Monday, 26 June 2023

পুরীর মহাপ্রসাদ

পুরী জগন্নাথ মন্দিরে প্রসাদকে মহাপ্রসাদ বলা হয় কেন?

বিভিন্ন পুরাণ যেমন পদ্মপুরাণ, স্কন্দ পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণে জগন্নাথের প্রসাদ বা জগন্নাথের ভোগ এর অপরিসীম মাহাত্ম্য কথা বলা হয়েছে।

ভগবান জগন্নাথ, দাদা বলরাম ও দেবী সুভদ্রা এই তিন মূর্তি দর্শন করলে এবং মহাপ্রসাদ গ্রহণ করলে আমাদের কলুষিত মন কলুষমুক্ত হয় আর আমাদের মনে ভক্তি ভাবের উদয় হয়।

আর এই ভক্তি থেকেই আসে প্রকৃত জ্ঞান। প্রকৃত জ্ঞান থেকেই আসে মুক্তি। তাই মুক্তি পেতে অবশ্যই ভক্তিভরে গ্রহণ করুন পুরীর জগন্নাথের প্রসাদ।

নিজের প্রসাদ সম্পর্কে প্রভু জগন্নাথ কি বলেছেন

এমনকি জগন্নাথ নিজে বলছেন যদি আমার নিবেদিত অন্ন কুকুরের মুখ থেকে পড়ে যায় এবং সেই অন্ন যদি ব্রহ্মাদি দেবগণ সৌভাগ্যবশত লাভ করেন তাহলে তাঁরা সেই অন্ন অনায়াসে ভক্ষণ করতে পারেন। কারণ এর মহত্ত্ব কখনো নষ্ট হয়না।

তাহলে কিএর মাহাত্ম্য কি কোনদিন বা কোনভাবে নষ্ট হয়?

না হয় না।

এই মহাপ্রসাদ শুকিয়ে যাক বা পর্য্যুষিত মানে বাসি হোক অথবা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হোক বা অস্পৃশ্য জাতির স্পর্শ পেয়ে এই মহাপ্রসাদের মাহাত্ম্য নষ্ট হয় না।

প্রচলিত এক গল্প অনুযায়ী,একবার এক শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত ব্রাহ্মণ এসেছিলেন পুরীর ধামে। তিনি জগন্নাথ দর্শন করলেন, কিন্তু জগন্নাথ দেবের মহাপ্রসাদ তিনি গ্রহণ করলেন না। ব্রাহ্মণের তাত্ত্বিক বিচার তাঁকে প্রসাদ গ্রহণে বাধা দিল।
যাইহোক পরে তাঁর কুষ্ঠ হল। তিনি মনে মনে ভাবলেন জ্ঞানত তিনি কোন পাপ করেন নাই তাহলে কি কারণে কুষ্ঠ হল ? অনেক ভেবে তিনি বুঝলেন তিনি জগন্নাথের মহাপ্রসাদ কে অস্বীকার করেছেন বলে তাঁর কুষ্ঠ হয়েছে।

তিনি পরে জগন্নাথের প্রসাদ গ্রহণ করলেন এবং তাঁর কুষ্ঠ রোগ সেরে গেল।

বিষ্ণুপুরাণে এবং স্কন্দপুরাণে ব্ৰহ্মা নারদের কথপোকথনে বলা হয়েছে। জগদীশ্বর বিষ্ণুকে একবার কোন অন্ন বা পানীয় নিবেদন করা হলে, সেই অন্ন এবং পানীয় সাক্ষাৎ নির্বিকার ব্রহ্মস্বরূপ বস্তুতে পরিণত হয়ে যায়। সেই জন্য বিষ্ণুর মহাপ্রসাদের নিয়ে ভক্ষ্যাভক্ষ্য বিচার করতে হয় না।
ব্রাহ্মণদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের জাতির শ্রেষ্ঠ বলে মনে মনে গর্ববোধ করে এবং কখনও কখনও প্রসাদ গ্রহণ করার আগে বিচার করেন। যদি এমন বিচার মনের মধ্যে উপস্থিত হয় তাহলে তাঁরা কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হন এবং দারাপুত্র রহিত অর্থাৎ নির্বংশ হয়ে নরকে যান। তাঁরা এমন নরকে গমন করেন যেখান থেকে তাঁদের আর উদ্ধারের কোনো উপায় থাকে না।

