Thursday, 25 August 2022

দূর্গা প্রতিমা গড়তে পতিতালয় বা রেড লাইট এরিয়ার মাটি কেন লাগে?

আমি বারবার বলার চেষ্টা করছি, ধর্ম আসলে একটা সমাজ বিজ্ঞান। সমাজকে সুস্থ ভাবে চালানোর জন্য এখানে বিভিন্ন রিতি নীতি চালু হয়। দূর্গা প্রতিমা বানতে ব্যাশা পল্লীর মাটি লাগে। ভাবুন সমাজ যাঁদের দূরে ঠেলে দিয়েছে, অবজ্ঞা আর বঞ্চনার পাহাড় সম দেওয়াল তুলেছে। ঘৃণা আর নোংরা দৃষ্টি ছাড়া যাঁদের  কিছুই জোটেনাতাঁদের ঘরের মাটিই দেবীমূর্তির অপরিহার্য অঙ্গ ৷
 পুরুষ মানুষ পতিতালয়ে গিয়ে যখন বারাঙ্গনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে তিনি জীবনে সঞ্চিত সমস্ত পুণ্য সেখানেই ফেলে আসেন ৷ হিন্দু রা  বিশ্বাস করেন যে, মানুষের মধ্যে যে কামনা, বাসনা, লালসার বাস করে পতিতারা তা নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেন। তাঁরা নিজেদের অশুদ্ধ, অপবিত্র করে সমাজকে শুদ্ধ ও পবিত্র রাখে। ফলে হাজার হাজার পুরুষের পুণ্যে বেশ্যাদ্বারের মাটি হয়ে ওঠে পবিত্র ৷ সে কারণেই এই মাটি দিয়ে গড়তে হয় দেবী মূর্তি ৷ 
।নারীকে পতিতা বানায় পুরুষরাই। তাই ঐ পুরুষরাই অপবিত্র। মায়ের প্রতিমা তৈরীতে পতিতালয়ের মাটি দিতে হয় অর্থাৎ যাঁরা এই পরিস্থিতির শিকার তাঁদের সম্মান করতে হবে। নারী কোখনও অপবিত্র হতে পারে না, এই ধারণাটিই লুকিয়ে থাকে এই রীতির আড়ালে।

এবার আসি শ্রাস্ত্র কথায়। দেবীপ্রতিষ্ঠার সময় বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা দিয়ে মহাস্নান, অভিষেক করানোর যে বিধান আছে তার সাধারণ মানুষ মনে করেন বেশ্যাদ্বার মানে পতিতা লয়ের  দ্বারের মাটি। বহু ক্ষেত্রে তন্ত্রে শ্লোকে যে আক্ষরিক অর্থ দেখা যায় তা ঠিক নয়। ওগুলোর নিহিত অর্থ অন্য।
বেশ্যা শব্দটি ব্যভিচারিণী কুলটা নারীকে বোঝায় না। কালী , ত্রিপুরা  তারা প্রভৃতি দশমহাবিদ্যা কুণ্ডলিনী শক্তির প্রতীক। কুলকুণ্ডলিনী শক্তি বেশ্যা পদবাচ্য কারণ কুণ্ডলিনী শক্তি মুলাধার থেকে সহস্রার পর্যন্ত্য প্রতিটি চক্রে ষড়শিবের সঙ্গে রমণ করতে করতে সহস্রারে পরমশিবে মিলিত হন। এই শক্তির দশধা প্রকাশ দশমহাবিদ্যা। তাই পূর্ণাভিষিক্ত শক্তি এই মহাবিদ্যাদের আবরণ দেবতার মধ্যে সন্নিবিষ্টা হন বলে তাকে 'বেশ্যা'  বলা হয়।
 ‘‘এবংবিধা ভবেদ্দেশ্যা ন বেশ্যা কুলটা প্রিয়ে। কুলটাসঙ্গমাদ্দেবী রৌরবং নরকং ব্রজেৎ॥"

মহানির্ব্বাণ তন্ত্রে দেখা যায় পূর্ণাভিষিক্ত পুরুষ ও পূর্ণাভিষিক্তা স্ত্রী স্থানে চক্রানুষ্ঠান পূর্ব্বক সাধনমার্গের চূড়ান্ত স্তরে উপনীত হন সেই স্থানের  মৃত্তিকাকে বেশ‍্যাদ্বার মৃত্তিকা বলে।

ফলে গুরুগৃহের মাটি বা কোনও সিদ্ধপীঠস্থান বা সতীপীঠের মাটি ব্যবহারের অনুমতি আছে। দশবিধ অনুযায়ী মাটির অভাবে শুধুমাত্র গঙ্গামাটি দিয়েও মায়ের মহাস্নান সম্পন্ন করার বিধান আছে শাস্ত্রে কারণ গঙ্গা সর্ব তীর্থময়ী। 

এদিকে সমাজ বিজ্ঞান বলে পতিতা বানায় পুরুষরাই। তাই ঐ পুরুষরাই অপবিত্র। মায়ের প্রতিমা তৈরীতে পতিতালয়ের মাটি দিতে হয় অর্থাৎ যাঁরা এই পরিস্থিতির শিকার তাঁদের সম্মান করতে হবে। নারী কোখনও অপবিত্র হতে পারে না, এই ধারণাটিই লুকিয়ে থাকে এই রীতির আড়ালে ৷ পুরাণ কাহিনী মতে, ঋষিবর বিশ্বামিত্র ইন্দ্রের সমান ক্ষমতাধর হওয়ার জন্য কঠোর তপস্যায় ব্রতী করেছিলেন। ইন্দ্ৰ কোনোভাবেই তাকে বিরত করতে স্বর্গের অপ্সরাকে পাঠালেন। কঠোর তপস্যা রত বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভঙ্গ হলো। ইন্দ্রের ইচ্ছা পূর্ণ কামাতুর বিশ্বামিত্র মেনকায় লোভের শিকার হলেন।  মেনকা যদিও অষ্টসতীর কেউ নন, তবুও তিনি নারীজাতির প্রতিনিধি। তিনি  নিজে কলঙ্ক এর  বিষ ধারণ করে, তাকেই সম্মান জানানোই সামাজিক রীতি। কাজেই, দুর্গা প্রতিমা গড়ার মধ্যে থাকবে গম্ভীর মূত্র, গোবর, ধানের শীষ ও পতিতালয়ের মাটি - এই চারটি মূল উপাদান।তবে মহামায়া নটি রূপে পূজিত হন । ম মা দুর্গা যেহেতু সমগ্র নারী শক্তির প্রতিক তাই এই রীতিটির মাধ্যমে, পতিতাকেও সমগ্র নারী জাতির এক অঙ্গ হিসেবে দেখা হয় । তাই দুর্গাপুজোয় অষ্ট কন্যার ঘরের মাটি নেবার পর নবম কন্যা হিসেবে পতিতালয়ের মাটি সংগ্রহ করা হয়। এই নব কন্যা হলেন নর্তকী বা অভিনেত্রী, কাপালিনি, ধোপানি, নাপিতানি, ব্রাহ্মণী, শূদ্রাণী, গোয়ালিনী, মালিনী ও পতিতা । আর দূর্গা পূজার মূল উদ্দেশ্য যেহেতু নারীজাতিকে সম্মান দেখানো তাই পতিতাকেও এখানে সম্মান দেখানোর রীতি আদিকাল থেকেই চলে আসছে। ধোপানি, নাপিতানি, ব্রাহ্মণী, শূদ্রাণী, গোয়ালিনী, মালিনী ও পতিতা । আর দূর্গা পূজার মূল উদ্দেশ্য যেহেতু নারীজাতিকে সম্মান দেখানো তাই পতিতাকেও এখানে সম্মান দেখানোর রীতি আদিকাল থেকেই চলে আসছে।

No comments:

Post a Comment