Monday, 20 December 2021
সাতদেউল।
Thursday, 16 December 2021
কাটুম কুটুম শিল্প
Tuesday, 7 December 2021
মাটির লক্ষী ভান্ডার
বিখ্যাত শহর থাংশান , এই শহরটিকে মৃৎশিল্পের শহর বলা হয়। এই শহরটি।চীনের অন্যতম প্রাচীন শহর পেইচিং থেকে ১৫০ কি.মি. উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই শহরের পথে-প্রান্তরে, বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক গুলোতে মৃৎ শিল্পের বিভিন্ন শিল্পকর্ম দেখতে পাওয়া যায়। শহরের প্রায় ৬০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস আছে, থাংশানের মৃৎশিল্পের উৎপত্তি ও বিকাশের সূত্রপাত মিং রাজবংশের ইয়ুং লে এর সময়ে, এখানে নানা ধরনের চীনা মাটির ৫০০টিরও বেশি মৃৎশিল্প রয়েছে। এখানকার বিভিন্ন রকম মাটির মধ্যে প্রাচীন স্থাপত্য চীনামাটি, স্বাস্থ্যসম্মত চীনামাটি, শিল্পায়ন চীনামাটি, হাইটেক চীনামাটি, শিল্পকলা চীনামাটি ইত্যাদি অন্যতম। আবার শিয়া মহাদেশের মৃৎশিল্পের ইতিহাসে দেখা যায়, খ্রিস্টীয় ১৩ শতকে সং রাজবংশের সময় চীনে তৈরি হতো"সেলাডন' নামক মাটির তৈরি বাসনপত্র ও শো-পিস। এগুলোকে বলা হতো ' চীনারাই সর্বপ্রথম সেলাডন প্রস্তুত করেছিল। চীনারা এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় সেলাডন রপ্তানি শুরু করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই সেলাডনগুলো মৌলিক সৌন্দর্যগুণে তুরস্কের শাসকসহ অন্যান্য শাসক এবং রাজাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ইতিহাস এর পাতা উল্টিয়ে দেখলে সমস্ত উন্নত সংস্কৃতিতে মৃৎশিল্পের শৈল্পিক প্রমাণ আছে। ২০০০ বছর আগে বিলুপ্ত আফ্রিকান নোক সংস্কৃতির মাটির তৈরি জিনিসপত্র আজকে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। কুমারের চাকা সম্ভবত মেসোপটেমিয়া এ ৪ র্থ সহস্রাব্দে মেসোপটেমিয়া আবিষ্কার করা হয়েছিল।বর্তমান যুগে যেসমস্ত সংস্কৃতি তাদের উৎকৃষ্ট মৃৎশিল্পের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সেগুলির মধ্যে আছে চীনা মৃৎশিল্প, ভারতীয় উপমহাদেশের মৃৎশিল্প, ভূমধ্যসাগরের ক্রিট দ্বীপীয় মৃৎশিল্প, গ্রিক মৃৎশিল্প, পারসিক মৃৎশিল্প, মায়া সভ্যতার মৃৎশিল্প, জাপানি ও কোরীয় মৃৎশিল্প, এবং আধুনিক পাশ্চাত্য সংস্কৃতিগুলিতে মৃৎশিল্প উল্লেখযোগ্য ছিলো।
মৃৎশিল্পের মৌলিক উপাদানগুলি হল মৃন্ময় বস্তুর আকৃতি, এটির বাহিরের রঙচিত্র অঙ্কন করে বা খোদাই করে শোভাবর্ধন, এবং এটির উপরের চকচকে প্রলেপ দেওয়া হয়েছে কোথাও কোথাও। ইতিহাসের পর্বভেদে ও সংস্কৃতিভেদে এই উপাদানগুলির উপরে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় জোর দেওয়া হয়েছে, এটাই পার্থক্য। বাংলার মৃৎ শিল্প অনেক প্রাচীন, অনেক ই অনুমান মহেঞ্জোদারো সমসাময়িক আমাদের শিল্প। ধাতু আর প্লাসিক ব্যবহারে জন্য এ শিল্পের চাহিদা কমছে। কিন্তু এ শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের ই পন্য চাহিদা তৈরি করতে হবে। যেমন ধরুন, মাটির ব্যাংক বা মাটির লক্ষী ভান্ডার।

নামটা শুনে ই ছেলেবেলা ফিরে গেলেন নিশ্চিত। মাটির রুই মাছ, পশু পাখি, ফল। একটা ছোট ছিদ্র থাকতো পয়সা ফেলার। পয়সা ফেলার পর প্রতি বার আমরা মাটির ব্যাংকটা ঝাকিয়ে শব্দ শুনতাম। মাটির ব্যাংকে কাঁচা পয়সার শব্দ মনের মধ্যে এক ধরনের শিহরণ জাগাতো। এরপর সেই মাটির ব্যাংকও কোনো এক বিপদের দিনে সেটা ভেঙে ফেলা হতো। এটার চাহিদা আছে এখনো।
Monday, 6 December 2021
বনবিবি
বনবিবির সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি বনভূমির আধিপত্য দক্ষিণ রায়ের কাছ থেকে হস্তান্তরিত হয় বনবিবিতে। এই বন বিবির বাহন হিসেবে বাঘ , কুমির হরিন কে দেখা যায়। জল রাজ্যের অধিপতি কালু রায়ের সঙ্গে সেই অর্থে বনবিবির কোন বিরোধ ছিল না বরং বন্ধু ছিলেন। জলের দানব কুমির কল্পনায় কালু রায়েরই বাহন । বনবিবির বাহন হিসেবে মুরগি কেও দেখা যায় । বনবিবি বা বনদূর্গা দক্ষিণ রায় অর্থাৎ বাঘকে যুদ্ধে হারিয়ে ছিলেন। তাই বাঘকে বনবিবির বাহন হিসেবে দেখা যায় সব জায়গায়। কিন্তু হরিন বাহন কেন?
