Monday, 20 December 2021

সাতদেউল।


মন্দির নির্মাণ বাংলার একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। দেবালয় বা দেউল নির্মাণ একটা গৌরবময় ইতিহাস আছে বাংলা র। পাথর দিয়ে মন্দির তৈরি হলেও বাংলা পোড়া মাটির ইটে তৈরি হয়েছিল বিভিন্ন মন্দির।

 হাজার বেশি  বছরের পুরনো এই সব দেউল গুলো এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বাংলা র আনাচে কানাচে।লোকে বলে, বর্ধমান নামটি কিন্তু  জৈন তীর্থঙ্কর বর্ধমান মহাবীরের নাম থেকেই এসেছে।পূর্ব বর্ধমান আঝাপুর, জৈনদের মন্দির - সাতদেউল নির্মাণ হয়েছিল , আনুমানিক খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দী দিকে । নির্মাণ শৈলী দেখার মতো, রেখ দেউল স্থাপত্য এবং প্রবেশ পথ, অসম্ভব সুন্দর ,করবেল আর্চড, ক্রমবর্ধমান খিলানের মতো। 
রাঢ় বাংলার একসময়  রাজাদের  শাসন ছিলো, জৈন ধর্ম প্রচার প্রসার ছিলো তার প্রমান এটি। বর্ধমান থেকে পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার অম্বিকানগর, বিশাল জায়গা জুড়ে জৈনদের দেখা যায়‌ ।বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমানের দামোদর নদের নিকটবর্তী তেলকুপি গ্রাম , তৈলকম্পি বন্দর ছিলো এক সময়।এই সময় অধিকাংশ ধনী ব্যাবসায়ীরা জৈন ধর্ম গ্রহন করেন। তাঁরাই হয়তো এই মন্দির নির্মাণ করেছিলো।

রেলপথে যেতে পারেন এখানে , হাওড়া বর্ধমান কর্ড লাইনের মসাগ্রাম স্টেশনে নেমে যাওয়া যায়। বিকল্প দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে ধরে এসে পালসিট টোল প্লাজার কাছেই আঝাপুর। NH2(19) থেকে মাত্র ১ কিমি দূরেই এই দেউল,  সাইকেল ভ্যান, টোটো যায় এখানে। সাত দেউল নাম হলেও , একটিই দেউল বেঁচে আছে। তাই সময় সুযোগ মতো এই রকম দেউল গুলো ঘুরে আসুন একটু আধটু ভিড় হলে এর গুরুত্ব বুঝে রক্ষা বেক্ষনে যত্নশিল হবে সমাজের প্রভাবশালী মহল।

