Tuesday, 31 January 2023

শিব লিঙ্গ কি??

শালগ্রাম শিলাকে পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গ বলাটা এক কাল্পনিক আবিষ্কার মাত্র। শিবলিঙ্গর সঙ্গে পুরুষাঙ্গের যোগ বৌদ্ধধর্মের পতনের পর আগত ভারতের অন্ধকার যুগে কিছু অশাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তির মস্তিস্কপ্রসূত গল্প। স্বামী যৌনাঙ্গের প্রতীক বলে স্বীকার করি না ।হিন্দু কিংবা আদি ধর্ম গুলো দেবি দেবতাদের মূর্তি সাধারণত মানুষ বা পশুর মতো হতো কিন্তু শিব লিঙ্গ একটু আলাদা।সে হিসেবে আমাদের অনেকেই স্বামী বিবেকানন্দ মতকে সমর্থন করে বলি এটি শিবলিঙ্গ ধারণাটি এসেছে বৈদিক যূপস্তম্ভ বা স্কম্ভ ধারণা থেকে। যূপস্তম্ভ বা স্কম্ভ হল বলিদানের হাঁড়িকাঠ। এটিকে অনন্ত ব্রহ্মের একটি প্রতীক মনে করা হয়। কিন্তু এটি কি শেষ কথা?
বাংলার প্রাচীন মন্দির স্হাপত্য দেখুন, মানে জটার দেউলের মতো দেউল গুলোকে দেখে মনে হতেই পারে সত্যিই তো শিব লিঙ্গ ও যৌনাঙ্গের পরিবর্তী রূপ।

 প্রথমেই বলি শিব বৈদিক দেবতা নয়।শিব ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন দেবতা তাঁর আরাধনার হতো মহেঞ্জোদারোতেও।সিন্ধু সভ্যতা থেকে উদ্ধার করা একটি সিলমোহরের দেখা যায়, ত্রিমুখবিশিষ্ট, মাথায় পশুর শিং ধারণ করা,চারপাশে নানান পশু পরিবেষ্টিত, যোগমুদ্রায় উপবেশনকারী, উত্থিত লিঙ্গ পুরুষের মূর্তি পাওয়া যায়।এই পুরুষকে আদি শিব বা পশুপতি বলা হয় । যা বৈদিক দেবতা রুদ্র আদি শিবের রূপেই কল্পিত হয়েছিল।আর্যদের আগে, সিন্ধুসভ্যতা ও উপমহাদেশে লিঙ্গ,যোনি প্রভৃতির পূজা প্রচলিত ছিল তা ধারণা পাওয়া যায়।শিব যে বৈদিক দেবতা নন তাই লিঙ্গ পূজা আর্যদের কাছে নিন্দনীয় ছিল,তার প্রমাণ ঋগ্বেদ বেদ মেলে।বিদ্বেষবশত লিঙ্গোপাসকদের তারা ‘শিশ্নদেব’ বলে ডাকতো। আর হিন্দু শেষ ধর্ম সংস্কারক চৈতন্য মহাপ্রভুর বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীরা শিব পরম বৈষ্ণব মনে নিও তাঁর প্রসাদ খেতে অস্বীকার করে। তাই এই প্রশ্ন মনে ঘোরাঘুরি করে। তাহলে কি সত্যি মহিলাদের যৌন শিক্ষা দেবার জন্য শিব লিঙ্গ পূজা ও ব্রত করা হয়? না অন্য কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারি আমরা শিব লিঙ্গ থেকে।
আসলে শিব লিঙ্গকে পুরুষের যৌনঙ্গ হিসেবে ভাবার কারণ ভারতে বাইরে বিভিন্ন ধর্মে যৌনাঙ্গ পূজার প্রচলন ছিল আগে,জননাঙ্গের বিশ্বের নানা সভ্যতায়, নানা ধর্মেই এই পূজা দেখা যায়। তাই থেকে শিব লিঙ্গ পুরুষের যৌনাঙ্গ বলে আমার ধারণা করে নিয়ে থাকি সহজেই।

