Friday, 9 December 2016

নগদ


একদম খাঁটি কথা। পেপার মানির থাকার মধ্যে অনেক রকম অনর্থ রয়েছে। সবচেয়ে বড়ো অনর্থটি হলো, আমি বাড়িতে পেপার মানি রেখে দিতে পারি। অলসভাবে সে যদি পড়ে থাকে, তবে তার চেয়ে অনর্থ আর কিছু হয় না। না সে মূল্যসূচকের সঙ্গে তাল রাখতে পারছে। না সে খাটছে। না সে ছুটছে। সে কেবল আছে। কিন্তু শুধু থাকা তো তার কাজ নয়। যেমন, বাড়ির কাজের লোক। বাড়িতে কাজের লোক থাকার কোনো মানে নেই, যদি সে কাজ না করে। তেমনি মানি যদি না খাটে, না ছোটে, তবে সে মানি-ই নয়। পেপার মানি বাড়িতে কুলুঙ্গিতে, ড্রয়ারের তলায়, তোষকের নিচে এইভাবে রেখে দেওয়া যায়। আছে, এবং নেই -- এই অনস্তিত্বে। এটা পেপার মানির অন্যতম বড়ো অনর্থ। ইলেকট্রনিক মানিতে এই অনর্থ নেই। ওটা থাকা মানেই খাটা, ছোটা। ... 'আপনার অর্থ'-তে 'আপনার' ভাগ কমা, 'অর্থ'-র ভাগ বাড়া। আপনার ক্ষমতা কমা, অর্থ-র ক্ষমতা বাড়া।
BUT  এইটা একটা মারাত্মক তথ্য। এবং নোট অধিগ্রহণের খেলাটা ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। সংক্ষেপে ব্যাপারটা এই : সংসদে মন্ত্রী তথ্য দিয়েছিলেন, ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটে মোট ১৪.৫ লক্ষ কোটি টাকার মতো রয়েছে। এজি জানিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টে -- সরকার আশা করছে ১০-১১ লাখ টাকা মতো জমা পড়বে। যেটা উহ্য ছিল -- বাকিটা ব্ল্যাক মানি ঘোষণা করা হবে।
২৮ নভেম্বর আরবিআই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মোট ৮.৫ লক্ষ কোটি টাকা জমা পড়েছে বাতিল নোটে। কিন্তু প্রশ্নটা হলো মোট ১৪.৫ লাখ টাকা মূল্যের পাঁচশ হাজার টাকার নোটই কি বাজারে লোকের হাতে ছিল? ৮ নভেম্বর, অর্থাৎ যেদিন নোট অধিগ্রহণ ঘোষণা হলো -- সেদিনকার আরবিআই এর হিসেবে, তার হাতে ছিল ক্যাশে ৪ লক্ষ কোটি টাকার মতো। এবং ব্যাঙ্কগুলোর কাছে ছিল ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো। ক্যাশে। এর ৮৫ শতাংশ যদি পাঁচশ হাজার এর নোটে হয়, তাহলে দাঁড়ায় ৪ লাখ কোটি।
তাহলে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে মোট কত মূল্যের বাতিল নোট ব্যাঙ্কে এসে গেছে? ১২.৫ লক্ষ কোটি টাকা। এখনও একমাস বাকি। আশা করা যায়, খুব কম পরিমাণ টাকা জমা পড়বে না। সরকারের প্রত্যাশিত ৩ বা সাড়ে ৩ লক্ষ কোটি জমা না পড়ার হিসেব মিলছে না।
তাহলে নোট অধিগ্রহণের ঘোষিত মোটিভ কি পূর্ণ হচ্ছে? 

BLACK MONEY .... VS
ভারত হিন্দুস্তান হতে চলেছে মনে হচ্ছে........

নতুন ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোটে অসাংবিধানিক ভাবে দেবনাগরীতে সংখ্যা ছেপে, আগের চেয়ে বেশি দেবনাগরী লিপিতে হিন্দি ছেপে এবং অন্য ভাষাগুলিকে আরো ছোট করে দেওয়া হয়েছে। নতুন নকশার নানা বৈশিষ্টের মাধ্যমে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন সংঘরাষ্ট্রের অহিন্দী ভাষিক জাতীয়তাগুলিকে আরো প্রান্তিক করে দেবার চক্রান্ত করা হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর একটি বিরাট আঘাত। অথচ ফিরিঙ্গী শাসনকালে নোট ৮-৯টি ভাষায় সংখ্যা ও অক্ষর থাকত একই সাইজের। "এই সময়" দৈনিকে আমার প্রবন্ধ।
" নতুন নোটের ডিজাইনের মধ্যে নিহিত কয়েকটি জিনিস ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন সংঘরাষ্ট্রের ভাষিক জাতিসমূহের মধ্যেকার মৌলিক বোঝাপড়াকে পদদলিত করে। নতুন নোটে অগ্রাধিকার পেয়েছে ৩টি জিনিস - হিন্দি, দিল্লি ও মোদী।...টাকার নোটে ছাপা তথ্য কি শুধু হিন্দিভাষীদের জন্য? বাকিরা কি বানের জলে ভেসে এসছে? এই সকল ধারণার একটা মিথ্যা উত্তর মজুত থাকে। সেটা হলো হিন্দী হলো ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন সংঘরাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা। এই দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা হওয়া সত্ত্বেও সরকারি ও বেসরকারি কায়েমী স্বার্থান্বেষী চক্র গত ৭০ বছর ধরে এই মিথ্যা প্রচার করে চলেছেন। ভারতের সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা ধারণাটিরই কোন স্থান নেই। ভারতের কোন রাষ্ট্রভাষা নেই। গুজরাট হাইকোর্ট তার বিখ্যাত রায়তে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে অহিন্দী রাজ্যে, হিন্দী বিদেশী ভাষার সমতুল্য। ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন নামক সংঘরাষ্ট্রে অহিন্দীভাষী জাতিসমূহ যে চুক্তির দ্বারা হিন্দীভাষী জাতির সাথে আবদ্ধ, তার নাম দিল্লীতে ক্ষমতাধারী পার্টির হিন্দীকরণের ম্যানিফেস্টো নয়। তার নাম সংবিধান। টাকার নোটে এই সংবিধানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো প্রকারান্তরে ইন্ডিয়ান উনিয়নের ঐক্যের উপর আঘাত হানা। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে যে রাজনৈতিক আদর্শ মানুষে মানুষে ভাষার প্রশ্নে বৈষম্য ঘটায় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিককে ভাষার প্রশ্নে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করে, তা কোন বহুভাষী রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর নয়। ১৯৭১-পূর্ব্ববর্তী পাকিস্তান এক জ্বলন্ত উদাহরণ। দুর্ভাগ্যের কথা এই যে যখন এই উপমহাদেশ ফিরিঙ্গী শাসনাধীন ছিল, তখন কিন্তু চালু টাকার নোটে ৯টি লিপিতে সংখ্যা (ইংরেজি সমেত) একই সাইজে দেওয়া থাকতো। বহু ভাষাকে সমমর্যাদা দেবার ইতি ঘটে ১৯৪৭-এ ইন্ডিয়া রাষ্ট্র গঠিত হবার সাথে। হিন্দি তথা দেবনাগরী পরিণত হয় তথ্য দেবার জন্য বড় আকারে। অন্যান্য ভাষা পর্যবসিত হয় পিছনদিকের এক ছোট প্যানেলে গাদাগাদি করে ক্ষুদ্র আকারে, বৈচিত্রের পরাকাষ্ঠা হিসেবে।...নতুন নকশার ৫০০ টাকার নোটে বিরাজ করছে লালকেল্লা। লালকেল্লার স্মৃতি ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন সংঘরাষ্ট্রের সকল জাতির কাছে সুখকর নয়। লালকেল্লা ছিল দিল্লী-কেন্দ্রিক মোঘল সাম্রাজ্যের সদর দফতর। ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন সংঘরাষ্ট্র মোঘল সাম্রাজ্যের উত্তরাধীকারী রাষ্ট্র নয়। এটি ১৯৪৭-এ সৃষ্ট। দিল্লী-কেন্দ্রিক যে সাম্রাজ্য বাঙালি, অহমিয়া, ওড়িয়া ইত্যাদি নানা স্বাধীন এলাকা দখল করেছিল, লাল কেল্লা সেই স্বাধীনতা হরণের প্রতীক। মূলতঃ হিন্দী-উর্দু ভাষী লোক-লস্কর এই দখলকৃত এলাকায় বসিয়ে তারা এই দেশগুলিকে শাসন করতো। লালকেল্লা দিয়ে আজকের নতুন দিল্লীর সরকার কি প্রমাণ করতে চায়? "
RIL-JIO VS  ........ L.M.ENTERPRISE....

