Saturday, 27 May 2023

বাদাই গান

বাদাই গান শুনেছেন কখনো??

বাদাই গান সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রথমেই বলতে হয়।'বাদাই‘ শব্দটি এসেছে, বিবরণ বা বাদ–বিতণ্ডা। ব্যুৎপত্তিগত অর্থ[বি+ষ(সৎ)। আসলে বাদাই গানের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়।শ্রীকৃষ্ণের জন্মকাহিনি এবং মহাভারত থেকে বিভিন্ন কটূ প্রশ্ন এক পক্ষ গানের মাধ্যমে অন্যপক্ষে করে।অন্যপক্ষ সেই প্রশ্নের জবাব দিয়ে আবার নতুন প্রশ্নের করে।এভাবেই লড়াই চলতে থাকে যতক্ষণ না একপক্ষ হার স্বীকার করছে।

প্রাচীন লোকগানগুলির মধ্যে বাদাই গান অন্যতম । শ্রীকৃষ্ণের জন্ম কাহিনী নিয়ে বাদাই গান রচিত হত শুরুতে । এই গানের আসর বসত মূলত গ্রামের নাট মন্দিরে,বারোয়ারি তলায় বা কোনও অভিজাত গৃহস্থের বাড়ির উঠনে । আবার বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে অভিনয়ের করে গান গেয়ে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়াতো শিল্পীরা।সাথে বাদ্যযন্ত্র হিসাবে থাকতো ঢোল,কাঁসি,বাঁশি,বাঁশরী, খঞ্জনি, নুপূর প্রভৃতি । কীর্তনের সুরে বাদাই গান গাওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে টপ্পা, ঝুমুর, গাজনের সুরের গান গাইতে শুরু করেন শিল্পী রা । সময়ের সাথে সাথে বাদাই গানের ভাষা ও সুরে লাগে আধুনিকতার ছোঁওয়া লেগেছিল । তাই গানের উপস্থাপনা একই থাকলেও ভাষায় ধর্মীয় কাহিনীর পাশাপাশি জায়গা নিয়েছিল লোকশিক্ষা,সমাজচিত্র । বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই বাদাই গান।

এই বাংলার বর্ধমান, হাওড়া প্রভৃতি জেলার গ্রামগুলিতে এই গানের জনপ্রিয় ছিল খুব একটা সময় । ধান রোয়া বা বোনার কাজ শেষ হলেই, গ্রামে শুরু হত বাদাই গান । তবে জন্মাষ্টমীর সময় থেকেই বাদাই গানের আসর চলতো বেশি বেশি । তবে জন্মাষ্টমী ছাড়াও বিভিন্ন পালা,পার্বনে এই গানের চল ছিল । একসময় হাওড়ার পানপুরের ঘোষ পরিবারের শ্যামসুন্দর জিউ এবং দত্ত পরিবারের রঘুনাথ জিউ–এর মন্দির প্রাঙ্গণে জন্মাষ্টমীর পরের দিন মেলা সহযোগে বাদাই গানের আসর বসে। সেটা বেশ জনপ্রিয় ছিলো। শ্রীকৃষ্ণের জন্মবৃত্তান্তমূলক ‘বাদাই গান‘-এ গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাব সুস্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়।‘বাদাই গানে‘ কৃষ্ণজন্মকথা কীর্তনাঙ্গ সংকীর্তনে গ্রাম প্রদক্ষিণ করার প্রথা ছিল।কিন্তু আজ গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীন এই লোকসংগীত ।তবে ব্যতিক্রম শুধু পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার পিপলন গ্রাম । অর্দ্ধ শতাব্দী ধরে বাদাই গানকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর পিপলন গ্রামে উৎসব পালিত হয়ে আসছে এখনো।

No comments:

Post a Comment