সবচেয়ে পুরোনো লিঙ্গ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়,২৮ হাজার বছর পুরোনো Hohle Fels এ প্রাপ্ত লিঙ্গকে ।গ্রীসের শহর ট্রায়ারনাভাসে প্রতিবছর লিঙ্গ উৎসব পালিত হয়।গ্রীক পুরাণে হারমিসকে লিঙ্গ দ্বারা চিহ্নিত করা হত। গ্রীক উর্বরতার দেবতা প্রায়াপাসের প্রতীক একটা বিশাল লিঙ্গ। তিনি গাছ,বাগান, ফল ও পুং জননেন্দ্রিয়ের রক্ষক।
মিশরের দেবতা ওসাইরাসের দেহকে ১৪ টুকরো করা হয়েছিল , তার দেহাংশগুলোকে সমগ্র মিশরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওসাইরাসের স্ত্রী আইসিস ওসাইরাসের দেহের সমস্ত অংশকে একত্রিত করে ছিলেন কেবল তার লিঙ্গ ছাড়া। ওসাইরাসের লিঙ্গ মাছ খেয়ে ফেলেছিল। ওসাইরাসের লিঙ্গের স্থানে একটি কাঠের লিঙ্গ স্থাপন করা হয়।যা উর্বরতার প্রতীক ছিল।
প্রাচীন স্কেন্ডেনেভিয়াতে নরস গড ফ্রাইর একজন ফ্যালিক ও উর্বরতা ও প্রেমের প্রতীক ছিলেন।এশিরিয়াতে প্রধান দেবতা Bel ও তার স্ত্রী Mylitta কথায় আসি, ইনি ছিলেন উর্বরতার প্রতীক। ইনি ছিলেন প্রকৃতির অধিপতি। এই দেবতার প্রতীক ছিল লিঙ্গ। মনুষ্য লিঙ্গকে পবিত্র বস্তু মনে করে Liber এর মন্দিরে রক্ষা করা হয়েছে এবং স্ত্রী অঙ্গ রক্ষিত হয়েছে Liberia তে । এই দুই বস্তুকেই পিতা এবং মাতা বলা হয়েছে। যা আমাদের শিবলিঙ্গ ও গৌরিপট্ট কথা মনে করায়।।
শিব লিঙ্গকে পূরুষ যৌনাঙ্গ ধরে নিলে গৌরিপটকে নারী যোনি ধরে নিতে হয়।এবার আসি হিন্দু শাস্ত্র কথায়।তন্ত্রের শাক্ত সাধকেরা বলেন,“শক্তি যুক্ত না থাকলে শিব শব স্বরূপ হন।“ এক কথায় শিব লিঙ্গ হল একই সাথে একটি পূরুষ ও নারীদের দেহের মিলিত রূপ। আমার মতে শিব লিঙ্গ কৃষি সংস্কৃতি একটি প্রতীক।প্লুটার্ক বলেন, “মানুষের কাছে আকাশ হল পিতৃ স্বরূপ আর পৃথিবী হল মাতৃ স্বরূপা। আকাশ পিতা কারণ তিনি পৃথিবীতে বীজ বপন করেন, পৃথিবী তা গ্রহণ করে ফলপ্রদায়িনী হন, তাই তিনি মাতা।“
আষাঢ় মাসের নির্দিষ্ট দিনে সুর্য যখন মিথুন রাশিতে প্রবেশ করে তখন পালিত হয় অম্বুবাচী ব্রত। লাঙ্গল চালানো মানে ধরিত্রীতে লিঙ্গ প্রবেশ করিয়ে মৈথুন করা। লোক বিশ্বাস অনুযায়ী অম্বুবাচীর তিনদিন বসুমতী ঋতুমতী থাকে, তাই ওই সময়ে ভূমিতে লাঙ্গল প্রবেশ করাতে নেই। এই বিশ্বাসে আজো অম্বুবাচীতে কৃষক কাজ বন্ধ থাকে গাছ লাগানো হয় না। 
 শিব ও শক্তি অবস্থান করেন শিবলিঙ্গের মধ্যেও। আদিতে যে দুর্গা অন্নপূর্ণা ছিলেন, বসুমাতা বা মাতৃকা দেবী, উর্বরতার দেবী ছিলেন, কালের বিবর্তনে শিবের সাথে যুক্ত হয়ে তিনিই হয়েছেন বিশ্বের সৃজনকারিনী। শিব লিঙ্গ আসলে কৃষি সংস্কৃতি প্রতীক পূজা। যে পাথর গুলোকে দিয়ে এক সময় কৃষি ভুমিকে চাষ যোগ্য করা হতো তাঁকে এরা পূজা করা শুরু করে পরে তাতে গৌরিপট যুক্ত হয়।
মাত্র ১৫০০ বছর পূর্বে চালু হয়েছে ইসলাম ধর্ম। মোটামুটি ভাবে দেখলে দেখা যায় সব ধর্ম গ্রন্থকে copy paste করা আছে তাদের ধর্ম গ্রন্থে। তাঁরাও নারীদের শস্যক্ষেত্রে রূপেই দেখায়। সব ধর্মশাস্ত্রেই মেয়েদের ‘ক্ষেত্র' বা 'ভূমি' বলা হয়, এবং তাই মাতৃরূপ পৃথিবীকে কর্ষণ করে শস্য উৎপাদন করা ধারণা তৈরি হয়। এবং তারা পুরুষের লিঙ্গস্বরূপ এক যষ্টি বানিয়ে নিয়ে ভূমি কর্ষণ করে । তাই ‘লিঙ্গ’, ‘লাঙ্গুল' ও ‘লাঙ্গল’- এই তিনটি শব্দ একই ধাতুরূপ থেকে উৎপন্ন। লিঙ্গরূপী যষ্টি হলো passive, ভূমিরূপী পৃথিবী active , Active মানেই হচ্ছে শক্তির আধার। ফসল তোলার পর ‘নবান্ন' থেকে ই জন্ম নিল লিঙ্গপূজা ও ভূমিরূপী পৃথিবীর পূজা।'
প্রসঙ্গত একটা কথা বলী যে, সংস্কৃত ভাষায় ‘লিঙ্গ’ শব্দটির অর্থ চিহ্ন। নির্গুণ শক্তি যখন সগুণ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা শুরু করে তখন লিঙ্গই হয়ে ওঠে সেই ওঠে । শিবলিঙ্গের গায়ে যে সাপটি থাকে তা আসলে সুপ্ত চেতনার প্রতীক।সেটি আসলে কুলকুণ্ডলিনীর প্রতীক। এই শক্তির জাগরণকে চিহ্নিত করে শিবলিঙ্গ।