পদ্মপুরান অনুযায়ী লক্ষীদেবী স্বয়ং রান্না করেন ভগবান বিষ্ণুর জন্য তাই অন্ন খুব পবিত্র এবং দেবতাদেরও দুর্লভ।
বিষ্ণুপুরাণে পরিষ্কারভাবে বলা আছে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ভোগ এর অন্ন যতক্ষণ পর্যন্ত জগন্নাথ দেবকে পরিবেশন না করা হয় তার আগে পর্যন্ত এটি মহাপ্রসাদ হয় না। নিবেদন করার পর এটি মহাপ্রসাদ হয় ।

জগন্নাথের প্রসাদের কোন সংস্পৃষ্ট দোষ নেই। একবার প্রসাদ গ্রহণ করলেই সমস্ত পাপ তৎক্ষণাৎ দূর হয়ে যায়।

বিষ্ণুপুরাণে এবং স্কন্দপুরাণে বলা আছে।অতিপাপ, মহাপাপ সমস্ত পাপ জগন্নাথ দেবের অন্নগ্রহণ করলে তৎক্ষণাৎ শেষ হয়ে যায়।

প্রভু জগন্নাথ দেবের নৈবেদ্য ভক্ষণে মহাপাতক নাশ হয় আর এই মহাপ্রসাদ গ্রহন এক কোটি গোদান এর পুণ্যফলের সমান ।
গরুড় পুরাণে স্পষ্ট বলা হয়েছে মহাপ্রসাদ গ্রহণের কোন নিয়ম নেই। একাদশী, আমাবস্যা,চান্দ্রায়ণ ব্রতেরও কোন নিয়ম কাল নিয়ম এখানে প্রভাব খাটাইতে পারে না।

যাঁরা মোক্ষলাভ করতে চান তাঁরা মহাপ্রসাদ পাওয়ামাত্রই কোন রকম বিচার না করে তৎক্ষণাৎ ভক্ষণ করে নেবেন।

Monday, 19 June 2023

চৈতন্য মহাপ্রভু প্রভাবে বাংলার জগন্নাথ

চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রভাবে বাংলার জগন্নাথ কি আলাদা হয়ে গেছেন পুরীর জগন্নাথদেবের থেকে??

বাংলার রথ উৎসব খুব খুব জনপ্রিয়।বাঙালির কাছে কেন এই ভুভারতে জগন্নাথ দেব এতো জনপ্রিয় হয়েছেন কারণ বোধহয় শ্রীচৈতন্যদেব।বাংলার জগন্নাথ সংস্কৃতির প্রাণ পুরুষ। যদিও চৈতন্যদেবের আগেই মাহেশে জগন্নাথ ছিলেন।কিন্তু বাঙালির নিজস্ব জগন্নাথ গড়ে উঠেছে শ্রীচৈতন্যদেবের প্রভাবে। তাঁর প্রভাবে লোকবিশ্বাস অনুসারে বীরভূম একচক্রে গ্রামে গড়ে উঠেছে পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দির ও। এছাড়া সারা বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জগন্নাথে মন্দির এবং রথ উৎসব। কিন্তু বাংলার জগন্নাথ রূপ কিছুটা পাল্টে গেছে , কোথায় কোথায় তাঁর আছে হাত সাথে আছে দিঘল চোখ।পূর্ব বর্ধমান জেলার আউরিয়া গ্ৰামের প্রতিষ্ঠিত হাত সহ আছে জগন্নাথ।