Thursday, 16 December 2021

কাটুম কুটুম শিল্প


ছবিতে পুতুলটা দেখে  "কাটুম কুটুম শিল্পের" এর কথা মনে পড়লো।  অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম এই শিল্প রীতির প্রচলন করেন।অবিন্দ্রানাথ বাঁশের গাঁট থেকে উড়ন্ত পাখি, গাছের শাখা প্রশাখা থেকে চপ্পল হরিণ, এছাড়া গাছের বাকল, সুপারির খোসা,  নারকেলের ছোবড়া, আমের আঁটি তালের আঁটি, নারকেলের মালাই পাথরের টুকরো, দড়ি ইতালি থেকে গিরগিটি, কুকুর, বেড়াল, মাছ, প্রজাপতি ইত্যাদি তৈরি করলেন এবং তাদের নাম করন করলেন "কাটুম কুটুম" পুতুল।।
 মানুষের ব্যবহৃত ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে যেমন-ফলের বীজ,গাছের শিকড় ছাল এসব কাজে লাগিয়ে শিল্পী তার আপন মনে  ক্যানভাসে একটা ছবি তৈরি করে  শিল্পকলা ফুটিয়ে তোলেন। বীরভূমের আদিবাসী সম্প্রদায়ের  মানুষরা শান্তিনিকেতনের এখনো এই শিল্প সংস্কৃতির বাহক ওরা যেন জন্মসূত্রেই এই পুতুল গুলো বানাতে জানে ,ওরা জানে গাছের শিকড় ছাল ফল ফলের বীজ সংগ্রহ করে কি করে এই সুন্দর শিল্প বানাতে।
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ল অন্য একটি শিল্পী গল্প।বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর এলাকার চূয়া মসিনা গ্রামের দরিদ্র উপজাতি সম্প্রদায়ে জন্ম পবন লোহারের।  পড়ালেখার সঙ্গে ছিল ছবি আঁকার অদ্ভুত টান।  মাধ্যমিক পরীক্ষার পর তিনি চলে গেলেন বোলপুর ছবি আঁকা টানে । সেখানেই কাটুম কুটুম শিল্পের সঙ্গে তাঁর পরিচয়।ছবি আঁকা না হলেও এই শিল্প সাধনায় মগ্ন হয়ে যান তিনি।সামান্য গাছের শিকড় থেকে জন্তু-জানোয়ার বা মানুষের প্রতিকৃতি খুঁজে দেখার জন্য যে চোখ থাকার দরকার, সেটা তো একজন প্রকৃত শিল্পীরই থাকে। তবু হয়তো পাশ্চাত্য ঘরনায় এই শিল্প স্বীকৃতি পায়নি বলেই আমাদের দেশেও অনাদৃত। 
এই শিল্প যেহেতু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি তাই সম্পূর্ন Bio degradable। আপনার সুন্দর সাজানো গোছানো বাড়ি  যদি ওদের শিল্প রাখার জায়গা হয়,কিনবেন ওদের উৎসাহ দিয়ে, বাংলা ও বাঙালির শিল্প ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখবেন।
 সব শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি মনস্ক, সমস্ত বন্ধুদের অনুরোধ করবো, এই কাটুম কুটুম শিল্প কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আর শিল্পীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য পুতুল সংগ্রহ করুন। 
ছবিগুলিতে ক্ষুদে মিষ্টি মেয়েটিই শিল্পী । শহরের ছোট্ট  এই শিল্পী হয়তো খেলার ছলেই নারকেল এর খোসা দিয়ে বানিয়েছে এই পুতুল টি, সে হয়তো জানেই না কাটুম কুটুম শিল্প টা কি তবু সে তৈরি করেছে এই পুতুল গুলো। হতে পারে আপনার ঘরের মেয়ে এরকম পুতুল তৈরি করতে পারে। তাদের অবশ্যই উৎসাহিত করুন। কারণ বাঙালি র শিল্প মনন বাঙালি র অহংকার।

শিল্পী : তপস্যা মণ্ডল 

Manab Mondal

Tuesday, 7 December 2021

মাটির লক্ষী ভান্ডার



 বিখ্যাত শহর থাংশান , এই  শহরটিকে মৃৎশিল্পের শহর বলা হয়। এই শহরটি।চীনের অন্যতম প্রাচীন শহর পেইচিং থেকে ১৫০ কি.মি. উত্তর-পূর্বে অবস্থিত  এই শহরের পথে-প্রান্তরে, বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক গুলোতে মৃৎ শিল্পের বিভিন্ন শিল্পকর্ম দেখতে পাওয়া যায়।  শহরের  প্রায় ৬০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস  আছে, থাংশানের মৃৎশিল্পের উৎপত্তি ও বিকাশের সূত্রপাত মিং রাজবংশের ইয়ুং লে এর সময়ে,  এখানে নানা ধরনের চীনা মাটির ৫০০টিরও বেশি মৃৎশিল্প রয়েছে। এখানকার বিভিন্ন রকম মাটির মধ্যে প্রাচীন স্থাপত্য চীনামাটি, স্বাস্থ্যসম্মত চীনামাটি, শিল্পায়ন চীনামাটি, হাইটেক চীনামাটি, শিল্পকলা চীনামাটি ইত্যাদি অন্যতম। আবার শিয়া মহাদেশের মৃৎশিল্পের ইতিহাসে দেখা যায়, খ্রিস্টীয় ১৩ শতকে সং রাজবংশের সময় চীনে তৈরি হতো"সেলাডন' নামক মাটির তৈরি বাসনপত্র ও শো-পিস। এগুলোকে বলা হতো '  চীনারাই সর্বপ্রথম সেলাডন প্রস্তুত করেছিল।  চীনারা এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় সেলাডন রপ্তানি শুরু করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই সেলাডনগুলো মৌলিক সৌন্দর্যগুণে তুরস্কের শাসকসহ অন্যান্য শাসক এবং রাজাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।