Monday, 30 January 2023

ঘেটু পূজা

ঘেঁটু পূজা কি? ভিটা কুমার বা ঘেঁটু ঠাকুর কে ?

সাধারণ ভাবে আমাদের বাংলায় শীতকাল থেকে গরম কাল হবার সময় অর্থাৎ ঋতু পরিবর্তনের সময় চুলকানি ,খোস, ঘা-পাঁচড়া-র মতো রোগের মতো আরো আবির্ভাব ঘটে। এই রোগের হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্যই অনেক গুলি লৌকিক এবং পৌরাণিক ঘেটু, ভিটাকুমার থেকে শীতলতার মতো দেবী দেবতার পুজোর উদ্ভব বলে মনে করা হয়।

প্রথমেই বলি ঘেটু আমরা বন জুঁই ফুল বলি। ঘেটু কে ভাঁট গাছ বলা হয়। এর ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। এর পাতার রস শিশুর জ্বর দূর করে। তবে সনাতন ধর্মালম্বীরা ভাঁট ফুল দিয়ে ভাঁটি পূজা করে। গ্রাম বাংলার কৃষিজীবী মানুষেরা বিভিন্ন এলাকায় ভাঁট ফুল দিয়ে ভাঁটি পূজার আয়োজন করে ফাল্গুনের শেষ দিনটিতে। তবে এ পূজা শুরু হয় মাসের প্রথম দিন থেকেই। বাংলাদেশের বৃহত্তর যশোর-খুলনা, বরিশাল-ফরিদপুর অঞ্চলের মানুষ ভাটি পুজো করে। মূলত ভাটি অঞ্চলের পুজো বলেই একে ভাটি পুজো বলা হয়।

ভিটা তৈরি করা হয়,ঘরের কাছে, তার চারদিকে গাছের কাণ্ড দিয়ে বর্গাকার ঘর তৈরি করা হয় , এর পর প্রতিদিন সন্ধ্যায় পূজা দেওয়া হয় , ভাঁট ফুল সংগ্রহ করে এবং পূজা শেষ হয় ফাল্গুনের শেষ দিনে। সেদিন সকালে শিশুরা ভাঁট ফুল সংগ্রহ করে পূজামঞ্চে প্রার্থনা করে। লোক বিশ্বাস এই ভাঁট ফুল মাথায় নিয়ে জলে স্নান করার পর শিশুদের বিপদ ও রোগবালাই দূর হয়। তবে তাদের গৃহপলিত পশুর ঘা-পাঁচড়া হতে মুক্তির জন্য এই পূজাপদ্ধতি পালন করে।

তবে এই ভিটাকুমার কোনো পৌরাণিক দেবতা নন। এমন কি তিনি দেব না দেবী তা বিতর্ক আছে ।দেবী শীতলার একটি রূপ বলে ধরা হয়। তবে কেউ কেউ একে বাস্তু পূজা বলছেন।ভাটি পূজো একটি লৌকিক পূজো। তবে ভাটি পূজা ঘেটু পূজা বোধহয় এক নয়। নমঃশূদ্র, কাপালি, পুণ্ড্রক্ষত্রিয়, মুণ্ডা, ঋষি, বাগদী প্রভৃতি কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই পূজোর প্রচলন আছে। এছাড়া বাইতি, বাওয়ালি, মাওয়াল, মাঝি, ঘোষ, কর্মকার, কুমার, ছুতার, নরসুন্দর প্রভৃতি পেশাজীবী মানুষের মধ্যেও ভাটি পূজা হতে দেখা যায়।

আসলে এই বুনো গাছে ঔষধি গুণাগুন থাকে।এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। যা ক্যানসার দমনে সহায়ক। তাছাড়া চুলকানি, কৃমি, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার , উদরাময় মানে পেটের অসুখে ছাড়াও নানা রোগ রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। হিন্দুরা হয়তো এই ঘেটু ফুলকে এতোটা গুরুত্ব দিয়েছে