বাংলার সংস্কৃতি বাংলার দারুবিগ্ৰহ আলোচনা করলে দেখা যাবে জগন্নাথ দেবের আর তার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের।বাংলাতেও অনেক জায়গায় জগন্নাথ ও লক্ষ্মী দেবীকে নিয়ে রথযাত্রায় অনুষ্ঠান হয়। সুবর্ণ বণিক পরিবারে , বৌবাজার অঞ্চলে রথ যাত্রায় জগন্নাথ ও লক্ষ্মী একসাথে দেখা যায়। আবার রামকানাই অধিকারী পরিবারের জগন্নাথ দেবের পাশে আছেন ধাতুর লক্ষ্মী। যদিও সুবর্ণ বণিকদের পরিবারের পুরোহিত ছিলেন এরা। সুবর্ণবণিকদের প্রভাবেই জগন্নাথ দেবের পাশে লক্ষ্মীর বিগ্ৰহ তাঁরা প্রতিষ্ঠা করেন। আবার ময়দা জগন্নাথ দেব একা।বৈষ্ণব পরিবারে একক দধিবামন রূপেই জগন্নাথ বেশী পূজিত।

চুঁচড়ার বড়ো রথবাড়ির জগন্নাথ দেব আর শ্রীরামপুরের পাঁচু বাবুর বাজারের জগন্নাথ ত্রয়ী।কুলীন গ্ৰামের সত্যরাজ খান বা লক্ষ্মীকান্ত বসু প্রতিষ্ঠিত আবার জগন্নাথ ত্রয়ী।এই খানে বলরামের গোঁফের রেখা আছে।

গড়িয়া রথবাড়ি পরিবারের স্বপ্নাদিষ্ট জগন্নাথ দেব নীলচে সবুজ । বাংলার নোয়াখালির থেকে আসেন এই পরিবার । নোয়াখালির সবাই রামচন্দ্রের মতো জগন্নাথ দেবকে মনে করে নীলচে সবুজ রঙের করেন।চোখ দুটি টানা টানা।সবসময় উনি নীলমাধব বলেই যে নীল তা নয়।বাংলার রথ উৎসব খুব খুব জনপ্রিয়।বাঙালির কাছে কেন এই ভুভারতে জগন্নাথ দেব এতো জনপ্রিয় হয়েছেন কারণ বোধহয় শ্রীচৈতন্যদেব।বাংলার জগন্নাথ সংস্কৃতির প্রাণ পুরুষ। কিন্তু বাঙালির নিজস্ব জগন্নাথ গড়ে উঠেছে শ্রীচৈতন্যদেবের প্রভাবে। তাঁর প্রভাবে লোকবিশ্বাস অনুসারে বীরভূম একচক্রে গ্রামে গড়ে উঠেছে পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দির ও। এছাড়া সারা বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জগন্নাথে মন্দির এবং রথ উৎসব। কিন্তু বাংলার জগন্নাথ রূপ কিছুটা পাল্টে গেছে , কোথায় কোথায় তাঁর আছে হাত সাথে আছে দিঘল চোখ।বাংলার সংস্কৃতি বাংলার দারুবিগ্ৰহ আলোচনা করলে দেখা যাবে জগন্নাথ দেবের আর তার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের।

বাংলাতেও অনেক জায়গায় জগন্নাথ ও লক্ষ্মী দেবীকে নিয়ে রথযাত্রায় অনুষ্ঠান হয়। সুবর্ণ বণিক পরিবারে , বৌবাজার অঞ্চলে রথ যাত্রায় জগন্নাথ ও লক্ষ্মী একসাথে দেখা যায়। আবার রামকানাই অধিকারী পরিবারের জগন্নাথ দেবের পাশে আছেন ধাতুর লক্ষ্মী। যদিও সুবর্ণ বণিকদের পরিবারের পুরোহিত ছিলেন এরা। সুবর্ণবণিকদের প্রভাবেই জগন্নাথ দেবের পাশে লক্ষ্মীর বিগ্ৰহ তাঁরা প্রতিষ্ঠা করেন। আবার ময়দা জগন্নাথ দেবেএকা।

