Sunday, 26 March 2023

মাদরাল জয় চন্ডী

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয় নগরের মতো।উত্তর ২৪ পরগনার মাদরাল গ্রামে সুপ্রাচীন জয়চণ্ডী মায়ের মন্দির আজ । লোক মুখে কথিত আছে যে একসময়ে এখানকার জঙ্গলে ভবানী পাঠক এসেছিলেন।তিনিই দেবী বিগ্রহ কুণ্ড থেকে উদ্ধার করে  এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পূজা ব্যবস্থা করেন। এ লোক বিশ্বাস । কারণ এই মন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে অন্য গল্প শোনা যায়।  নতুন মন্দিরটি  আঁটচালা। ছোট মন্দির  তবে সামনে নাট মন্দির রয়েছে। এই  মন্দিরের দরজার উপর শিলা ফলক লেখা থেকে জানা যায় এটির প্রতিষ্ঠা  বাংলা সন ১৩৪৩।।এখানে অনুরাগের ভোগ রান্না করা হয় ।অনুরাগের ভোগ কি প্রশ্ন উঠেছে নিশ্চিত মনে। আগে এই অঞ্চল  জঙ্গল ভরা ছিলো। আর এই জঙ্গল  সাফ করে ,  লোকজন  জঙ্গলের কাঁচা কাঠে রান্না করতেন। কাঁচা কাঠের রান্না করতে গিয়ে,  চোখের জল বেরোতো তাই একে অনুরাগের বলা হতো ।মন্দিরের মধ্যে গর্ভগৃহে দ্বিভূজা বর ও অভয় প্রদানকারী মা জয়চণ্ডী বিরাজমান।পাশে একটি ছোট বিগ্রহ আছে যে বিগ্রহ এবং দুটি শিলা কুণ্ড থেকে উদ্ধার হয়েছিল।
মাদারাল এই জয় চন্ডী পূজা সপ্তম দোলে মেলা খুব বিখ্যাত গ্রামীণ মেলা।


বলা হয় মাদার আলি এই জঙ্গলময় অঞ্চলে এসে প্রথম বসতি স্থাপন করেছিলেন। মাদারআলি থেকে মাদরালি হয়ে আজ মাদারাল নামটা এসেছে।
ব্যারাকপুর,বারাসত,নৈহাটি, ভাটপাড়া এই  অঞ্চল সেই সময় ছিলো ঘন জঙ্গল ভরা। এই অঞ্চলের  মাঝখানে  বর্তির বিল ছিল । এসব অঞ্চলে তখন ডাকাতদের বাস ছিলো। নৈহাটির রঘু ডাকাত,গৌর ডাকাত ,   ভাটপাড়ার মধু ডাকাতদের দখলে ছিলো  অঞ্চল । এই ডাকাতদের আরাধ্য দেবী ছিলেন জয়চন্ডী । শোনা যায় দেবীর কাছে নর বলিও হতো। জয় চন্ডীকে পূজা  দিয়ে ডাকাতেরা ডাকাতি করতে বের হত। সেই সময় এলাকাটি জয়চন্ডীর জঙ্গল নামে জানতো লোকে। সেই সময় গঙ্গার সাথে তিনটি খাল নোয়াই খাল,ইছাপুর খাল মুক্তারপুর খাল ,   যুক্ত করেছিল বর্তির বিলকে। তাই  ডাকাতেরা ডাকাতি করে  এই খাল পথে বর্তির বিলে এসে  গা ঢাকা দিতো।
ইংরেজদের কড়া  ডাকাতদের দমন করা হয় । এর সাথে এই  বসতি স্থাপন হতে শুরু করে। ডাকাতেরা ডাকাতি করা ছেড়ে দেয়।  ডাকাতেরা তাদের আরাধ্য দেবী জয়চন্ডীকে পুকুরে বিসর্জন দিয়ে চলে যায় । বহুবছর এই অঞ্চলের ধনী ব্যবসায়ী হারু গুড়া স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুকুর থেকে জয়চন্ডী মাকে উদ্ধার করেন। এবং মাকে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেন।হারু গুড়ার আসল পদবী ঘোষ । কিন্তু গুড়ের ব্যাবসা করে বিশাল ধন সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন বলে,লোক মুখে পদবী পাল্টে যায় ঘোষ থেকে গুড়া।হারু গুড়া  জয়চন্ডীকে সপ্তম দোলের দিন পেয়েছিলেন। সেই সময় থেকে সপ্তম দোলে উৎসব ও জয়চন্ডী মায়ের পুজো হয়ে আসছে, এবং বসেছে এই মেলা।