বর্তমানে বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে যারা শাস্ত্রীয় ধর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে তাদের মধ্যে এই পূজা পদ্ধতি পালন করার রেওয়াজ কমে গেছে।তবে দিনে এই পূজা চরিত্র পরিবর্তন হচ্ছে বাংলার পশ্চিম দিকে এসে মানে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, বাঁকুড়া হুগলি জেলায় এসে গ্রামবাংলায় কচিকাঁচারা মেতএ এখনো সেই ঘেটু সংক্রান্তিতে ওঠে উৎসবের মেজাজে। এরা ঘেটু ফুল দিয়ে পালকি বানিয়ে পাড়ায় ঘুরে চাল ,ডাল সংগ্রহ করে। কলাগাছের কাণ্ডের বাকলের স্তর বা ‘কলা বাসনা’ কেটে ডুলি বা পালকি তৈরি করা হয়। সকালবেলা মাটির সরা ঘেঁটু ফুল দিয়ে সাজিয়ে, গোবরের ডালা করে, তার ওপরে করি আর হলুদ কাপড় দিয়ে মুড়ে ঘেঁটু ফুল দিয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে মা-কাকিমা সাথে ঘেটু পুজো করে এবং পরে মহা আনন্দে খিচুড়ি প্রসাদ খেয়ে থাকে।

তবে এটা ঘেটু সংক্রান্তিতে হয়ে থাকে ‌।ঘেঁটুপূজা লৌকিক দেবতা ঘেঁটুঠাকুরের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়ে থাকে। বাংলার লোকসংস্কৃতিতে বসন্ত ঋতুতে লক্ষনীয় এই ধরণের লোকাচার গুলো বেশি দেখা যায়, ভাটি পূজার কথাতো বললাম আগেই। এছাড়া ঘটিদের অরন্ধন উৎসব মানে গোটা সিদ্ধ এই রোগ নিবারণ সংক্রান্ত উৎসব। তেমন ফাল্গুন মাসের সংক্রান্তিতে ঘেঁটুর পূজাও করা হয় বসন্ত কালে ছোঁয়াচে চর্মরোগের বা খোস-পাঁচড়া নিবারণের উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়।

বাংলার লোক বিশ্বাস অনুযায়ী, ঘেঁটু ঠাকুর ঘণ্টাকর্ণ হলেন ঘৃণার্হ এক চর্মরোগের দেবতা, শিবের অনুচর । মঙ্গল দেবতা বিষ্ণুর বিদ্বেষী হওয়ায়, অনেকটা দক্ষিণ বঙ্গের অলক্ষ্মীপূজার মতো এর মিল আছে। বসন্ত কাল এলে যাতে খোস-পাঁচড়ার বাড়বাড়ন্ত না হয়, তাই কাল্পনিক অপদেবতাকে মেরে বিদায় করা হয়।ঘেঁটু ফুল বা ভাট ফুল পূজার অন্যতম উপকরণ থেকে দেবতার নাম ঘেটু । ঘেটু বিষ্ণুনাম শুনতে চায় না তাই দুইকানের পাশে সর্বদা ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখেন; তাই এঁনার আরেক নাম 'ঘণ্টাকর্ণ'।

পূজার বছর ফাল্গুনের সংক্রান্তির সকালে অনুষ্ঠিত হয়। পুরোহিত হীন এই পূজাতে, করেন পুরুষ-মহিলারাই ।'কেলে হাড়ি' মানে পুরোনো কালি ঝুলি মাখা একটি মাটির হাঁড়ি লাগে পূজার জন্যে । এটি দেবতা প্রতীক। মাটির খোলাটা, ঘেঁটু ফুল, ধান , দূর্বা ঘাস ,সিঁদুর ,তেল হলুদে চোবানো ছোট কাপড়, তিনটি কড়ি, তিনটি গোবর দিয়ে পাকানো পিণ্ড, মুড়িভাজার এই সব সাধারণ উপকরণ লাগে এই পূজায়।

মাটির খোলাটা প্রথমে ব্রতিনীরা এলোচুলে বসে বাম হাতে নিকোনো জায়গায় বসিয়ে দেন। এর ওপরে গোবরের পিণ্ড তিনটিকে লাগিয়ে সেগুলিকে ঘেঁটু ফুল, কড়ি, সিঁদুর দিয়ে সাজানো হয়। কাপড়ের টুকরো টা খোলার উপরে বিছিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ির সামনে উঠোনে , কিংবা একটু দূরে রাস্তার তিনমাথা, চারমাথার ধারে এই পূজা করা হয় ।

ছড়া কাটা হয়

"ধামা বাজা তোরা কুলো বাজাএলো এলো দ্বারে ঘেঁটু রাজা।"