গড়িয়া রথবাড়ি পরিবারের স্বপ্নাদিষ্ট জগন্নাথ দেব নীলচে সবুজ । বাংলার নোয়াখালির থেকে আসেন এই পরিবার । নোয়াখালির সবাই রামচন্দ্রের মতো জগন্নাথ দেবকে মনে করে নীলচে সবুজ রঙের করেন।চোখ দুটি টানা টানা। উনি নীলমাধব বলে উনার রঙ হয়তো নীল। তবে জগন্নাথ রূপ বৈচিত্র্য বাংলার জগন্নাথকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনার বিষয় বস্তু করে তুলেছে।

ছবি - সুশ্যামল ঘোষ, নিজস্ব, কিছু সংগৃহীত

Sunday, 18 June 2023

অম্ববাচী কি ? কামাখ্যার ইতিহাস

মা কামাখ্যা দেবীর ইতিহাস কি....????

অম্ববাচী মেলা কেন পালন করা হয়.......????

যদি না জানেন তো জেনে নিন...পুরান মতে-স্বামীর অপমান সইতে না পেরে সতী দেহত্যাগ করলেন। প্রিয় স্ত্রীকে হারিয়ে, তাঁর দেহ নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য করলেন মহাদেব। চারিদিক তখন তোলপাড়। শিবের নৃত্যে সব ভেঙে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। এই জগতকে রক্ষা করতে দেবতাদের অনুরোধে ভগবান বিষ্ণু ভগবান শিবের ক্রোধ দমন করার পন্থা বেছে নেন। বিষ্ণুর চক্রে সতীর দেহ খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়। ৫১টি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে শরীরের এক একটি অঙ্গ। যা আজ ৫১টি পীঠস্থান। কামাখ্যা মন্দির সেই ৫১টি পীঠস্থানের একটি। সেখানে নাকি ছিটকে পড়েছিল সতীর যৌনাঙ্গ। তাই সেখানে দেবীর মূর্তি পুজিত হয় না।অসমের কামাখ্যা মন্দির, ধার্মিক কারণে তো বটেই, সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেও জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রত্যেক বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় করে এই মন্দিরে। বিশেষকরে অম্বুবাচী মেলার সময় ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো। সেই সময় পুজিত ভূগর্ভস্থ এলাকা লাল হয়ে থাকে। মন্দিরের নালা দিয়ে বেয়ে যায় লাল জল। এই ঘটনাকে মায়ের ঋতুস্রাব বলে অনেকেই মনে করেন। এই সময় নাকি দেবী ঋতুমতী হন। তিনদিন ধরে এমনটা চলতে থাকে। মন্দিরের মূল কক্ষে তখন কারও প্রবেশে অনুমতি থাকে না। মা নাকি এই সময় কারোর সঙ্গে দেখা করেন না, এমনটাই বিশ্বাস অনেকের। এসবকেই মায়ের লীলা বলে মনে করা হয়। যদিও বিজ্ঞান অন্য কথা বলছে। ওই এলাকায় আয়রন অক্সাইডের প্রভাবের কারণেই ভূগর্ভস্থ এলাকা লাল হয়ে থাকে।মাটি থেকে ৮০০ মিটার উঁচুতে রয়েছে এই মন্দিরটি। নিলাচল পর্বতের পশ্চিমাংশে গুয়াহাটি শহরে এই মন্দিরটি। এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা নিয়ে জড়িয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস। ইতিহাস বলছে ১১০০ খ্রিষ্টাব্দে এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা হয়। পাল বংশের রাজারাই নাকি ছিলেন কামাখ্যা মায়ের আদি ভক্ত। পরবর্তীকালে পালবংশের রাজত্ব শেষ হওয়ার পর মন্দিরটিরও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা শোনা যায়। কামরূপের শাসন ভার আসে কোচবিহারের রাজ পরিবারের হাতে। বিশ্বসিংহ নামে কোচ বংশীয় রাজা পুনরায় ওই মন্দিরটির পুনর্নিমাণ করেন। এমনই বহু ইতিহাস রয়েছে এই মন্দিরের স্থাপত্যকে ঘিরে।এই মন্দিরে রয়েছে চারটি কক্ষ। একটি গর্ভগৃহ ও তিনটিমন্দির। গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে সরু সিঁড়ি দিয়ে কক্ষের নীচে নেমে যেতে হয়। পৌরাণিক কাহিনি আজও মানুষকে ডেকে আনে এই মন্দিরের দর্শন করতে....