তবে কেউ কেউ বলেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে স্থানীয় জগৎ চক্রবর্তী মহাশয় স্বপ্নাদেশ পেয়ে চন্ডী দিঘির থেকে উঠিয়ে আনেন জয়চন্ডীর মূর্তি। এবং ভগ্ন প্রায় মন্দির টিকে সংস্কার করে, মূর্তি কে আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে , নিত্য পূজার ব্যবস্থা  করেন। 1937 সালে ভাটপাড়ার জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষ মহাশয় জয়চন্ডীর মন্দির  সংস্কার করিয়েছিলেন। প্রতিবছর ফাল্গুনী পূর্ণিমার ছয়দিন পর  সাড়ম্বরে জয়চন্ডীর পূজা এবং সপ্তম দোল উৎসব পালিত হয়। সেই উপলক্ষে মেলা বসে এখানে। মেলার স্থায়িত্বকাল সাতদিন।এই মেলার বয়স কিন্তু একশো বছরের পেরিয়ে গেছে । অনেক লোক কাহিনী আছে এই মন্দির ঘিরে। বলা হয়।  রঘু ডাকাতের এলাকা ছিল এই অঞ্চল।  রঘু ডাকাত মায়ের কাছে নরবলি দিয়ে ডাকতি করতে যেতো । একটি বাচ্চা ছেলেকে ধরে নিয়ে আসে বলির জন্য।  মা চন্ডীর কাছে প্রার্থনা করে বাচ্চাটি, তার জীবন বাঁচাতে। শোনা যায় শুদ্ধিকরনে জন্য স্নান করাতে দিঘির জলে ডুব দেবার পর বাচ্চাটিকে আর পাওয়া যায় না।বাধ্য হয়ে রঘু ডাকাত বলি না দিয়ে বের হন ডাকাতি করতে।  রঘু পালিয়ে বাঁচলেও সেইদিন তার দল ধরা পড়ে পড়ে যায়। ফিরে এসে জয়চন্ডীকে তরোয়াল দিয়ে আঘাত করে তাতে জয়চন্ডীর নাক কেটে যায়। এবং তিনি জয়চন্ডীকে দিঘির জলে বিসর্জন দিয়ে ডাকাতি করা ছেড়ে দেয়।
আর এর বহু বছর পরে হারু গুড়া স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুকুর থেকে জয়চন্ডীকে উদ্ধার করে। রঘু ডাকাতের মূর্তিটি ছিলো সোনার । সেই মূর্তি চেলি কাপড়ে ঢাকা থাকে । তবে অষ্টোধাতুর মুর্তিটি দেখা যায় ।সপ্রথমে রঘুডাকাতের তৈরী করা মন্দিরে পুজো হতো। পুরানো মন্দির ভেঙ্গে গেলে, নুতন মন্দির তৈরি হয়েছে


এই মন্দির লাগোয়া বিশাল পুকুর নাম দুই সতীনের পুকুর। এই অঞ্চলের এক ব্যাক্তির দুই বৌ  ছিলো। দুই বৌয়ের ঝগড়া লেগে থাকতো, রেষারেষিও ছিলো। একদিন  এক বৌ গ্ৰামের মানুষের জলের কষ্ট দেখে ঠিক করলেন একটি পুকুর কাটাবেন। তাই দেখে দ্বিতীয়জন ও ঠিক করলেন সেও একটা পুকুর কাটাবেন। তারপর দুটো পুকুর কাটা হলো পাশাপাশি মাঝখানে মাটির বাঁধ দিয়ে। পরবর্তী কালে বাঁধ ভেঙে দুটো পুকুর এক হয়ে যায়। আর মন্দিরের কিছুটা পিছনে রয়েছে একটি দিঘি সেই দিঘি থেকে জয়  চন্ডীমাকে পাওয়া যায়। মেলার দশদিন মূর্তি মন্দিরে থাকে।তারপর পুরোহিতের বাড়িতে চলে যায়।দশদিন ছাড়া মন্দির ফাঁকা থাকে মন্দির বেদিতে চলে পুজোপাট।এককালে মেলা খুব বড় ও জমজমাট হতো এখন মেলার জৌলুস হারিয়েছে।