ইতিহাস এর পাতা উল্টিয়ে দেখলে  সমস্ত উন্নত সংস্কৃতিতে মৃৎশিল্পের   শৈল্পিক প্রমাণ আছে। ২০০০ বছর আগে বিলুপ্ত আফ্রিকান নোক সংস্কৃতির মাটির তৈরি জিনিসপত্র আজকে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে  আছে।   কুমারের চাকা সম্ভবত মেসোপটেমিয়া এ ৪ র্থ সহস্রাব্দে মেসোপটেমিয়া আবিষ্কার করা হয়েছিল।বর্তমান যুগে যেসমস্ত সংস্কৃতি তাদের উৎকৃষ্ট মৃৎশিল্পের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সেগুলির মধ্যে আছে চীনা মৃৎশিল্প, ভারতীয় উপমহাদেশের মৃৎশিল্প, ভূমধ্যসাগরের ক্রিট দ্বীপীয় মৃৎশিল্প, গ্রিক মৃৎশিল্প, পারসিক মৃৎশিল্প, মায়া সভ্যতার মৃৎশিল্প, জাপানি ও কোরীয় মৃৎশিল্প, এবং আধুনিক পাশ্চাত্য সংস্কৃতিগুলিতে  মৃৎশিল্প উল্লেখযোগ্য ছিলো।




মৃৎশিল্পের মৌলিক উপাদানগুলি হল মৃন্ময় বস্তুর আকৃতি, এটির বাহিরের  রঙচিত্র অঙ্কন করে বা খোদাই করে শোভাবর্ধন, এবং এটির উপরের চকচকে প্রলেপ দেওয়া হয়েছে কোথাও কোথাও। ইতিহাসের পর্বভেদে ও সংস্কৃতিভেদে এই উপাদানগুলির উপরে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় জোর দেওয়া হয়েছে, এটাই পার্থক্য। বাংলার মৃৎ শিল্প অনেক প্রাচীন, অনেক ই অনুমান মহেঞ্জোদারো সমসাময়িক আমাদের শিল্প। ধাতু আর প্লাসিক ব্যবহারে জন্য এ শিল্পের চাহিদা কমছে। কিন্তু এ শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের ই পন্য চাহিদা তৈরি করতে হবে। যেমন ধরুন, মাটির ব্যাংক বা মাটির লক্ষী ভান্ডার।




নামটা শুনে ই ছেলেবেলা ফিরে গেলেন নিশ্চিত। মাটির রুই মাছ, পশু পাখি, ফল। একটা ছোট ছিদ্র থাকতো পয়সা ফেলার। পয়সা ফেলার পর প্রতি বার আমরা মাটির ব্যাংকটা ঝাকিয়ে শব্দ শুনতাম। মাটির ব্যাংকে কাঁচা পয়সার শব্দ মনের মধ্যে এক ধরনের শিহরণ জাগাতো। এরপর সেই মাটির ব্যাংকও কোনো এক বিপদের দিনে সেটা ভেঙে ফেলা হতো। এটার চাহিদা আছে এখনো।