ক্রেডিট সুইস নামে একটা নামজাদা সংস্থা ২০১০ থেকে প্রতি বছর সারা বিশ্বের সম্পদের হিসেব নিকেশ দিয়ে আসছে। এ বছরেরটা বের করেছে কাল। তাতে ভারতের-টাতে দেখা যাচ্ছে, দেশের মোট সম্পদের ৮০.৭ শতাংশ আছে ১০ শতাংশ ধনীর হাতে। আর মোট সম্পদের ৫৮.৪ শতাংশ আছে ১ শতাংশ মহাধনীর হাতে। অর্থাৎ দেশের মোট সম্পদ যদি ১০০ টাকা হয়, তার মধ্যে ৮০.৭ টাকা আছে ১০ শতাংশের কাছে, আর ৫৮.৪ টাকা আছে ১ শতাংশের কাছে। এবং প্রায় প্রতি বছর সম্পদের এই ঘনীভবন বাড়ছে। এশিয়ার মধ্যে এই ব্যাপারে সবচেয়ে এগিয়ে আমরা।
এই অবদিই তথ্যটা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। কিন্তু তথ্যটির আরো উদ্বেগজনক দিকও আছে বইকি! গ্রাফটা ভালো করে নজর করা হোক।
২০১০ সালে ধনী ১০ শতাংশের হাতে ছিল ৬৮.৮ শতাংশ সম্পদ। আর মহাধনী ১ শতাংশের হাতে ছিল ৪০.৩ শতাংশ সম্পদ। ধনী ১০ শতাংশের মধ্যে তো ওই মহাধনী ১ শতাংশও আছে। ওদের বিয়োগ করে হিসেবটা কী দাঁড়ায় দেখা যাক। -- মহাধনী ১ শতাংশের শেয়ার বাদ দিলে ধনী ৯ শতাংশের হাতে আছে ২৮.৫ শতাংশ সম্পদ। ২০১০ সালে। পরের বছর ২০১১ সালে ধনী ৯ শতাংশের হাতে দাঁড়িয়েছে ২৬ শতাংশের মতো সম্পদ। তার পরের তিন বছর, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ তে ধনী ৯ শতাংশের হাতে সম্পদ প্রায় স্থির, ২৫ শতাংশের মতো। ২০১৫ তে কিন্তু ধনী ৯ শতাংশের সম্পদ কমে যাচ্ছে। হচ্ছে ২৩.৩ শতাংশ। এবছরের হিসেবে, ২০১৬ তে তা দাঁড়িয়েছে ২২.৩ শতাংশের মতো।
অর্থাৎ, শুধু অধনী ৯০ শতাংশ গরীবতর হচ্ছে না, ধনী ৯ শতাংশও গরীব হচ্ছে। ধনী হচ্ছে কেবল মহাধনী ১ শতাংশ। সংখ্যার বিচারে তারা ভারতের এক দেড় কোটি।
কারা এরা? আসুন, একটু ভাবা যাক। ভারতের এক দেড় কোটির মধ্যে মোটামুটি স্বচ্ছল রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের কতজন থাকতে পারে? লাখ পাঁচেক। পশ্চিমবঙ্গের লাখ পাঁচেকের মধ্যে কলকাতার কতজন থাকতে পারে? কলকাতার যেমন রক্তচোষা ক্যারেকটার, তাতে লাখ তিনেক হবে।
আপনি কি কলকাতার মহাধনী তিন লাখের একজন? অথবা, পশ্চিমবঙ্গের মহাধনী পাঁচ লাখের একজন? যদি না হন, তাহলে গত ছ' বছরে আপনি গরীবতর হয়েছেন তাদের তুলনায়। তারা মহাধনীতর হয়েছে।
নোট অধিগ্রহণে আপনি নিশ্চিতভাবে আরো গরীব হবেন। এবং মহাধনীরা নিশ্চিতভাবে ধনীতর হবে। কেন? কারণ নোট অধিগ্রহন প্রক্রিয়ায় (যা কার্যত একটি নয়া ব্যাংকিং রেগুলেশন মাত্র) ধনীতর হবার জন্য তারা নিশ্চিতভাবে আপনার চেয়ে বেশি প্রস্তুত, এক কদম আগে। তাদের বিদেশে টাকা আছে। কার্ড আছে প্রচুর। স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি আছে। বিজনেস আছে ঝোপ বুঝে কামিয়ে নেওয়ার জন্য। ব্যাঙ্ক তাদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে টাকা খাটানোর জন্য। তাদের ল ইয়ার আছে গুচ্ছ, আইনের ফাঁক গলে মাল ঝাপার জন্য। কনট্যাক্টস আছে সব ওপর মহলে, অথবা তারা নিজেরা মিলেই নিজেদের কনট্যাক্ট, তাই খবর হওয়ার আগেই খবর পায়।
ঠিক আছে? নিজের পজিশন বুঝলেন? এবার নিজের মতামত ঠিক করুন।
JONO DHON VS VIJAY MALIYA

আমার মনে হচ্ছে, টাকা অধিগ্রহণের পেছনের ষড়যন্ত্রটা এখনো পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে, তার থেকেও বড়ো।
কেন? কাল সুপ্রিম কোর্টে আমাদের এজি হিসেব দিয়েছে, বাজারে ১৫-১৬ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের ৫০০-১০০০ টাকার নোট আছে, সরকার আশা করে, তার মধ্যে ১০-১১ লক্ষ কোটি জমা পড়বে। যাতে কম জমা পড়ে, তার জন্য নানাবিধ ব্যবস্থা, যেমন আড়াই লক্ষ-র বেশি জমা দিলে উঁচু ট্যাক্স, জবাব চাওয়া, জনধন অয়াকাউন্টে পঞ্চাশ হাজার ক্যাপ, সমবায় ব্যাঙ্কে জমা নিষেধ ইত্যাদি। বেশ। কিন্তু বাকি যেটা জমা পড়ল না? লোকে ভয়ে ফেলে দিল বা নষ্ঠ করল?
ভেবে দেখুন। সেই টাকাটা রিজার্ভ ব্যাংকের লাভ। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-কে ওই নোটের সম মূল্যমান আর নোটধারীকে ফেরত দিতে হল না, যেটা করতে সে আইনত বাধ্য ছিল। [ব্যাখ্যা : যখন legal tender হিসেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ওই নোটগুলো বাজারে ছেড়েছিল, তখনই সে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় জড়িয়ে গেছিল - নোটধারীকে সম মূল্যমান ফেরত দেবে, যেটা লেখাও থাকে নোটের ওপরে, এবং সই থাকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্ণরের।]
এবার সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে টাকাটা চাইতেই পারে, কারণ সে ভয় দেখিয়েই তো কেল্লা ফতে করেছে।
তার মানে সরকার ভয় দেখিয়ে জোর করে নোট অধিগ্রহণ করে নিজের পকেটে পুরতে চলেছে ৫ লক্ষ কোটি টাকা। এটা জনগণের টাকা।
এবার সরকার কী করবে? ওই টাকা যদি ৫০ কোটি অয়াকাউন্ট হোল্ডারের কাছে পাঠায়, তাহলে প্রত্যেকে পাবে ১০ হাজার করে। যদি ফিফটি ফিফটি করে, তাহলে অর্ধেক দেবে ব্যাঙ্কগুলোকে কর্পোরেটদের লোন দেওয়ার জন্য, অর্ধেক অয়াকাউন্ট-এ ফেলবে।
আমার মনে হচ্ছে এটাও এই টাকা অধিগ্রহণ ষড়যন্ত্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

Monday, 14 November 2016

শিশু


আগামীর বিশ্বজয়ের নাবিক যারা, তাঁদের জন্য যে দুর্জয় দুর্ভেদ্যকে জয় করতে হবে আমাদের- 

 