(মাদারাল  যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে কাঁকিনাড়া যাবেন। কাঁকিনাড়া স্টেশন
স্টেশন থেকে মেলা ২/৩কিলোমিটার
পথ ।)


Wednesday, 22 March 2023

মেজো মা।

মল্লেশ্বর শিব নিত্য কথা সবাই জানেন। এই মন্দিরের পাশেই আছে সিদ্ধেশ্বরী কালী। মন্দিরটি এক বাংলা শৈলীর নিদর্শন। মন্দিরের গর্ভগৃহটি একটি আটকোনা মন্দির আছে। গর্ভগৃহে   সিদ্ধেশ্বরী কালী মূর্তি নিত্য পূজা পান। স্থানীয় লোকেদের বিশ্বাস, ইনি তারাপীঠের তারা মা'র বোন।  তাই একে মেজো মা বলা হয়।


মল্লেশ্বর শিব বা সিদ্ধিনাথ শিব মন্দির, বীরভূম জেলার মল্লারপুরে একটি প্রাচীন মন্দির।কথিত আছে মহাভারতের অজ্ঞাতবাসকালে  শ্রীকুন্তিদেবী এই মহাদেবের পূজা করেছিলেন । মহালিঙ্গেশ্বর তন্ত্রে স্বয়ম্ভূ শিব মন্দিরের তালিকা আছে তাতে এই মহাদেবের কথা আছে।  সিদ্ধিনাথ 'ওঁ' আকৃতির কথা বলা  আছে।



বীরভূমের সিদ্ধিনাথ রাঢ়ে বাংলার তারকেশ্বর 
লোক কথা অনুযায়ী মহারাজ মল্লনাথ সিংহ এই জনপদের উন্নয়ন করে রাজধানী প্রতিষ্ঠার  এবং শিব মন্দিরের সংস্কার করেন।তাই জনপদের নাম মল্লারপুর  এবং এই শিবের নাম 'মল্লেশ্বর' হয়ে গেছে।
মহারাজ মল্লনাথ সিংহের জন্মকথা নিয়ে জনশ্রুতি আছে যে,পাশে গ্রাম  ফতেপুরে  জনজাতির বাস ছিল অনেক আগেই।সেই সময় এই অঞ্চল গভীর জঙ্গল ছিল। এক মেষপালকের পদ্মিনী লক্ষণাযুক্তা  মেয়ে সঙ্গে এক সন্যাসীর মিলন ঘটে। ফতেপুরে গ্রামের সেই মেয়ের গর্ভজাত সন্তান 'মল্লনাথ'  ।মল্লনাথই মল্লারপুর রাজ্যের প্রবর্তন করে মল্লরাজ নামে পরিচিত হয়েছিলন । তিনি রাজ উপাধি গ্রহণ করেন। তাঁর রাজত্বকালে এই মন্দিরে পূজিত শিবলিঙ্গ  এটি'। 
১১২৪ শকাব্দে মল্লনাথ নবরূপে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে মল্লেশ্বর শিবের পুজো শুরু করেন। মন্দিরের গায়ে তা খোদিত আছে।  মন্দির জন্য ৭৭২ বিঘে জমি দান করেছিলেন।


পরে এখানে মন্দির চত্বরেই বিভিন্ন সময় গড়ে উঠেছে  বিভিন্ন রীতির আরও ২৩টি মন্দির। তার মধ্যে  জনপ্রিয় মন্দির সিদ্ধেশ্বরী মা বা মেজো মা মন্দির। তবে বাকি শিব মন্দির।মল্লেশ্বরের পিছনে রয়েছে  বিখ্যাত তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের জীবন্ত ইচ্ছা সমাধি।




Monday, 20 March 2023

গোমিরা মুখোশ নাচ

গোমিরা মুখোশ নাচ মতো সংস্কৃতি কি হারিয়ে যাবে ??

