গোমিরা মুখোশ নাচ - বাংলার একটি হারিয়ে যাতে বসা ঐতিহ্য।গোমিরা নৃত্যের উৎপত্তি কবে হয়েছিলো বলতে না পারলেও, উত্তরবঙ্গে গ্রামীণ কৃষি সাংস্কৃতিক ওপর এর প্রভাব প্রসারে ছিলো বেশ। এই নৃত্য শুধুমাত্র ছেলেরা ই করে, মুখোশ পরে , নারী পুরুষ,এবং জীব জন্তুর চরিত্র অভিনয় করে।
এখনো পশ্চিমবঙ্গের দিনাজপুর জেলার কিছু গ্রামে আয়োজিত হয় গোমিরা নৃত্য। এই নাচের বিশেষ উদ্দেশ্য আসলে, ভগবানের কাছে প্রার্থনা করা । এই নাচের মাধ্যমে, ভগবানের আশির্বাদ লাভ করে এরা, ভগবান অশুভ শক্তি সরিয়ে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা করেন।
গ্রামীণ দেবী গ্রাম চন্ডীর আরাধনায় রাজবংশী জনগোষ্ঠীর মানুষরাই বিশেষ করে মুখোশ পরে এই নাচ করেন।গ্রাম চণ্ডী এই দুই থেকেই গোমিরা শব্দের জন্ম । গ্রাম চণ্ডী লৌকিক দেবী তিনি গ্রামকে রক্ষা করেন। তবে গামার গাছ কাঠ দিয়ে এই নাচের মুখোশ তৈরি হয় বলে , গোমিরা নাচ নামকরণ হতে পারে।
গ্রাম চন্ডী আদি শক্তি রূপা, এই নাচের মাধ্যমে আদি শক্তির আরাধনা করা হয় । তবে শিবেরও আবাহন করা হয়। এটি কৃষি সংস্কৃতির সাথে যুক্ত।বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ শুরু করে আষাঢ় মাস পর্যন্ত গ্রামের মানুষরা ঘরে ফসল তোলেন তখন এই নাচ করা হয়। আম তোলার সময় আমাত কালী পুজো করার সময় গোমিরা নাচ করা হয়। তবে শ্মশান কালীর পুজোর সময়ও এই নাচ হয়।
গ্রামে নাচের দলগুলো বিভিন্ন সময়ে গোমিরানাচ করেন। রাম বনবাসগোমিরা নাচ একটি জনপ্রিয় ধারা হলেও। রাম বনবাসে রামের কাহিনি শোনানো হয়। তবে পুরনো ধারার নাচ মূল চরিত্রে থাকেন বুড়ো-বুড়ি, শ্মশান কালী, মসান কালী, ডাকিনী, বাঘ ও নৃসিংহ অবতার। নাচের জন্য কোনও গান বা ছড়া থাকে না। ঢাকের তালে তালে নাচের মাধ্যমে পুরোটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
লোক বিশ্বাস শিল্পীরা এই নাচ করেন তাঁদের মাঝেমধ্যে ঈশ্বর ভর করে। তখন তাঁদের গোমিরা ঘটের শান্তির জল ছিটিয়ে শান্ত করা হয় । এদের বিশ্বাস ঈশ্বর একদিন মানুষ বেশে পৃথিবীতে এসে ছিলো মানুষের মঙ্গলের জন্য।তাই থেকে এই মুখোশ নাচের প্রচলন। কিন্তু আধুনিক বিনোদন সামনে এই লৌকিক সংস্কৃতি কি লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারবে??? এটাই প্রশ্ন।।।
No comments:
Post a Comment