পূজার শেষে হলে মোটা বাঁশের লাঠি দিয়ে খোলাটা বাচ্চারা ভেঙে দিয়ে হরিবিদ্বেষী ঘেঁটু দেবতাকে অপমান করে, এবং তাদের যাতে চর্মরোগ না হয় তারাতারি পুকুরের জলে হাত পা ধুয়ে আসে । মহিলারা পূজার কাপড় টুকরোটা এনে বাচ্ছাদের চোখে বুলিয়ে দেন আর বাচ্চাদের চোখ ভালো রাখতে খোলার বা মাটির হাঁড়ির, ঝুলকালি কাজলের মতো পরিয়ে দেন ।

ঘেঁটু ঠাকুরকে বিদায় দেওয়ার পর হরিযশ বা হরিনাম কীর্তন গাওয়া হয় —

"ভাগ্যমানে কাটায় পুকুর চণ্ডালে কাটে মাটিকুমোরের কলসী, কাঁসারির ঘটিজল শুদ্ধ, স্থল শুদ্ধ, শুদ্ধ মহামায়াহরিনাম করলে পরে শুদ্ধ হয় আপন কায়া।।"

সন্ধ্যেবেলা ছোট ছোট ছেলেরা রঙীন কাগজ ও কঞ্চি দিয়ে ছোট্ট ডুলি বানিয়ে তাতে ঘেঁটু ফুল ও প্রদীপ দিয়ে ঘেঁটু ঠাকুরকে সাজিয়ে তা কাঁধে করে বাড়ি বাড়ি ঘোরে এবং ঘেঁটুর গান গেয়ে চাল পয়সা ভিক্ষা করে। ‘‘যে দেবে মুঠো মুঠো/ তার হবে হাত ঠুঁটো/ যে দেবে কড়াই কড়াই/ তার ঘরে সোনা ছড়াই।’ পরেদিন সকলে মিলে জমিয়ে ভোজ খাওয়ার জন্য অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা এইভাবে দিনে আনন্দে মেতে ওঠে, রিতি এখনো অনেক জায়গায় দেখা মেলে।

Sunday, 29 January 2023

সরস্বতীর বাহন কি শুধু হাঁস?

সরস্বতীর বাহন কি শুধু হাঁস?

সরস্বতীর বাহন হিসেবে আমরা সাধারণ হাঁস দেখতে পাই। কিন্তু শাস্ত্র দিকে তাকলে জ্ঞানের গতিময়তার জন্য ঋক বেদে তাঁকে নদী হিসাবে দেখা নো হয়েছে। সরস্বতী নদীর কথা আমরাও জানি। দেবী সরস্বতীর বাহন সাধারণত হংস হলেও ময়ূর কে দেখা যায় কোথাও কোথাও। ব্রহ্মা হংস বাহন, দেবী সরস্বতী ও তাই।পুরা্ণ অনুযায়ী সরস্বতী মানস সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়েছেন।মানস সরোবরে অসংখ্য হংস বাস করে , সেখান থেকেই সরস্বতী বাহন হাঁস,বা সরস্বতী নদী তীরেই বেদ রচিত। জলের সাথে সম্পর্কের কারণেই হংস তাঁর বাহন। সেই যুক্তিতে আবার সরস্বতী নদীর তীরে ময়ূর বসবাস হওয়ায় কোন কোন ক্ষেত্রে সরস্বতী ময়ুর বাহনা, বিশেষ করে রাজস্থানে।

সিন্ধু সভ্যতার নৌবাহিনী দেবীর মূর্তি খুঁজে পাওয়া গেছে। বৈদিক যুগে থেকেই তিনি বাক,মন্ত্রস্বরূপা। পৌরাণিক দেবি আদিশক্তির অন্যতম রূপ । তবে সিংহ, ময়ূর, রাজহংস ও মেষবাহনা সরস্বতী মূর্তি পাওয়া গেছে বিভিন্ন স্থানে। বৌদ্ধ তন্ত্রে ও জৈন মতেও সরস্বতী সবিশেষ উপাসিতা বা আরাধ্যা। দশ মহাবিদ্যার অন্তর্গত আদি দেবি তিনি । বিভিন্ন জীবনকাহিনী মানে শংকরাচার্য,কালিদাস প্রমুখের সরস্বতীর কৃপা লাভের কথা উল্লেখ আছে । তবে বাংলার নানুরের চন্ডীদাস পুজিতা বাসুলী দেবীল বিগ্রহ চতুর্ভুজা বীনাবাদনরতা সরস্বতী। প্রাচীন বঙ্গের অক্সফোর্ড নবদ্বীপের বিখ্যাত পোড়ো মা আসলে নাকি পুড়ুয়াদের মা সেই থেকেই শ্রীপঞ্চমীতে বাংলায় সরস্বতী পূজা শুরু হয়েছে।

