পুরী জগন্নাথ মন্দিরে প্রসাদকে মহাপ্রসাদ বলা হয় কেন?
বিভিন্ন পুরাণ যেমন পদ্মপুরাণ, স্কন্দ পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণে জগন্নাথের প্রসাদ বা জগন্নাথের ভোগ এর অপরিসীম মাহাত্ম্য কথা বলা হয়েছে।
ভগবান জগন্নাথ, দাদা বলরাম ও দেবী সুভদ্রা এই তিন মূর্তি দর্শন করলে এবং মহাপ্রসাদ গ্রহণ করলে আমাদের কলুষিত মন কলুষমুক্ত হয় আর আমাদের মনে ভক্তি ভাবের উদয় হয়।
আর এই ভক্তি থেকেই আসে প্রকৃত জ্ঞান। প্রকৃত জ্ঞান থেকেই আসে মুক্তি। তাই মুক্তি পেতে অবশ্যই ভক্তিভরে গ্রহণ করুন পুরীর জগন্নাথের প্রসাদ।
নিজের প্রসাদ সম্পর্কে প্রভু জগন্নাথ কি বলেছেন
এমনকি জগন্নাথ নিজে বলছেন যদি আমার নিবেদিত অন্ন কুকুরের মুখ থেকে পড়ে যায় এবং সেই অন্ন যদি ব্রহ্মাদি দেবগণ সৌভাগ্যবশত লাভ করেন তাহলে তাঁরা সেই অন্ন অনায়াসে ভক্ষণ করতে পারেন। কারণ এর মহত্ত্ব কখনো নষ্ট হয়না।
তাহলে কিএর মাহাত্ম্য কি কোনদিন বা কোনভাবে নষ্ট হয়?
না হয় না।
এই মহাপ্রসাদ শুকিয়ে যাক বা পর্য্যুষিত মানে বাসি হোক অথবা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হোক বা অস্পৃশ্য জাতির স্পর্শ পেয়ে এই মহাপ্রসাদের মাহাত্ম্য নষ্ট হয় না।
প্রচলিত এক গল্প অনুযায়ী,একবার এক শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত ব্রাহ্মণ এসেছিলেন পুরীর ধামে। তিনি জগন্নাথ দর্শন করলেন, কিন্তু জগন্নাথ দেবের মহাপ্রসাদ তিনি গ্রহণ করলেন না। ব্রাহ্মণের তাত্ত্বিক বিচার তাঁকে প্রসাদ গ্রহণে বাধা দিল।
যাইহোক পরে তাঁর কুষ্ঠ হল। তিনি মনে মনে ভাবলেন জ্ঞানত তিনি কোন পাপ করেন নাই তাহলে কি কারণে কুষ্ঠ হল ? অনেক ভেবে তিনি বুঝলেন তিনি জগন্নাথের মহাপ্রসাদ কে অস্বীকার করেছেন বলে তাঁর কুষ্ঠ হয়েছে।
তিনি পরে জগন্নাথের প্রসাদ গ্রহণ করলেন এবং তাঁর কুষ্ঠ রোগ সেরে গেল।
বিষ্ণুপুরাণে এবং স্কন্দপুরাণে ব্ৰহ্মা নারদের কথপোকথনে বলা হয়েছে। জগদীশ্বর বিষ্ণুকে একবার কোন অন্ন বা পানীয় নিবেদন করা হলে, সেই অন্ন এবং পানীয় সাক্ষাৎ নির্বিকার ব্রহ্মস্বরূপ বস্তুতে পরিণত হয়ে যায়। সেই জন্য বিষ্ণুর মহাপ্রসাদের নিয়ে ভক্ষ্যাভক্ষ্য বিচার করতে হয় না।
ব্রাহ্মণদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের জাতির শ্রেষ্ঠ বলে মনে মনে গর্ববোধ করে এবং কখনও কখনও প্রসাদ গ্রহণ করার আগে বিচার করেন। যদি এমন বিচার মনের মধ্যে উপস্থিত হয় তাহলে তাঁরা কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হন এবং দারাপুত্র রহিত অর্থাৎ নির্বংশ হয়ে নরকে যান। তাঁরা এমন নরকে গমন করেন যেখান থেকে তাঁদের আর উদ্ধারের কোনো উপায় থাকে না।
পদ্মপুরান অনুযায়ী লক্ষীদেবী স্বয়ং রান্না করেন ভগবান বিষ্ণুর জন্য তাই অন্ন খুব পবিত্র এবং দেবতাদেরও দুর্লভ।
বিষ্ণুপুরাণে পরিষ্কারভাবে বলা আছে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ভোগ এর অন্ন যতক্ষণ পর্যন্ত জগন্নাথ দেবকে পরিবেশন না করা হয় তার আগে পর্যন্ত এটি মহাপ্রসাদ হয় না। নিবেদন করার পর এটি মহাপ্রসাদ হয় ।
জগন্নাথের প্রসাদের কোন সংস্পৃষ্ট দোষ নেই। একবার প্রসাদ গ্রহণ করলেই সমস্ত পাপ তৎক্ষণাৎ দূর হয়ে যায়।
বিষ্ণুপুরাণে এবং স্কন্দপুরাণে বলা আছে।অতিপাপ, মহাপাপ সমস্ত পাপ জগন্নাথ দেবের অন্নগ্রহণ করলে তৎক্ষণাৎ শেষ হয়ে যায়।
প্রভু জগন্নাথ দেবের নৈবেদ্য ভক্ষণে মহাপাতক নাশ হয় আর এই মহাপ্রসাদ গ্রহন এক কোটি গোদান এর পুণ্যফলের সমান ।
গরুড় পুরাণে স্পষ্ট বলা হয়েছে মহাপ্রসাদ গ্রহণের কোন নিয়ম নেই। একাদশী, আমাবস্যা,চান্দ্রায়ণ ব্রতেরও কোন নিয়ম কাল নিয়ম এখানে প্রভাব খাটাইতে পারে না।
যাঁরা মোক্ষলাভ করতে চান তাঁরা মহাপ্রসাদ পাওয়ামাত্রই কোন রকম বিচার না করে তৎক্ষণাৎ ভক্ষণ করে নেবেন।
No comments:
Post a Comment