সরস্বতীর বাহন কি শুধু হাঁস?
সরস্বতীর বাহন হিসেবে আমরা সাধারণ হাঁস দেখতে পাই। কিন্তু শাস্ত্র দিকে তাকলে জ্ঞানের গতিময়তার জন্য ঋক বেদে তাঁকে নদী হিসাবে দেখা নো হয়েছে। সরস্বতী নদীর কথা আমরাও জানি। দেবী সরস্বতীর বাহন সাধারণত হংস হলেও ময়ূর কে দেখা যায় কোথাও কোথাও। ব্রহ্মা হংস বাহন, দেবী সরস্বতী ও তাই।পুরা্ণ অনুযায়ী সরস্বতী মানস সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়েছেন।মানস সরোবরে অসংখ্য হংস বাস করে , সেখান থেকেই সরস্বতী বাহন হাঁস,বা সরস্বতী নদী তীরেই বেদ রচিত। জলের সাথে সম্পর্কের কারণেই হংস তাঁর বাহন। সেই যুক্তিতে আবার সরস্বতী নদীর তীরে ময়ূর বসবাস হওয়ায় কোন কোন ক্ষেত্রে সরস্বতী ময়ুর বাহনা, বিশেষ করে রাজস্থানে।
সিন্ধু সভ্যতার নৌবাহিনী দেবীর মূর্তি খুঁজে পাওয়া গেছে। বৈদিক যুগে থেকেই তিনি বাক,মন্ত্রস্বরূপা। পৌরাণিক দেবি আদিশক্তির অন্যতম রূপ । তবে সিংহ, ময়ূর, রাজহংস ও মেষবাহনা সরস্বতী মূর্তি পাওয়া গেছে বিভিন্ন স্থানে। বৌদ্ধ তন্ত্রে ও জৈন মতেও সরস্বতী সবিশেষ উপাসিতা বা আরাধ্যা। দশ মহাবিদ্যার অন্তর্গত আদি দেবি তিনি । বিভিন্ন জীবনকাহিনী মানে শংকরাচার্য,কালিদাস প্রমুখের সরস্বতীর কৃপা লাভের কথা উল্লেখ আছে । তবে বাংলার নানুরের চন্ডীদাস পুজিতা বাসুলী দেবীল বিগ্রহ চতুর্ভুজা বীনাবাদনরতা সরস্বতী। প্রাচীন বঙ্গের অক্সফোর্ড নবদ্বীপের বিখ্যাত পোড়ো মা আসলে নাকি পুড়ুয়াদের মা সেই থেকেই শ্রীপঞ্চমীতে বাংলায় সরস্বতী পূজা শুরু হয়েছে।
তবে সরস্বতী সিংহ বাহিনী এই তত্ত্বটি সঠিক কিনা তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত আমি। কারণ বৌদ্ধ ধর্মের বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রীর বাহন হচ্ছে সিংহ এবং তাঁর শক্তি হচ্ছেন বাগেশ্বরী সরস্বতী। সেই হিসেবে বাগেশ্বরী সরস্বতী হচ্ছেন সিং হ বাহনা। তবে পুরাণের হয়েছে দেবী বৃত্র নামের একটি অসুর কে বধ করেছেন, এখানে তিনি ত্রিনয়না, তার বাহন ছিলো সিংহ । দেবী সরস্বতী বিষ্ণুপ্রিয়া নামেও ডাকা হয়। রাধা কেই বিষ্ণুপ্রিয়া মনে করা হয় । পুরাণ অনুসারে সরস্বতীর একবার ইচ্ছে প্রকাশ করেন কৃষ্ণকে বর রুপে পাওয়ার জন্য। শ্রীকৃষ্ণ দেবী সরস্বতী কে , বিষ্ণুকে স্বামী রুপে গ্রহণ করতে বলেন, এবং শ্রী কৃষ্ণ দেবী সরস্বতী কে বলেন যে মাঘ মাসের শুল্ক পঞ্চমী তোমাকে সবাই পুজো করবে , আগে শ্রী পঞ্চমী তে দেবী লক্ষীর পুজো করা হতো, তখন থেকেই দেবী সরস্বতীর পুজো শ্রীপঞ্চমীতে ।
ময়ূর পার্থিব জ্ঞানের প্রতীক। ময়ূর এমন একটি প্রাণী, যার মেজাজ দ্রুত বদলায়। পরিবেশ, প্রকৃতি, আবহাওয়া অনুসারে সে কখনও নাচে, কখনো কাঁদে। ময়ূর চঞ্চল সরস্বতী শব্দ বুৎপত্তি করলে পাওয়া যায় সরস শব্দটি যার অর্থ নদী। নদীমাতৃক দেশ ভারতে সরস্বতী নদী শুকিয়েছে মহাভারত যুগ থেকে। তার আগে এই নদী পূজার সময় ময়ুর বাহনা ছিলেন হয়তো দেবী।
লোক কথা অনুযায়ী হাঁস এমন একটি প্রাণী, যাকে জল ও দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে দিলেও জল ছেড়ে শুধু দুধটুকু পান করে নেয়। জ্ঞানের দেবীর বাহন নির্বাচনের কারণ, অজ্ঞানকে ছেড়ে দিয়ে আমাদের সবার জ্ঞানকে আহরণ করা উচিত। । সে বিশুদ্ধ জ্ঞানের প্রতীক।
আবার পুরান আরো একটা গল্প অনুযায়ী ব্রম্ভা সরস্বতী প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তখন সরস্বতী সেরে যেতে শুরু করল। এই সরে যাও লক্ষ্য করতেই নাকি ব্রম্ভা আরো চারটি মাথা জুড়ে দিলেন নিজের দেহে। নিরুপায় হয়ে সরস্বতী রাজহাঁস রূপ নিয়ে জঙ্গলে লুকিয়ে পরলেন। নাছোড়বান্দা ব্রম্ভাও রাজহাঁস রূপ নিয়ে তার সাথে মিলিত হলেন। তখন সরস্বতী তাকে অভিশাপ দেয় তিনি পৃথিবীতে পূজা পাবেন না। তখন ব্রম্ভা সরস্বতীর পায়ের কাছে রেয়ে গেলো বাহন হিসেবে।
তবে দূর্গা সিংহ ও কার্তিক ময়ুর নিয়ে নেওয়ায় হাঁসকে বাহনের মর্যাদা দিয়েছেন দেবি।
No comments:
Post a Comment