"

"অম্বুবাচী " শব্দটি ভাঙলে অর্থ দাঁড়ায় জল বৃদ্ধি " অম্বু" বা জল আর "বাচী" মানে বৃদ্ধি ৷ একে বলে " রজোযুকক্ষ্মাম্বুবাচীয ৷ অম্বুবাচীর আগের দিনকে বলে " অম্বুবাচী প্রবৃত্তি " আর তিন দিন পরে হয় "অম্বুবাচী নিবৃত্তি " ৷অম্বুবাচী সমাপ্ত থেকে বীজবপন ও ধান্যরোপন করা হয় ৷ আমরা পৃথিবীকে মাতৃসমা দেবী মনে করি ৷ দক্ষিণায়নের দিন থেকে তিনদিন সূর্য যে বারের যে সময়ে মিথুন রাশিতে গমন করে পরবর্তী সময়টিতে হয় অম্বুবাচী ৷ সময়কালে ধরিত্রী মা ঋতুমতী হন ৷অর্থাৎ মনে করা হয় গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহের পর বর্ষার আগমনে একজন মহিলার মত এই সময় ভূদেবী বা ধরিত্রী মা বা পৃথিবী রজঃস্বলা হন ৷ কামাখ্যা মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে একরকম লাল রংয়ের তরল ( ভক্তরা একে বলে মায়ের রজঃস্রাবের রক্ত ) বের হয় ৷ মন্দিরে চলতে থাকে কীর্তন ৷ মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে ৷বিভিন্ন মন্দির ও গৃহদেবীর প্রতিমা ঢেকে রাখা হয় ৷" আষাঢ়ে প্রথমে দেবী অম্বুবাচী দিনত্রয়ং ৷ সংগোপনে গৃহে দেবিং স্থাপয়েদ্বস্তু বেষ্টনে "৷ বাহিরে প্রদীপ ও ধূপ জ্বালিয়ে মাকে প্রণাম করা হয় ৷ চতুর্থ দিন দেবীর স্নান ও পূজা সম্পন্ন হলে ভক্তরা মন্দিরে ঢুকে মাতৃদর্শনের অনুমতি পায় ৷ অম্বুবাচীর দিন গুলিতে সব দেবীর পূজা বন্ধ থাকে ৷তবে , নারায়ণ , কৃষ্ণ , শিবের মত দেব পূজা করা যায় ৷ ঐসময় ভূমি কর্ষণ , বীজ বপন , পিতৃ -তর্পণ , ঢাক -ঢোল বাজানো , , ঘন্টা কাঁসরের আওয়াজ , গৃহ প্রবেশ , গৃহারম্ভ , ক্ষৌরকর্ম করা যায় না ৷ জপ - ধ্যান , হরিনাম করতে হয় ৷

এ সময় সাধু -সন্ন্যাসী , বিধবা মহিলারা এই তিনদিন গরম খাবার খান না ৷ আগে রান্না করা খাবার বা ফল মূল খান ৷ তিনদিন পরে জামাকাপড় , বিছানা ধুয়ে নিজেরা সাবান শ্যাম্পু মেখে স্নান করে সবকিছুতে হাত দেন ৷ পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথের পাশে ভূদেবীর মূর্তি রয়েছে ৷ সেখানে অম্বুবাচীর প্রথম দিনটি "পহিলি রজো" এবং তৃতীয় দিন "ভূ-দহ" বা বাসি রজো হিসাবে পালিত হয় ৷ অম্বুবাচীর পর পৃথিবী হলকর্ষণের উপযোগী হয়ে ওঠে ৷ মাটি হয়ে ওঠে উর্বর ৷ ধরিত্রী হয়ে ওঠে শস্য শ্যামলা ৷

"

