নদীমাতৃক বাংলার বহুমানুষ তাদের জীবন যাপন করতেন মৎস্যজীবী হিসেবে। বাংলার মৎসজীবিরা এই দিনে বিশেষ মঙ্গলাচরণের মধ্যে দিয়ে ইলিশ ধরার শুরু করতেন। লোককথা অনুযায়ী মৎস্যজীবিরা, বিজয়া দশমীর পর আর ইলিশ মাছ ধরতেন না। বসন্ত পঞ্চমীর সময় থেকে আবার মাছ ধরতেন তারা। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী প্রথম পর্যন্ত অপরিণত ইলিশ ধরা পড়ে। আসলে বংশ বিস্তার জন্য ইলিশ একসময় সমুদ্র থেকে নদী গুলো ঢুকতে শুরু করে এবং এই সময় শিশু ইলিশদের সমুদ্রে ফেরার সময়। বাংলার মৎস্যজীবিরা এই সময়টা ইলিশ ধরা বন্ধ করে । পরে দেবি সরস্বতী পূজার সময় পূজা মৎস উৎসর্গ করে আবার মাছ ধরা শুরু করেন।
ব্রাক্ষণরা আগে নিরামিষাশী মাছ খেতেন না। ধীরে ধীরে প্রচলন হল শাস্ত্রে বলা হলো, জল তরু মাছকে শাক সব্জির মধ্যে ফেলা যায় কারণ সমুদ্রের ফল।
সরস্বতী পুজোয় এই ইলিশ রান্নাও হয় বিশেষ নিয়ম মেনে। ওই দিন জোড়া ইলিশের বিয়েও দেন।
এটি মূলত বাঙালিদের লোক সংস্কৃতি। মূলত শ্রীপঞ্চমীর দিনে খাওয়ার রেওয়াজ তৈরি হয়েছে।
এ দিন সকালে কাঁচা হলুদ মেখে স্নান করে বাড়ির ইলিশ কিনতে যেতে হয়। মহিলারা একটি পাত্রে ধান, দুর্বা, সিঁদুর, তেল, ও কাঁচা হলুদ রাখেন। অনেকে একটি রুপোর টাকাও রাখতেন তার মধ্যে। এর পরে গজোড়া ইলিশ নিয়ে বাড়ি ঢোকার সময় উলুধ্বনি হয়। একটি কুলোয় ইলিশ দুটো রাখা হয়।
এবং জোড়া ইলিশ বরণ করা হয়। লোকাচারের কোন নিয়ম লিখিত নেই , কোথাও কোথাও আস্ত বেগুনও রাখা হয়। একটি ইলিশ মাছ রান্নার রেওয়াজ থাকলে ইলিশের সঙ্গে শিলনোড়া রাখা হয় একে ‘নোড়া দিয়ে জোড়া ইলিশ’ বলা হয়। এখানে ইলিশের বিয়ের বদলে একটি ইলিশের সঙ্গে নোড়ার বিয়ে হয়। নোড়াটি পুরুষ ও ইলিশ মাছকে নারীর প্রতীক ধরা হত। ভালো করে দেখেলে দেখা যায় প্রথাটি মধ্যে আসলে ইলিশে বংশ বৃদ্ধির আকাংক্ষায় পালিত হচ্ছে।
এই ইলিশ রান্নার বিশেষ পদ্ধতিও আছে।
ইলিশ বরণ করার পর এক ফোড়ন দিয়ে এই রান্না হয়। অর্থাত্ ফোড়ন দিয়ে আনাজগুলি এক বারে দিয়ে দিতে হবে। তার পরে জল দিতে হয়।
হলুদ বাটার ঝোল ফুটে উঠলে মাছগুলি কাঁচা অবস্থায়ই ঝোলে দিতে হয়। মসলা ব্যবহার নিষিদ্ধ এই রান্নায়।
No comments:
Post a Comment