Sunday, 23 October 2022
কালিঘাট
Friday, 14 October 2022
গারসি’ বা ‘গাস্বী ব্রত’ বা ‘গারুসংক্রান্তির ব্রত’
লক্ষ্মী কতখানি পৌরাণিক দেবী??
ইতিহাসের পাতায় গেলে দেখতে পাবেন
কুনিন্দরাজ অমোঘভূতির মুদ্রায় লক্ষ্মীর সামনে হরিণ আছে । কুমারগুপ্তের মুদ্রায় আবার লক্ষ্মীদেবী একটি ময়ূরকে খাদ্য দিচ্ছেন আবার অন্য একটি মুদ্রায় দেবী পদ্মহাতে, ময়ূরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
প্রথম ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ও কুমারগুপ্তের স্বর্ণমুদ্রায় দেবীর বাহন সিংহ। বৃহৎ স্তোত্ররত্নাকরে মাধব ব্যাস আথর্বণ রহস্য থেকে যে লক্ষ্মীমন্ত্র উদ্ধার করেছেন তাতে লক্ষ্মীকে সিংহবাহিনীরূপে দেখাযায়। নেপালে প্রাপ্ত পটে অংকিত অর্ধ-লক্ষ্মী নারায়ণ মূর্তীতে বিষ্ণুর অর্ধদেহের পদতলে গরুড় ও লক্ষ্মীর অর্ধদেহের পদতলে কচ্ছপ।গুপ্তোত্তর যুগে শশাঙ্কের স্বর্ণমুদ্রায় দণ্ডায়মানা লক্ষ্মীদেবীর প্রসারিত দক্ষিণহস্তে পদ্ম, পিছনে পদ্মলতা ও পায়ে তলায় একটি হাঁস।.
ড. জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখায় কুনিন্দ মুদ্রায় দেবীর মানবমূর্তী ও পশুমূর্তী অঙ্কিত হয়েছে কারন লক্ষ্মীদেবী চঞ্চলা, হরিণও চঞ্চল । কচ্ছপ বা কূর্মও অঞ্চল বিশেষে দেবীর বাহন হয়েছ। কূর্ম বিষ্ণু দ্বিতীয় অবতারও। সূর্য-বিষ্ণুর শক্তি লক্ষ্মীর বাহন বিষ্ণুরূপী কূর্ম হওয়ার সম্ভবনা আছে। আদিতে লক্ষ্মীর আদি বাহন ছিল হরিণ। পরে সরস্বতীর কাছ থেকে নিলেন সিংহ ও ময়ূর। সরস্বতীর হাঁসটিকে তিনি অধিকার করার চেষ্টা করেছিলেন খ্রীষ্টিয় ষষ্ঠ শতাব্দী পরে । এই বাহনগুলির কোনটিকেই লক্ষ্মী থাকলো না । সরস্বতী হাঁস , দুর্গাদেবী সিংহের হল , ময়ূর গেল কার্তিকের দখলে, কূর্ম বিষ্ণুর অবতার হয়ে রইলো। অগত্যা লক্ষ্মীদেবী আশ্রয় বাহন হলো প্যেঁচা। তাই লোকবিশ্বাস এই দেবী তৈরি হয়েছেন বলে আমার বিশ্বাস।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই পূজাতে আলপনা দেওয়া রিতী।কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল আলপনা। এ বাংলায় বিভিন্ন ভাবে লক্ষী পূজা করা হয়। কখনও মাটির পট কখনো কলাগাছ কখনও মাটির চিত্রাঙ্কিত সরা, কখনো ধানের ছড়ায় দেবীকে কল্পনা করে বাঙালীরা পুজো করেন। লক্ষ্মী হিসেবে করে পুজো করা হত, মূর্তির প্রচলন হতেই সেগুলি আলপনার বিষয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। লক্ষ্মী পুজোতে প্যাঁচা, ধানের ছড়া, শঙ্খ, পদ্ম, পদচিহ্ন ইত্যাদি আলপনা আঁকা হয়।
এগুলি সবই সমৃদ্ধি-সম্পদের প্রতীক। ধানের ছড়া, কলা গাছ কৃষিজ সমৃদ্ধির প্রতীক, আজও কোজাগরী পূর্ণিমায় নৌকা পুজো করা হয়, যা বাণিজ্যের প্রতীক। আমরা মঙ্গলকাব্য তে প্রমান পাই জলপথেই বাণিজ্য করতো একসময় বাঙালিরা। পরে আলপনায় ঢুকে গিয়েছে এই সব ছবি গুলো।