তবে সরস্বতী সিংহ বাহিনী এই তত্ত্বটি সঠিক কিনা তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত আমি। কারণ বৌদ্ধ ধর্মের বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রীর বাহন হচ্ছে সিংহ এবং তাঁর শক্তি হচ্ছেন বাগেশ্বরী সরস্বতী। সেই হিসেবে বাগেশ্বরী সরস্বতী হচ্ছেন সিং হ বাহনা। তবে পুরাণের হয়েছে দেবী বৃত্র নামের একটি অসুর কে বধ করেছেন, এখানে তিনি ত্রিনয়না, তার বাহন ছিলো সিংহ । দেবী সরস্বতী বিষ্ণুপ্রিয়া নামেও ডাকা হয়। রাধা কেই বিষ্ণুপ্রিয়া মনে করা হয় । পুরাণ অনুসারে সরস্বতীর একবার ইচ্ছে প্রকাশ করেন কৃষ্ণকে বর রুপে পাওয়ার জন্য। শ্রীকৃষ্ণ দেবী সরস্বতী কে , বিষ্ণুকে স্বামী রুপে গ্রহণ করতে বলেন, এবং শ্রী কৃষ্ণ দেবী সরস্বতী কে বলেন যে মাঘ মাসের শুল্ক পঞ্চমী তোমাকে সবাই পুজো করবে , আগে শ্রী পঞ্চমী তে দেবী লক্ষীর পুজো করা হতো, তখন থেকেই দেবী সরস্বতীর পুজো শ্রীপঞ্চমীতে ।

ময়ূর পার্থিব জ্ঞানের প্রতীক। ময়ূর এমন একটি প্রাণী, যার মেজাজ দ্রুত বদলায়। পরিবেশ, প্রকৃতি, আবহাওয়া অনুসারে সে কখনও নাচে, কখনো কাঁদে। ময়ূর চঞ্চল সরস্বতী শব্দ বুৎপত্তি করলে পাওয়া যায় সরস শব্দটি যার অর্থ নদী। নদীমাতৃক দেশ ভারতে সরস্বতী নদী শুকিয়েছে মহাভারত যুগ থেকে। তার আগে এই নদী পূজার সময় ময়ুর বাহনা ছিলেন হয়তো দেবী।

লোক কথা অনুযায়ী হাঁস এমন একটি প্রাণী, যাকে জল ও দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে দিলেও জল ছেড়ে শুধু দুধটুকু পান করে নেয়। জ্ঞানের দেবীর বাহন নির্বাচনের কারণ, অজ্ঞানকে ছেড়ে দিয়ে আমাদের সবার জ্ঞানকে আহরণ করা উচিত। । সে বিশুদ্ধ জ্ঞানের প্রতীক।

আবার পুরান আরো একটা গল্প অনুযায়ী ব্রম্ভা সরস্বতী প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তখন সরস্বতী সেরে যেতে শুরু করল। এই সরে যাও লক্ষ্য করতেই নাকি ব্রম্ভা আরো চারটি মাথা জুড়ে দিলেন নিজের দেহে। নিরুপায় হয়ে সরস্বতী রাজহাঁস রূপ নিয়ে জঙ্গলে লুকিয়ে পরলেন। নাছোড়বান্দা ব্রম্ভাও রাজহাঁস রূপ নিয়ে তার সাথে মিলিত হলেন। তখন সরস্বতী তাকে অভিশাপ দেয় তিনি পৃথিবীতে পূজা পাবেন না। তখন ব্রম্ভা সরস্বতীর পায়ের কাছে রেয়ে গেলো বাহন হিসেবে।

তবে দূর্গা সিংহ ও কার্তিক ময়ুর নিয়ে নেওয়ায় হাঁসকে বাহনের মর্যাদা দিয়েছেন দেবি।


Friday, 27 January 2023

গোটা সেদ্ধ কি বা শেতল ষষ্ঠী কি?

গোটা সেদ্ধ কি বা শেতল ষষ্ঠী কি?
শীতলা ষষ্ঠী কথাটা অপভ্রংশে শেতল ষষ্ঠী হয়েছে।তবে গোটা সেদ্ধ নামে এটি জনপ্রিয়। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের এও এক পার্বণ। মিশ্র সংস্কৃতির গ্রাসে বিলীন হয়ে যায় নি একান্ত আপনার কিছু সনাতনি প্রথা । জাতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে তবে সেগুলো যে দিন হারিয়ে যাবে সেদিনই সেই জাতি তার নিজস্বতা হারাবে।

ভজন রসিক বাঙালির শীতল ষষ্ঠীর আসলে অরন্ধন উৎসব। উপাদান গোট মুগ, , গোট মাখন সিম, গোটা বেগুনগোটা কড়াইশুঁটি, , টোপা কুল,শিস পালং, সজনে ফুল, ওলকপি, বাঁধাকপি। সরস্বতী পুজোর সন্ধ্যে নামলে উনুন বা গ্যাস ওভেন পরিস্কার করে, বিশাল হাঁড়িতে বসে গোটা সেদ্ধ শুরু হয় রান্না।