সুন্দরবনের বকুলতলা থানার হরিনবাহিনী বনবিবি সম্পর্কে, গবেষক সঞ্জয় ঘোষ বলছেন "দি রেভিনিউ হিস্ট্রি অফ সুন্দরবনস, ভলিউম টু বাই এফ ডি এস্কোলি্ ,পৃষ্ঠা ২১৬ বলা হয়েছে নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে সুন্দরবনে হরিন ধান ক্ষেতের খুব ক্ষতি করে।মনে হয় এ কারনে হরিনবাহিনী বনবিবি পূজা শুরু হয়।তবে এটা পর্যন্ত জানা তথ্য।হরিন যুক্ত নাম পাওয়া যায় দক্ষিন বারাসাতে রামরুদ্রপুর মৌজায় হরিনখালির বাদায় জেলার এ পর্যন্ত জানা সবার বড় বাঘ বাহিনী বনবিবি পূজা ও মেলা হয়।আমার গরু খোঁজ়া অনুযায়ী বনবিবির উৎস মেদিনীপুরের আদিবাসী সমাজের পূজিত বড়াম দেবী।এই বড়াম মেদিনীপুর আগত সুন্দরবনের আদি বসিন্দা দের বিশালাক্ষ্মী দেবীতে রুপান্তরিত হয় যখন তারা ট্রাইব থেকে কাস্ট বিবর্তিত হন।মুসলিম আগমনের পর এই বিশালাক্ষ্মী দেবী বনবিবিতে রূপান্তরিত হন মাত্র।তাঁর বাহন থাকে বাঘ।"
গবেষক কবি সমীরণ মন্ডল বলেছেন"বনবিবি পুজো কী ব্রিটিশ পরবর্তী সুন্দরবনে আবাদ করার সময় শুরু হয়ে থাকবে? মেদিনীপুর থেকে এই সংস্কৃতি আমদানি হলে মনে হয় তার আগে মেদিনীপুরের লোক সেভাবে আসেনি। গল্প অনুযায়ী বনবীবী স্বামী পরিত্যক্ত মহিলার সন্তান। পরে মা ফিরে গেলেও বন হরিণের দুধে পালিত হন বনবিবি সাহজঙ্গুলি। এখানে হরিণ আসতে পারে ধারক, বাহক, পালক হিসাবে। "
কুক্কুট বা মুরগী জাতীয় পাখি , গোধা , কুমীর , বাঘ, মহিষ , ষাঁড় সবই উমার বাহন হিসাবে এক এক সময় গৃহীত । এই গুলি বনবিবির বিবর্তনে কোন ভাবে বাদ দেওয়া যায়না । আঞ্চলিক প্রয়োজনে বাহন গুলি আঞ্চলিক দেবীদের ক্ষেত্রে গৃহীত হয় ।
সোদপুরের কর্নমাধবপুর অঞ্চলে অবস্থিত মা বনবিবি-র মন্দিরে। এই মন্দিরে কোন দেবী মূর্তি নেই। বনের পশুরাই দেবীর প্রতিকি হিসেবে পূজিত হয়। আর এখানে হরিন দেখা যায়।

বনবিবি বা বনদেবী বা ব্যাঘ্রদেবী একইসাথে হিন্দু ধর্মের দেবী ও বনবাসী মুসলমানদের পীরানি।বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের মধু আহরণকারী ও কাঠুরে জনগোষ্ঠী বাঘের আক্রমণ হতে রক্ষা পেতে বনবিবির পূজো করেন। দক্ষিণরায় (রায়মণি) হিংস্র বাঘের ছদ্মবেশে মানুষের উপর হামলা করে।মধু সংগ্রাহক, কাঠুরে, মৎসজীবী মানুষের দেবী বনবিবি, বাঘের তথা দক্ষিণ রায়ের হাত থেকে তাদের রক্ষা করবেন এই বিশ্বাসে পূজা করেন।
Saturday, 4 December 2021
ঝুলন পুতুল