গোমিরা মুখোশ নাচ - বাংলার একটি হারিয়ে যাতে বসা ঐতিহ্য।গোমিরা নৃত্যের উৎপত্তি কবে হয়েছিলো বলতে না পারলেও, উত্তরবঙ্গে গ্রামীণ কৃষি সাংস্কৃতিক ওপর এর প্রভাব প্রসারে ছিলো বেশ। এই নৃত্য শুধুমাত্র ছেলেরা ই করে, মুখোশ পরে , নারী পুরুষ,এবং জীব জন্তুর চরিত্র অভিনয় করে। 
এখনো পশ্চিমবঙ্গের দিনাজপুর জেলার কিছু গ্রামে আয়োজিত হয় গোমিরা নৃত্য। এই নাচের বিশেষ উদ্দেশ্য আসলে, ভগবানের কাছে প্রার্থনা করা । এই নাচের মাধ্যমে, ভগবানের আশির্বাদ লাভ করে এরা, ভগবান অশুভ শক্তি সরিয়ে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা করেন। 
 


 
গ্রামীণ দেবী গ্রাম চন্ডীর আরাধনায় রাজবংশী জনগোষ্ঠীর মানুষরাই বিশেষ করে মুখোশ পরে এই নাচ করেন।গ্রাম চণ্ডী এই দুই থেকেই গোমিরা শব্দের জন্ম । গ্রাম চণ্ডী লৌকিক দেবী তিনি গ্রামকে রক্ষা করেন। তবে গামার গাছ কাঠ দিয়ে এই নাচের মুখোশ তৈরি হয় বলে , গোমিরা নাচ নামকরণ হতে পারে।

গ্রাম চন্ডী আদি শক্তি রূপা, এই নাচের মাধ্যমে আদি শক্তির আরাধনা করা হয় । তবে শিবেরও আবাহন করা হয়। এটি কৃষি সংস্কৃতির সাথে যুক্ত।বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ শুরু করে আষাঢ় মাস পর্যন্ত গ্রামের মানুষরা ঘরে ফসল তোলেন তখন এই নাচ করা হয়। আম তোলার সময় আমাত কালী পুজো করার সময় গোমিরা নাচ করা হয়। তবে শ্মশান কালীর পুজোর সময়ও এই নাচ হয়।
 গ্রামে নাচের দলগুলো বিভিন্ন সময়ে গোমিরানাচ করেন। রাম বনবাসগোমিরা নাচ একটি জনপ্রিয় ধারা হলেও। রাম বনবাসে রামের কাহিনি শোনানো হয়। তবে পুরনো ধারার নাচ মূল চরিত্রে থাকেন বুড়ো-বুড়ি, শ্মশান কালী, মসান কালী, ডাকিনী, বাঘ ও নৃসিংহ অবতার। নাচের জন্য কোনও গান বা ছড়া থাকে না। ঢাকের তালে তালে নাচের মাধ্যমে পুরোটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
 

লোক বিশ্বাস শিল্পীরা এই নাচ করেন তাঁদের মাঝেমধ্যে ঈশ্বর ভর করে। তখন তাঁদের গোমিরা ঘটের শান্তির জল ছিটিয়ে শান্ত করা হয় । এদের বিশ্বাস ঈশ্বর একদিন মানুষ বেশে পৃথিবীতে এসে ছিলো মানুষের মঙ্গলের জন্য।তাই থেকে এই মুখোশ নাচের প্রচলন। কিন্তু আধুনিক বিনোদন সামনে এই লৌকিক সংস্কৃতি কি লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারবে??? এটাই প্রশ্ন।।।
 

