করে থাকেন, তবে কীভাবে তিনি রুক্মীনিকে বিবাহ করতে পারেন? মজার ব্যাপার, ‘মহাভারত’-এ কোথাওই শ্রীরাধার নামোল্লেখ পর্যন্ত নেই। কিন্তু গণচিত্তে রাধাকল্পকে বিচার করলে এমন কিছু বিষয় উঠে আসে, যার মানে বোঝা সত্যিই দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। সেগুলি এই প্রকার—
• শ্রীরাধার জন্মদিন ‘রুক্মীনি অষ্টমী’ হিসেবে পালিত হয়।
• রুক্মীনিকে রাধারই আর এক রূপ বলে অনেকে মনে করেন।
এখান থেকে মনে হতেই পারে, রাধা আর রুক্মীনি একই চরিত্র। রুক্মীনি রাধারই আর এক রূপ। বহু পুরনো মন্দিরে কৃষ্ণ ও রুক্মীনির মূর্তি রয়েছে, যার সঙ্গে রাধা-মূর্তির কোনও পার্থক্যই নেই। ‘মহাভারত’-এ রাধার উল্লেখ না থাকলেও এক গোপিনীর কথা রয়েছে, যিনি বৃন্দাবনে কৃষ্ণের প্রিয়তম সহচরী ছিলেন। তিনিই কি রুক্মীনি ওরফে রাধা? এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে, রুক্মীনি রাজকন্যা আর রাধা সাধারণ গোপবালা। তাঁরা এক হন কী করে? এর উত্তর ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন পুরাণে। এখানে একটি আশ্চর্য গল্প রয়েছে। রাক্ষসী পুতনা নাকি শিশু রাজকন্যা রুক্মীনিকে হরণ করে। কিন্তু রুক্মীনির ওজন অলৌকিকভাবে বেড়ে যায়। পুতনা তাঁকে একটি পদ্মফুলের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। তখনই বৃষভানু তাঁকে খুঁজে পান এবং রাধা হিসেবে পালন করতে থাকেন। কৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে যাওয়ার পরে বিদর্ভরাজ হারিয়ে যাওয়া কন্যার সন্ধান পান এবং তাঁকে তাঁর গৃহে নিয়ে য়ান। এই কাহিনি মানলে, রাধাই রুক্মীনি। এবং কৃষ্ণ তাঁকেই বিবাহ করেন।
এই কাহিনি অসম্ভব তৃপ্তি দেয়। কারণ, তত্ত্ব অনুসারে রাধাই কৃষ্ণের শক্তি। তাঁকে হারিয়ে কীভাবে থাকবেন পুরুষোত্তম? কোথাও তো মিলতে হবেই তাঁদের!
 

Wednesday, 1 June 2016

নরীর...

বর্ষা
 মেঘে মেঘে বর্ষা নেমেছে মেঘনাদ
গম্ভীরে টলমল সজল আকাশমেঘে মেঘে বর্ষা নেমেছে 
গম্ভীরে টলমল সজল আকাশচোখ

বৃষ্টি এল 
রাস্তার ধুলো ভিজে গেছে 
বাড়িঘর গাছপালা সব পথঘাট ভিজে গেছে 
এখন আকাশটা রক্তশূন্য