আদীপন থেকে আলীপন হয়ে আলপনা শব্দের জন্ম। আসলে আলপনা হল কামনার প্রতিচ্ছবি। ইহজাগতিক বাসনা, সম্পদ সমৃদ্ধি প্রার্থনা, সুস্থ নীরোগ জীবন কামনা, সাংসারিক শ্রীবৃদ্ধির আকাঙ্খা ইত্যাদি আলপনার মধ্যে।
লক্ষ্মীর পদ যুগল একসময়ে লক্ষ্মী রূপেই পূজিত হত। লক্ষ্মী একসময় মনসার মতো লৌকিক দেবীই ছিলেন । আদিমাতা ও পৃথ্বীমাতার রূপে পূজিত দেবী।জৈনসাহিত্যে গন্ধর্ব কিন্নর প্রমুখ ব্যন্তর দেবতা বা মধ্যবর্তী দেবতাদের শ্রেণিতেই লক্ষ্মীকে অন্তর্ভুক্ত করা আছে। খুব ভালো করে দেখলে।দ্বাদশ শতকের আগে কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষ্মী পুজোর চলছিলো না বাংলায় । বাংলার অন্যান্য লৌকিক দেব-দেবী, মনসা ,মসান ঠাকুর,সিনি দেবী , ক্ষেত্রপাল যেমন কোনও না কোনও প্রতীকেরা দ্বারাই পূজিত হন , তেমনই সংকেত বা অন্য কোনও প্রতীকের মধ্যে আরাধনা করা করা হয় আজ লক্ষীকে । এক সমুয় লক্ষ্মীও পূজিত হতেন পদ চিহ্নের মাধ্যমে। লক্ষ্মীর পদ চিহ্ন কিছু বছর আগে পর্যন্ত সংকেত হিসেবেও ব্যবহৃত হতে দেখা যেতো বিয়ের নিমন্ত্রণের চিঠিতে।
তবে পদ চিহ্ন পুজোর রেওয়াজ দীর্ঘদিনের, তা আজও রয়েছে, দক্ষিনেশ্বর- তারাপিঠ- কালীঘাট এর মতো জায়গায় কালী পায়ের অবয়ব বিক্রি হতে দেখা যায় আজো । ভক্তরা তা কিনে নিয়ে গিয়ে পুজো করেন তা বাড়িতে গাড়িতে।নবদ্বীপে নিমাইয়ের পদ চিহ্নেকে পুজো দেওয়া হয়। মৃত মানুষের পায়ের ছাপ রেখে দেওয়াও আমাদের রীতি আছে । আবার পদ চিহ্ন দেখেই জঙ্গলের প্রাণীদের শুমারি করা হয়।অর্থাৎ পদ চিহ্ন হল উপস্থিতি বা অস্তিত্ববাদের ধারক-বাহক।
দেখা যায় লক্ষ্মীর পদ চিহ্নের বদলে পরে দিকে মূর্তি এল অন্যান্য প্রতীকে তাঁর আরাধনা শুরু হল,। মূর্তির আর প্রতীকে পুজোর শুরু হওয়ায় । পদ চিহ্ন আশ্রয় নিলো আলপনায়। আজও যে আসনে লক্ষ্মী মূর্তি স্থাপন করে পুজো করা হয় তার নীচেও পদ চিহ্ন আঁকা হয়। পিঁড়িতেও লক্ষ্মীর পা আঁকা হয়। সংকল্পের ঘটের নীচে অনেকে আঁকেন। এখানেই স্পষ্ট হয় মূর্তি এসে প্রতীকের জায়গা । হেঁটে এসে লক্ষ্মী প্রবেশ করার তত্ত্ব একেবারেই নতুন । কারণ জোড়া পায়ে কেউ হাঁটতে পারে না।
লোকজন বলেন কোজাগরী শব্দের অর্থেও যে জেগে থাকবেন মা তার বাড়ি যাবেন। মানুষ ধারণা জন্ম, ওই পদ চিহ্নের আলপনার অর্থ হল মা ওই পথ ধরেই মা ঘরে আসেন। কিন্তু হেঁটে আসার ভঙ্গিমার সঙ্গে আলপনার আঁকা মেলে না। আজ আবার দ্বিপদ স্টিকারের পা-ই এখন কোজাগরী পূর্ণিমার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । এক্ষেত্রে পদ যুগল কিন্তু অক্ষত থাকে । তাই মনে এলো এই গল্পটি লক্ষীপূজা আলপনার পা কি সত্যিই লক্ষী ঠাকুরের আগমনের চিহ্ন বহন করে?
Saturday, 8 October 2022
পেঁচা কেন দেবী লক্ষীর বাহন?