Monday, 6 December 2021

বনবিবি

বনবিবির সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি বনভূমির আধিপত্য দক্ষিণ রায়ের কাছ থেকে হস্তান্তরিত হয় বনবিবিতে। এই বন বিবির বাহন হিসেবে বাঘ , কুমির হরিন কে দেখা যায়।  জল রাজ্যের অধিপতি কালু রায়ের সঙ্গে সেই অর্থে বনবিবির কোন বিরোধ ছিল না বরং বন্ধু ছিলেন। জলের দানব কুমির কল্পনায় কালু রায়েরই বাহন । বনবিবির বাহন হিসেবে মুরগি কেও দেখা যায় । বনবিবি বা বনদূর্গা দক্ষিণ রায় অর্থাৎ বাঘকে যুদ্ধে হারিয়ে ছিলেন। তাই বাঘকে বনবিবির বাহন হিসেবে দেখা যায় সব জায়গায়। কিন্তু হরিন বাহন কেন?



সুন্দরবনের  বকুলতলা থানার হরিনবাহিনী বনবিবি  সম্পর্কে, গবেষক সঞ্জয় ঘোষ বলছেন "দি রেভিনিউ হিস্ট্রি অফ সুন্দরবনস, ভলিউম টু বাই এফ ডি এস্কোলি্‌ ,পৃষ্ঠা ২১৬ বলা হয়েছে নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে সুন্দরবনে হরিন ধান ক্ষেতের খুব ক্ষতি করে।মনে হয় এ  কারনে হরিনবাহিনী বনবিবি পূজা শুরু হয়।তবে এটা  পর্যন্ত জানা তথ্য।হরিন যুক্ত নাম পাওয়া যায় দক্ষিন বারাসাতে রামরুদ্রপুর মৌজায় হরিনখালির বাদায় জেলার  এ  পর্যন্ত জানা সবার বড় বাঘ বাহিনী বনবিবি পূজা ও মেলা হয়।আমার গরু খোঁজ়া অনুযায়ী বনবিবির উৎস মেদিনীপুরের     আদিবাসী সমাজের পূজিত বড়াম দেবী।এই বড়াম মেদিনীপুর আগত সুন্দরবনের আদি বসিন্দা দের বিশালাক্ষ্মী দেবীতে রুপান্তরিত হয় যখন তারা ট্রাইব থেকে কাস্ট  বিবর্তিত হন।মুসলিম আগমনের পর এই বিশালাক্ষ্মী দেবী বনবিবিতে রূপান্তরিত হন মাত্র।তাঁর বাহন থাকে বাঘ।"


গবেষক কবি সমীরণ মন্ডল বলেছেন"বনবিবি পুজো কী ব্রিটিশ পরবর্তী সুন্দরবনে আবাদ করার সময় শুরু হয়ে থাকবে? মেদিনীপুর থেকে এই সংস্কৃতি আমদানি হলে মনে হয় তার আগে মেদিনীপুরের লোক সেভাবে আসেনি। গল্প অনুযায়ী বনবীবী স্বামী পরিত্যক্ত মহিলার সন্তান। পরে মা ফিরে গেলেও বন হরিণের দুধে পালিত হন বনবিবি সাহজঙ্গুলি। এখানে হরিণ আসতে পারে ধারক, বাহক, পালক হিসাবে। "

কুক্কুট বা মুরগী জাতীয় পাখি , গোধা , কুমীর , বাঘ, মহিষ , ষাঁড় সবই উমার বাহন হিসাবে এক এক সময় গৃহীত । এই গুলি বনবিবির বিবর্তনে কোন ভাবে বাদ দেওয়া যায়না । আঞ্চলিক প্রয়োজনে বাহন গুলি আঞ্চলিক দেবীদের ক্ষেত্রে গৃহীত হয় ।


