Thursday, 1 September 2016

সিঙ্গুর

সুপ্রিম কোর্ট ও মমতা ছাড়াও সিঙ্গুরের জয় আরো অনেক কিছুর। সিঙ্গুরের জয় অধিকার আন্দোলনের। সিঙ্গুরের জয় চাষবাসের। সিঙ্গুরের জয় গর্বিত, গোঁয়ার, গাঙ্গেয় বাংলার চাষির। সিঙ্গুরের জয় ধৈর্য্যের। সিঙ্গুরের জয় গ্রামবাংলা ও শহরবাংলার কৃষিপ্রেমের। সিঙ্গুরের জয় সংসদীয় পন্থার। সিঙ্গুরের জয় প্রয়োজনীয়, কারণ সিঙ্গুরে হার কর্পোরেটের।
ব্যস্‌ এটুকুই।
কারণ সিঙ্গুরের জয় একটি ফয়সালা হয়ে যাওয়া লড়াই-এর। এবং সেই ফয়সালা সিঙ্গুর একা করেনি। করার কথাও নয়। সেই ফয়সালা করেছে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, পস্কো, রায়গড়, শালবনী (লালগড়), হরিপুর ......। জমি অধিগ্রহণ আইনটাই বাতিল করে দিয়েছে নীতিনির্ধারক মুষ্টিমেয়রা। বদলে এসেছে জমি কেনা। আর ছুটছাট কিছু পড়ে থাকলে সেটুকু অধিগ্রহণ। নয়া কায়দা, যা অনেক বেশি বাজার-সম্মত। ক্ষতিপূরণের বদলে দরদাম করা বিক্রয়মূল্য। আধিপত্য-সম্মতির সূক্ষতর রূপ।
মানুষের আরো ভালোভাবে বেঁচে থাকার লড়াই তো খেলা বা ভোট নয়। এমনকি আন্দোলনও নয়। তাই এর জয় পরাজয় হয় না। ফয়সালা হয়। এক দশক আগের চাষাবাদ করে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা মানুষের লড়াই সাথি হিসেবে পেয়েছে প্রায় এক দশক ধরে চলতে থাকা এবং চলতেই থাকা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা-কে। প্রকল্পগুলির গুটিয়ে যাওয়ার পেছনে জনপ্রতিরোধ একটা কারণ। আরেকটা কারণ এই মন্দা।
কিন্তু চাষাবাদের বিপদটি গভীর হয়েছে, অথবা গভীরতর বিপদটা ওপরে উঠে এসেছে। সার, বিষ, জল বহুল চাষ আর একেবারেই লাভজনক থাকছে না। চাষার ছেলে সত্যিই আর চাষা থাকতে ডরাচ্ছে। চাষ-লেবার সরে যাচ্ছে অন্যত্র, যেখানে রোজগার বেশি। পড়ে থাকছে জমি। পশ্চিম ভারতে শিক্ষা চাকরিতে সংরক্ষণের সুবিধা চাইছে উচ্চবর্ণ চাষি।
তাই সিঙ্গুরের জয় সুখস্মৃতি নিশ্চয়ই। ছেলেমেয়েদের শোনানোর মতো আখ্যান। কিন্তু পাথেয় নয়। কারণ লড়াইটা বদলে গেছে।

No comments:

Post a Comment