Thursday, 9 June 2022

রাঢ়ের দশোহরা

রূঢ় বাংলায় দশোহরার ভোরবেলায় সব বাড়িতেই সারা হয়ে যায় পুজো। আগে মনসা গাছের তলায় এই পুজো করা হত বলে মনে করা হয় এটি মনসা পুজো। কিন্তু আসলে জৈষ্ঠ্যমাসে শুক্লা দশমী তিথিতে মা গঙ্গা মর্ত্যে প্রথম প্রকট হয়েছিলেন বলে পৌরাণিক কাহিনীতে বলা আছে । এ বলা আছে এই বিশেষ তিথিতে বা দিনে  গঙ্গাস্নান করলে দশ প্রকার পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায় তাই দশ প্রকার পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যই এর নাম দশোহরা।
তবে নানা মুনির নানা মত , কেউ একে দেবী মনসার পুজো বলে মনে সাপেদের জন্য রাখে  দুধ-কলা। লোকজন বিশ্বাস করেন মনসা দেবীকে সন্তুষ্ট করতে পারলে সর্পদংশন থেকে রেহাই পাওয়া যাবে এবং দেবী পীতবর্ণা হওয়ায়, দেবী লক্ষ্মীর সহরূপা হিসাবে ধরা হয় তাঁকে, তাই উনি সন্তুষ্ট হলে নাগ-নাগিনীরা আশীর্বাদ স্বরূপ দেবীর শরণাগতকে সর্বসম্পদ দান করেন। 
ভালো করে লক্ষ্য করুন লক্ষীর বাহন পেঁচা আর মনসা সাপেদের দেবী। বাংলার শষ্য ক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো ইঁদুর এবং এই ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষা কর্তা হলো পঁচা এবং সাপ। হিন্দু সংস্কৃতি আসলে সেই সমাজ বিজ্ঞান দিয়ে গঠিত যেখানে কৃষি সংস্কৃতিকে সমর্থন করে। আমাদের বাস্তুতন্ত্রকে সন্মান করতে শেখে। দিনে পাঁচ বার মাথা ঠুকে মৃত্যু পরে ৭২ হুরের সাথে সহবাসের ইচ্ছে তাদের নেই। তাঁরা কর্ম সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী।

যাইহোক সে কথা কথিত আছে, এইদিনে গঙ্গাস্নান পর দশটি ফুল,দশটি ফল,দশটি প্রদীপ দিয়ে পুজোর পূজা করলে মঙ্গল হয় আপানার। বা অনেকের মতে দশোহরা দশ প্রকার  বিনাশ করে। অর্থাৎ  আপনাকে এই পাপ করা থেকে বিরত হবার নির্দেশ দেয়। তাই দিনটি নাম হয়েছে দশোহরা।
রাঢ় অঞ্চলে দশোহরা "দশর "নামে  পরিচিত।রাঢ় অঞ্চলের মানুষেরা সূর্য ওঠার আগে তাদের ঘরবাড়িগুলোতে গোবরগোলা জলের বেড়ি দিয়ে ঘিরে দেন। হিন্দুধর্মে গরু মা ভগবতীর অবতার।  গরুর গোবরের তাই তাৎপর্য আছে । তাছাড়া গোবরের জীবাণুনাশক ক্ষমতা রোগজীবাণু ধ্বংস করে বিশ্বাস আছে । এই বেড়ি সাপ এবং বিভিন্ন রকম ক্ষতিকর কীটপতঙ্গকে ঘর ঢুকতে দেয় না বলে বিশ্বাস করে সবাই ।তাই দশরের  দিন  বা দশোহরার দিন ।  গোবরজলের বেড়ি দিয়ে ঘরকে সুরক্ষিত করা হয় । লোকবিশ্বাস হলো মানুষের হিংস্র প্রবৃত্তিগুলির  সাপের বিষের মতোই  তাই নিজেদের ভেতরের সেই হিংস্র প্রবৃত্তিগুলিকে দমন করতে আর নিজেদের শরীরকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য মনসা পুজোতে  তার প্রসাদে  হিসাবে  একটি তেতো ফল ব্যবহার করে। স্থানীয়  মানুষের কেল্যাকড়া বলে। লোক বিশ্বাস মানুষের মনের খারাপ  চিন্তা গুলো ত্যাগ করে । এইদিন মরসুমি ফল আম খাওয়ার চল আছে। এই পুজো করা হয় পারিবারিক সুখ-শান্তি বজায় রাখতে ও মা মনসার কৃপায় ঐশ্বর্য্যলাভ করতে।  দশরের মাহাত্ম্য রাঢ় অঞ্চলে  বেশ  গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয়।এইদিন ঘুড়ি উৎসব পালন করা হয় জাঁকজম করে।

No comments:

Post a Comment