১) ব্রেস্ট আয়রনিং- নামের মধ্যেই লুকিয়ে যন্ত্রণা। ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বেশকিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে মেয়েদের সঙ্গে এটাই করা হয়। পাথর, হাতুড়ি বা খুন্তি গরম কয়লার উপর রেখে তারপর সেটাই চেপে ধরা হয় বয়ঃসন্ধিকালের কোনও মেয়ের স্তনের উপর। কারণ এর ফলে ব্রেস্ট টিস্যুগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে কোনও মহিলার স্তন যদি আর বৃদ্ধি না পায়, তাহলেই দেশে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে। আর এই জঘন্য কাজটা করে থাকে মেয়ের বাবা-মায়েরাই।
২) বিটিং সেসন-  ব্রাজিল সহ আরও কয়েকটি দেশে কোনও মহিলাকে প্রকাশ্য রাস্তায় নগ্ন করে মারা হয়। মার চলতেই থাকে যতক্ষণ না সেই মহিলাটি জ্ঞান হারাচ্ছে বা মারা যাচ্ছে। যদি সেই মহিলাটির অজ্ঞান অবস্থা থেকে আবার জ্ঞান ফিরে আসে, তাহলে তাকে বিয়ের জন্য উপযুক্ত ধরা হয়।
৩) মুসলমানি- সোমালিয়া ও মিশরে এখনও এই রীতি প্রচলিত। মেয়েদের সতীত্ব ধরে রাখার জন্য ছোট বয়সেই জোর করে এটি করা হয়। এমনকী তাদের অজ্ঞানও করা হয় না।
৪) টুথ চিজেলিং- সুমাত্রার মেনতাওয়াই উপজাতির মানুষ বিশ্বাস করে তীক্ষ্ণ দাঁতযুক্ত মহিলারা অনেক বেশি আকর্ষণীয় ও তাঁদের শরীরের সঙ্গে আত্মার যোগ বেশি। সেই কারণে মেয়েরা একটু বড় হওয়ার পর জোর করে তাদের দাঁত ঘষে দেওয়া হয়। ধারালো ব্লেড দিয়ে যখন এই কাজটি করা হয়, তখন তাদের অজ্ঞান করা হয় না।
৫) জোর করে ট্যাটু- প্যারাগুয়ে ও ব্রাজিলের কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে জোর করে মহিলাদের সারা গায়ে ট্যাটু করে দেওয়া হয়। যার মধ্যে পাকস্থলী, স্তন ও পিঠে ট্যাটু করানো বাধ্যতামূলক।
৬) পাত্রী অপহরণ- রোমানিয়াতে কোনও মেয়েকে যদি কোনও পুরুষ অপহরণ করে ৪-৫ দিন নিজের কাছে রেখে দিতে পারে, তাহলেই সেই মেয়ে তার। তাকে বিয়ে থেকে যথেচ্ছভাবে 'ভোগ করার অধিকার' পেয়ে যাবে ওই পুরুষ।
৭) জোর করে খাওয়ানো- মরিশানিয়েতে বিশ্বাস করা হয় বউ যত বেশি মোটা হবে ততই ভাগ্য খুলবে। সমৃদ্ধি আসবে। আর সেই কারণে সেদেশের তরুণীদের জোর করে খাওয়ানো হয়। দিনে প্রায় ১৬০০০ ক্যালোরি খেতে বাধ্য করা হয়। যাতে তাদের জন্য ভালো বর পাওয়া যায়।
8) কান্নার বিয়ে- দক্ষিণ-পশ্চিম চিনের সিচুয়ান প্রভিন্সে এক অদ্ভুত রীতির চল রয়েছে। তুজিয়া সম্প্রদায়ের এই রীতিকে বলা হয় জুয়ো ট্যাং। এই রীতি অনুসারে প্রত্যেক অবিবাহিত মেয়েকে বিয়ের আগের একমাস প্রতিদিন রাতে নিয়ম করে কাঁদতেই হবে। আর যদি কেউ কাঁদতে না পারে, তবে তাঁকে তাঁর মা মারধর করবে। যাতে সে বাধ্য হয় কাঁদতে।
সত্যিই বদলে গিয়েছে সমাজটা। বড্ড বদলে গিয়েছে। চারপাশে সারাদিন শুধু যৌনতার পরশ! উত্তুরে হাওয়ার দেখা মিলল কী মিলল না কে জানে? কিন্তু এ শহরের রাস্তায় একবার বেরিয়ে পড়লে, যৌনতার সুড়সুড়িতে আপনার শরীরে কিঞ্চিত শিহরণ উঠবেই। মেয়েরা আজকাল আর সুন্দরী হতে চায় না বোধহয়। তাঁদের 'সেক্সি' বা 'হট' হতে হবে। অথবা ওর সেই একই আছে। আমরাই (পুরুষরা) আমাদের চাহিদা অনুযায়ী ওদের গড়ে নিচ্ছি প্রতিনিয়ত। সাধারণত, সিনেমাই আমাদের দেশের, আমাদের সমাজের ফ্যাশন ঠিক করে দেয়। অমুক সিনেমায় তমুক নায়িকা ওটা পরেছিল, তাই তো আমাকেও পরতে হবে। অথবা অমুক টেলিভিশন সিরিয়ালের তমুক অভিনেত্রী ওই পোশাকটা পরেছিলেন। তাই আমাকেও পরতে হবে। একই পুরুষদের ক্ষেত্রেও। শাহরুখ, সলমন, বরুণ ধাওয়ানরা যা পরেন, সেটাই নকল করে আম-সাধারণ। আর সেই সুযোগটাই নেয় পুরুষরা। পোশাকএমনভাবেই তৈরি হয়, যা শুধু সুন্দরী করে তোলে না নারীকে। করে তোলে 'হট' বা 'সেক্সি' জাতীয় কিছু।
কিন্তু সিনেমার নায়িকারা যে পরিবেশ, পরিস্থিতিতে চলেন ফেরেন, আমার, আপনার ঘরের মেয়েরা আর সেই পরিবেশ পরিস্থিতি পায় কোথায়! করিনা কাপুর যে পোশাক পরে যাদের মাঝে হাঁটেন, মালদার কাকলি বা নদীয়ার সঙ্গীতা তো সেই পোশাক পরার পর ওই পরিবেশ বা পরিস্থিতিটা পায় না। তাই সমাজে মহিষাদলের খবর রোজই পাওয়া যায়। কামদুনির খবর পাওয়া যায়। এগুলো পুরনো হয়ে গেলে ফের নতুন কোনও খবর। না, ডিমান্ড আপনার এই খবরের যতই থাকুক, সাপ্লাই লাইন রেডি! এই সব বিষয়ে কথা বলতে গেলে অনেক নেতামন্ত্রীদের বা সমাজের নানা স্তরের বিশিষ্টরা প্রায়ই বলেন একটা কথা। মেয়েদের ছোট পোশাকই নাকি সব সমস্যার মূল। যেভাবে আমিও শুরুতে বলেছি কথাগুলো। মেয়েরা ছোট পোশাক পরে, না উত্‍সাহিত করলে পুরুষ তো ভেজা বিড়াল। না, না, মাছ উল্টে খাওয়া তো দূরের কথা, শুঁকেও দেখবে না। পাহাড়া দেবে! তাই ঢুকে পড়ি মূল প্রসঙ্গে। বলতে চাইছি যেটা-