নিরাপত্তা 


শেষ দশ বছরে ভারতে শিশুর বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত হবার প্রবণতা বেড়েছে ৫০০ গুণ। ২০০৫ সালে শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা সরাকরি ভাবে নথিভুক্ত হয়েছিল ১৪,৯৭৫। দশ বছরের মধ্যেই তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪,১৭২। আগামী দিনে এই সংখ্যাটা কত হবে, তা ভাবলেই শিউড়ে উঠছে শরীর, বাড়ছে আশঙ্কা। শিশু মমনেও তৈরি হচ্ছে ভয়। নিজের দেশেই নিরাপত্তার অভাব অনুভব করছে শিশুরা। এমন একটা সমাজ সবার সমান দায়িত্বে গড়ে তোলা প্রয়োজন যেখানে শিশুর শৈশব চুরি যাবে না, জীবনশঙ্কায় ভুগতে হবে না কোনও শিশুকেই।

নিজের পায়ে দাঁড়ানো 


পৃথিবীতে যে দেশগুলোয় শিশু নিপীড়নের সংখ্যা সবথেকে বেশি হচ্ছে, সেইসব দেশের একটা তালিকা তৈরি করলে দেখা যাবে লজ্জার পরিসংখ্যান সঙ্গী করে ভারত অনেক দেশের থেকেই এগিয়ে রয়েছে। এই দেশে এখনও ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয় কিশোরীর। এই দেশে এখনও কন্যাভ্রুণ হত্যার মত অমানবিক 'সংস্কৃতি' মানুষের মধ্যে রয়েছে। 

২০০১ সাল পর্যন্ত ভারতে ১৪ বছরের আগে কিশোরীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার ঘটনা সরকারি ভাবে নথিভুক্ত হয়েছে ৬৬,৬৪৯। এক দশকের মধ্যেই সংখ্যাটা আকাশ ছুঁয়েছে। ২০১১ সালের মধ্যে ভারতে ১৪ বছরেরও কম বয়সী নাবালিকার বিয়ের ঘটনা ঘটেছে ২৯,১৮,৭৭৪। এদের মধ্যে ৪,৫৭,০০৫ নাবালিকা মা'ও হয়েছে। সমাজ বিজ্ঞানীরা মনে করেন এর পিছনে রয়েছে অশিক্ষা। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজন আবশ্যিক। গবেষকরা মনে করেন শিশুর সম্পূর্ণ শিক্ষা না হওয়া পর্যন্ত কখনই তাঁদের বিয়ের বন্ধনে বেঁধে ফেলা উচিত নয়। 

সকলের জন্য শিক্ষা, এই অধিকার পাক সবাই, এই দাবিই করছে ভারতের সমস্ত শিশু। 

শৈশব যেন চুরি না যায় 


এই তথ্য শুনলে গোটা ভারতবাসী লজ্জিত হবে। বর্তমান সময়ে ভারতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ১০ মিলিয়ন (১ কোটি)। যদিও ২০০১ সালে ভারতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা যা ছিল একদশকে, সেখান থেকে ২.২% শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সের প্রতি চার জন শিশুর মধ্যে একজন শ্রমিক। ১০ লাখের ওপর শিশু যারা এখনও তাঁদের নাম লিখতে পারে না (বয়স ৭ থেকে ১৪)। 

খাদ্য সুরক্ষা 



ভারত বিশ্বের সেই দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি যে দেশের অধিকাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। ভারতে রক্তাল্পতার শিকার ৭০ শতাংশ শিশু, যাদের বয়স পাঁচ বছরের থেকেও কম। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী শিশুদের অপুষ্টির মূল কারণই হলে মায়ের অপুষ্টি। ভারতে মা'য়েদের খালি পেট, অপুষ্টি আসলে ভারতকে ধীরে ধীরে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, এই ধ্রুবসত্যকে মেনে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যার সমাধানে সবাইয়ের একত্রে ঝাঁপিয়ে পড়া একান্ত আবশ্যক। মা সুস্থ হলেই সুস্থ সন্তান প্রজনন সম্ভব, এই সরল সূত্র পৌঁছে দিতে হবে ঘরে ঘরে। শুধু তাই নয়, শিশু জন্মের পর যেন কোনও খাদ্য সঙ্কটে না ভোগে তার দায়ভার নিতে হবে রাষ্ট্রকেই। 

সুস্বাস্থ্যের অধিকার সুরক্ষিত হোক 


শহর থেকে নগর, গ্রাম থেকে বন্দর সুচিকিৎসা থেকে যেন কোনও শিশু বঞ্চিত না হয়। ডাক্তার পৌঁছে দিতে হবে দ্বারে দ্বারে। এ দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকেই। 

শিক্ষার অধিকারকে সুরক্ষিত করতে হবে


সকলের জন্য শিক্ষার অধিকার সুরক্ষিত করা। ভারতে প্রতি ১০০ শিশুর মধ্যে মাত্রে ৭২ জনই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হয়। সেখান থেকে গড়ে মাত্র ৪৮ জন শিশু মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারে। উচ্চ মাধ্যমিকে সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়ায় ৩৩ কিংবা তার কম। উচ্চ শিক্ষায় চেহারাটা আরও সংকীর্ণ। শিক্ষার ধাপ যত বাড়ে বেঞ্চগুলো থেকে কমতে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এই অবস্থার বদল আনতে হবে, দরকার শিক্ষায় সাম্য। যার টাকা আছে সেই কেবল পড়াশুনা করবে, যার নেই সে অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে, তা চলবে না। শিক্ষা হবে সবার।   
 

বেটি বাঁচাও


২০১১ সালের আদমসুমারি পর্যন্ত, এদেশে ছেলে ও মেয়ে শিশুদের অনুপাত ১০০০:৯১৪। কন্যাভ্রুণ হত্যা ভারতে একটা সামাজিক ব্যাধি। এই সংক্রামক ব্যাধি দূর করতেই হবে। অর্ধেক নয়, গোটা আকাশের সমান অধিকার থাকবে নারী ও পুরুষেরই। সংরক্ষণের আড়ালে যেন না থাকে বঞ্চনা।
  

Sunday, 13 November 2016

নোট

আজ রবিবার ছুটির দিন কিন্তু বন্ধুদের দেখা নেই।টাকা পালটাতে ছুটেছে সবাই। রাজনৈতিক দল গুলো রাজনীতি করছে । মিডিয়া হলুদ কমলা সংবাদ পরিবেসন করছে। আমি একটু উদাসীন। প্রথম চাকরি ছেড়ে ছিলাম e.s.i hospital সহকর্মীকে ভর্তি করতে গিয়ে বুঝলাম কাজ করলেই সবকর্মীর e.s.i , e.p.f থাকবে এমন কথা নেই । পরেরটা ছাড়লাম মরা মানুষকে 7 মাস মাইনে দিয়ে । প্রতিবাদ প্রতিশব্দ জানা ছিলো না চাকুরি করা হলনা তাই আজ দালাল বলেই পরিচিত। দেশের 60% মানুষের মত আমার সাপ্তাহিক আয় টেনে টুনে 1000 টাকা।1000 টাকা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই । 500টাকা নিয়ে ঝামেলা পারেছি অনেক বার, জাল বেরিয়ে অনেক বার ।তবে 1000 বা 500 Notes থেকে আড্ডা মুল্যবান।
facebook বা what's app করের দূরে বন্ধু কাছে আসে মুহূর্তে কিন্তু বন্ধুতের উষ্ণতা পাইনা ।
ধরো আজ ফিরে যাই কয়েক হাজার বছর আগে টাকা পয়সা যখন ছিলো না আমি চাষি হয়ে তোমাকে দেব ধান , তুমি কামার হয়ে আমাকে গড়ে দেবে কাস্তে ,,,,,,,,,,

