Sunday, 18 June 2023

অম্ববাচী কি ? কামাখ্যার ইতিহাস

মা কামাখ্যা দেবীর ইতিহাস কি....????

অম্ববাচী মেলা কেন পালন করা হয়.......????

যদি না জানেন তো জেনে নিন...পুরান মতে-স্বামীর অপমান সইতে না পেরে সতী দেহত্যাগ করলেন। প্রিয় স্ত্রীকে হারিয়ে, তাঁর দেহ নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য করলেন মহাদেব। চারিদিক তখন তোলপাড়। শিবের নৃত্যে সব ভেঙে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। এই জগতকে রক্ষা করতে দেবতাদের অনুরোধে ভগবান বিষ্ণু ভগবান শিবের ক্রোধ দমন করার পন্থা বেছে নেন। বিষ্ণুর চক্রে সতীর দেহ খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়। ৫১টি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে শরীরের এক একটি অঙ্গ। যা আজ ৫১টি পীঠস্থান। কামাখ্যা মন্দির সেই ৫১টি পীঠস্থানের একটি। সেখানে নাকি ছিটকে পড়েছিল সতীর যৌনাঙ্গ। তাই সেখানে দেবীর মূর্তি পুজিত হয় না।অসমের কামাখ্যা মন্দির, ধার্মিক কারণে তো বটেই, সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেও জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রত্যেক বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় করে এই মন্দিরে। বিশেষকরে অম্বুবাচী মেলার সময় ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো। সেই সময় পুজিত ভূগর্ভস্থ এলাকা লাল হয়ে থাকে। মন্দিরের নালা দিয়ে বেয়ে যায় লাল জল। এই ঘটনাকে মায়ের ঋতুস্রাব বলে অনেকেই মনে করেন। এই সময় নাকি দেবী ঋতুমতী হন। তিনদিন ধরে এমনটা চলতে থাকে। মন্দিরের মূল কক্ষে তখন কারও প্রবেশে অনুমতি থাকে না। মা নাকি এই সময় কারোর সঙ্গে দেখা করেন না, এমনটাই বিশ্বাস অনেকের। এসবকেই মায়ের লীলা বলে মনে করা হয়। যদিও বিজ্ঞান অন্য কথা বলছে। ওই এলাকায় আয়রন অক্সাইডের প্রভাবের কারণেই ভূগর্ভস্থ এলাকা লাল হয়ে থাকে।মাটি থেকে ৮০০ মিটার উঁচুতে রয়েছে এই মন্দিরটি। নিলাচল পর্বতের পশ্চিমাংশে গুয়াহাটি শহরে এই মন্দিরটি। এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা নিয়ে জড়িয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস। ইতিহাস বলছে ১১০০ খ্রিষ্টাব্দে এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা হয়। পাল বংশের রাজারাই নাকি ছিলেন কামাখ্যা মায়ের আদি ভক্ত। পরবর্তীকালে পালবংশের রাজত্ব শেষ হওয়ার পর মন্দিরটিরও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা শোনা যায়। কামরূপের শাসন ভার আসে কোচবিহারের রাজ পরিবারের হাতে। বিশ্বসিংহ নামে কোচ বংশীয় রাজা পুনরায় ওই মন্দিরটির পুনর্নিমাণ করেন। এমনই বহু ইতিহাস রয়েছে এই মন্দিরের স্থাপত্যকে ঘিরে।এই মন্দিরে রয়েছে চারটি কক্ষ। একটি গর্ভগৃহ ও তিনটিমন্দির। গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে সরু সিঁড়ি দিয়ে কক্ষের নীচে নেমে যেতে হয়। পৌরাণিক কাহিনি আজও মানুষকে ডেকে আনে এই মন্দিরের দর্শন করতে....