৫১ টি সতীপীঠের অন্যতম এখানে মাতৃ যোনি

পরায় পাহাড়টি নীল রংয়ের হয়ে যায় ৷ নাম হয় নীলকন্ঠ বা নীলাচল পর্বত ৷ একে তাই বলে সৃষ্টি তীর্থ ৷ অসমের গুয়াহাটি শহর সংলগ্ন ৷একে বলা হয় " তীর্থ চূড়ামনি "৷ প্রাচীন কাল থেকে একে জাদু টোনা , তন্ত্র মন্ত্রের

জায়গা বলা হয় ৷ এখানে নাকি ভূত , পেত্নি , ডাকিনী ও যোগিনীদের রাজত্ব ৷ পুরুষদের নাকি এখানকার নারীরা "ভেড়া " করে দেয় ৷ আসলে তন্ত্র সম্বন্ধে না জানার ফল এগুলো ৷ মা ,কৃপাময়ী ৷

কামাখ্যা মন্দিরের মূল উৎসব " অম্বুবাচী" বা অমাবতী ৷ বাংলা প্রবাদ " কিসের বার কিসের তিথি , আষাঢ়ের সাত তারিখ অম্বুবাচী" ৷হিন্দু বিশ্বাস এই সময় পৃথিবী ঋতুমতী হন ৷

পালিত হয় " অম্বুবাচী" উৎসব ৷ ওড়িশাতে একে বলে রজঃউৎসব ৷ এই সময় বিধবা মহিলা ও ব্রতীরা গরম খাবার খান না ৷ব্রত পালন করেন ৷ হল কর্ষন , গৃহ

প্রবেশ , ও বিবাহ বন্ধ থাকে ৷ সব মন্দিরের প্রবেশ দ্বার বন্ধ রাখা হয় ৷ শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের নিত্যসেবা যে কোন নারী রজঃস্বলা অবস্থায় বা অশৌচ অবস্থায় যেমন করতে পারেন । কামরূপ কামাখ্যা মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে

লাল রংয়ের তরল ( ভক্তদের মতে মায়ের রজস্রাব) বের হয় ৷ সারা ভারতবর্ষ থেকে লাখ লাখ ভক্ত এই সময় কামাখ্যা মন্দিরে উপস্থিত ৷ নাম গানে কীর্তনে এলাকা মুখর হয়ে ওঠে ৷ পান্ডারা ভক্তদের ওই রক্তভেজা কাপড়ের টুকরো দেন ৷যা পুরুষেরা ডান হাতে বা গলায় এবং মহিলারা বাঁ হাতে বা গলায় মাদুলি করে পরেন ৷ মনে করা হয়

মায়ের আর্শীবাদে এতে দুঃখ বিপদ দূর হয় ৷ এই রক্তবস্ত্র পরিধান করে শ্মশানে ও মৃতের ঘরে যেতে নেই ৷

কামদেবতাএখানে কামাখ্যা মন্দির স্থাপন করেন বলে নাম

"কামরূপ কামাখ্যা "৷স্বপ্ন পেয়ে কোচবিহারের রাজা বিশ্ব সিংহ প্রতি ইটে এক রতি করে সোনা দিয়ে সপ্ত রথ আকৃতির মৌচাকের আদলে তৈরী মন্দিরটি তৈরী করেন ৷সাতটি গম্বুজে রয়েছে তিনটি সোনার কলসী ৷মন্দিরের চারটি কক্ষ -গুহ্য গৃহ এবং চলন্ত , পঞ্চরত্ন ও নাটমন্দির নামের তিনটি মন্ডপ ৷ কালাপাহাড় মন্দিরের ক্ষতি করলে রাজা নরনারায়ণ তা পুনর্নিমাণ করেন ৷মন্দির চত্বরে আছেন দশ মহাবিদ্যা ও তাঁদের ভৈরব ৷ কামাখ্যার ভৈরব উমানন্দ আছেন সামনে দ্বীপে ৷ সবচেয়ে বড় উৎসব হয় "অম্বুবাচীতে" ৷ এসে গেল সেই অম্বুবাচীর দিনগুলো ৷আষাঢ় মাসের ঐ দিনগুলিতে মা স্বয়ং ঋতুমতী হন ৷ পাথরের গায়ে লাল জল দেখা যায় ৷ আর ঐ ভেজা কাপড়ের টুকরোকে ভাবা হয় খুব পবিত্র ৷অম্বুবাচীতে দর্শন বন্ধ থাকে ৷ ১৫ বছরে একবার মায়ের মুখ দেখা যায় ৷ বশীকরণ , বাণ মারার বুজরুকি করে জগৎজননী মাকে সন্তানদের থেকে দূরে রাখা বা ভয় পাওয়ানো অহেতুক ৷ তাই গিয়েছি গৌহাটি শহর থেকে চল্লিশ কিমি দূরে মায়াং গ্রামে ৷ চারটি আদিশক্তি ও ১৮- টি মহাশক্তি পীঠের অন্যতম ৷