সোদপুরের কর্নমাধবপুর অঞ্চলে অবস্থিত মা বনবিবি-র মন্দিরে। এই মন্দিরে কোন দেবী মূর্তি নেই।  বনের পশুরাই দেবীর প্রতিকি হিসেবে পূজিত হয়। আর এখানে হরিন দেখা যায়।




বনবিবি বা বনদেবী বা ব্যাঘ্রদেবী একইসাথে হিন্দু ধর্মের দেবী ও  বনবাসী মুসলমানদের পীরানি।বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের  মধু আহরণকারী ও কাঠুরে জনগোষ্ঠী বাঘের আক্রমণ হতে রক্ষা পেতে বনবিবির পূজো করেন। দক্ষিণরায় (রায়মণি) হিংস্র বাঘের ছদ্মবেশে মানুষের উপর হামলা করে।মধু সংগ্রাহক, কাঠুরে, মৎসজীবী মানুষের দেবী বনবিবি, বাঘের তথা দক্ষিণ রায়ের হাত থেকে তাদের রক্ষা করবেন এই বিশ্বাসে পূজা করেন।


Saturday, 4 December 2021

ঝুলন পুতুল

ঝুলন মানেইউঠোনে, সিড়ির নীচে, বারান্দার এক কোণে কাদা মাটির পাহাড় সাজিয়ে সৈন্য জড়ো করে কিংবা গুহা রাঙিয়ে সেখানে সিংহ-বাঘকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ছেলেবেলায় ঝুলনে মেতেছেন অনেকেই। সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে ছুটেছে কল্পনার উড়ান। 

ঝুলন যাত্রা বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম বড় উত্‍সব রাধা কৃষ্ণের প্রেমের উদযাপন হয় এই উত্‍সবের মধ্যে দিয়ে। ছোট ছোট পুতুল দিয়ে এদিন বাচ্চারা ঝুলন সাজায়। বিভিন্ন আচার ও সাবেক প্রথা জড়িয়ে আছে বাঙালি সমাজের এই উত্‍সবটির সঙ্গে।বাঙালির যেমন ঝুলন, তেমনি অবাঙালি মারোয়াড়ি সম্প্রদায়ের মধ্যে জন্মাষ্টমী তে এই পুতুল সাজিয়ে নবজাতক কৃষ্ণের জন্মোৎসব পালন দেখা যায়। তবে এখন পুতুলের পসরা কমে গেছে। দুবছর আগেও প্রচুর বেনারসের কাঠের পুতুল, রাজস্থানী লোক শিল্পের পুতুল আসতো। সেই সাথে কৃষ্ণনগর থেকে কৃষ্ণলীলা র বিভিন্ন মডেল।

অনেক হয়তো এখন ছেলে বেলার কথা মনে পরবে। একটা ধর্মীয় উৎসব কিন্তু পুতুল শিল্প চাঙ্গা করে তুলতে পারে। ঝুলন শুধু উৎসব নয় নিছক। ধর্ম আসলে সমাজ বিজ্ঞান। ঝুলন সাজানো সাথে সাথেই আমরা বুঝতে পারতাম বাস্তুতন্ত্র। অর্থাৎ যে সব  পশুপাখি আজকাল বিপন্ন হচ্ছে। তাই হতো না আজকে যদি ঝুলনের মতো উৎসব দিয়ে বাস্তুতন্ত্র খেলার ছলেই বুঝতে পেরে যেতো ছোটরা।

এই পুতুলগুলি দুইভাবে তৈরি করা হয়। কখনও ছাঁচে আলাদাভাবে দুই খোলে বানিয়ে জোড়া দিয়ে, আবার কখনো হাতের আঙুলে টিপে টিপে। পুতুল বানাতে ব্যবহার করা হয় মজে যাওয়া এঁটেল মাটি ও বেলে মাটি। কাঁচা মাটির পুতুল রোদে শুকিয়ে তারপরে দেওয়া হয় রঙের প্রলেপ। রং করতে এলামাটি বা খড়িমাটির সঙ্গে মেশানো হয় গুঁড়ো রং এবং গদের আঁঠা। এইভাবেই মাটির পুতুলগুলি আস্তে আস্তে রঙিন হয়ে ওঠে।  মাছ-ধরা পুতুল,  সৈন্য পুতুল, হরেক রকমের পুতুল।