  সমস্যা একটাই। পুরুষের মনে। পুরুষের চোখে। পুরুষের জন্ম-জন্মান্তর ধরে গড়ে ওঠা অভ্যাসে! কেন বলছি? কারণ, অনেক। আপাতত একটা উদাহরণ দিয়ে, সেটা নিয়েই কথা বলতে চাই। যদি আপনি এই কলকাতা শহরের রাস্তায় চলেন, তাহলে এই বিজ্ঞাপনটা বারবার নজরে পড়বে। যে ছবিটা উপরে রয়েছে। অন্তর্বাসের। ছেয়ে গিয়েছে চারিদিক। (এছাড়াও হাজারো কোম্পানির হাজারো বিজ্ঞাপন রয়েছে/কোম্পানিটা বিষয় নয়/ভাবনাটা বিষয়) আপনার এটা দেখে খারাপ লাগতে পারে। আপনার এটা দেখে ভালো লাগতে পারে। আবার আপনার এটা দেখে কিছুই মনে না হতে পারে। খুব সাধারণ বিষয় হতে পারে। কেন দাদা? পুরুষের শরীর কী শুধুই দেখানোর? নারীকেই বারবার কাঁধে হাত দিয়ে অন্তর্বাসের ফিতে ঠিক করতে হবে? নারীকেই চিরকাল মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করার আগে দেখে নিতে হবে, ওর স্কার্টটা বড্ড ছোট হয়ে গেল না তো? নারীকেই চিরকাল পোশাকটা পরে বুঝে নিতে হবে, ওটা ট্রান্সপারেন্ট (স্বচ্ছ) হয়ে গেল না তো? গা দেখা যাবে না তো? পুরুষের শরীরের দামই নেই! অথবা গঙ্গার জলের মতো? এত পবিত্র যে, সব খুল্লামখুল্লা!
এই যে সারাদিন শহরের মেয়েরা রাস্তার বেরিয়ে পড়ে, বারবার বিরাট বড় বড় হোর্ডিংগুলো দেখছে, ওরা কোথায় বলল যে, পুরুষের এই ছোট পোশাকই মেয়েদের উত্‍সাহিত করছে? মেয়েরা কামদুনির রাস্তায় কটা ছাত্রকে ফেরার পথে তৈরি হওয়া কারখানায় নিয়ে চলে গেল! মহিষাদলে কটা ছাত্র মেয়েদের লালসার শিকার হল? অদ্ভূত নিয়ম যে! মেয়েদের বেলায় পোশাকই যত নষ্টের মূল। আর ছেলেদের বেলায় পোশাক? সেটা কী? খায় না মাথায় দেয়! লজ্জা তো নারীর ভূষণ। পুরুষের ভূষণ তো নির্লজ্জ হওয়া! ভালো সমাজ। ভালো। ঠিক পথে যাচ্ছো এগিয়ে। সবে তো কোমরের সামান্য নিচেই পোশাক নামিয়েছো। নগ্ন হতে এখনও অনেক বাকি! আসলে ওদের কে বোঝাবে - 'হতভাগা', লজ্জা শরীরে হয় না। লজ্জা হয় মনে। অন্তর্বাস নামাতে নামাতে মন বড় 'নিচ'-এ নেমে গিয়েছে। এত 'নিচ' থেকে আর ওঠা সম্ভব নয়। তাই, দে গালাগাল নারীর পোশাক নিয়ে।