Saturday, 28 October 2023

লক্ষ্মীর বাহন কি শুধু মাত্র পেঁচা?

বাংলার সব পূজা উৎসবে কিছু ব্যাতিক্রম ঘটনা দেখা যায়।

যেমন রামকানালী, গঙ্গাজলঘাটিতে লক্ষী পূজাতে পূজা হয় গজলক্ষ্মীর। তবে এই পুজোর প্রচলন হয়েছিল প্রায় ১৪০ বছর আগে। তখন বাঁকুড়ার বেশ কিছু জায়গায় হাতি আক্রমণ করত প্রায়শই, প্রচুর শস্যহানি হতো। তখন তাই গ্রামবাসীরা গজলক্ষ্মীর পূজা করে। এখানে লক্ষ্মীর বাহন রূপে পেঁচা নয় হাতিকে রেখে পুজো করেন। সকলের কাছে তাই তিনি গজলক্ষ্মী।


এদিকে হিন্দু পৌরাণিক গল্প, গজলক্ষ্মী সমুদ্র মন্থনের সময় আবির্ভূত হয়েছিলেন । তিনি ইন্দ্রের হারানো সম্পদ এবং ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছিলেন। তিনি দেবীর রূপ যিনি পশু সম্পদ এবং সম্পদের অন্যান্য প্রতীক যা শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে।
তবে সেক্ষেত্রে কিন্তু মূর্তি ফারাক আছে।
দেবীর পায়ের কাছে দুটি সিংহ আছে, আবার দুটি হাতি তাকে জীবনদানকারী জল দিয়ে স্নান করাছে এবং তার বাম এবং ডান পাশে দুটি মহিলা পরিচারক চামর ধরে আছে।

তবে গুপ্ত রাজা বৈষ্ণব ছিলেন এবং দেবী লক্ষ্মীকে সর্বোচ্চ সম্মান করতেন।তাদের শাসনামলে বেশিরভাগ মুদ্রায় দেবী লক্ষ্মী সিংহবাহিনী হিসাবে দেখা যায়।গুপ্ত শাসক প্রকাশ দিয়ার শাসনামলের মুদ্রায় গরুড়ধ্বজা এবং উল্টোদিকে লক্ষ্মী রয়েছে

Friday, 27 October 2023

কলিকাতার গয়না বাড়ি

কোলকাতার গহনা বাড়ি চেনেন??

বামাচরণ ভড় ঠাকুরবাড়ি গয়না বাড়ি হিসেবে পরিচিত।উত্তর কলকাতার নীলমণি সরকার লেনে বামাচরণ ভড়ের বসতবাড়িকে ব্রজকিশোর ঠাকুরবাড়ি বলে চেনে । সরু গলি, বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, কী অপূর্ব স্থাপত্য কারুকার্য অপেক্ষা করছে এই বাড়ির ভেতরে।


ইংরেজ আমলে বামাচরণ ভড় এক সফল ব্যবসায়ী। বামাচরণের জন্ম ১৮৫১ সালে। তিনি কলকাতার বাসিন্দা ছিলেন না। ইংরেজদের পৃষ্ঠপোষকতায় কলকাতা তখন উদীয়মান নগরী, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের পীঠস্থান হয়ে যখন ওঠেছে। তখন এ শহরে বামাচরণ এসে ছিলেন এক ভাগ্যান্বেষী হিসেবে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান, পেটের দায়ে এসেছিলেন কোলকাতায়। কলকাতায়, আর দশজন শ্রমিকের মতো তিনি কাজ শুরু করেছিলেন।

কলকাতায় এসে প্রথমে বামাচরণ এক পোশাক তৈরির কারখানায় শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন । এই সংস্থা মূলত ইওরোপীয় পোশাক তৈরি করত। অসম্ভব বুদ্ধিমান ও পরিশ্রমী বামাচরণ ছিলেন। তিনি ব্যবসার যাবতীয় বিষয় করায়ত্ত করলেন। পরে তিনি কলকাতার এক পোশাক প্রস্তুতকারক ইংরেজ কোম্পানির অংশীদার হয়ে বসলেন। আর এই কোম্পানীর মালিক বিলেতে ফিরে গেলেন, পুরো ব্যবসা মালিক হয়ে বসেন বামাচরণ।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ইংরেজদের বোয়েরের প্রথম যুদ্ধ চলেছিল,২০শে ডিসেম্বর ১৮৮০ থেকে ২৩শে মার্চ ১৮৮১ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় যুদ্ধ চলেছিল,১১ই অক্টোবর ১৮৯৯ থেকে ৩১শে মে ১৯০২ পর্যন্ত।এই যুদ্ধে জড়িয়ে গেল এক বাঙালির ব্যবসায়ী বামাচরণ ভড় নাম।বোয়েরের যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী ইংরেজ সৈন্যদের সামরিক পোশাক সাপ্লাই করেছিলেন তিনি।