ঝুলনে সৈন্য, ঘোড়া, গরু, সব্জি, মাছ বিক্রেতা— এ ধরনের পুতুলের চল বেশি। কিন্তু আগের মতো পুতুল বিক্রি হয় না।চাহিদা না থাকায় বাড়েনি পুতুলের দামও। তবে ঘর সাজানোর জন্যে পুতুল বিক্রি হলেও ঝুলনের জন্য আলাদা করে পুতুলের চাহিদা নেই। আসলে বোধহয় আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ইঁদুর দৌড়ে ব্যাস্ত। তবে যৌথ পরিবার গুলো ভেঙে গেছে। এখন সব ফ্ল্যাট বাড়ি, ঝুলন বা কোথায় করবো আমরা । ঝুলন পুতুল তাই হয়তো হারিয়ে যাবে একদিন।

st Francis Xavier's church

আজ ০৩/১২/২০১২, বাংলায় নিশ্চিত ক্ষুদিরাম বসু র জন্মদিন নিয়ে উৎসব অনুষ্ঠান সবাই ব্যস্ত। এখান থেকেই বোঝা যায় ভারত শুধুমাত্র একটি যুক্ত রাষ্ট্র, যেখানে প্রতিটা অঞ্চলের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। জোর করে এক ভারত বানাতে একটি ধর্ম, একটি ভাষা একটি সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে পারবে না। না না আজকাল একটি ভাষা সব রাজ্যের ওপর দাদাগিরি করতে চায় তাই বললাম আর কি! ভারত প্রতিটি রাজ্য গঠিত হয়েছে ভাষা সংস্কৃতি দিয়ে, ধর্মের ভিত্তিতে নয়। গোয়া, আর গয়ার মধ্যে মিল পাবেন না।
তাই হয়তো গোয়াতে আমার দিনটা কালো অন্য রকম। আজ দিনেটা আমি কাটালাম বম জেসুস গির্জায়।বম জেসুস অর্থাৎ পবিত্র যীশু। সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ারকে উত্সর্গীকৃত গির্জা এটি । আজ  বার্ষিক নন-ফিট কিসিং সেন্টস ডে । এই সাধুকে  গোয়ার জনপ্রিয় দেবতা গোয়েঞ্চো সাইব নামে অভিহিত করা হয় । প্রতি বছর, বহু শতাব্দী ধরে গোয়ানদের আশীর্বাদ করার জন্য সাধুকে ধন্যবাদ জানাতে আজ বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়। যদিও নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয় এই উৎসব । ওল্ড গোয়ার প্রাচীনতম এবং খুব বিখ্যাত গির্জার একটি। অবশ্যই গোয়ার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থান। গির্জা, যাদুঘর, টাওয়ার গুলো শুধু   দেখার নয় অনেক কিছু অন্বেষণ করার  বা জানার জন্য এই জায়গাতে প্রচুর জিনিস রয়েছে। চার্চটি সুন্দর এবং প্রাচীন কাঠামো অসাধারণ। যদি আজ ছবি তোলার সুযোগ ছিলো না। আরো একদিন যাওয়া নিমন্ত্রণ পেলাম যদিও। সেন্ট অগাস্টিন টাওয়ারটি কাছে, এখানে অনেক সংগ্রহশালাও রয়েছে, যাদুঘর রয়েছে। গোয়ার ইতিহাস জানতেও দেখার জন্য একটি ভাল জায়গা।মূল গ্রীজায় বারোক শৈলীর  নিদর্শন মূল বেদীটি সোনালি করা এবং এতে সলোমনিক স্তম্ভগুলির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা লয়োলার ইগনাশিয়াসের মূর্তি রয়েছে যার উপরে IHS মনোগ্রাম এবং পবিত্র ট্রিনিটিতে যিশুর নাম রয়েছে।