Monday, 24 October 2016

সে তো এলো না

গত বছর ছট পুজোর আগে রবীন্দ্র সরোবরে দেখা গিয়েছিল কয়েকটি ‘হোয়াইট টেল্‌ড রবিন’। চমকে উঠেছিলেন প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। শহরে তো এদের দেখা যায় না! জানা গিয়েছিল, শীতের মুখে পাহাড়ি এলাকা থেকে উড়ে মহানগরে এসে সরোবরে ঘাঁটি গেড়েছিল ওরা।
অথচ ছট পুজোর বিসর্জন পেরোতেই লেক থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল ওই ‘অতিথিরা’! গত বছর ছট পুজোর আগে লেকে গিয়ে ওই অতিথিদের ছবি তুলেছিলেন পক্ষী বিশারদ শান্তনু মান্না। তাঁর কথায়, ‘‘ছটপুজোর বিসর্জনে লেক এলাকায় দেদার বাজি ফাটে। তাতে আতঙ্কিত হয়েই হয়তো এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিল ওরা।’’ এ বার সেই আশঙ্কা রয়েছে কালীপুজো ঘিরেও।
পক্ষীপ্রেমীরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরেই শীতের শুরু থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত নানা ধরনের পরিযায়ী পাখি অতিথি হয়ে আসছে এ শহরে। যেখানে জল রয়েছে, সে সব জায়গাকেই প্রধানত বেছে নেয় তারা। রবীন্দ্র সরোবর ছাড়াও ইকো পার্ক, রাজারহাট সংলগ্ন ভেড়ি, সাঁতরাগাছি এলাকায় ইতিউতি দেখা যায় তাদের। কয়েক দিন আগেই রবীন্দ্র সরোবরে ঝোপের মধ্যে থেকে পাখির ডাক শুনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন কয়েক জন প্রাতর্ভ্রমণকারী। কাছে গিয়ে দেখেন, ঝোপের ভিতরে অচেনা নীল রঙের পাখি বসে রয়েছে! খবর পেয়ে হাজির হন পক্ষীপ্রেমীদের অনেকেই। ছবি তোলার পরে জানা যায় নীল রঙের ওই পাখিটির নাম ‘সাইবেরিয়ান ব্লু রবিন’। পরিযায়ী এই পাখি এর আগে রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় দেখা যায়নি বলে দাবি করেছেন পক্ষীপ্রেমীরা।
লেক এলাকার পাখিদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী ও পক্ষীবিশারদেরা বলছেন, সরোবরে ইদানীং দেখা যাচ্ছে, জাপান, কোরিয়ার বাসিন্দা ‘এশিয়ান স্টাবটেল’, মধ্য চিনের ‘ফায়ারথ্রোট’-এর মতো পরিযায়ী পাখিদেরও। গত বছরের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে কয়েকটি সরালকেও লেকের জলে ভাসতে দেখা গিয়েছিল। গত কয়েক বছরের নিরিখে বাড়ছে ‘ব্লু থ্রোটেড ফ্লাইক্যাচার’ এবং ‘ব্রাউন ব্রেস্টেড ফ্লাই ক্যাচার’ প্রজাতির পাখিও।
কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরে এলেও অতিথিরা কিন্তু নিশ্চিন্তে থাকতে পারছে না। পরিবেশপ্রেমীরা বলছেন, এমনিতে শহরে দূষণ বেশি। তার উপরে কালী ও ছট পুজোর বিসর্জন এবং বাজি পোড়ানোর ফলে পরিযায়ী পাখিদের সমস্যা হচ্ছে। লেকে ছট পুজোর তেল, ফুল পড়ায় জল দূষিত হচ্ছে। ফলে জলে থাকা পাখিরাও বিপন্ন হতে পারে
বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। দূষণ ঠেকাতে ইতিমধ্যেই রবীন্দ্র সরোবরের দায়িত্বে থাকা কেআইটি-কে চিঠিও লিখেছেন পরিবেশপ্রেমী ও পক্ষীবিশারদদের অনেকে।
পক্ষীবিশারদদের অনেকে বলছেন, সরালের মতো পাখিরা জলে থাকে। কিন্তু জলের মাঝে বা পাড়ের কোনও জায়গায় ওদের বাসা তৈরি এবং বিশ্রামের জায়গার প্রয়োজন হয়। এ ধরনের পাখিদের উপরে চোরাশিকারিদেরও নজর থাকে। ফলে সেই বিপদ থেকেও এদের রক্ষা করা প্রয়োজন। এ দিকে, জলে অতিরিক্ত শ্যাওলা বা ময়লা জমলেও তার প্রকোপ পাখিদের উপরে পড়ে। তাতে এক দিকে জলে যেমন খাবারের সঙ্কটে পড়ে ওরা, তেমনই আক্রান্ত হয় নানা রোগে। গত বছরের শীতে এই দূষণের প্রকোপেই সাঁতরাগাছি ঝিলে প্রচুর পরিযায়ী পাখির মৃত্যু হয়েছিল।
পক্ষীপ্রেমী সংস্থা ‘বার্ডস অব রবীন্দ্র সরোবর’-এর সদস্য সুদীপ ঘোষ জানান, শীত পড়ার মুখে পরিযায়ী পাখিরা কোথাও একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে আশ্রয় নেয়। কোথাও বা আবার যাতায়াতের পথে ক্লান্ত হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়। কোন জায়গায় কতক্ষণ থাকবে তা ওই এলাকার পরিবেশের উপরে নির্ভর করে। ‘‘রবীন্দ্র সরোবরে যে ভাবে দূষণের অভিযোগ উঠছে তাতে এটি পাখিদের জন্য কতটা উপযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়,’’ মন্তব্য সুদীপবাবুর।
তিনি জানান, পাখিদের থাকার জন্য ঝোপঝাড় এবং জল দূষণ রোধে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যেই কেআইটি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। রবীন্দ্র সরোবর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত কমিটির অন্যতম সদস্য সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘সরোবরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চড়া আলো ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ধরনের আলো পাখিদের জন্য ক্ষতিকর। কেআইটি কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে জানানো হলেও কোনও লাভ হয়নি।’’
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলো ব্যবহার নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি কেআইটি কর্তৃপক্ষ। তবে রবীন্দ্র সরোবরের ভারপ্রাপ্ত কেআইটির বাস্তুকার সুধীন নন্দী বলেন, ‘‘সরোবরের মধ্যে থাকা কৃত্রিম দ্বীপগুলি, সাফারি পার্ক এবং লিলিপুলে পাখিদের আকৃষ্ট করার জন্য ব্যবস্থা করা হবে। সরোবরের জল যাতে দূযণমুক্ত থাকে, সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

Wednesday, 14 September 2016

ভুমি

আজ সিঙ্গুরে মঞ্চের কাছের ভিড়ের দমবন্ধ পরিবেশ থেকে একটু হালকা হতে আমি, Amalendu Sarkar, আর Sriman Chakraborty উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করেছিলাম, কাতারে কাতারে লোক, তাদের উল্টোমুখে। আমাদের মতো অনেকেই তাই। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে খানিকটা যেতে একজায়গায় দেখলাম, টাটাদের পাঁচিলের ভাঙা অংশ দিয়ে পিল পিল করে লোক ঢুকে পড়ছে ওই হাজার একর জমিতে। আমরাও ঢুকে পড়লাম। :D
ঘুরে দেখলাম -- বাতিল কারখানা। কারখানার শেড। বছর দশেক আগেও যে চাষজমি ছিল এগুলো, না বলে দিলে কেউ বুঝবে না। আগাছা। আর কাশ ফুল। জলাশয়। দুটো তিনটে বুলডোজার আগাছা তুলছে। আর বুলডোজারগুলোকে তাড়া করেছে বকের দল। গত আট বছর প্রায় মনুষ্য বর্জিত এলাকা। প্রায়, কারণ গরু ছাগল চড়াতে আসত কেউ কেউ। এখনও আসছে।
কাটোয়া, গুড়াপ, বর্ধমান, অম্বিকা কালনা -- সব জায়গার থেকে চাষিরা যারা এসেছে সিঙ্গুর সমাবেশে, তাদের মূল আকর্ষণ এই টাটার পাঁচিলের ভেতরের জমিটা। কারখানার শেড। "এখানে আর চাষ করা সম্ভব" কি না। এমনকি "আহারে কারখানাটা" বলার লোকও কিছু। সবাই চাষি। একজন বলল, 'এখানে শিল্পও করা যেত, টাটার বদলে অন্য কাউকে দিত'। আর একজন বলল, 'দিদি বলুক, সারা বাংলা থেকে ১০০ দিনের কাজের লোক এনে এই জায়গা আগের মতো করে দিক।'
মঞ্চের কাছাকাছি এলাকায় তেল চুকচুকে প্রমোটার মার্কা চেহারার লোকের ভিড়ভাট্টা দেখে খারাপ লাগছিল। দম আটকে আসছিল। মন ভরে গেল পাঁচিল টপকাতে পেরে। আর এখানেও এত লোক দেখে। দুপুর গড়িয়ে গেল। লোক আরও বেড়ে গেল পাঁচিলের মধ্যে। বৃষ্টি এল। কয়েক কিলোমিটার দূরে মঞ্চে মমতার ভাষণ শুরু হল, বোঝা গেল। কিন্তু কথা শোনা যাচ্ছিল না। এখানে অবশ্য অন্য আকর্ষণ। অতি উৎসাহী কেউ কেউ টাটার কারখানার শেড-এ ইঁটও মারছিল, আর চরাচর কাঁপিয়ে শব্দ তার।
ন'বছর আগে আমাদের চোখের সামনে পাঁচিল না দেওয়া একটা জায়গা পাঁচিল দেওয়া নিষিদ্ধ এলাকা হয়ে গিয়েছিল। কাগজ, ম্যাগাজিন, প্যাম্পলেট-এর এম্পিরিক্যাল কাজ করার সময় নিজের অনুভূতি জানানোর জায়গা বড়ো একটা থাকে না। এলাকার ক্ষেতমজুর কী বলল, ভাগ চাষি কী বলল, প্রান্তিক চাষি কী বলল, মধ্য চাষি কী বলল, মা কী বলল, ছেলে কী বলল, মেয়ে কী বলল, ঘোষ কী বলল, দাস কী বলল, রুইদাস কী বলল, মালিক কী বলল, মৈতি কী বলল -- সে সব কথা লিখেছি তখন। ঠিক করেছি। করাই দরকার।
ন'বছর আগে আমার খুবই খারাপ লেগেছিল টাটার পাঁচিল উঠে যাওয়ায়। কেউ বাধা না দেওয়ায়। কারণ অনেক আছে, কারণের কথা থাক।
আজ সেই পাঁচিলের ভেতর অবাধে দলে দলে ঘুরে বেড়াতে পেরে, টাটার কারখানার বাতিল শেড আর লন দেখে মারাত্মক ভালো লেগেছে।
সাআলা!