গোটা সেদ্ধ, নামকরণ থেকে বুঝতে পারছেন‌গোটা কড়াইশুঁটি, গোটা বেগুন, গোটা সিম সব গোটা সেদ্ধ হলে হাঁড়ি করতে হয় । তারপর হয় ভাতে পরে একে একে আলু-সজনে ফুল ভাজা, টোপা কুলের চাটনি। সারারাত সেসব রান্না রাখা থাকে।

সরস্বতী পুজোর পর দিন সকালে তিথিগতভাবে ষষ্ঠীপুজো। প্রথা অনুযায়ী বাড়ির শীল, নোড়ার পুজো হয় ফুল, প্রসাদ দিয়ে এই দিন । শীল-নোড়া দইয়ের ফোঁটা দেওয়া হয় শীল-নোড়ার গায়ে। পুজোর শেষে সেই দই রান্না করা খাবারে ছিটিয়ে দেওয়া নিয়ম আছে।

শীত বিদায় নিয়ে বসন্ত আসে এই সময়ে । তাই গোটা সেদ্ধর ভূমিকা অনেক খানি দেশীয় উপায় রোগ প্রতিরোধকের মতো।

মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে অর্থাৎ সরস্বতী পূজার পরেরদিন, সকল মেয়েদের এই শীতল ষষ্ঠী ব্রত পালন করে ।

শীতল ষষ্ঠীর ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- দই, হলুদ, কড়াই, ফল ,মিষ্টান্ন ইত্যাদি পুজোয় প্রয়োজন হয়। দই ও হলুদে সাদা সুতো ছুটিয়ে ছেলে – মেয়েদের হাতে বেঁধে দিতে হয়।

ষষ্ঠী পুজোর দিন ,আগের দিনে ভাত আর গোটা সেদ্ধ করে রেখে দিয়ে ,সেই ভাত আর গোটা সেদ্ধ খাওয়ার নিয়ম।

লোক কথা অনুযায়ী বৃদ্ধা বামুন পরিবারের বাস ছিলো এ বাংলায় । বামুনের স্ত্রীর , বিন্দি ঠাকরুনের ঠাকুর দেবতার উপর খুব নিষ্ঠা ছিল। সে ছেলে, বউ নাতি- নাতনীদের নিয়ে খুব আনন্দের দিন কাটছিল।

এক মাঘ মাসের শীতল ষষ্ঠীর দিন খুব ঠান্ডা পড়ায় বিন্দি ঠাকরুণ ব্রত করতে পারলো না।
আর উপরন্তু বৌমাদের বললেন " আমার জন্য একটু গরম ভাত রান্না করো আর স্নান করার জন্য গরম জল করো । এই শীতে শীতল ষষ্ঠী ব্রত কি করে করব?”
বউয়েরা তাদের শ্বাশুড়ীর কথামত কাজ করলো।এইদিন ঘরে উনুন জ্বালাতে নেই তবুও বিন্দি ঠাকুরণ গরম জলে স্নান করল ও গরম ভাত খেলো। তারপর ই তার ঘরে আগুন লেগে মেয়ে জামাই পুড়ে মারা গেলো।

মেয়ে-জামাইয়ের শোকে বিন্দি ঠাকুরানী করে কাঁদতে লাগলো। তারই মধ্যে শুনতে পেল কে যেন বলছে,”তোর বড় অহংকার হয়েছে, তাকে সেই অবজ্ঞা করার পাপেই আজ তোর এই দুর্দশা। তাকে যেমন অবহেলা করেছিস, তেমনি এখন তার ফল ভোগ কর”।
বিন্দি ঠাকুরণ মা ষষ্ঠীর কাছে কাঁদতে কাঁদতে বারবার ক্ষমা চাইতে লাগল – বলল ,”দোহাই মা ষষ্ঠী ,এ বারে আমায় ক্ষমা করো মা , এমন কাজ
আমি আর কখনো করবো না।”
বিন্দি ঠাকুরুণ অনেক কাকুতি-মিনতি করলো।
মা ষষ্ঠীর দয়া হল। মা ষষ্ঠীর কাছে সে তুই মানত করলো , পরের বছর মাঘ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর দিনে সে মেয়ে জামাইয়ের কল্যাণের জন্য উপোস করবে, আর মায়ের পুজো দিবি- সারা জীবন ।