মোটা শিব

কোলকাতার বুড়ো শিব বা মোটা শিব ৩০০ বছর পুরনো মন্দির। দুর্গেশ্বর মন্দির এর পোশাকি নাম ।  কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন এটি কে ২০০৯ সালে হেরিটেজ গ্রেড ওয়ান (Heritage Grade-I) স্থান পেয়েছে। ১৬ নম্বর মহম্মদ রমজান লেনে অবস্থিত এই মন্দির। চক্ররেল করে শোভাবাজার আহিরীটোলাতে  নেমে ১০মিনিট হাঁটা পথ।মেট্রোরেল করে গেলে শোভাবাজার স্টেশনে নেমে নিমতলা যাওয়ার অটো করে যাওয়া যায় এই মন্দির।
আনুমানিক ৫০ ফুট উচ্চতা ও ৩০ ফুট চওড়া বিশিষ্ট প্রাচীন ভাঙাচোরা মন্দিরটি বাংলার স্থাপত্য কলার নিদর্শন আটচালা মন্দির এটি। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে প্রায় ১০ ফুট উচু শিবলিঙ্গ কালো পাথরের তৈরি। শিবলিঙ্গের বয়স ও আকার দেখেই বুড়ো শিব এবং মোটা শিব বলে ডাকা হয়।

প্রতিদিন ভোর ৪ঃ৩০ থেকে ১২ঃ৩০ ও
বিকেল ৪ঃ০০ থেকে রাত্রি ৯ঃ০০ টা পর্যন্ত এই মন্দির খোলা থাকে ।
এই মন্দির সন্ধ্যা আরতি ও মহাদেবের ফুলের রাজবেশ বেশ আকর্ষণীয়।

 




Tuesday, 14 March 2023

ছাগল বাঁশী

নদীয়ার শান্তিপুরের বাগআঁচড়া গ্রামের বহু প্রাচীন জাগ্রত বাগদেবী মন্দির। এ মন্দিরে সারা বছর শনি মঙ্গলবার সাধারণ পুজো হয়। তবে ফাল্গুন মাসে প্রত্যেক শনি মঙ্গলবারের পুজো সাথে সাথে, গোটা মাস জুড়ে চলে এক গ্রামীণ মেলা। এই মেলা কে কেন্দ্র করে , আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম ,জেলার শহর , বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষরা এসে এখানে পূজা দিতে। এই মেলায় , বিভিন্ন খাবার, বাচ্চাদের খেলনা , ঘর সাজানোর টুকিটাকি যাবতীয় বিক্রির জন্য অনেকই দোকান দেয়। বিগত বছর তিরিশেক এক বিশেষ ধরনের বাঁশি বিক্রির হয় এখানে। প্রতিবছর নিয়মিত বাগদেবী মেলায় পোড়ামাটির তৈরি বিশেষ ধরনের বাঁশি বিক্রি করে আসছেন।স্থানীয় নাম ছাগল বাঁশি। বাগদেবী মেলার ক্ষেত্রেই বিখ্যাত। ভক্তরাও বিশেষত বয়স্করা , পুজো দিতে এসে তাদের পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যর জন্য এই উপহারটি কিনে নিয়ে যান।

Sunday, 12 March 2023

দেবী ওলাবিবি ও ওলাইচন্ডীকি এক??


বাংলার লৌকিক দেবীদের মধ্যে একজন হলেন এই ওলাইচন্ডী। ওলাওঠা মহামারী কলেরা রোগের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এদিকে ওলাবিবি নামেই সে পর জনপ্রিয় হয়,পশ্চিমবঙ্গের অনেক জায়গাতেও দেবী প্রচলন আছে । ওলাবিবির পূজা প্রতি বছর বৈশাখ মাসে হিন্দু-মুসলমান এর পূজা হয়। ওলাবিবি বা বিবিমা তার এমন নামের কারণ হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ই দেবীর পূজা করে। তার সাধারণত মূর্তি আমরা দেখি না।

তবে ওলাই চন্ডী ঘটক বাহিনী দেবী শঙ্খে ফুৎকারের মাধ্যমে ওলাওঠা রোগের আহ্বান করেন,দেবীর আরাধনার মাধ্যমে সন্তুষ্ট করে সবাই পরিবারের উপর মানুষের উপর থেকে কলেরা রোগের ভয় দূর করেন। তবে মহামারীর দেবী বলে দেবী কিন্তু কুৎসিত নয় আমাদের অলৌকিক দেবদেবী লক্ষ্মী-সরস্বতীর মতো সুশ্রী ও সুন্দর এবং ওলাইচন্ডী হলেন মা মঙ্গলচন্ডী অর্থাৎ দেবী পার্বতীর ছিন্ন কেশ থেকে সৃজিত দেবী তাই জন্য বর্ণিত হন ঘোটক বাহিনী হয়ে অলঙ্কারে ভূষিতা এবং হস্তে শঙ্খ ও বরাভয়মুদ্রা। এরকম জানেছি আমি কিছু শাস্ত্র নিয়ে চর্চার করা পন্ডিত মানুষদের কাছ থেকে। আমার পর্যবেক্ষণ এর ছলন ঘোড়া দেওয়া হয় ওলাবিবির মন্দিরে।