জয় মা কামাখ্যা

জয়শ্রী কামেশ্বর

জয়শ্রী উমানন্দ ভৈরব

জয় ব্রহ্মপুত্র নদ,,,,

(মঙ্গলময় শুভ অম্ববাচী আগামী 22/6/2023বৃহস্পতিবার রাত্রী ২:৩২ থেকে শুরু,

ইঃ 26/6/2023 সোমবার বেলা,২:৫৬ সমাপ্ত। ,)

Friday, 16 June 2023

বিষ সংক্রান্তি

বিষ সংক্রান্তি কি জানেন??

#বিষসংক্রান্তি

জৈষ্ঠ মাসের শেষ দিন বিষ সংক্রান্তি নামে পরিচিত । বাংলা জৈষ্ঠ্য মাসের শেষ দিনটি হল জৈষ্ঠ্য সংক্রান্তি বা বিষ সংক্রান্তি বা এড়িবেড়ি ।এদিনে সর্পের দেবী মা মনসার পূজা উদ্দেশ্যে কিছু নিয়ম পালন করা হয়। নিরামিষ, তেতো ও কষা দ্রব্য খাওয়া হয়।সকালে ঘুম থেকে উঠেই , মুখ হাত পরিস্কার করে,দাঁত মেজে, একটি পাত্রে মুসুর ডাল, নিম পাতা, কেলে কাঁকড়া নামক ফল রাখা হয়। সকালে স্নানের পর সকলে ওগুলি সামান্য খেয়ে তারপর অন্য কিছু খেতে হয় ।দুপুরে ভাতের সাথে কেলে কাঁকড়ার ভাজা, করলা , নিম পাতার অথবা কোন তেঁতো সব্জির ভাজা, মুসুরের ডাল, মুসুরডালের বড়ার বিভিন্ন পদ, সজনে শাক ইত্যাদি পদ রান্না করতে হয় । এদিনে আমিষ দ্রব্য, পেঁয়াজ, রসুন, ঢ্যাঁড়স মতো সব্জি খাওয়া নিষিদ্ধ।এই নিয়ম পালনের পিছনে বৈজ্ঞানিক যুক্তিও আছে। আষাঢ় মাস হতে শুরু হয় বর্ষাকাল। বর্ষায় বিভিন্ন চর্মরোগ হয়। আর এই চর্মরোগ হতে বাঁচতে তেঁতো ও কষা সব্জি খাবার নিয়ম আয়ুর্বেদে অনুযায়ী। তাছাড়াও নিম-কেলে কাঁকড়ার মতো গাছের থেকে বিষ প্রভাবও কাটে। 1885 সালের 13ই জুন ( ৩২শে জৈষ্ঠ্য, ১২৯২ ) অর্থাৎ এই বিষ সংক্রান্তি দিনেই শ্রী ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের গলার অসুখের সূত্রপাত হয়।

এই দিন কিছু বাড়িতে মা মনসার পাঁচটি শাখা বিশিষ্ট ডাল পোঁতা হয়। শ্রাবণ মাসের শেষ অবধি প্রতি নাগ পঞ্চমী তে মা মনসার পূজো হয়।ভাসান হয় দুর্গা পূজোর দশমীর দিন । এইদিন সূর্য ওঠার আগে সারা ঘরে গোবরের বেড়ি দেওয়া হয় ।যাতে বিষধর সাপ ঘরে না ঢুকতে পারে তাই ঘর বন্ধন করা হয়।

Wednesday, 14 June 2023

গুড়শুটি মেলা

গুড়শুটি মেলা কোথায় হয় জানেন???