এদিকে বিন্দি ঠাকুরণমেয়ে জামাইকে দাহ করা হয়নি।যারা মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছিল তারা দেবীর মায়ায় বনের ধারে মৃতদেহ ফেলে সবাই পালিয়ে গেছিলো। দেবীর আদেশ অনুযায়ী বিন্দি ঠাকুরণ দেবীর পুজো করে ঘরের জল আর নির্মাল্য নিয়ে, লোকজন ওঠার আগেই ভোরবেলা সেই বনের ধারে গিয়ে দেবীর নাম করে মৃতদেহের উপর জল ছিটিয়ে নির্মাল্য ছড়িয়ে দিলো, বিন্দি ঠাকুরণমেয়ে জামাই বেঁচে উঠলো।পরের বছরে আবার বিন্দি ঠাকুরণ, মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠীর দিন উপোস করে মেয়ে-জামাইয়ের মঙ্গলের জন্য শীতল ষষ্ঠী পুজো দিল। বামনির মেয়ে জামাইকে বেঁচে উঠতে দেখার পর থেকে সকলেই শীতল ষষ্ঠী ব্রত পালন করতে লাগলো। এই ভাবেই এই ব্রতের কথা ছড়িয়ে পরলো ।

শীতল ষষ্ঠী ব্রতের ফল- মাঘ মাসে শুক্লপক্ষে শীতল ষষ্ঠী ব্রত পালন করলে সংসারের মধ্যে থেকেও শোক তাপ পেতে হয় না।

Thursday, 26 January 2023

জোড়া ইলিশের বিয়ে

নদীমাতৃক বাংলার বহুমানুষ তাদের জীবন যাপন করতেন মৎস্যজীবী হিসেবে।  বাংলার মৎসজীবিরা    এই দিনে বিশেষ মঙ্গলাচরণের মধ্যে দিয়ে ইলিশ ধরার শুরু করতেন।  লোককথা অনুযায়ী মৎস্যজীবিরা, বিজয়া দশমীর পর আর ইলিশ মাছ ধরতেন না। বসন্ত পঞ্চমীর সময় থেকে আবার মাছ ধরতেন তারা। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী প্রথম পর্যন্ত অপরিণত ইলিশ ধরা পড়ে। আসলে বংশ বিস্তার জন্য ইলিশ একসময় সমুদ্র থেকে নদী গুলো ঢুকতে শুরু করে এবং এই সময় শিশু ইলিশদের সমুদ্রে ফেরার সময়।  বাংলার মৎস্যজীবিরা এই সময়টা ইলিশ ধরা বন্ধ করে । পরে দেবি সরস্বতী পূজার সময় পূজা মৎস উৎসর্গ করে আবার মাছ ধরা শুরু করেন।
ব্রাক্ষণরা আগে  নিরামিষাশী  মাছ খেতেন না।  ধীরে ধীরে প্রচলন হল শাস্ত্রে বলা হলো,  জল তরু  মাছকে শাক সব্জির মধ্যে ফেলা যায় কারণ সমুদ্রের ফল।

সরস্বতী পুজোয় এই ইলিশ রান্নাও হয় বিশেষ নিয়ম মেনে। ওই দিন জোড়া ইলিশের বিয়েও দেন।

এটি মূলত বাঙালিদের লোক সংস্কৃতি।  মূলত শ্রীপঞ্চমীর দিনে খাওয়ার রেওয়াজ তৈরি হয়েছে।

এ দিন সকালে কাঁচা হলুদ মেখে স্নান করে বাড়ির  ইলিশ কিনতে যেতে হয়। মহিলারা  একটি পাত্রে ধান, দুর্বা, সিঁদুর, তেল,  ও কাঁচা হলুদ  রাখেন। অনেকে একটি রুপোর টাকাও রাখতেন তার মধ্যে। এর পরে গজোড়া ইলিশ নিয়ে বাড়ি ঢোকার সময় উলুধ্বনি হয়। একটি কুলোয় ইলিশ দুটো রাখা হয়।
এবং জোড়া ইলিশ বরণ করা হয়। লোকাচারের কোন নিয়ম লিখিত নেই  , কোথাও কোথাও আস্ত বেগুনও রাখা হয়। একটি ইলিশ মাছ রান্নার রেওয়াজ থাকলে ইলিশের সঙ্গে শিলনোড়া রাখা হয় একে ‘নোড়া দিয়ে জোড়া ইলিশ’ বলা হয়। এখানে ইলিশের বিয়ের বদলে একটি ইলিশের সঙ্গে নোড়ার বিয়ে হয়। নোড়াটি পুরুষ ও ইলিশ মাছকে নারীর প্রতীক ধরা হত। ভালো করে দেখেলে দেখা যায় প্রথাটি মধ্যে আসলে ইলিশে বংশ বৃদ্ধির আকাংক্ষায় পালিত হচ্ছে।

এই ইলিশ রান্নার বিশেষ পদ্ধতিও আছে।
ইলিশ বরণ করার পর এক ফোড়ন দিয়ে এই রান্না হয়। অর্থাত্‍ ফোড়ন দিয়ে আনাজগুলি এক বারে দিয়ে দিতে হবে। তার পরে জল দিতে হয়।
হলুদ বাটার ঝোল ফুটে উঠলে মাছগুলি কাঁচা অবস্থায়ই ঝোলে দিতে হয়। মসলা ব্যবহার  নিষিদ্ধ এই রান্নায়।