হুগলীর চুঁচুড়া ব্যান্ডেল অঞ্চলে কয়েকশ বছর ধরে পূজিত হয় ওলাইচন্ডী। প্রতিবছর দোলযাত্রার ঠিক পরের শনিবার হয় বাৎসরিক উৎসব । জাগ্রত মায়ের মন্দির বহু থেকে বহু মানুষের সমাগম হয় ।

বাৎসরিক উৎসবে দুদিন ধরে মেলা বসে এখানে। সাধারণত ডাব দিয়ে মাকে নিবেদন করা হয়।অন্নকূট উৎসব হয়।সব চন্ডী মতো মূলত প্রাচীন একটি গাছ ও তার গুঁড়িতেই মায়ের অবস্থান। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি সাথে এখানে মিল ওলাই চন্ডীর।

তবে লক্ষনীয় বিষয় হলো মা ওলাইচন্ডী হলেও স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস তাঁরা তিন বোন মা চন্ডী, মা শীতলা এবং মা কালী। বড়ো বোন মা ওলাইচন্ডী, মেজ মা শীতলা এবং ছোট মা কালী, তাই যে কোন উৎসব এ তিন বোনের আরাধনা সমান ভাবে করা হয়। এখন এনার সাথে শীতলা দেবীর পূজা , প্রমান করে কি ওলাইচন্ডী হয়তো ওলাবিবিতে পরিনত হয়েছে??

Saturday, 11 March 2023

মল্লেশ্বর মন্দির :: বাঁকুড়া


বাঁকুড়া  জেলার এই শিব মন্দিরটি মল্ল রাজাদের প্রতিষ্ঠিত একমাত্র শিবমন্দির বলে দাবি করা হয়।বিষ্ণুপুরের সব থেকে পুরাতন শিবমন্দির  এটি এবং মাকড়া পাথরের তৈরি এই মন্দিরটি ভাষ্কর্য অনেক আকর্ষণীয় । আনুমানিক ১৬২২ খ্রীষ্টাব্দে মল্লরাজ বীর সিংহ এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে মতান্তর আছে এ নিয়ে, অনেক বলেন  বীরহাম্বির এটি নির্মাণ শুরু করেছিলেন  ১৬১২ খ্রীষ্টাব্দে এবং শেষ করেন তাঁর ছেলে রঘুনাথ সিংহ ১৬৪২ খ্রীস্টাব্দে। মন্দিরটি পূর্বে রেখ দেউল আকৃতির ছিল বলে জানা যায় ।এবং বক্রাকৃতি গন্ডির উপরে আমলক ও কলসী স্থাপিত ছিল।
 বর্তমান মন্দিরটি একটি চতুষ্কোণ ঘরের ওপর উপর অষ্টকোণাকৃতি এক শিখর বিশিষ্ট তৈরি করা হয়েছে। মন্দিরের প্রবেশদ্বারের উপর একটি পাথরের হাতি ও শিলালিপি আছে। 
বর্তমানে পলেস্তারার হয়েছে এবং  মন্দিরটিই আধুনিকতার রূপ পেয়ে প্রচীনত্ব কিছু টা নষ্ট হয়েছে। মন্দিরের সামনে একটি বিশ্রামরত নন্দী মূর্তি আছে। মন্দিরের ভিতরে মেঝের উপর স্থাপিত হয়েছে শিব লিঙ্গ টি।  এই শিবলিঙ্গ উত্তর দিকে বিস্তৃত গৌরীপট বেষ্টিত । ইনিই মল্লেশ্বর শিব নামে খ্যাত। 
মন্দিরের সংলগ্ন একটি বড় নহবত খানা আছে। মন্দির চত্বরে একটি চৌবাচ্চার মধ্যে জলেশ্বর শিব  আছেন বলে লোকবিশ্বাস। মল্লেশ্বর শিব মন্দিরের প্রধান উৎসব গাজন। এই উৎসব এই মন্দিরে অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে পালিত হয়। গাজনের অন্যতম অঙ্গ চরকপূজার সুবাদে মন্দির প্রাঙ্গনের নাম হয়েছে চরকতলা।

