Sunday, 23 October 2022

কালিঘাট

কলকাতা নামকরনের ইতিহাসের সাথে  মা কালীর নামের যোগ আছে।  মুম্বাই এর নামকরন যেমন মুম্বাদেবী থেকে হয়েছে, মনে করা হয় কালীক্ষেত্র কালিঘাট  থেকেই  এসেছে কলিকাতা নামটি।কলকাতা নগর তৈরি অনেক আগে থেকেই এই স্থানের অস্তিত্ব ছিলো বিভিন্ন বিদেশী পর্যটক বিবরণ এবং মঙ্গলকাব্য এর উল্লেখ পাই  এই কালিঘাটে তাতে কমপক্ষে ২০০০ বছরের পুরনো এই তীর্থস্থান। কারণ গ্রীক দার্শনিক টলেমির নিজের ভারতের বর্ণনায় যে কালীগ্রামের উল্লেখ করেছেন ২০০০ বছর আগের  তা  আজকের কালীঘাট। ১১০০ খ্রীষ্টাব্দে মুকুন্দরাম চক্রবর্তী তার চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে লিখেছেন সপ্ত ডীঙায় চরে ধনপতি সওদাগর তার পুত্র শ্রীমন্তকে নিয়ে আদিগঙ্গা মানে আজকের টালির নালা দিয়ে যাবার সময় এই কালীমন্দিরে পূজা দিয়েছিলেন।
আবার দেখা যায় ১১৫৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১১৭৯ খ্রিষ্টাব্দ অবধি বল্লাল সেনের রাজত্বকালে এই জায়গাটি  প্রসিদ্ধি লাভ করে কালীক্ষেত্র নামে। সেই সময়ে বহু তীর্থযাত্রী গঙ্গাতীরে অবস্থিত কালীক্ষেত্রে স্নান করতে আসতেন এমন বর্ণনা পাওয়া যায়।
তবে আজ  কালীঘাটের যে কালীমন্দিরটি আমরা দর্শন করি সেটি ১৮০৯ সালে তৈরী।  কথিত আছে এই সতীপীঠ বহুযুগ ধরে জঙ্গলে গুপ্তছিলো। কোন একসময়  গঙ্গাতীরে সন্ধ্যাবেলার আহ্নিক সেরে ফেরার সময়ে এক ব্রাহ্মণ একটি রহস্যময় জ্যোতি উৎস দেখে সেটি অনুসরণ করে এগিয়ে গিয়ে কালীকুণ্ড নামে পুকুরের পাশে দেবীর মুখায়বের মতন একটি পাথরের টুকরো এবং একটি প্রস্তরীভূত পায়ের আঙুল দেখতে পান। এবং এরপর দেবী তাকে দৈববাণী দেন প্রতিষ্ঠার। যদিও এই ঘটনার সাল-তারিখ  নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বল্লাল সেনের রাজত্বকালে এই জায়গাটি সেই সময় কালীক্ষেত্রের বিস্তৃতি ছিল বহুলা মানে আজকের বেহালা থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত প্রায় ২৬ কিলোমিটার জায়গা। তারমধ্যে আবার  মাঝেখানে ৩ কিলোমিটার তিনকোনা জায়গাকে অতি পবিত্র দেবীর স্থান বলে ধরা হতো । কারন বিশ্বাস করা হতো এই তিন কোনা স্থানের তিনটি কোণে অধিষ্ঠিত ছিল ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের মন্দির। এই ত্রিভুজাকৃতি অঞ্চলের মধ্যে কোন এক জায়গায়  পৌরাণিক কাহিনীতে অনুযায়ী নারায়ণের সুদর্শন চক্রে ছিন্ন হয়ে সতীদেহের পায়ের বাম  পরে ছিলো।

তাই  কালীঘাটের কালীমন্দির হল একান্নটি সতীপীঠ বা শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম এক সতীপীঠ। অর্থাৎ একান্নপীঠের এক পীঠ। পুরাণ অনুযায়ী, এখানে দেবী সতীর ৫১টি দেহখণ্ডের মধ্যে ডান পায়ের কনিষ্ঠা আঙুলটি পড়েছিল। এটি একচল্লিশতম সতীপীঠ। এখানে দেবীর কনিষ্ঠ আঙ্গুল পড়েছিল।সেই জন্য এখানেও দেবীমূর্তি হিসেবে কালি  সাথে সাথে একটি ভৈরব মূর্তিকে প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ভৈরবের নাম নকুলেশ্বর।

মনে করা হয় এই অঞ্চলে তখন বাস ছিল মূলত জেলে, দুলে, বাগদী প্রভৃতি আদিবাসীদের। কিছু তান্ত্রিক ও ব্রাহ্মণ তীর্থ যাত্রী মাঝে মাঝে এখানে আসতেন গোপন সাধানা করতেন।তারাই এই অঞ্চলকে গুপ্ত করে রাখার চেষ্টা করতেন।

বর্তমানে, মা কালি এতোটা জনপ্রিয় যে দেবীমূর্তির তিনটি বিশালাকৃতি চোখ, একটি দীর্ঘ প্রসারিত জিহ্বা এবং চারটি হাত যা সোনার দিয়ে তৈরি করে দিয়েছেন ভক্তরা। বরিশাল এর সাবর্ণ জমিদার শিবদাস চৌধুরী ও তার ছেলে  রামলাল এবং ভাতুষ্পুত্র লক্ষ্মীকান্তর উদ্যোগে এখনকার মন্দিরটি তৈরি হয়েছে। আদি গঙ্গার তীরে ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয়েছে নতুন  মন্দিরটি যার উচ্চতা প্রায় ৯০ ফুট। প্রায় আট বছর এটি সম্পূর্ণ হতে সময় লেগেছিল । আয় ব্যায় হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা। জমির পরিমাণ ১বিঘা ১১ কাঠা ৩ ছটাক। । সেই জন্য সেখানে এক দেবীমূর্তি ও একটি ভৈরব মূর্তিকে প্রতিষ্ঠা হয়। ভৈরবের নাম নকুলেশ্বর আর দেবী হচ্ছেন কালী।

এই অঞ্চলে তখন বাস ছিল মূলত জেলে, দুলে, বাগদী প্রভৃতি আদিবাসীদের। কিছু তান্ত্রিক ও ব্রাহ্মণ তীর্থ যাত্রী মাঝে মাঝে এখানে আসতেন। তারপর ৩০০ বছর কালীঘাট বা গঙ্গার কোন ইতিহাসের উল্লেখ মেলে না।

বর্তমানে, প্রতিষ্ঠিত দেবীমূর্তির তিনটি বিশালাকৃতি চোখ, একটি দীর্ঘ প্রসারিত জিহ্বা এবং চারটি হাত যা সোনার নির্মীত। এখনকার মন্দিরটি বরিশাল এর সাবর্ণ জমিদার শিবদাস চৌধুরী ও তার ছেলে  রামলাল এবং ভাতুষ্পুত্র লক্ষ্মীকান্তর উদ্যোগে, আদি গঙ্গার তীরে ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয়। এই মন্দিরটির উচ্চতা ৯০ ফুট। এটি সম্পূর্ণ হতে সময় লেগেছিল প্রায় আট বছর। সেই সময় ব্যায় হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা।  ১বিঘা ১১ কাঠা ৩ ছটাক জমির জুড়ে তৈরি হয়েছিল মন্দিরটি।

No comments:

Post a Comment