"

"অম্বুবাচী " শব্দটি ভাঙলে অর্থ দাঁড়ায় জল বৃদ্ধি " অম্বু" বা জল আর "বাচী" মানে বৃদ্ধি ৷ একে বলে " রজোযুকক্ষ্মাম্বুবাচীয ৷ অম্বুবাচীর আগের দিনকে বলে " অম্বুবাচী প্রবৃত্তি " আর তিন দিন পরে হয় "অম্বুবাচী নিবৃত্তি " ৷অম্বুবাচী সমাপ্ত থেকে বীজবপন ও ধান্যরোপন করা হয় ৷ আমরা পৃথিবীকে মাতৃসমা দেবী মনে করি ৷ দক্ষিণায়নের দিন থেকে তিনদিন সূর্য যে বারের যে সময়ে মিথুন রাশিতে গমন করে পরবর্তী সময়টিতে হয় অম্বুবাচী ৷ সময়কালে ধরিত্রী মা ঋতুমতী হন ৷অর্থাৎ মনে করা হয় গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহের পর বর্ষার আগমনে একজন মহিলার মত এই সময় ভূদেবী বা ধরিত্রী মা বা পৃথিবী রজঃস্বলা হন ৷ কামাখ্যা মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে একরকম লাল রংয়ের তরল ( ভক্তরা একে বলে মায়ের রজঃস্রাবের রক্ত ) বের হয় ৷ মন্দিরে চলতে থাকে কীর্তন ৷ মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে ৷বিভিন্ন মন্দির ও গৃহদেবীর প্রতিমা ঢেকে রাখা হয় ৷" আষাঢ়ে প্রথমে দেবী অম্বুবাচী দিনত্রয়ং ৷ সংগোপনে গৃহে দেবিং স্থাপয়েদ্বস্তু বেষ্টনে "৷ বাহিরে প্রদীপ ও ধূপ জ্বালিয়ে মাকে প্রণাম করা হয় ৷ চতুর্থ দিন দেবীর স্নান ও পূজা সম্পন্ন হলে ভক্তরা মন্দিরে ঢুকে মাতৃদর্শনের অনুমতি পায় ৷ অম্বুবাচীর দিন গুলিতে সব দেবীর পূজা বন্ধ থাকে ৷তবে , নারায়ণ , কৃষ্ণ , শিবের মত দেব পূজা করা যায় ৷ ঐসময় ভূমি কর্ষণ , বীজ বপন , পিতৃ -তর্পণ , ঢাক -ঢোল বাজানো , , ঘন্টা কাঁসরের আওয়াজ , গৃহ প্রবেশ , গৃহারম্ভ , ক্ষৌরকর্ম করা যায় না ৷ জপ - ধ্যান , হরিনাম করতে হয় ৷

এ সময় সাধু -সন্ন্যাসী , বিধবা মহিলারা এই তিনদিন গরম খাবার খান না ৷ আগে রান্না করা খাবার বা ফল মূল খান ৷ তিনদিন পরে জামাকাপড় , বিছানা ধুয়ে নিজেরা সাবান শ্যাম্পু মেখে স্নান করে সবকিছুতে হাত দেন ৷ পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথের পাশে ভূদেবীর মূর্তি রয়েছে ৷ সেখানে অম্বুবাচীর প্রথম দিনটি "পহিলি রজো" এবং তৃতীয় দিন "ভূ-দহ" বা বাসি রজো হিসাবে পালিত হয় ৷ অম্বুবাচীর পর পৃথিবী হলকর্ষণের উপযোগী হয়ে ওঠে ৷ মাটি হয়ে ওঠে উর্বর ৷ ধরিত্রী হয়ে ওঠে শস্য শ্যামলা ৷

"

৫১ টি সতীপীঠের অন্যতম এখানে মাতৃ যোনি

পরায় পাহাড়টি নীল রংয়ের হয়ে যায় ৷ নাম হয় নীলকন্ঠ বা নীলাচল পর্বত ৷ একে তাই বলে সৃষ্টি তীর্থ ৷ অসমের গুয়াহাটি শহর সংলগ্ন ৷একে বলা হয় " তীর্থ চূড়ামনি "৷ প্রাচীন কাল থেকে একে জাদু টোনা , তন্ত্র মন্ত্রের

জায়গা বলা হয় ৷ এখানে নাকি ভূত , পেত্নি , ডাকিনী ও যোগিনীদের রাজত্ব ৷ পুরুষদের নাকি এখানকার নারীরা "ভেড়া " করে দেয় ৷ আসলে তন্ত্র সম্বন্ধে না জানার ফল এগুলো ৷ মা ,কৃপাময়ী ৷

কামাখ্যা মন্দিরের মূল উৎসব " অম্বুবাচী" বা অমাবতী ৷ বাংলা প্রবাদ " কিসের বার কিসের তিথি , আষাঢ়ের সাত তারিখ অম্বুবাচী" ৷হিন্দু বিশ্বাস এই সময় পৃথিবী ঋতুমতী হন ৷

পালিত হয় " অম্বুবাচী" উৎসব ৷ ওড়িশাতে একে বলে রজঃউৎসব ৷ এই সময় বিধবা মহিলা ও ব্রতীরা গরম খাবার খান না ৷ব্রত পালন করেন ৷ হল কর্ষন , গৃহ

প্রবেশ , ও বিবাহ বন্ধ থাকে ৷ সব মন্দিরের প্রবেশ দ্বার বন্ধ রাখা হয় ৷ শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের নিত্যসেবা যে কোন নারী রজঃস্বলা অবস্থায় বা অশৌচ অবস্থায় যেমন করতে পারেন । কামরূপ কামাখ্যা মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে

লাল রংয়ের তরল ( ভক্তদের মতে মায়ের রজস্রাব) বের হয় ৷ সারা ভারতবর্ষ থেকে লাখ লাখ ভক্ত এই সময় কামাখ্যা মন্দিরে উপস্থিত ৷ নাম গানে কীর্তনে এলাকা মুখর হয়ে ওঠে ৷ পান্ডারা ভক্তদের ওই রক্তভেজা কাপড়ের টুকরো দেন ৷যা পুরুষেরা ডান হাতে বা গলায় এবং মহিলারা বাঁ হাতে বা গলায় মাদুলি করে পরেন ৷ মনে করা হয়

মায়ের আর্শীবাদে এতে দুঃখ বিপদ দূর হয় ৷ এই রক্তবস্ত্র পরিধান করে শ্মশানে ও মৃতের ঘরে যেতে নেই ৷

কামদেবতাএখানে কামাখ্যা মন্দির স্থাপন করেন বলে নাম

"কামরূপ কামাখ্যা "৷স্বপ্ন পেয়ে কোচবিহারের রাজা বিশ্ব সিংহ প্রতি ইটে এক রতি করে সোনা দিয়ে সপ্ত রথ আকৃতির মৌচাকের আদলে তৈরী মন্দিরটি তৈরী করেন ৷সাতটি গম্বুজে রয়েছে তিনটি সোনার কলসী ৷মন্দিরের চারটি কক্ষ -গুহ্য গৃহ এবং চলন্ত , পঞ্চরত্ন ও নাটমন্দির নামের তিনটি মন্ডপ ৷ কালাপাহাড় মন্দিরের ক্ষতি করলে রাজা নরনারায়ণ তা পুনর্নিমাণ করেন ৷মন্দির চত্বরে আছেন দশ মহাবিদ্যা ও তাঁদের ভৈরব ৷ কামাখ্যার ভৈরব উমানন্দ আছেন সামনে দ্বীপে ৷ সবচেয়ে বড় উৎসব হয় "অম্বুবাচীতে" ৷ এসে গেল সেই অম্বুবাচীর দিনগুলো ৷আষাঢ় মাসের ঐ দিনগুলিতে মা স্বয়ং ঋতুমতী হন ৷ পাথরের গায়ে লাল জল দেখা যায় ৷ আর ঐ ভেজা কাপড়ের টুকরোকে ভাবা হয় খুব পবিত্র ৷অম্বুবাচীতে দর্শন বন্ধ থাকে ৷ ১৫ বছরে একবার মায়ের মুখ দেখা যায় ৷ বশীকরণ , বাণ মারার বুজরুকি করে জগৎজননী মাকে সন্তানদের থেকে দূরে রাখা বা ভয় পাওয়ানো অহেতুক ৷ তাই গিয়েছি গৌহাটি শহর থেকে চল্লিশ কিমি দূরে মায়াং গ্রামে ৷ চারটি আদিশক্তি ও ১৮- টি মহাশক্তি পীঠের অন্যতম ৷

জয় মা কামাখ্যা

জয়শ্রী কামেশ্বর

জয়শ্রী উমানন্দ ভৈরব

জয় ব্রহ্মপুত্র নদ,,,,

(মঙ্গলময় শুভ অম্ববাচী আগামী 22/6/2023বৃহস্পতিবার রাত্রী ২:৩২ থেকে শুরু,

ইঃ 26/6/2023 সোমবার বেলা,২:৫৬ সমাপ্ত। ,)

No comments:

Post a Comment