 

Wednesday, 8 March 2023

ছোট রাস বাড়ি

বড় রাস বাড়ি নিয়ে লিখছি আগে। এবার ছোট রাসবাড়ি, সম্পর্ক বলি। দক্ষিণ কোলকাতা টালিগঞ্জের আদি গঙ্গা এর পাশ এই ছোট্ট রাস বাড়ি। এখনও এদের পুরোনো ঘাট বহাল তবিয়তে আছে যদিও এখন এখানকার জল  অপরিষ্কার। বাওয়ালীর মন্ডল পরিবারের তৈরি এই রাস বাড়ি। তথ্য অনুযায়ী ১৮৪৭ সালের এপ্রিল মাসে মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। প্রায় দুই শতকের ইতিহাস সাক্ষী এই মন্দিরটি। কোলকাতার এই প্রাচীন দেবালয় মধ্যে একটি এটি। কলকাতার বুকে আদি গঙ্গার ধারে এরকম কিছু পুরানো মন্দির আজও আছে। কালিঘাট যদিও ছত্রভোগ অবধি এই হারিয়ে আদি গঙ্গা পাশ যদি ঘুরতে যান, বাংলার বহু ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যাবে এই সব আদি স্থাপত্য নিদর্শন গুলো থেকে।


তবে চেতলা-টালিগঞ্জ এলাকায়  আসলে ২৬৫ বছরের গৌরবময় কলিকাতার ইতিহাস অবহেলায় পরে আছে।দক্ষিণ কলিকাতার টালিগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত ৩ টি মন্দির খুব কম মানুষের অজানা।


(১) বড় রাস বাড়ি (২) ছোট রাস বাড়ি
(৩) রাধকান্ত মন্দির


লোক কথা অনুযায়ী রাজপুত আক্রমনের সময়,  ইংরেজদের সহায়তা করায় তাঁরা  বাওয়ালির মণ্ডল জমিদারদের একলক্ষ হেক্টর জমি দিয়েছিলেন পুরস্কারস্বরূপ। এবং রবার্ট ক্লাইভের আমন্ত্রণে ১৭১০ সালে  বাওয়ালি জমিদারদের  এক বংশধর রামনাথ মন্ডল এবং মানিক মন্ডল টলিগঞ্জে বসতি স্থাপন করেন।
প্রাচীন কলকাতার বাওয়ালি জমিদার পরিবার দ্বারা সপ্তদশ শতকে  নির্মিত হয়েছিল এই মন্দির গুলি। ছোট রাস বাড়ি মন্দির চত্তরটি আদি গঙ্গার পাশেই।মন্দিরের সামনেই রয়েছে তৎকালীন তৈরি রাসবাড়ি ঘাট এখনো আছে।  পিয়ারিলাল মন্ডল এবং মনিমোহন মন্ডল তৈরি করেছিলেন ছোট রাসবাড়ি ।মন্দিরটি নবরত্ন স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি।উঠোন এর চেহারা পুরোটাই দাবার ছকের মতো।

 প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো বড় রাস বাড়ি চত্তরটি ২টি ভাগে ভাগ করা আছে।একটি হলো ১২টি শিব মন্দিরের একটি চত্বর এবং আর একটি হলো নবরত্ন স্থাপত্যশৈলীর আদলে তৈরি আটচালা মন্দির।যার নাম রাধনাথ মন্দির বা রাধকান্ত মন্দির।১৭৯৬ সালে বাওয়ালি জমিদার এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন।মন্দিরের সামনে রয়েছে বেশ কয়েকটি বিশালাকৃতির স্তম্ভযুক্ত দালান চত্বর।কথিত আছে রানী রাসমণি দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরটি এই নবরত্ন স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি করতে চেয়েছিলেন । আসলে এই পরিবারের সাথে তার আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে।