Wednesday, 8 June 2022

জলভরা সন্দেহ

জামাই ঠকিয়ে জামাইষষ্ঠী
ভাবছেন জামাইষষ্ঠীরও আবার ইতিহাস!না না, ইতিহাসটা ঠিক জামাইষষ্ঠীর না,তবে একে জড়িয়ে সৃষ্টি হওয়া এক অতি জনপ্রিয় জিনিসের।
শাশুড়িদের কাছে জামাই মাত্রই আদর যত্ন করার পাত্র,সে ঘোমটা ঢেকে বাতাস করা শাশুড়িই হোক বা আধুনিক শাশুড়িই হোক।জামাই এলে এমনি দিনেও চলে বিশেষ আয়োজন তবে জামাইষষ্ঠীর দিন সেই আয়োজন হয় বেহিসাবী। 
সন ১২৯০ বঙ্গাব্দ, ভদ্রেশ্বরের তেলেনীপাড়ার ব্যানার্জী জমিদার গিন্নির সখ হয়েছিল নতুন জামাইকে তিনি নতুন কোনো মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করবেন।সেই সখ জমিদার মশায়ের কানে পৌঁছতেই এক্ষেত্রে হলো গিন্নির ইচ্ছায় কর্ম।জমিদার বাড়িতে ডাক পড়লো এলাকার প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন বিক্রেতা সূর্যকুমার মোদকের,তাকে হুকুম করা হলো এমন অভিনব মিষ্টি বানাতে হবে তাকে যাতে মিষ্টি দিয়ে হবে জামাই ঠকানো।সূর্যমোদক তো বেজায় চিন্তায় পড়লেন,কি হবে উপায়!জমিদারের আদেশ বলে কথা।অনেক ভেবে সূর্যমোদক তালশাস আকৃতির একটি সন্দেশ তৈরি করলেন,যার ভিতরে ভরে দিলেন সুগন্ধী গোলাপ মেশানো দোলোর রস(সেকালে গুড়কে পাক দিয়ে যে চিনি তৈরি হতো তাকে দোলো বলা হতো)। আর সন্দেশের আকারও ছিল তেমন বড়ো,হাতের তালুর সমান প্রায়।নতুন মিষ্টি তৈরি হয়ে বিশেষ দিনে পাঠানো হলো জমিদারবাড়ির অন্দরে।জামাইয়ের সামনে পঞ্চব্যাঞ্জনের শেষ পাতে রাখা হলো সেই মিষ্টি।নব জামাতা যেই না কামড় দিলেন অমনি সন্দেশের ভিতরের রস ছিটকে তার গরদের পাঞ্জাবী দিল ভিজিয়ে।ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল জামাই,তবে সন্দেশের স্বাদ মন ভরিয়ে দিল।জমিদার গিন্নি বেজায় খুশি এমনটাই তো  তিনি চেয়েছিলেন ।মিষ্টিমুখে জামাই ঠকানো।জমিদার বাড়ির মহিলামহলে হাসির ফোয়ারা ছুটলো।দিকে দিকে এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লো।বাংলার মিষ্টি জগতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল জলভরা তালশাস সন্দেশ।
বিখ্যাত সূর্য মোদকের জলভরা সন্দেশের এই ছিল জন্ম বৃত্তান্ত।যাত্রা শুরু হলো জলভরার।
এখন যদিও হরেক রকম জিনিস ভরা তালশাস পাওয়া যায়,গোলাপ জল তো ছিলই,শীতকালে নলেন গুড়,স্ট্রবেরী, ক্যাডবেরি,গরম কালে আমের জলভরাও পাওয়া যায়।
তাইতো বলে,"চন্দননগরের জলভরা,জামাই ঠকিয়ে আজও সেরা"

No comments:

Post a Comment