Saturday, 29 April 2017

অক্ষয়তৃতীয়া

গাঁ-গঞ্জে অক্ষয়তৃতীয়া মানে দোকানের হালখাতা নয়।গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করেন আজ মর্ত্যে গঙ্গাকে বয়ে এনেছিলেন ভপগীরথ।তাই গঙ্গাস্নানের ধূম পড়ে যায়।এদিকে চাষীদের আজ কোণ বিজুটির দিন।সকাল সকাল চাষী স্নান করে আমনধান বোনার বীজ নিয়ে জমির ঈশান কোণে ছড়িয়ে দিয়ে আসে। আজ আবার নতুন মেঘের সঞ্চার দিবস।বিকেলে শেওরা গাছের ডাল নিয়ে বাড়ির চালে গুঁজে দেওয়া হয়।বিশ্বাস যতই ঝড় আসুক-- বাড়ির চাল অক্ষত থাকবে!
অক্ষয় তৃতীয়া হল বৈ শা খ  মাসের শুক্লাতৃতীয়া অর্থাৎ শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। হিন্দু ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি।এই শুভদিনে জন্ম নিয়েছিলেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম। বেদব্যাস ও গণেশ এই দিনে মহাভারত রচনা আরম্ভ করেন। এদিনই সত্য যুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয়। এদিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন। এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এদিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। 
এদিন থেকেই পুরীধামে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষে রথনির্মাণ শুরু হয়। অক্ষয় শব্দের অর্থ হল যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। বৈদিক বিশ্বাসানুসারে, এই পবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। কেদার-বদ্রী-গঙ্গোত্রী-যমুনোত্রীর যে মন্দির ছয়মাস বন্ধ থাকে এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়। দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল।
আধুনিককালে এই তিথিতে সোনার বা রূপার গয়না কেনা হয়। মনে করা হয়, এই শুভ তিথিতে রত্ন বা জিনিসপত্র কিনলে গৃহে শুভ যোগ হবে। সুখ-শান্তি ও সম্পদ বৃদ্ধি হবে, এই আশাতেই এদিন মানুষ কিছু না কিছু কিনে থাকেন।[৪][৫][৬]
অক্ষয় তৃতীয়ার ফর্দঃ এদিন অনেক বাড়িতেই পুজো করা হয়। অনেকেই জানেন না যে এই পুজোতে কী কী লাগবে। তাই এই পুজোর জন্য যা যা উপকরণ দরকার, তার একটি ফর্দ দেওয়া হল।
যেমন- সিদুঁর, পঞ্চগুঁড়ি, পঞ্চগর্ব্য, তিল, হরিতকী, ফুল, দুর্ব্বা, তুলসি, বিল্বপত্র, ধূপ, প্রদীপ, ধূনা, মধুপর্ক বাটি ২, আসনাঙ্গুরীয় ২, দই, মধু, চিনি, ঘি, পুজোর জন্য কাপড় ১, শাটী ১, নৈবেদ্য ২,কুচো নৈবেদ্য ১, সভোজ্য জলপূর্ণ ঘট ১, বস্ত্র ১, পাখা ১, দক্ষিণা

ফিরে দেখা ৫১ ~ লক্ষ্মীর বাহন প্যাঁচা নয় , প্যাঁচাই লক্ষ্মী |~ শ্রী , সৌন্দর্য , ঐশ্বর্য ও সৌভাগ্যের দেবতা লক্ষ্মী | লক্ষ্মী দেবীকে আবার নানারূপে ,নানা নামে পাওয়া যায় |, যেমন ~ গজলক্ষ্মী , স্বর্গলক্ষ্মী , জয়লক্ষ্মী , দ্বারলক্ষ্মী , রাজলক্ষ্মী ধানলক্ষ্মী , নিধিলক্ষ্মী , সৌভাগ্যলক্ষ্মী , কুললক্ষ্মী , শুভলক্ষ্মী , মহালক্ষ্মী , গৃহলক্ষ্মী , ইত্যাদি | প্রাচীনকাল থেকে মুদ্রায় , ভাস্কর্যে সবচেয়ে যে লক্ষ্মীকে বেশী করে পাওয়া যায় , তিনি হলেন গজলক্ষ্মী | পদ্মের ওপর গজলক্ষ্মী বসে আছেন , আর দুপাশ থেকে কোথাও মকর বা কূর্মের ,কোথাও হাতীর মুখ থেকে মাথার ওপর জল নির্গত হচ্ছে | এক সময় লক্ষ্মীর জায়গায় বসেছিল প্যাঁচা একা | এপ্রসঙ্গে গবেষিকা সিপ্রা চক্রবর্তী একটি লেখায় জানিয়েছেন ~ "খ্রীস্টপূর্ব ১৫০ থেকে১০০ খ্রিস্টাব্দে কুনিন্দরাজ অমোঘভূতির মুদ্রায় লক্ষ্মীদেবীর মুদ্রায় লক্ষ্মীদেবীর সামনে একটি দন্ডায়মান হরিণ দেখতে পেলেও কুশান যুগের লক্ষ্মীমূর্তীতে আমরা একটি প্যাঁচাকে পেলাম | এলাহাবাদ মিউজিয়ামে কুষান যুগের একটি হৃষ্টপুষ্ট প্যাঁচা রয়েছে | সাদা সাদা ছোপযুক্ত লাল রঙের বেলে পাথরে তৈরি | প্যাঁচাটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো গজলক্ষ্মীর মতো এখানে পাখির মাথাযুক্ত দুটি মানুষ একযোগে প্যাঁচার মাথার ওপরে দুটি পাত্র থেকে জল ঢালছে | সম্ভবত এই মূর্তিটিই প্যাঁচার সবচেয়ে প্রাচীন মূর্তি | এপ্রসঙ্গে আমরা অবশ্যই এখন মনে করতে পারি যে প্যাঁচাই লক্ষ্মী | " ~ এই লেখা থেকে মনে করা যেতে পারে , আদিতে লক্ষ্মী নয় ' প্যাঁচাই লক্ষ্মী রূপে পুজো পেয়েছে | নিচের সেই প্যাঁচা -লক্ষ্মীর কুষান যুগের ছবি ~

No comments:

Post a Comment