Thursday, 1 September 2016

সিঙ্গুর

সুপ্রিম কোর্ট ও মমতা ছাড়াও সিঙ্গুরের জয় আরো অনেক কিছুর। সিঙ্গুরের জয় অধিকার আন্দোলনের। সিঙ্গুরের জয় চাষবাসের। সিঙ্গুরের জয় গর্বিত, গোঁয়ার, গাঙ্গেয় বাংলার চাষির। সিঙ্গুরের জয় ধৈর্য্যের। সিঙ্গুরের জয় গ্রামবাংলা ও শহরবাংলার কৃষিপ্রেমের। সিঙ্গুরের জয় সংসদীয় পন্থার। সিঙ্গুরের জয় প্রয়োজনীয়, কারণ সিঙ্গুরে হার কর্পোরেটের।
ব্যস্‌ এটুকুই।
কারণ সিঙ্গুরের জয় একটি ফয়সালা হয়ে যাওয়া লড়াই-এর। এবং সেই ফয়সালা সিঙ্গুর একা করেনি। করার কথাও নয়। সেই ফয়সালা করেছে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, পস্কো, রায়গড়, শালবনী (লালগড়), হরিপুর ......। জমি অধিগ্রহণ আইনটাই বাতিল করে দিয়েছে নীতিনির্ধারক মুষ্টিমেয়রা। বদলে এসেছে জমি কেনা। আর ছুটছাট কিছু পড়ে থাকলে সেটুকু অধিগ্রহণ। নয়া কায়দা, যা অনেক বেশি বাজার-সম্মত। ক্ষতিপূরণের বদলে দরদাম করা বিক্রয়মূল্য। আধিপত্য-সম্মতির সূক্ষতর রূপ।
মানুষের আরো ভালোভাবে বেঁচে থাকার লড়াই তো খেলা বা ভোট নয়। এমনকি আন্দোলনও নয়। তাই এর জয় পরাজয় হয় না। ফয়সালা হয়। এক দশক আগের চাষাবাদ করে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা মানুষের লড়াই সাথি হিসেবে পেয়েছে প্রায় এক দশক ধরে চলতে থাকা এবং চলতেই থাকা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা-কে। প্রকল্পগুলির গুটিয়ে যাওয়ার পেছনে জনপ্রতিরোধ একটা কারণ। আরেকটা কারণ এই মন্দা।
কিন্তু চাষাবাদের বিপদটি গভীর হয়েছে, অথবা গভীরতর বিপদটা ওপরে উঠে এসেছে। সার, বিষ, জল বহুল চাষ আর একেবারেই লাভজনক থাকছে না। চাষার ছেলে সত্যিই আর চাষা থাকতে ডরাচ্ছে। চাষ-লেবার সরে যাচ্ছে অন্যত্র, যেখানে রোজগার বেশি। পড়ে থাকছে জমি। পশ্চিম ভারতে শিক্ষা চাকরিতে সংরক্ষণের সুবিধা চাইছে উচ্চবর্ণ চাষি।
তাই সিঙ্গুরের জয় সুখস্মৃতি নিশ্চয়ই। ছেলেমেয়েদের শোনানোর মতো আখ্যান। কিন্তু পাথেয় নয়। কারণ লড়াইটা বদলে গেছে।

