তবে একসময় বাংলায় এই দিন রাতে কিশোর যুবকেরা ভূত-প্রেত তাড়াতে মধ্য রাতে টায়ার আর মশাল জ্বালিয়ে পাড়াময় ঘুরে বেড়াত। শহর এবং গ্রাম সবজায়গায় এই উৎসব পালিত হতো মহা আনন্দে।
গারসী সংক্রান্তি’ দিন থেকে কার্তিক পূজার দিন থেকে পর্যন্ত একমাস আগে গ্রাম বাংলায় প্রতি বাড়িতে ‘আকাশ প্রদীপ’দেওয়া হতো। সাধারণত উঠানের কোণে উঁচু বাঁশ পোঁতা হতো। তাতে কপিকল দিয়ে এই বাঁশের মাথায় তুলে দেওয়া হতো ‘আকাশবাতি’ পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্য।
তবে এই ব্রত কে অরন্ধন উৎসব বলা যেতে পারে। আশ্বিন মাসের শেষ দিনের সকাল বাড়ির উঠোনের তুলসীতলা নিকোন করা মধ্যে দিয়ে শুরু হয় এই ব্রত। তুলসী হল এই ব্রতের আচার মূল জায়গা। কাকভোরে 'গারুর' বা 'গারসি'-র ডাল রান্না করা মধ্য দিয়েই এই ব্রতের মূল কাজ। ব্রতের শেষে এই ডালই বাড়ির মেয়ে বউরা খেয়ে থাকেন। খেসারির ডালে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি মিলিয়ে এই ডাল তৈরি করা হয়। ঝিঙে, আলু, পটল, লাউ, গাঁটি, মুলো, কুমড়ো ডাটা, কুমড়ো ইত্যাদি সব সব্জির দেওয়া হয় এতে। কারণ দেবীকে প্রার্থনা করা হয় যেন বারোমাস এই শাক-সবজি পাওয়া যায় তাদের বাগানে । তবে সবজির কচু শাক প্রধান।বাংলার মাঠ ঘাটে পাওয়া যাওয়া মানকচু, দুধকচু, কৃষ্ণকচু - যত ধরনের কচু সব দেওয়ার রীতি আছে এতে । কারণ লোক বিশ্বাস কচুতে থাকা জৈব উপাদান রোগজীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে।
এই রান্নাকে আসমবারি বলা হয়। এই রান্নায় হলুদ তেল ব্যবহার হবে না। আসমবারির সব কিছুকেই সেদ্ধ করতে হয় ডালের সঙ্গে। বিজ্ঞান সম্মত ভাবে একদম স্বাস্থ্যকর খাবার।
স্নানের আগে কাটা সবজি টুকরো দাঁত দিয়ে কেটে পিছনের না তাকিয়ে ফেলে ছুড়ে ফেলে দেয় মেয়েরা। তারপর মনে মনে বলে ‘অলক্ষ্মী দূরে যা লক্ষ্মী ঘরে আয়'। স্নানের পর পবিত্র হয়ে ব্রতীরা জরো হয় তুলসী মণ্ডপে ব্রত কথা শুনতে। এক ঘটি জল আর বিজোড় সংখ্যার আম্রপল্লব রাখে সবাই। স্বস্তিক চিহ্নআঁকা হয় কুলোর মধ্যে নুন দিয়ে । দেবীর ভোগ ঐ খেসারির ডাল, নারকেল কলা , বিভিন্ন ফল আর ঘরে বানানো মিষ্টি। দূর্বা ও ফুল হাতে নিয়এ বাড়ির সকল মেয়ে-বউরা শোনে ব্রতের কথা। ব্রতের শেষে উলু ও শঙ্খ বাজিয়ে সবাই বলে উঠল 'বুরা গিয়া ভালা আ, আপদ বলাই দূরে যা, মশা-মাছি দূরে যা' ।
No comments:
Post a Comment