Wednesday, 6 March 2024

কলকাতার হারিয়ে যাওয়া কাঠ খোদাই শিল্প

হারিয়ে যাওয়া। কাঠ খোদাই গুরুত্ব জানেন??

আজ বলবো পুরাতন কোলকাতার গল্প। আজ আপনার মোবাইলে বই পেয়ে যান pdf আকারে। কিন্তু সেই সময়টা ছিলো আলাদা।ছাপাখানায়। একটি একটি অক্ষর সাজিয়ে , ছাপিয়ে তুলে ধারা হতো বই।

হ্যারিসন রোড হয়ে চিৎপুর , এখানেই চাপা পরে আছে বই ছাপানোর রূপকথা গল্প জিয়োন কাঠি। হ্যা এখানেই থেকেই উনিশ শতকের কাঠ খোদাই বা wood carving কাজ হতো। ছোটো ছোটো ঘুপচি ঘরতে এক নাগাড়ে কিছু মানুষ কাঠের উপর কাঠ রেখে বাটালি আর হাতুড়ির ঘা মেরেই চলতো রাত দিন। চারপাশের কি চলছে তা নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা ছিলো না। এখানে খদ্দেরের ভিড় তেমন নেই,। কাঠের উপর উল্টো অক্ষর কাটচলেছে, কোনও ঘরে আবার কাপড় ছাপার নকশা তোলা হচ্ছে। কোন ঘরে আবার সন্দেশের জন্য কাঠের ছাঁচ কাটার কাজ হতো। উত্তর কলকাতার এই রাস্তার স্মৃতি মনে পড়ে কি আপনার ?

সেই সময় বাড়িতে যে পঞ্জিকা আসত, তা এই কাঠের ব্লক থেকেই ছাপা । দারুণ সব ছবি, বিশেষ করে মনে করে দেখুন ফুল ফলের এমনকি বীজের বিজ্ঞাপন থাকতো। নিখুঁত ছবি,বড় লাল মূলা তার মধ্যে একটি ফুল, আবার ফুলকপি, বাঁধাকপির ছবি,, এসবই ছিল কাঠের ব্লক থেকে তৈরি করা। আর ওইসব অন্ধকার ছোটো ছোটো ঘুপচি ঘর থেকে এইসব চমৎকার কাঠের কাজগুলো বেরাতো। লক্ষ লক্ষ পাঠককে আনন্দ দিয়েছে এই সব কাঠ খোদাই শিল্পীররা। বিজ্ঞাপনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে এই শিল্প রা। মনে করুন ঠিক এমনই খুশি হয়েতাম আমরা ঘরে ঠাকুমার ঝুলি পড়তে গিয়ে । সেইসব রূপকথার গল্পকে অবিস্মরণীয় করে তুলতো যে সব ছবি সব এদের তৈরি । কি নিখুদ কাজ , এমনকি ঘুমের মধ্যেও ওইসব ছবির চরিত্ররা আমার চারপাশে ঘোরাঘুরি করত এক সময়, বিশেষ করে শয়তান বুড়ি আর রাক্ষসরা। আর সত্যি কথা বলতে আজও এইসব চরিত্ররা আমার সঙ্গে যেন কথা বলে। শৈশবেই ভূমিকা হয়ে গেছিল যে এদের কাজ।।

কাঠের ব্লক এর ছাপা হচ্ছে কাঠের ব্লক ব্যবহার করে লেখা, আকৃতি কিংবা ছবি ইত্যাদি ছাপার একটি পদ্ধতি৷ পদ্ধতিটির উদ্ভব হয় চীন দেশে। এটা পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচলিত৷ প্রথমদিকে এটি বস্ত্রশিল্পে বহুল ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে এটি ছাপার কাজেও ব্যবহৃত হয়৷

তবে এই শিল্পটি আজ হারিয়ে গেলেও এটি অনেক প্রচীন শিল্প।কাঠের ব্লক এর ছাপা হচ্ছে কাঠের ব্লক ব্যবহার করে লেখা, আকৃতি কিংবা ছবি ইত্যাদি ছাপার একটি পদ্ধতি৷ পদ্ধতিটির শুরু হয়েছিল চীন দেশে প্রথম। এর পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচলিত৷ প্রথমদিকে এটি বস্ত্রশিল্পেই বহুল ব্যবহৃত হয়েছিল। পরবর্তীতে এটি ছাপার কাজেও ব্যবহৃত হতে শুরূ করে।

সিল্কের উপর প্রথমদিককার কাঠের ব্লক এর ছাপার শুরু হয়। যার সকল নমুনা এখনও টিকে আছে, চীন দেশের হান ডাইন্যাস্টি। সময়কাল ছিলো২২০ খ্রিস্টাব্দের পূর্ব৷ এগুলো ফুলের ছবিসহ তিনটি রঙে ছাপা হয়তো৷ এটা থেকে স্পষ্ট যে কাঠের ব্লক এর মাধ্যমে ছাপার কাজ ইউরোপের অনেক আগের এশিয়াতে প্রচলিত হয়েছিল।

Friday, 8 December 2023

গণপুর গ্রাম রামেশ্বর শিব মন্দির

গণপুর গ্রাম রামেশ্বর শিব মন্দির কমপ্লেক্স কথা জানান কি আপনি?

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার সিউড়ি সদর মহকুমা মহম্মদ বাজার সি ডি ব্লকের একটি পুরানো গ্রাম গণপুর ।

গণপুর গ্রাম রামেশ্বর শিব মন্দির কমপ্লেক্স কথা অনেকটাই প্রচারে আড়ালে। বীরভূমের সিউড়ি রামপুরহাট রাস্তার ধারে গণপুর পৌঁছে যেতে পারেন আপনি। চারিদিকে শাল জঙ্গলে ঘেরা গণপুর। ডেভিড জে ম্যাককাশন তাঁর Temples of Bengal, (1972), বই লিখেছেন গণপুরে অনেকগুলি ছোট ছোট চার চালা মন্দির আছে ।যেগুলি ইঁটের তৈরি এবং তাদের সম্মুখভাগ সমৃদ্ধভাবে খোদাই করা ভাস্কর্যে। তিনি ১৭৬৯ সাল নাগাদ প্রতিষ্ঠিত একটি বিষ্ণু মন্দিরেরও উল্লেখ করেছেন ।এটি মণ্ডল পরিবারের দ্বারা নির্মিত একটি আট চালা মন্দির, এবং ইঁট দিয়ে নির্মিত।

কয়েকটি পাথর দ্বারা নির্মিত মন্দির ছাড়া বীরভূম জেলার অধিকাংশ মন্দিরই ইট দ্বারা নির্মিত। যে ঐতিহাসিক পটভূমিকায় এই সমস্ত মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় সেইসময় এইগুলির নির্মাণে আশানুরূপ অর্থ সাহায্য রাজকোষ থেকে পাওয়া যায়নি। সাধারণ জমির অধিকারী, পণ্ডিত, ব্যবসায়ীদের দ্বারা অধিকাংশ মন্দিরই প্রতিষ্ঠিত হয়।

আগে বীরভূম ছিলো নানা শিল্পে উন্নত। গণপুর, মল্লারপুর, মহম্মদবাজার, এইসব এলাকা লোহা নিষ্কাশনের জন্য বিখ্যাত ছিলো। সেই সুবাদে তখন থেকেই গণপুর একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম।

সেকালে দেশীয় প্রক্রিয়ায় আকরিক লোহা থেকে লোহা নিষ্কাশনের কেন্দ্র ছিল বীরভূম ।এই গ্রামের চৌধুরী বংশ লোহার কারবার করেই বিত্তশালী হয়েছিল। তাঁদের প্রাচুর্যের প্রমাণ গণপুর গ্রামে অবস্থিত ১৪ টি চারচালা মন্দির। একটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা আয়তকার জমির মধ্যে তিন দিকে অবস্থিত ও সামান্য উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত চারচালা ১৪ টি শিব মন্দিরের। মন্দিরগুলির ৭টি পশ্চিমমুখী ৪টি পূর্বমুখী এবং ৩টি দক্ষিণমুখী । ১৭৬৭ সাল নাগাদ বীরভূমে দারুণ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। লোহার ব্যবসা করে যথেষ্ট চৌধুরী পরিবার তখন বড়োলোক হয়ে ওঠেছিল। গ্রামের প্রজাদের খাদ্য বা অর্থের বিনিময়ে চৌধুরীরা এই মন্দিরগুলি নির্মাণ শুরু করেন। ১৭৭৯ সালে এই নির্মাণ শেষ হয়।

তবে গ্রামে। অন্যান্য পারিবারের বানানো কিছু মন্দিরও গ্রামে আছে। এখানে একটি একচালা শিব মন্দির আছে, যার দরজা শুধু শিবরাত্রির সময় খোলা হয়। গ্রামের একটা পুকুরে ডোবানো রাখা থাকে শিবলিঙ্গটি। শিবরাত্রির সময় দুদিনই শিবলিঙ্গ মন্দিরে আসে।

Saturday, 28 October 2023

লক্ষ্মীর বাহন কি শুধু মাত্র পেঁচা?

বাংলার সব পূজা উৎসবে কিছু ব্যাতিক্রম ঘটনা দেখা যায়।

যেমন রামকানালী, গঙ্গাজলঘাটিতে লক্ষী পূজাতে পূজা হয় গজলক্ষ্মীর। তবে এই পুজোর প্রচলন হয়েছিল প্রায় ১৪০ বছর আগে। তখন বাঁকুড়ার বেশ কিছু জায়গায় হাতি আক্রমণ করত প্রায়শই, প্রচুর শস্যহানি হতো। তখন তাই গ্রামবাসীরা গজলক্ষ্মীর পূজা করে। এখানে লক্ষ্মীর বাহন রূপে পেঁচা নয় হাতিকে রেখে পুজো করেন। সকলের কাছে তাই তিনি গজলক্ষ্মী।


এদিকে হিন্দু পৌরাণিক গল্প, গজলক্ষ্মী সমুদ্র মন্থনের সময় আবির্ভূত হয়েছিলেন । তিনি ইন্দ্রের হারানো সম্পদ এবং ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছিলেন। তিনি দেবীর রূপ যিনি পশু সম্পদ এবং সম্পদের অন্যান্য প্রতীক যা শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে।
তবে সেক্ষেত্রে কিন্তু মূর্তি ফারাক আছে।
দেবীর পায়ের কাছে দুটি সিংহ আছে, আবার দুটি হাতি তাকে জীবনদানকারী জল দিয়ে স্নান করাছে এবং তার বাম এবং ডান পাশে দুটি মহিলা পরিচারক চামর ধরে আছে।

তবে গুপ্ত রাজা বৈষ্ণব ছিলেন এবং দেবী লক্ষ্মীকে সর্বোচ্চ সম্মান করতেন।তাদের শাসনামলে বেশিরভাগ মুদ্রায় দেবী লক্ষ্মী সিংহবাহিনী হিসাবে দেখা যায়।গুপ্ত শাসক প্রকাশ দিয়ার শাসনামলের মুদ্রায় গরুড়ধ্বজা এবং উল্টোদিকে লক্ষ্মী রয়েছে

Friday, 27 October 2023

কলিকাতার গয়না বাড়ি

কোলকাতার গহনা বাড়ি চেনেন??

বামাচরণ ভড় ঠাকুরবাড়ি গয়না বাড়ি হিসেবে পরিচিত।উত্তর কলকাতার নীলমণি সরকার লেনে বামাচরণ ভড়ের বসতবাড়িকে ব্রজকিশোর ঠাকুরবাড়ি বলে চেনে । সরু গলি, বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, কী অপূর্ব স্থাপত্য কারুকার্য অপেক্ষা করছে এই বাড়ির ভেতরে।


ইংরেজ আমলে বামাচরণ ভড় এক সফল ব্যবসায়ী। বামাচরণের জন্ম ১৮৫১ সালে। তিনি কলকাতার বাসিন্দা ছিলেন না। ইংরেজদের পৃষ্ঠপোষকতায় কলকাতা তখন উদীয়মান নগরী, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের পীঠস্থান হয়ে যখন ওঠেছে। তখন এ শহরে বামাচরণ এসে ছিলেন এক ভাগ্যান্বেষী হিসেবে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান, পেটের দায়ে এসেছিলেন কোলকাতায়। কলকাতায়, আর দশজন শ্রমিকের মতো তিনি কাজ শুরু করেছিলেন।

কলকাতায় এসে প্রথমে বামাচরণ এক পোশাক তৈরির কারখানায় শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন । এই সংস্থা মূলত ইওরোপীয় পোশাক তৈরি করত। অসম্ভব বুদ্ধিমান ও পরিশ্রমী বামাচরণ ছিলেন। তিনি ব্যবসার যাবতীয় বিষয় করায়ত্ত করলেন। পরে তিনি কলকাতার এক পোশাক প্রস্তুতকারক ইংরেজ কোম্পানির অংশীদার হয়ে বসলেন। আর এই কোম্পানীর মালিক বিলেতে ফিরে গেলেন, পুরো ব্যবসা মালিক হয়ে বসেন বামাচরণ।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ইংরেজদের বোয়েরের প্রথম যুদ্ধ চলেছিল,২০শে ডিসেম্বর ১৮৮০ থেকে ২৩শে মার্চ ১৮৮১ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় যুদ্ধ চলেছিল,১১ই অক্টোবর ১৮৯৯ থেকে ৩১শে মে ১৯০২ পর্যন্ত।এই যুদ্ধে জড়িয়ে গেল এক বাঙালির ব্যবসায়ী বামাচরণ ভড় নাম।বোয়েরের যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী ইংরেজ সৈন্যদের সামরিক পোশাক সাপ্লাই করেছিলেন তিনি।

তৎকালীন ঔপনিবেশিক কলকাতায় মতিলাল শীল,গোকুল মিত্র, নরসিংহ দাঁ-এর মতো কৃতি বাঙালি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছিলেন,বামাচরণ ভড়। তিনি সামরিক পোশাকের ব্যাবসা নাম,যশ,খ্যাতি করেছিলেন।ব্যাবসা যখন মধ্যগগনে, বামাচরণ ভড় তার নীলমনি সরকার লেনের বসতবাড়িতে স্থাপন করলেন গৃহদেবতা রাধা মাধবের মন্দির। তাঁর মতে কৃপায় আজ এই তার এই বিশাল প্রতিপত্তি,তাঁকে তিনি কিভাবে অস্বীকার করেন।


যাইহোক ১৮৬৫ সালে তৈরি লাল ইটের বাড়িটি দোতলা। তৎকালীন প্রচলিত জমিদার রীতিতে ইট, কড়িবরগা, চুন-সুরকি নির্মিত বাড়িটি দেড়শ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় অবিকল।

দেড়শো বছর অতিক্রান্ত লাল রঙা বাড়িটার ভিতরে প্রবেশ করলেই বিস্মিত হতে হয় আজকে ও।বাইরে থেকে বিশেষত্বহীন বহিরঙ্গের বাড়িটির অন্দরের শোভা বর্ধন করেছে গথিক আর মুঘল স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণে তৈরি একাধিক আর্চ। বিম আর কলাম ধরে রেখেছে বাহারি পেনডেন্টিভ। খড়খড়িযুক্ত বারান্দা, তাতে লোহার রেলিং আর মাথায় আর্চ ছাদের পাঁচিলের কারুকার্যও অনবদ্য। ছাদের আর্চগুলিতে দেখা যায় আংটায় আটকানো পর্দার ঝালরের প্যাটার্ন। প্রাচীনত্বের স্পর্শ এখনো ধরে রেখেছে কাঠের রেলিং-যুক্ত মার্বেল পাথরের সিঁড়ি।।এক অসাধারণ স্থাপনা মুগ্ধ হতে বাধ্য করবে সবাইকে ।
এই বাড়ির বাহারি নাম গয়নাবাড়ি।সেই কোন কালে হয়তো বাড়ির দেওয়ালে,খোদিত নক্সার প্রাচুর্যতার কারণেই এহেন নাম ভালোবেসে রেখেছিল মানুষরা ।লোকমুখে গয়না বাড়ি নামটি পরিচিত হয় পরে।


অষ্টনায়িকা_দুর্গা"।

"অষ্টনায়িকা_দুর্গা"।

বাঁকুড়া জেলার অযোধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত
আমরাল গ্রামের পদ্মাসনা চতুর্ভূজা দেবী দুর্গা অষ্টসখীর সাথে বাপের বাড়ি আসেন,কোনো সন্তানকেই  তিনি আনেন না। গ্রামের গোস্বামী পরিবার এই কুমারী দুর্গার পুজো শুরু করেন বহু বছর আগে।

অষ্টনায়িকা_দুর্গা  পদ্মের উপরে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য  কমলেকামিনী দুর্গা  নামে পরিচিত। 
পুজোর সময় কামান দাগা হয়। এখানে মা দুর্গা অসুরকে বধ করছেন না।

বিষ্ণুপুর থেকে দ্বারিকা-জয়কৃষ্ণপুরের রাস্তা ধরে পৌঁছে যাওয়া যায় এই গ্রামে ।
স্থান - আমরাল,বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া।

মা তাঁরা আবির্ভাব তিথি।।

শুক্লা চতুর্দশী তিথি মা তাঁরার আবির্ভাব তিথি। এইদিন মা ভক্তদের পুজো গ্রহণ করেন, তারাপীঠ মন্দিরের গর্ভগৃহের বাইরে এসে  ।এই তিথিতে তারা মা কে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বাইরে বের করে এনে মন্দির প্রবেশপথ সংলগ্ন “ বিরাম মঞ্চে বসানো হয়। এবং তাঁর ছোট বোন মলুটির মা মৌলিক্ষার মন্দির অভিমুখে পশ্চিম দিকে  মুখ করে বসিয়ে পুজো করা হয় ।  
লোক কথা অনুযায়ী মলুটি গ্রামের মা মৌলিক্ষা তারা মায়ের ছোট বোন । এই দিন দুই বোনে মুখ দেখাদেখি হয়। লোক কাহিনী অনুযায়ী এইদিন মা নাটোর খান , আর নানকার এর দিকে চান । অর্থাৎ মা তারা নাটোরের রাণীর তৈরী মন্দিরে বসে সারা বছর ভোগ গ্রহণ করেন । আর বছরের এই একটি দিন নানকার রাজপাটে অবস্থিত মৌলিক্ষা মন্দিরের দিকে চেয়ে থাকেন ।
লোকবিশ্বাস অনুযায়ী পাল রাজত্বের সময়ে জয়দত্ত সওদাগর মায়ের আদেশে দ্বারকা নদের ধারে মহাশশ্মানের শ্বেতশিমূল গাছের তলায় পঞ্চমুন্ডির আসনের নিচে মা তারার শিলামূর্তি উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করেন এই ্শু্ক্লা চতুর্দশী তিথিতে।
এইদিন  ভক্তরা বিরাম মঞ্চে তারাকে শুধু স্পর্শ নয় একেবারে জড়িয়ে ধরে মনোবাঞ্ছা নিবেদন করতে পারে । বিরাম মঞ্চে কোন কবাট দেওয়া দরজা নেই ।চার দিকে খিলানের গাঁথনি । যে কেউ যখন খুশি যতবার ইচ্ছে তারা মাকে ছুঁতে পারে । এইদিন ভোরে সেবায়েতরা তারামাকে  চান করিয়ে  আরতি করে, গর্ভগৃহ থেকে  মাকে এনে বারান্দা সংলগ্ন  বিরাম মঞ্চে পশ্চিম দিকে মুখ করে স্থাপন করেন । মন্দিরের গর্ভ গৃহে মা তারা সারা বছর উত্তর মুখী হয়ে বিরাজ করেন । এদিন তারা মায়ের গর্ভগৃহ শুন্য থাকে । শুন্য বেদীর নিচে  মায়ের রূপোর চরণ দুটি  দর্শন করা যায় – যা অন্য সময়ে চোখের আড়ালে থাকে  ।মায়ের আবির্ভাব তিথিতে মায়ের কোন অন্ন ভোগ হয় না । মায়ের ছোট বোন মৌলিক্ষারও এই দিন অন্ন ভোগ হয় না । দুপুরে লুচি সুজি ও মিষ্টান্ন ভোগ নিবেদন করা হয় ।
 মায়ের পশ্চিম মুখী অবস্থান করার নিয়ে আরো একটি লোক কাহিনী প্রচলিত আছে।১১০৮ সালে বা ১৭০১ খ্রিস্টাব্দে মা তারার আবির্ভাব তিথিতে তান্ত্রিকেরা মায়ের পুজোর আয়োজন করছিলেন । এদিকে সেই সময়েই মলুটির নানকার রাজা রাখরচন্দ্র মায়ের সামনে বসে আরাধনা করছিলেন । তান্ত্রিকেরা রাখরচন্দ্রের পুজো বন্ধ করে দেয় । রাজা  মনের দুঃখে দ্বারকা নদীর পশ্চিমপাড়ে ঘট স্থাপন করে, মায়ের পুজো করে নিজের গ্রামে ফিরে যান ।রাতে তান্ত্রিকদের প্রধান আনন্দনাথকে মা স্বপ্নে জানান যে ,তাঁর ভক্ত রাখরচন্দ্র অভিমান করে ফিরে গেছেন । তাই প্রতি বছর আবির্ভাব তিথিতে মাকে যেন পশ্চিম দিকে মুখ করে বসিয়ে পুজার্চনা করা হয় । সেই থেকে এই শুক্লা চতুর্দশীর আবির্ভাব তিথিতে মা তারা সারা দিন পশ্চিম মুখী অবস্থান করে।
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

Thursday, 27 July 2023

অষ্টক গান

অষ্টক গান সম্পর্ক জানেন কি? লোক সংস্কৃতি এই ধারা কি সত্যি লুপ্তপ্রায়??

নীল ষষ্ঠী' বা নীল পুজো' বাংলার হিন্দুসমাজের
এক লৌকিক উৎসব, যেখানে শিবের বিয়ে দেওয়া হয়। চৈত্রসংক্রান্তির
চড়ক উৎসবের আগের দিন অনুষ্ঠিত হয় নীল ষষ্ঠী পুজো।
মহাদেব শিবের এক নীলকণ্ঠ । সেই নীল
বা শিবের সঙ্গে চণ্ডিকা
বিয়ে উপলক্ষ্যে লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয় এই পূজায়। পৌরাণিক কাহিনি অনুসায়ী দক্ষযজ্ঞে সতীর দেহত্যাগের পর সতী পুনরায় নীলধ্বজ রাজার বিল্ববনে সুন্দরী কন্যারূপে আবির্ভূত হন। রাজা তাঁকে নিজ
কন্যারূপে লালন-পালন করে শিবের সঙ্গে বিয়ে দেন। নীলপূজা শিব ও নীলাবতীরই বিবাহ-অনুষ্ঠানের
স্মারক।
নীল পুজোতে শিবকে নিয়ে ,নীলসন্ন্যাসীরা ও শিব-দুর্গার সঙেরা গান করতে করতে বাড়ি বাড়ি ঘােরান এবং ভিক্ষা সংগ্রহ করেন। এ সময় তাদের মুখে শােনা যায় যে বিশেষ ধরনের গান
তা ‘নীলের গান' বলেই লোক মুখে পরিচিত। তবে এই নীলের গান হল-অষ্টক গান'।


চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন সারাদিন উপােস করে সন্তানবতী হিন্দু মেয়েরা । বিকেলে তারা শিবের মাথায় জল ঢালেন । নীলের ব্রত’ শুনে সন্তানের
কল্যাণার্থে প্রদীপ জ্বালিয়ে শিবপুজো করে
উপবাস ভাঙ্গে তারা। তবে নিম বা বেল কাঠ দিয়
শিবের মূর্তি তৈরি হয়। চৈত্র সংক্রান্তির বেশ আগেই
নীল বা শিবকে মণ্ডপ থেকে নীচে নামানাে হয়। নীলপূজার আগের দিন অধিবাস; গভীর রাতে হয় হাজরা পূজা।হাজরা পূজায় শিবের চেলা বা ভূত-প্রেতের দেবতাকে পােড়া শােল মাছের ভােগ দেওয়া হয়। বিয়ে উপলক্ষে সকল দেবতাকে আমন্ত্রণ করা হয়।পরেরদিন
নীলপূজার সময় শিবকে গঙ্গাজলে স্নান করিয়ে নতুন
লালশালু কাপড় পরিয়ে অন্ততপক্ষে সাতটি বাড়িতে ঘােরাতে হয়।নীলসন্ন্যাসীরাও লাল কাপড় পরে পাগড়ি
মাথায়, গলায় রুদ্রাক্ষমালা ও হাতে ত্রিশূল নিয়ে
শিবের সঙ্গে করে এই মিছিল করে। এই মিছিলের
দলপতিকে ' নীল পাগোল' বা "বালা" বলা হয়। এদের সাথে থাকে ঢাক-ঢোল, বাঁশী বাজনদারের দল । সঙেরা শিব-দুর্গার সাজে । মহিলারা ঘরের উঠানে আল্পনা দিয়ে নীলকে আহ্বান করে বরাসনে বসিয়ে তার মাথায় তেলসিঁদুর পরিয়ে দেন। এরপর নীলের গান শুরু হয়:

যেমন
"শুন সবে মন দিয়ে হইবে শিবের বিয়ে
কৈলাসেতে হবে অধিবাস।
(ও) তাতে নারদ করে আনাগোনা কৈলাসে বিয়ার ঘটনা
বাজে কাঁসী বাঁশী, মোহন বাঁশরী।"
"(ও) নারদ চলল গিরি রাজের গৃহেতে।
আর একদিনেতে শূলপাণি, নারদকে বলেন বাণী
শুনো নারদ শুনো আমার সাধ,
আমি দুই পাশে দুই বালিশ দিয়ে, মধ্যিখানে থাকি শুয়ে
উশিপুসি করে কাটাই রাত।।
(ও) নারদ চললো গিরি রাজের গৃহেতে।।
আর ওই শিব কয় কৈলাসে যেয়ে, দেখে এসেছি মেয়ে
শীঘ্র করো বিয়ের আয়োজন,
(ও) নারদ চললো গিরি রাজের গৃহেতে।।
চলিলেন নারদ মুনি, চলিলেন নারদ ধনি
উপনীত গিরি পুরে যেয়ে।
কইলেন মেনকা রানী, আইলেন নারদ মুনি
দেখা পেয়ে এল মুনির ঠাঁই।।
(ও) নারদ চললো গিরি রাজের গৃহেতে।।
শোনো ওগো গিরি রাজা, হইবা আমার আজা
জামাই তোমার হবে দিগম্বর।।"
বিয়ের ঘটক ভাগিনেয় নারদ মুনির কাছে শিব আর্তি জানান,
"ভাইগনা যদি উপকারী হও।
তবে বিয়া দিয়া আমার প্রাণ বাঁচাও।।"
বিয়ের পর নীলের গানে থাকে সংসারী হর-পার্বতীর কথা, শিবের কৃষিকাজ, গৌরীর শাঁখা পরা প্রভৃতি এবং ভিখারি শিবের সঙ্গে অন্নপূর্ণা শিবানীর দ্বান্দ্বিক সহাবস্থানের কাহিনি। গানের প্রথম অংশ দলপতি বালারা এবং পরবর্তী অংশ অন্য নীলসন্ন্যাসীরা গেয়ে থাকেন।
গানের শেষে সন্ন্যাসীদের চাল-পয়সা, ফল প্রভৃতি ভিক্ষা দিয়ে থাকেন বাড়ির মেয়েরা।।


বাংলার লোক সংস্কৃতির জনপ্রিয় এই অষ্টক গান হারিয়ে যাচ্ছে । না হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্রত গুলো সাথে এই সংস্কৃতি হয়তো এখন গুরুত্ব হারিয়েছে কিন্তু এখনো হারিয়ে যায় নি। একে সঠিক লালন পালন করার প্রয়োজন।


অষ্টক গান মূলত গ্রাম বাংলাতে চৈত্র সংক্রান্তি ও গাজনের সময় বিশেষ করে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এমনটা কি? মূলত নৃত্য ও গীত এর মাধ্যমে রচিত হয় অষ্টক গানে অনেক সময় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ ও রাধারাণীর লীলা তুলে ধরা হয়।শিল্পীরা কেউ শ্রীকৃষ্ণ, রাধারানী,নিমাই, অষ্টসখী, মাতা যশোদা,সেজে তাদের নৃত্য ও গীতের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেন অষ্টক গান।
এই অষ্টক গানে নৌকাবিলাস, নিমাই সন্ন্যাস, কৃষ্ণ বেহুলা লখিন্দর ইত্যাদি পালা গুলি দেখানো হয় নৃত গীত সহকারে।
অষ্টক গীত শব্দটা এসেছে বোধহয় শ্রী কৃষ্ণের অষ্টপ্রহর এর লীলা থেকে । অথবা প্রতি দলে আট জন মিলে নৃত্য গীত করে বলে। কিংবা শ্রী কৃষ্ণে অষ্ট সখী নিয়ে লীলা করতেন সেই অনুযায়ী এই নৃত গীত পালা অষ্টক গান বলা হয়।
অষ্টক গান লোকসংস্কৃতি অঙ্গ তাই নৃত খুব সাদামাটা জৌলুস বিহীন । কিন্তু খুব আবেগপ্রবণ, মন মুগ্ধকর যা হৃদয় স্পর্শ করে যায়।অষ্টক গীত নৃত্যে ঢোল, করতাল, ঘুঙুর, হারমোনিয়াম,বাঁশি, ইত্যাদি ব্যাবহৃত হয়।