তৎকালীন ঔপনিবেশিক কলকাতায় মতিলাল শীল,গোকুল মিত্র, নরসিংহ দাঁ-এর মতো কৃতি বাঙালি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছিলেন,বামাচরণ ভড়। তিনি সামরিক পোশাকের ব্যাবসা নাম,যশ,খ্যাতি করেছিলেন।ব্যাবসা যখন মধ্যগগনে, বামাচরণ ভড় তার নীলমনি সরকার লেনের বসতবাড়িতে স্থাপন করলেন গৃহদেবতা রাধা মাধবের মন্দির। তাঁর মতে কৃপায় আজ এই তার এই বিশাল প্রতিপত্তি,তাঁকে তিনি কিভাবে অস্বীকার করেন।


যাইহোক ১৮৬৫ সালে তৈরি লাল ইটের বাড়িটি দোতলা। তৎকালীন প্রচলিত জমিদার রীতিতে ইট, কড়িবরগা, চুন-সুরকি নির্মিত বাড়িটি দেড়শ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় অবিকল।

দেড়শো বছর অতিক্রান্ত লাল রঙা বাড়িটার ভিতরে প্রবেশ করলেই বিস্মিত হতে হয় আজকে ও।বাইরে থেকে বিশেষত্বহীন বহিরঙ্গের বাড়িটির অন্দরের শোভা বর্ধন করেছে গথিক আর মুঘল স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণে তৈরি একাধিক আর্চ। বিম আর কলাম ধরে রেখেছে বাহারি পেনডেন্টিভ। খড়খড়িযুক্ত বারান্দা, তাতে লোহার রেলিং আর মাথায় আর্চ ছাদের পাঁচিলের কারুকার্যও অনবদ্য। ছাদের আর্চগুলিতে দেখা যায় আংটায় আটকানো পর্দার ঝালরের প্যাটার্ন। প্রাচীনত্বের স্পর্শ এখনো ধরে রেখেছে কাঠের রেলিং-যুক্ত মার্বেল পাথরের সিঁড়ি।।এক অসাধারণ স্থাপনা মুগ্ধ হতে বাধ্য করবে সবাইকে ।
এই বাড়ির বাহারি নাম গয়নাবাড়ি।সেই কোন কালে হয়তো বাড়ির দেওয়ালে,খোদিত নক্সার প্রাচুর্যতার কারণেই এহেন নাম ভালোবেসে রেখেছিল মানুষরা ।লোকমুখে গয়না বাড়ি নামটি পরিচিত হয় পরে।


অষ্টনায়িকা_দুর্গা"।

"অষ্টনায়িকা_দুর্গা"।

বাঁকুড়া জেলার অযোধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত
আমরাল গ্রামের পদ্মাসনা চতুর্ভূজা দেবী দুর্গা অষ্টসখীর সাথে বাপের বাড়ি আসেন,কোনো সন্তানকেই  তিনি আনেন না। গ্রামের গোস্বামী পরিবার এই কুমারী দুর্গার পুজো শুরু করেন বহু বছর আগে।

অষ্টনায়িকা_দুর্গা  পদ্মের উপরে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য  কমলেকামিনী দুর্গা  নামে পরিচিত। 
পুজোর সময় কামান দাগা হয়। এখানে মা দুর্গা অসুরকে বধ করছেন না।

বিষ্ণুপুর থেকে দ্বারিকা-জয়কৃষ্ণপুরের রাস্তা ধরে পৌঁছে যাওয়া যায় এই গ্রামে ।
স্থান - আমরাল,বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া।

মা তাঁরা আবির্ভাব তিথি।।

শুক্লা চতুর্দশী তিথি মা তাঁরার আবির্ভাব তিথি। এইদিন মা ভক্তদের পুজো গ্রহণ করেন, তারাপীঠ মন্দিরের গর্ভগৃহের বাইরে এসে  ।এই তিথিতে তারা মা কে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বাইরে বের করে এনে মন্দির প্রবেশপথ সংলগ্ন “ বিরাম মঞ্চে বসানো হয়। এবং তাঁর ছোট বোন মলুটির মা মৌলিক্ষার মন্দির অভিমুখে পশ্চিম দিকে  মুখ করে বসিয়ে পুজো করা হয় ।  
লোক কথা অনুযায়ী মলুটি গ্রামের মা মৌলিক্ষা তারা মায়ের ছোট বোন । এই দিন দুই বোনে মুখ দেখাদেখি হয়। লোক কাহিনী অনুযায়ী এইদিন মা নাটোর খান , আর নানকার এর দিকে চান । অর্থাৎ মা তারা নাটোরের রাণীর তৈরী মন্দিরে বসে সারা বছর ভোগ গ্রহণ করেন । আর বছরের এই একটি দিন নানকার রাজপাটে অবস্থিত মৌলিক্ষা মন্দিরের দিকে চেয়ে থাকেন ।
লোকবিশ্বাস অনুযায়ী পাল রাজত্বের সময়ে জয়দত্ত সওদাগর মায়ের আদেশে দ্বারকা নদের ধারে মহাশশ্মানের শ্বেতশিমূল গাছের তলায় পঞ্চমুন্ডির আসনের নিচে মা তারার শিলামূর্তি উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করেন এই ্শু্ক্লা চতুর্দশী তিথিতে।
এইদিন  ভক্তরা বিরাম মঞ্চে তারাকে শুধু স্পর্শ নয় একেবারে জড়িয়ে ধরে মনোবাঞ্ছা নিবেদন করতে পারে । বিরাম মঞ্চে কোন কবাট দেওয়া দরজা নেই ।চার দিকে খিলানের গাঁথনি । যে কেউ যখন খুশি যতবার ইচ্ছে তারা মাকে ছুঁতে পারে । এইদিন ভোরে সেবায়েতরা তারামাকে  চান করিয়ে  আরতি করে, গর্ভগৃহ থেকে  মাকে এনে বারান্দা সংলগ্ন  বিরাম মঞ্চে পশ্চিম দিকে মুখ করে স্থাপন করেন । মন্দিরের গর্ভ গৃহে মা তারা সারা বছর উত্তর মুখী হয়ে বিরাজ করেন । এদিন তারা মায়ের গর্ভগৃহ শুন্য থাকে । শুন্য বেদীর নিচে  মায়ের রূপোর চরণ দুটি  দর্শন করা যায় – যা অন্য সময়ে চোখের আড়ালে থাকে  ।মায়ের আবির্ভাব তিথিতে মায়ের কোন অন্ন ভোগ হয় না । মায়ের ছোট বোন মৌলিক্ষারও এই দিন অন্ন ভোগ হয় না । দুপুরে লুচি সুজি ও মিষ্টান্ন ভোগ নিবেদন করা হয় ।
 মায়ের পশ্চিম মুখী অবস্থান করার নিয়ে আরো একটি লোক কাহিনী প্রচলিত আছে।১১০৮ সালে বা ১৭০১ খ্রিস্টাব্দে মা তারার আবির্ভাব তিথিতে তান্ত্রিকেরা মায়ের পুজোর আয়োজন করছিলেন । এদিকে সেই সময়েই মলুটির নানকার রাজা রাখরচন্দ্র মায়ের সামনে বসে আরাধনা করছিলেন । তান্ত্রিকেরা রাখরচন্দ্রের পুজো বন্ধ করে দেয় । রাজা  মনের দুঃখে দ্বারকা নদীর পশ্চিমপাড়ে ঘট স্থাপন করে, মায়ের পুজো করে নিজের গ্রামে ফিরে যান ।রাতে তান্ত্রিকদের প্রধান আনন্দনাথকে মা স্বপ্নে জানান যে ,তাঁর ভক্ত রাখরচন্দ্র অভিমান করে ফিরে গেছেন । তাই প্রতি বছর আবির্ভাব তিথিতে মাকে যেন পশ্চিম দিকে মুখ করে বসিয়ে পুজার্চনা করা হয় । সেই থেকে এই শুক্লা চতুর্দশীর আবির্ভাব তিথিতে মা তারা সারা দিন পশ্চিম মুখী অবস্থান করে।
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