ঝুলন মানেইউঠোনে, সিড়ির নীচে, বারান্দার এক কোণে কাদা মাটির পাহাড় সাজিয়ে সৈন্য জড়ো করে কিংবা গুহা রাঙিয়ে সেখানে সিংহ-বাঘকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ছেলেবেলায় ঝুলনে মেতেছেন অনেকেই। সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে ছুটেছে কল্পনার উড়ান।
ঝুলন যাত্রা বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম বড় উত্সব রাধা কৃষ্ণের প্রেমের উদযাপন হয় এই উত্সবের মধ্যে দিয়ে। ছোট ছোট পুতুল দিয়ে এদিন বাচ্চারা ঝুলন সাজায়। বিভিন্ন আচার ও সাবেক প্রথা জড়িয়ে আছে বাঙালি সমাজের এই উত্সবটির সঙ্গে।বাঙালির যেমন ঝুলন, তেমনি অবাঙালি মারোয়াড়ি সম্প্রদায়ের মধ্যে জন্মাষ্টমী তে এই পুতুল সাজিয়ে নবজাতক কৃষ্ণের জন্মোৎসব পালন দেখা যায়। তবে এখন পুতুলের পসরা কমে গেছে। দুবছর আগেও প্রচুর বেনারসের কাঠের পুতুল, রাজস্থানী লোক শিল্পের পুতুল আসতো। সেই সাথে কৃষ্ণনগর থেকে কৃষ্ণলীলা র বিভিন্ন মডেল।
অনেক হয়তো এখন ছেলে বেলার কথা মনে পরবে। একটা ধর্মীয় উৎসব কিন্তু পুতুল শিল্প চাঙ্গা করে তুলতে পারে। ঝুলন শুধু উৎসব নয় নিছক। ধর্ম আসলে সমাজ বিজ্ঞান। ঝুলন সাজানো সাথে সাথেই আমরা বুঝতে পারতাম বাস্তুতন্ত্র। অর্থাৎ যে সব পশুপাখি আজকাল বিপন্ন হচ্ছে। তাই হতো না আজকে যদি ঝুলনের মতো উৎসব দিয়ে বাস্তুতন্ত্র খেলার ছলেই বুঝতে পেরে যেতো ছোটরা।
এই পুতুলগুলি দুইভাবে তৈরি করা হয়। কখনও ছাঁচে আলাদাভাবে দুই খোলে বানিয়ে জোড়া দিয়ে, আবার কখনো হাতের আঙুলে টিপে টিপে। পুতুল বানাতে ব্যবহার করা হয় মজে যাওয়া এঁটেল মাটি ও বেলে মাটি। কাঁচা মাটির পুতুল রোদে শুকিয়ে তারপরে দেওয়া হয় রঙের প্রলেপ। রং করতে এলামাটি বা খড়িমাটির সঙ্গে মেশানো হয় গুঁড়ো রং এবং গদের আঁঠা। এইভাবেই মাটির পুতুলগুলি আস্তে আস্তে রঙিন হয়ে ওঠে। মাছ-ধরা পুতুল, সৈন্য পুতুল, হরেক রকমের পুতুল।
ঝুলনে সৈন্য, ঘোড়া, গরু, সব্জি, মাছ বিক্রেতা— এ ধরনের পুতুলের চল বেশি। কিন্তু আগের মতো পুতুল বিক্রি হয় না।চাহিদা না থাকায় বাড়েনি পুতুলের দামও। তবে ঘর সাজানোর জন্যে পুতুল বিক্রি হলেও ঝুলনের জন্য আলাদা করে পুতুলের চাহিদা নেই। আসলে বোধহয় আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ইঁদুর দৌড়ে ব্যাস্ত। তবে যৌথ পরিবার গুলো ভেঙে গেছে। এখন সব ফ্ল্যাট বাড়ি, ঝুলন বা কোথায় করবো আমরা । ঝুলন পুতুল তাই হয়তো হারিয়ে যাবে একদিন।