Thursday, 4 August 2016

জন্ম দিন

‘জন্মদিন’
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারতের মানচিত্রেরও একেবারে প্রান্তিক একটি গ্রামের হাইস্কুলে শিক্ষকতার কাজে বহাল হয়েছিলাম আজ থেকে দশবছর আগে। অর্থনীতির সাম্প্রতিক মানদণ্ডে যাদের ‘ধনী’ বলা যায়, সেরকম কোনও পরিবার সেই গ্রামে সেদিনও ছিল না, আজও নেই। এদেশে ‘ধনী’-রা (যাঁরা নিজেদের আহ্লাদ করে মধ্যবিত্ত বলে থাকেন) গ্রামে থাকেন না। গ্রামে অবিশ্যি তাদের ‘দেশের বাড়ি’ থাকে, যেখানে তাঁরা কালেভদ্রে যান। গ্রামের দিকে সচরাচর দশটি পরিবারের মধ্যে সাতটিই হয় ‘দরিদ্র’, বাকি তিনটিকে বড়জোর ‘সচ্ছ্বল’ বলা চলে।
তা সেরকমই একটা ‘হঠাৎ সচ্ছ্বল হয়ে ওঠা’ পরিবারের শিশুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম চাকরি-জীবনের সেই প্রথম পর্বে। পরিবারের কর্তার হঠাৎ পাওয়া একটি ছোটখাটো সরকারি চাকরি তাঁর মাটির বাড়িটিকে সদ্য পাকা করেছে। সেই ‘দালানেরই’ ছাদে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল ‘বার্থডে পার্টি’। ইতিপূর্বে কখনো সেই শিশুটির জন্মদিন ওভাবে ‘সেলিব্রেট’ করা হয়নি। করার সামর্থ্য ছিল না তাদের।
‘উন্নয়ণ’ বলতে আমরা, তৃতীয় বিশ্বের লোকজন যা বুঝি, তা কিন্তু প্রথম বিশ্বের উন্নয়ণের উচ্ছিষ্ট ছাড়া কিছুই নয়। ব্যাপারটা আবার ভারতের গ্রাম-শহর সম্পর্কেও একইভাবে প্রযোজ্য। ঠিক যেমন আমাদের দেশের কোনো বড় শহরে অ্যাম্বুলেন্সের আগে পৌঁছয় পিৎসার ডেলিভারি বয়, তেমনি গ্রামগুলোতে পরিশ্রুত পানীয় জলের অনেক আগেই পৌঁছে যায় পেপসির ক্রেট, প্রাথমিক শিক্ষার আগে পৌঁছয় ডিশ টিভি। উন্নয়ণের সেই ‘উচ্ছিষ্ট’-ই সেদিন পৌঁছে গিয়েছিল গ্রামের সেই দালানকোঠার ছাদে -- একটা ঢাউস ‘বার্থডে কেক’-এর আকারে। রাতারাতি ধনী হয়ে যাওয়া পরিবারের শিশুটি সেই কেক কাটছিল। আর আমি দেখছিলাম হ্যাজাকের আলোর সেই বৃত্তের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটা কালোকুলো চেহারার বাচ্চাকে। জুলজুলে চোখে ওরা তখন তাকিয়ে ছিল সেই বাহারি কেক-টার দিকে, ধারালো চকচকে ছুরিটার দিকে...। দুবেলা পেটপুরে খেতে না পাওয়া, অপুষ্টিতে ভোগা, সচ্ছ্বলতার আশীর্বাদ-বঞ্চিত সেই বাচ্চাগুলো সেদিন ওই বাড়িতে নিমন্ত্রিত ছিল, শিশুটির বন্ধু হিসেবে। ওদের সেই লোভী জুলজুলে চোখগুলো আমাকে প্রায় তিরিশ বছর আগের এক স্মৃতির দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল।
তিরিশ বছর আগে, আজকের এই কলমচি যখন নেহাৎ-ই পাঁচ-ছ বছরের বালক, তখন পাড়ার এক রীতিমত ধনী পরিবারে ‘জন্মদিনের নেমতন্ন’ জুটেছিল তার। অর্থনৈতিক শ্রেণিবৈষম্য ব্যাপারটা শিশুদের মগজে সহজে ঢোকে না। তাই হয়তো সেই পরিবারের শিশুটির আবদারে বাধ্য হয়ে তার বাবা-মা তার এমন কয়েকটি ‘বন্ধুকে’ নিমন্ত্রণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, যাদের সঙ্গে তাঁদের ‘ঠিক মেলে না’। সেই ‘দায়ে পড়ে আমন্ত্রিত’ শিশুর দলের একজন হয়ে সেদিন সন্ধ্যা-নাগাদ মহানন্দে হাজির হয়েছিলাম বন্ধুর জন্মদিনের উৎসবে। সেখান থেকে অবশ্য আমাদের খানিকটা লুচি-মাংস আর দুটো মিষ্টি খাইয়ে এবং ‘কেক কাটতে দেরি হবে’ জানিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদায় করে দেওয়া হয়েছিল। পরদিন সেই বাড়ির বাইরের আস্তাকুঁড়ে রকমারি সুখাদ্যের উচ্ছিষ্ট দেখে বুঝতে পেরেছিলাম, একটা জন্মদিনের আড়ালে আরও কতরকমের জন্মদিন লুকিয়ে থাকতে পারে।
আমার একমাত্র সন্তানটির আজ প্রথম জন্মদিন। তাই, এটা তার বাবা-মায়ের একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত যে, তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে কোনোদিন কোনো ‘বার্থডে পার্টি’ হবে না। কেউ নিমন্ত্রিত হবেন না। একান্ত-আত্মীয় ব্যতীত কারো কাছ থেকে কোনো উপহারও গৃহিত হবে না। এ নিয়ে যদি কোনোদিন আপন সন্তানেরই অভিমানী প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, সেদিন না হয় তাকে বুঝিয়ে বলা যাবে যে -- শুধুমাত্র জন্মগ্রহণ করার মধ্যে এমন কোনো কৃতিত্ব নেই যার জন্য লোকজন ডেকে ভূরিভোজ করাতে হবে (বা দলবল জুটিয়ে মদ্যপান করতে হবে)। জন্মদিন ব্যাপারটা একান্তই ব্যক্তিগত (বড়জোর পারিবারিক) খুশির দিন, বৈভব প্রদর্শন করে অপরের মুখ ম্লান করে দেবার দিন নয়।
ওকে এও বলা যেতে পারে যে, শুধু দীর্ঘজীবি হয়ে পৃথিবীর বোঝা বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই। যদি পারো নিজেকে সেই যোগ্যতায় উত্তীর্ণ কোরো, যাতে তুমি নও, লোকে তোমার জন্মদিন পালন করে। পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষেরই জন্মের একটা দিন আছে, কিন্তু জেনে রেখো, ‘জন্মদিন’-টা অর্জন করতে হয়।

Friday, 8 July 2016

জগন্নাথ

⛄ভগবান হলেও সে যে জগন্নাথ⛄মানুষ আসলে ইশ্বর ঈশ্বরের সৃষ্টি কারি । মানুষের মনের চেতনাই ঈশ্বর । লোক কথাও তাই বলে।.পুরাণ মতে, সূর্য বংশের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন বিষ্ণুরদর্শন পেতে উদগ্রীব হলে এক সন্ন্যাসী তাকে নীলমাধব নামে এক দেবতার কথা বলেছিলেন । রাজার পুরোহিত বিদ্যাপতি শেষ পর্যন্ত বিশ্বাবসু নামে এক শবরের কাছে এসে সেই বিগ্রহের খবর পান । কিন্তু নীলমাধবকে দেখাতে বিশ্বাবসু রাজী ছিলেন না ।.তবে বিশ্বাবসুর কন্যা ললিতা বিদ্যাপতির প্রেমে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করতে চাইলে বিশ্বাবসু রাজী হন । ললিতার অনুরোধে শেষ পর্যন্ত বিদ্যাপতির চোখ বেঁধে তিনি একদিন জঙ্গলের মধ্যে নীলমাধবের সামনে নিয়ে যান । কিন্তু পুরা-কথামতে,নীলমাধবের মূর্তি যিনি দর্শন করবেন, যম তাকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। বিদ্যাপতির কাছ থেকে খবর পেয়ে অবন্তীরাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন সৈন্য-সামন্ত নিয়ে মূর্তি দর্শন করতে আসতে চাইলে বিগ্রহটি অর্ন্তহিত হয়ে যায় ।.ইন্দ্রদ্যুম্নদুঃখে আত্মহত্যাকরতে গেলে আকাশবাণীতে তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়, বিষ্ণুর দারুব্রহ্ম মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে । বাঙ্কিমুহান নামে সমুদ্রের উপরে একটি জায়গায় স্বপ্নাদেশে তিনি সেই কাঠের সন্ধান পান । অনেকে ব্যর্থ হওয়ার পর মূর্তি তৈরি করতে আসে অনন্ত মহারাণা নামে এক বৃদ্ধ । ২১ দিন ধরে মন্দিরের দরজা বন্ধ রেখে জগন্নাথের কলেবরবা দেহ তৈরি করবেন বলে কথা দেন । তিনি বলেছিলেন,এর মধ্যে যেন দরজা না খোলা হয় ।.কিন্তু ১৫ দিন পড়ে উদগ্রীব রাজা দরজা খুলে ফেলে দেখেন,বৃদ্ধ নেই । মূর্তিগুলোও অসম্পুর্ণ । তাঁদের হাত-পা প্রকট নয় । আঙুল দেখা যায় না । সেই রুপেই জগন্নাথদেব পতিতপাবন হয়ে এই মন্দিরে বিরাজ করেন ।অর্থাত্ দেখা গেলো মানুষের ধ্যর্য কমতারা, জানা সম্পূর্ণ হলেই তারা নিজের মধ্যেই ঈশ্বরকে পেয়ে যেত ___

Thursday, 7 July 2016

ইদ

সূর্য ছুটি নাই বলে,কামাই করছে আজ। অবিরাম বৃষ্টির কথা শুনতে শুনতে , মুগ্ধতার তৃপ্তিতে চোখে কে যেন সাজিয়ে দিয়েছে রূপোলী ধারার অজনা রূপকথা । আজ তবু প্রতিবেশীর রাজপথে আজ রক্ত দাগ। ধর্মীয় উশকানীতে অবরুদ্ধথাকুক যত তোমাদের কান। আজান কিংবা মন্দিরের ঘন্টার চেয়ে , বৃষ্টির অবোধ্য স্বরলিপির অরন্যের গান আমার প্রিয় । বর্ষণসিক্ত প্রভাতে মুছে যাবে তোমাদের জয়ের উল্লাস । বৃষ্টি প্রথম স্পর্শে তোমাকে বলবো
ইদ মুবারক

Friday, 17 June 2016

কৃষ্ণ & রাধা

শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন ত্যাগ করার পরে শ্রীরাধার কী হয়েছিল?


রাধাকৃষ্ণের কাহিনিকে সর্বদাই অসম্পূর্ণ বলে মনে হয় কেন? কেন বার বার মনে প্রশ্ন জাগে, শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণের কাহিনি কি বৃন্দাবনেই শেষ? পুরাণ বা অন্য গ্রন্থাদি কী জানায় শ্রীরাধা সম্পর্কে? কৃষ্ণবিহনে তাঁর কী হল?
প্রথমেই বলে রাখা ভাল, কোনও প্রাচীন গ্রন্থেই শ্রীরাধাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। শশীভূষণ দাশগুপ্তের মতে, শ্রীরাধা অনেক পরের কল্পনা। শ্রীময়ীর চরিত্রে একদিকে যেমন মিশেছে পদাবলির কবিদের মরমিয়া প্রেম, তেমনই অন্যদিকে এতে পৃক্ত হয়ে রয়েছে সুফি সাধকদের মর্মভাবনাও। আবার তাতে মিলেমিশে গিয়েছে লোকজীবনের সুখ-দুঃখ। এই সব একাকার হয়েই জন্ম দিয়েছে শ্রীরাধার মতো এক আশ্চর্যময়ীর। তিনি একদিকে যেমন হ্লাদিনীশক্তির প্রকাশ, তেমনই অন্যদিকে তিনি মূর্ত প্রেম।
এসব সত্ত্বেও রাধাকৃষ্ণের কাহিনিকে সর্বদাই অসম্পূর্ণ বলে মনে হয় কেন? কেন বার বার মনে প্রশ্ন জাগে, শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণের কাহিনি কি বৃন্দাবনেই শেষ? বৈষ্ণব কবিরা অবশ্য এমন কথা মানতে নারাজ। কৃষ্ণের মথুরা গমনের পরে তাঁরা রাধার চিত্তে ভাবসম্মিলনের কথা বার বার লিখে গিয়েছেন। কিন্তু সে তো কবিকল্পনা। পুরাণ বা অন্য গ্রন্থাদি কী জানায় শ্রীরাধা সম্পর্কে? কৃষ্ণবিহনে তাঁর কী হল?
কৃষ্ণ মথুরা যাওয়ার আগে রাধাকে কথা দিয়েছিলেন, তিনি ফিরে আসবেন। কিন্তু সেই কথা কি আর রাখা হয়নি? অপেক্ষায় অপেক্ষায় কেটে গিয়েছিল কি শ্রীরাধার জীবন? মথুরায় কৃষ্ণ রুক্মীনিকে বিবাহ করেন। তিনি বিদর্ভ রাজকন্যা। ছোটবেলা থেকেই রুক্মীনি কৃষ্ণের কথা শুনে এসেছিলেন, তাঁর প্রেমে পড়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বিবাহ স্থির হয় রাজা শিশুপালের সঙ্গে। রুক্মীনি কৃষ্ণকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেন তাঁকে উদ্ধার করতে। কৃষ্ণ আসেন এবং রুক্মীনিকে হরণ করে বিবাহ করেন।
মহাভারতের এই কাহিনি থেকে পরে একটা প্রশ্ন উদিত হয়, যদি কৃষ্ণের মনপ্রাণ জুড়ে শ্রীরাধা বিরাজ করে থাকেন, তবে কীভাবে তিনি রুক্মীনিকে বিবাহ করতে পারেন? মজার ব্যাপার, ‘মহাভারত’-এ কোথাওই শ্রীরাধার নামোল্লেখ পর্যন্ত নেই। কিন্তু গণচিত্তে রাধাকল্পকে বিচার করলে এমন কিছু বিষয় উঠে আসে, যার মানে বোঝা সত্যিই দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। সেগুলি এই প্রকার—
• শ্রীরাধার জন্মদিন ‘রুক্মীনি অষ্টমী’ হিসেবে পালিত হয়।
• রুক্মীনিকে রাধারই আর এক রূপ বলে অনেকে মনে করেন।
এখান থেকে মনে হতেই পারে, রাধা আর রুক্মীনি একই চরিত্র। রুক্মীনি রাধারই আর এক রূপ। বহু পুরনো মন্দিরে কৃষ্ণ ও রুক্মীনির মূর্তি রয়েছে, যার সঙ্গে রাধা-মূর্তির কোনও পার্থক্যই নেই। ‘মহাভারত’-এ রাধার উল্লেখ না থাকলেও এক গোপিনীর কথা রয়েছে, যিনি বৃন্দাবনে কৃষ্ণের প্রিয়তম সহচরী ছিলেন। তিনিই কি রুক্মীনি ওরফে রাধা? এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে, রুক্মীনি রাজকন্যা আর রাধা সাধারণ গোপবালা। তাঁরা এক হন কী করে? এর উত্তর ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন পুরাণে। এখানে একটি আশ্চর্য গল্প রয়েছে। রাক্ষসী পুতনা নাকি শিশু রাজকন্যা রুক্মীনিকে হরণ করে। কিন্তু রুক্মীনির ওজন অলৌকিকভাবে বেড়ে যায়। পুতনা তাঁকে একটি পদ্মফুলের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। তখনই বৃষভানু তাঁকে খুঁজে পান এবং রাধা হিসেবে পালন করতে থাকেন। কৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে যাওয়ার পরে বিদর্ভরাজ হারিয়ে যাওয়া কন্যার সন্ধান পান এবং তাঁকে তাঁর গৃহে নিয়ে য়ান। এই কাহিনি মানলে, রাধাই রুক্মীনি। এবং কৃষ্ণ তাঁকেই বিবাহ করেন।
এই কাহিনি অসম্ভব তৃপ্তি দেয়। কারণ, তত্ত্ব অনুসারে রাধাই কৃষ্ণের শক্তি। তাঁকে হারিয়ে কীভাবে থাকবেন পুরুষোত্তম? কোথাও তো মিলতে হবেই তাঁদের!
 

Wednesday, 1 June 2016

নরীর...

বর্ষা
 মেঘে মেঘে বর্ষা নেমেছে মেঘনাদ
গম্ভীরে টলমল সজল আকাশমেঘে মেঘে বর্ষা নেমেছে 
গম্ভীরে টলমল সজল আকাশচোখ

বৃষ্টি এল 
রাস্তার ধুলো ভিজে গেছে 
বাড়িঘর গাছপালা সব পথঘাট ভিজে গেছে 
এখন আকাশটা রক্তশূন্য