আজ গির্জার মধ্যে  মূল আকর্ষণ হলো কোনো রাসায়নিক সূত্র ছাড়াই সংরক্ষিত সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ারের পবিত্র দেহ  । এটি প্রতি 10 বছরে একবার নামিয়ে আনা হয়। গির্জার নির্মাণ কাজ 1594 সালে শুরু হয়। গির্জাটি 1605 সালের মে মাসে আর্চবিশপ, ডোম ফর দ্বারা পবিত্র করা হয়েছিল। খ্রিস্টধর্মের ইতিহাসে এটি একটি  ঐতিহ্যের স্মৃতিস্তম্ভ  হিসেবে পরিচিত । এটিতেই সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ারের মৃতদেহ রয়েছে।

তিনি 1506 সালে বর্তমানে স্পেনের নাভারে অঞ্চলের জেভিয়ার ক্যাসেলে জন্মগ্রহণ করেন।ফ্রান্সিস জেভিয়ার ফ্রান্সে একজন পণ্ডিত হিসাবে তাঁর জীবন শুরু করেন। তিনি ইতালিতে ভ্রমণ করেন এবং প্রচার করেন এবং তারপর 1541 সালে একজন ধর্মপ্রচারক হিসাবে গোয়া আসেন। সেন্ট ইগনাশিয়াস লয়োলার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু, যার সাথে তিনি সোসাইটি অফ জেসুস (জেসুইট) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । ফ্রান্সিস জেভিয়ার মারা যান Sancian দ্বীপ, 3 ডিসেম্বর 1552।ফ্রান্সিস জেভিয়ারের মৃতদেহ প্রথমে পর্তুগিজ মালাক্কায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং দুই বছর পর গোয়ায় আনা হয়। কথিত আছে যে, সাধুর মৃতদেহ দাফনের দিনের মতোই সতেজ ছিল। সাধুর দেহাবশেষ এখনও সারা বিশ্ব থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের  আকর্ষণ করে, বিশেষ করে প্রতি দশ বছরে তার দেহকে জনসাধারণের দেখার সময়। কথিত আছে যে 1554 সালে একজন অতি উৎসাহী উপাসক তার ডান পায়ের গোলাপী আঙুলটি কেটে ফেলেছিল,  তখন কথিতভাবে জীবিত দেহ থেকে রক্ত ​​বের হয়েছিল। বলা হয় সাধুর  অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে।
এটি গোয়া এবং ভারতের প্রাচীনতম গির্জাগুলির মধ্যে একটি । মেঝে মার্বেল মূল্যবান পাথর দিয়ে জড়ানো। বিস্তৃত সোনালী বেদি ছাড়াও গির্জার অভ্যন্তরটি অসাধারণ। মূল বেদিতে লোয়োলার সেন্ট ইগনাশিয়াসের একটি বড় মূর্তি রয়েছে , যিনি সোসাইটি অফ জেসুস ( জেসুইটস ) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ফ্রান্সিস জেভিয়ারের একজন সঙ্গী ছিলেন ।
 একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো 1545 সালে, জেভিয়ার পোপকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেন যে গোয়াতে ইনকুইজিশন আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হোক।( গোয়া ইনকুইজিশন নিয়ে পরে একদিন গল্প হবে।)
আজ এখানে মেলা ছিলো। হরেক দোকানে র মাঝে এই মেলাতে সেই পুরনো দিনের যাতা, শিলনোড়াও হামাল দিস্তা দেখলাম।
( প্রিয়া সারদ উপদেশে, গোয়ার ডাইরি শুরু করলাম। মতামত জানান, লেখা টা কি ধারাবাহিক চালাবো কিনা।)
🙏 Manab Mondal 🙏