ময়ুরের চোখের জলে ময়ুরী গর্ভবতী হয় শুনে আমরা প্রাণ খুলে রঙ্গ রসিকতা করলাম।( ময়ূরের চোখের জলে ময়ূরী গর্ভবতী হয়, এমনটা নাকি লোকসমাজের জ্ঞান থেকে পাওয়া যায়,-দর্শন ও শ্রবণ হইতেই সন্তানলাভ হইত' , ভার্জিন মেরির গল্প আমরা ঠইকই জানি।।)
কেন? কারণ আমরা জানি, এটা অ্যাবসার্ড। কেন অ্যাবসার্ড? কারণ আমরা জানি প্রেগন্যান্ট হবার জন্য ডিম্বানু শুক্রানুর মিলন প্রয়োজন।
ময়ুরের যেহেতু পুং স্ত্রী আছে, তাই পুং দেহ থেকে স্ত্রী দেহে শুক্রানু যায় এবং এই গমনের জন্য যৌনমিলনের প্রয়োজন পরে।
এই গমনের পথ খাদ্য গমনের পথ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। একটি পরিপাকতন্ত্র আরেকটি জননতন্ত্র। ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই জ্ঞানটা মানুষের জানার ইতিহাসে খুব বেশি পুরনো নয়। এই জানাটার নাম বিজ্ঞান।
বিজ্ঞান। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ভুল ভ্রান্তি পেরিয়ে মানুষ এই জ্ঞান আয়ত্ব করেছে। এবং হ্যাঁ, ইউরোপের মানুষরাই এই জ্ঞান আয়ত্ব করে প্রথমে। আমরা জানতে পারি ইংরেজ আমলের শিক্ষায়।
আর হ্যাঁ, ময়ুর দেখে ভেবলে গেছিল ডারউইন স্বয়ং। ভেবেছিল, বিশাল ল্যাজওয়ালা এই পাখিটা বিলুপ্ত না হয়ে টিঁকে গেল কী করে! তাই ময়ুর বিশাল ল্যাজ বিপুল দেহভার নিয়ে যৌনমিলন করতে পারবে না, ব্যালেন্স রাখতে পারবে না, কমন সেন্স থেকে যদি এমন মনে আসে, তা কি একেবারেই অ্যাবসার্ড? অ্যাবসার্ড তখনই যখন আমাদের কমন সেন্স-এর মধ্যে ঐ বিজ্ঞান-সেন্সটা ঢুকে যায়।
কমন-সেন্স এ ঐ বিজ্ঞান মনস্কতা ঢুকলে তখনই বোঝা যায়, ময়ুর-ময়ুরীও যৌন মিলন করতে, হ্যাঁ, বাধ্য। কীভাবে ময়ুরী প্রেগন্যান্ট হয় তা সম্যক না জানলেও চলে, তাতেও একথা মনে আসে না, যে, ময়ুরী এভাবেও প্রেগন্যান্ট হতে পারে, ওভাবেও প্রেগন্যান্ট হতে পারে।
আচ্ছা, ময়ুর বাদ দিলাম। এবার পাওয়ার গ্রিড নিয়ে আসা যাক।
কারণ আমার মতে নিজেদের যাচাই করা যায় কেবলমাত্র অপ্রিয় আয়নায়।
যখন বলা হয়, গ্রামীন বিদ্যুদায়নের জন্য হাই ভোল্টেজ সংবহন লাইনের দরকার নেই, বিতরণ লাইনই যথেষ্ট, তখন যদি ইলেকট্রিক্যাল জানা বা ইলেকট্রিক্যালে কাজ করা মানুষরা রঙ্গ রসিকতা করে?
যখন বলা হয়, পাওয়ার গ্রিডের তড়িত-চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে আশেপাশের গ্রামের মহিলারা বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে বাচ্চাদের ক্যান্সার হতে পারে, এ কথা শুনে যদি গবেষকরা হাসে?
এসএফ৬ দূষিত গ্যাস শুনে যদি রসায়ন জানা লোকেরা হাসে, তাহলে?
তখন কী বলা হবে?
সেই হাসি রঙ্গ রসিকতাগুলোকে কি বলা যেতে পারে সায়েন্টিজম? এলিটিজম? ইউরোসেন্ট্রিজম? ক্যাপিটালিজম? মডার্নিজম?
লোক সমাজের জ্ঞান থেকে যা পাওয়া যায় না, তা শুনব না?
নাকি কষ্ট করে হলেও সেগুলো বোঝার চেষ্টা করা? যে যে থিওরাইজেশন ওগুলো বোঝার চেষ্টার মানসিক প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে, সেগুলো পাশে সরিয়ে রেখে?
যদি তা না করি?
তাহলে আজ না হোক কাল ময়ুর করে না শুনলেও অ্যাবসার্ড মনে হবে না। এইরকম আরো আছে।যেমন, পরিবেশ দূষণের জন্য ভূমিকম্প হয়। পশুপাখিদের ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করে ভূমিকম্পের পূর্বঘোষণা সম্ভব। যে দেশের নেতারা বলে গরু অক্সিজেন ছাড়ে সে দেশে এসব চিন্তা তো স্বভাবিক.. .বিজ্ঞানকে এখানে থোড়াই পাত্তা দেওয়া যায়?
আমারমত, বাঘ নয়, গরুই আমাদের জাতীয় পশু হওয়া উচিৎ। দেশের উচ্চ ন্যায়লয়ের প্রধাণ বিচারপতির বিশ্লেষণী ক্ষমতা দেখে আমার মনে হয়েছে গরুই আমাদের বেশী ভাল represent করে। একসময় বাঘের কদর ছিল। তখন বাঘের মত বিচারপতিরা ছিলেন......
No comments:
Post a Comment