১) ব্রেস্ট আয়রনিং- নামের মধ্যেই লুকিয়ে যন্ত্রণা। ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বেশকিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে মেয়েদের সঙ্গে এটাই করা হয়। পাথর, হাতুড়ি বা খুন্তি গরম কয়লার উপর রেখে তারপর সেটাই চেপে ধরা হয় বয়ঃসন্ধিকালের কোনও মেয়ের স্তনের উপর। কারণ এর ফলে ব্রেস্ট টিস্যুগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে কোনও মহিলার স্তন যদি আর বৃদ্ধি না পায়, তাহলেই দেশে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে। আর এই জঘন্য কাজটা করে থাকে মেয়ের বাবা-মায়েরাই।
২) বিটিং সেসন-  ব্রাজিল সহ আরও কয়েকটি দেশে কোনও মহিলাকে প্রকাশ্য রাস্তায় নগ্ন করে মারা হয়। মার চলতেই থাকে যতক্ষণ না সেই মহিলাটি জ্ঞান হারাচ্ছে বা মারা যাচ্ছে। যদি সেই মহিলাটির অজ্ঞান অবস্থা থেকে আবার জ্ঞান ফিরে আসে, তাহলে তাকে বিয়ের জন্য উপযুক্ত ধরা হয়।
৩) মুসলমানি- সোমালিয়া ও মিশরে এখনও এই রীতি প্রচলিত। মেয়েদের সতীত্ব ধরে রাখার জন্য ছোট বয়সেই জোর করে এটি করা হয়। এমনকী তাদের অজ্ঞানও করা হয় না।
৪) টুথ চিজেলিং- সুমাত্রার মেনতাওয়াই উপজাতির মানুষ বিশ্বাস করে তীক্ষ্ণ দাঁতযুক্ত মহিলারা অনেক বেশি আকর্ষণীয় ও তাঁদের শরীরের সঙ্গে আত্মার যোগ বেশি। সেই কারণে মেয়েরা একটু বড় হওয়ার পর জোর করে তাদের দাঁত ঘষে দেওয়া হয়। ধারালো ব্লেড দিয়ে যখন এই কাজটি করা হয়, তখন তাদের অজ্ঞান করা হয় না।
৫) জোর করে ট্যাটু- প্যারাগুয়ে ও ব্রাজিলের কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে জোর করে মহিলাদের সারা গায়ে ট্যাটু করে দেওয়া হয়। যার মধ্যে পাকস্থলী, স্তন ও পিঠে ট্যাটু করানো বাধ্যতামূলক।
৬) পাত্রী অপহরণ- রোমানিয়াতে কোনও মেয়েকে যদি কোনও পুরুষ অপহরণ করে ৪-৫ দিন নিজের কাছে রেখে দিতে পারে, তাহলেই সেই মেয়ে তার। তাকে বিয়ে থেকে যথেচ্ছভাবে 'ভোগ করার অধিকার' পেয়ে যাবে ওই পুরুষ।
৭) জোর করে খাওয়ানো- মরিশানিয়েতে বিশ্বাস করা হয় বউ যত বেশি মোটা হবে ততই ভাগ্য খুলবে। সমৃদ্ধি আসবে। আর সেই কারণে সেদেশের তরুণীদের জোর করে খাওয়ানো হয়। দিনে প্রায় ১৬০০০ ক্যালোরি খেতে বাধ্য করা হয়। যাতে তাদের জন্য ভালো বর পাওয়া যায়।
8) কান্নার বিয়ে- দক্ষিণ-পশ্চিম চিনের সিচুয়ান প্রভিন্সে এক অদ্ভুত রীতির চল রয়েছে। তুজিয়া সম্প্রদায়ের এই রীতিকে বলা হয় জুয়ো ট্যাং। এই রীতি অনুসারে প্রত্যেক অবিবাহিত মেয়েকে বিয়ের আগের একমাস প্রতিদিন রাতে নিয়ম করে কাঁদতেই হবে। আর যদি কেউ কাঁদতে না পারে, তবে তাঁকে তাঁর মা মারধর করবে। যাতে সে বাধ্য হয় কাঁদতে।
সত্যিই বদলে গিয়েছে সমাজটা। বড্ড বদলে গিয়েছে। চারপাশে সারাদিন শুধু যৌনতার পরশ! উত্তুরে হাওয়ার দেখা মিলল কী মিলল না কে জানে? কিন্তু এ শহরের রাস্তায় একবার বেরিয়ে পড়লে, যৌনতার সুড়সুড়িতে আপনার শরীরে কিঞ্চিত শিহরণ উঠবেই। মেয়েরা আজকাল আর সুন্দরী হতে চায় না বোধহয়। তাঁদের 'সেক্সি' বা 'হট' হতে হবে। অথবা ওর সেই একই আছে। আমরাই (পুরুষরা) আমাদের চাহিদা অনুযায়ী ওদের গড়ে নিচ্ছি প্রতিনিয়ত। সাধারণত, সিনেমাই আমাদের দেশের, আমাদের সমাজের ফ্যাশন ঠিক করে দেয়। অমুক সিনেমায় তমুক নায়িকা ওটা পরেছিল, তাই তো আমাকেও পরতে হবে। অথবা অমুক টেলিভিশন সিরিয়ালের তমুক অভিনেত্রী ওই পোশাকটা পরেছিলেন। তাই আমাকেও পরতে হবে। একই পুরুষদের ক্ষেত্রেও। শাহরুখ, সলমন, বরুণ ধাওয়ানরা যা পরেন, সেটাই নকল করে আম-সাধারণ। আর সেই সুযোগটাই নেয় পুরুষরা। পোশাকএমনভাবেই তৈরি হয়, যা শুধু সুন্দরী করে তোলে না নারীকে। করে তোলে 'হট' বা 'সেক্সি' জাতীয় কিছু।
কিন্তু সিনেমার নায়িকারা যে পরিবেশ, পরিস্থিতিতে চলেন ফেরেন, আমার, আপনার ঘরের মেয়েরা আর সেই পরিবেশ পরিস্থিতি পায় কোথায়! করিনা কাপুর যে পোশাক পরে যাদের মাঝে হাঁটেন, মালদার কাকলি বা নদীয়ার সঙ্গীতা তো সেই পোশাক পরার পর ওই পরিবেশ বা পরিস্থিতিটা পায় না। তাই সমাজে মহিষাদলের খবর রোজই পাওয়া যায়। কামদুনির খবর পাওয়া যায়। এগুলো পুরনো হয়ে গেলে ফের নতুন কোনও খবর। না, ডিমান্ড আপনার এই খবরের যতই থাকুক, সাপ্লাই লাইন রেডি! এই সব বিষয়ে কথা বলতে গেলে অনেক নেতামন্ত্রীদের বা সমাজের নানা স্তরের বিশিষ্টরা প্রায়ই বলেন একটা কথা। মেয়েদের ছোট পোশাকই নাকি সব সমস্যার মূল। যেভাবে আমিও শুরুতে বলেছি কথাগুলো। মেয়েরা ছোট পোশাক পরে, না উত্‍সাহিত করলে পুরুষ তো ভেজা বিড়াল। না, না, মাছ উল্টে খাওয়া তো দূরের কথা, শুঁকেও দেখবে না। পাহাড়া দেবে! তাই ঢুকে পড়ি মূল প্রসঙ্গে। বলতে চাইছি যেটা-

  সমস্যা একটাই। পুরুষের মনে। পুরুষের চোখে। পুরুষের জন্ম-জন্মান্তর ধরে গড়ে ওঠা অভ্যাসে! কেন বলছি? কারণ, অনেক। আপাতত একটা উদাহরণ দিয়ে, সেটা নিয়েই কথা বলতে চাই। যদি আপনি এই কলকাতা শহরের রাস্তায় চলেন, তাহলে এই বিজ্ঞাপনটা বারবার নজরে পড়বে। যে ছবিটা উপরে রয়েছে। অন্তর্বাসের। ছেয়ে গিয়েছে চারিদিক। (এছাড়াও হাজারো কোম্পানির হাজারো বিজ্ঞাপন রয়েছে/কোম্পানিটা বিষয় নয়/ভাবনাটা বিষয়) আপনার এটা দেখে খারাপ লাগতে পারে। আপনার এটা দেখে ভালো লাগতে পারে। আবার আপনার এটা দেখে কিছুই মনে না হতে পারে। খুব সাধারণ বিষয় হতে পারে। কেন দাদা? পুরুষের শরীর কী শুধুই দেখানোর? নারীকেই বারবার কাঁধে হাত দিয়ে অন্তর্বাসের ফিতে ঠিক করতে হবে? নারীকেই চিরকাল মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করার আগে দেখে নিতে হবে, ওর স্কার্টটা বড্ড ছোট হয়ে গেল না তো? নারীকেই চিরকাল পোশাকটা পরে বুঝে নিতে হবে, ওটা ট্রান্সপারেন্ট (স্বচ্ছ) হয়ে গেল না তো? গা দেখা যাবে না তো? পুরুষের শরীরের দামই নেই! অথবা গঙ্গার জলের মতো? এত পবিত্র যে, সব খুল্লামখুল্লা!
এই যে সারাদিন শহরের মেয়েরা রাস্তার বেরিয়ে পড়ে, বারবার বিরাট বড় বড় হোর্ডিংগুলো দেখছে, ওরা কোথায় বলল যে, পুরুষের এই ছোট পোশাকই মেয়েদের উত্‍সাহিত করছে? মেয়েরা কামদুনির রাস্তায় কটা ছাত্রকে ফেরার পথে তৈরি হওয়া কারখানায় নিয়ে চলে গেল! মহিষাদলে কটা ছাত্র মেয়েদের লালসার শিকার হল? অদ্ভূত নিয়ম যে! মেয়েদের বেলায় পোশাকই যত নষ্টের মূল। আর ছেলেদের বেলায় পোশাক? সেটা কী? খায় না মাথায় দেয়! লজ্জা তো নারীর ভূষণ। পুরুষের ভূষণ তো নির্লজ্জ হওয়া! ভালো সমাজ। ভালো। ঠিক পথে যাচ্ছো এগিয়ে। সবে তো কোমরের সামান্য নিচেই পোশাক নামিয়েছো। নগ্ন হতে এখনও অনেক বাকি! আসলে ওদের কে বোঝাবে - 'হতভাগা', লজ্জা শরীরে হয় না। লজ্জা হয় মনে। অন্তর্বাস নামাতে নামাতে মন বড় 'নিচ'-এ নেমে গিয়েছে। এত 'নিচ' থেকে আর ওঠা সম্ভব নয়। তাই, দে গালাগাল নারীর পোশাক নিয়ে।