মেদিনীপুর গুড়সুটি মেলার খুব বিখ্যাত তবে সময় মাত্র কয়েক ঘন্টা।গুড়সুটির পসরা সাজিয়ে একদল বিক্রেতা হাজির হন এই মেলায় ।আসলে মেলায় ঘুরতে আসা শয়ে শয়ে ক্রেতা গুড়সুটি কেনে।

গুড় মাখানো কাঠিগজা - যাকে সবাই 'গুড়সুটি' বলে ডাকেন, তা এই মেলায় প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত গুড়সুটি কেনার জন্য লোকালয়ের মধ্যের এই ছোট্ট মেলায় ভীষণ ভিড় লেগে থাকে। এই জন্য সকলে এই মেলাকে 'গুড়সুটির মেলা' বলে চেনেন ও ডাকেন। দোলের দ্বিতীয় দিন শুধু মাত্র গুড়সুটির কারণে শহরের তো বটেই শহরের বাইরের দূর দূরান্ত থেকে লোকে এখানে হাজির হন সানন্দে। সবার হাতে ঝুলতে থাকে ব্যাগ। তাতে ভর্তি গুড়সুটি।

এক একজন তো এক দেড় কেজিও কেনেন। মেদিনীপুর শহরের পাটনাবাজার এলাকার সাহেবপুকুর চকে ঠিক দোল পূর্ণিমার দ্বিতীয় দিন এই মেলা বসে। । মেদিনীপুরে আসলে দু'দিন দোল খেলা হয়। আর সেই দ্বিতীয় দোলের দিনে বিকেল হলেই এই মেলা বসে। এই মেলাটি শুরু করেছিলেন সাহেব পুকুর চক এলাকার তৎকালীন বাসিন্দা এক অতি বৃদ্ধা উজ্জ্বলা সাহু। তাঁর পায়ের সমস্যার জন্য লোকে তাঁকে 'নেংড়ি বুড়ি' বলে ডাকতো। জীবনের শেষ বেলায় পৌঁছে তাঁর একমাত্র অবলম্বন ছোট্ট নাড়ুগোপালের জন্য দোলের সময় বিশেষ পুজো করতে গিয়ে এই মেলাটি বসিয়েছিলেন। অনেকে তাই এটিকে "নেংড়ি বুড়ির দোল" বলেও ডাকেন। কালক্রমে মেলাটি জনসাধারণেরস্থানীয়রা জানাচ্ছেন, বহু বছর ধরেই এই মেলা চলছে। আনুমানিক দুশবছর হবে এই মেলার বয়স।

তবে মেলায় আরো একটা আকর্ষণ আছে। পতিঙ্গা নামের খেলনা পাওয়া যায় এখানে।বাঁশের বাখরি চেঁছে এই খেলনাটি তৈরী করা হয়। 'পতঙ্গ' শব্দটি থেকে এসেছে 'পতিঙ্গা'। আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিলে ঘুরতে ঘুরতে মাটিতে নেমে আসে। ছোটদের অন্যতম পছন্দের এই খেলনাটি এই মেলাতেই পাওয়া যায় ।

বর্তমানে এই মেলাতে গুড়সুটির পাশাপাশি গুড় মাখানো ছোলা, মালপোয়া, মুগের জিলিপি এমনকি তেলেভাজা, পাঁপড়ভাজা, বারোভাজাও বিক্রি পাওয়া যায়। নানান মানুষের কলরবের সাথে সাথে সন্ধ্যায় দেবতার নামগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা মেলা।