Friday, 30 September 2022
ব্যঙের বিয়ে
আবার বৃষ্টি কামনায় ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয় ভারত-বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক দেশে । তবে খরা বা অনাবৃষ্টি থেকে রেহায় পেতে এই আয়োজন সাধারণত আদিবাসীরাই সাধারণত এই বিয়ের। এরা রীতিমতো পুরুত ডেকে সাজসজ্জা পরিয়ে বিয়ে দেয় ব্যাঙেদের ।উলুধ্বনি দিলেন মহিলারা। মন্ত্রোচ্চারণ করলেন পুরোহিত। মহা ধুমধামের সঙ্গে অনুষ্ঠিত করা হয় ব্যাঙের বিয়ে। তবে বিয়েতে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও থাকে বরপক্ষ ও কন্যাপক্ষের লোকজনের। বিশ্বাস হচ্ছে না Google জিজ্ঞেস করুন। নাম করা সংবাদ পত্রে পেয়ে যাবেন ব্যাঙের বিয়ের খবর ।
আসলে ব্যাঙের সঙ্গে বৃষ্টির সম্বন্ধ বোধ হয় মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে বহু দিন ধরে। প্রায় প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়ের ধারা জলে গ্রাম বাংলা ভাসে মাঠঘাট ভরে যায় জলে। তখন দিনেরাতে ব্যাঙের ডাকে কান পাতা দায়। মানুষের ধারণা এই ব্যাঙের ডাক বৃষ্টিকে ডেকে আনে। আর ভাবেই বা না কেন? কিছুদিনের মধ্যে দেখা যেতো ডোবা, খাল, বিল, পুকুরের জলে ভাসছে অসংখ্য ছোটো ছোটো ব্যাঙের ডিম। কয়েকদিন যেতে না যেতেই দেখতাম ব্যাঙের কালোকালো ব্যাঙাচীর দখলে চলে যেতো জলাশয় গুলো। এই বৃষ্টি হলে ওদের বংশবৃদ্ধি কারণ।
অনাবৃষ্টি আবার মানুষের ফসল নষ্ট এর কারণ। তাই মানুষ আবিষ্কার করলো ব্যাঙেদের বিয়ে দিলেই বৃষ্টি হয়। এ বিশ্বাসে আজো ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয় অনেক জায়গায়।
Sunday, 25 September 2022
বাংলার মিষ্টি সবার সেরা কেন??
মতিচূরের লাড্ডুভারতবর্ষের সবচেয়ে প্রাচীন মিষ্টি যার বয়স প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশি।সন্দেশ-রসগোল্লার বয়স মাত্র দুই-আড়াই'শ বছরের মতো হবে। তবে মজার বিষয় বাঙালিরা ছানা তৈরি করতে শুরু করে প্রথম ভারতে। বাংলার পর্তুগিজদের কাছ থেকে বাঙালি ময়রারা ছানা ও পনির তৈরির কৌশল শেখে। ভাস্কো দা গামা কালিকট বন্দরে এসেছিলেন ১৪৯৮ সালে।এর কিছু দিন পর তার বাংলায় এসে উপনিবেশ স্থাপন করে।
প্রথম দিকে ছানা ও ছানার মিষ্টির তৈরি চলছিলো না ধর্মীয় কারনে । বৈদিক যুগে দুধ ও দুধ থেকে তৈরি ঘি, দধি, মাখন ইত্যাদি ছিল দেবতাদের খাদ্য। বিশেষ করে ননি ও মাখন অত্যন্ত প্রিয় ছিল শ্রীকৃষ্ণের। এ জন্য দুধ থেকে রূপান্তরিত ওই সব খাদ্য শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হলেও ছানা তৈরি হয় দুধ বিকৃত করে, এ জন্য মনুর বিধানমতে, ছানা ছিল অখাদ্য। তাই ছানা মিষ্টির তৈরির কৌশল ভারতীয়রা শেখে অনেক পরে।
সুকুমার সেনের কলিকাতার কাহিনী বইয়ে লিখেছেন, "ক্ষীর-মাখন-ঘি-দই—এগুলো কাচা দুধের স্বাভাবিক পরিণাম, কৃত্রিম অথবা স্বাভাবিক। কিন্তু কোনোটিই দুধের বিকৃতি নয়। ‘ছানা’ কিন্তু ফোটানো দুধের কৃত্রিম বিকৃতি। বাঙালি অন্য দ্রব্য সংযোগ করে দুধ ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে, যাতে সারবস্তু ও জলীয় অংশ পৃথক হয়ে যায়। এভাবে দুধ ছিন্নভিন্ন করা হয় বলেই এর নাম হয়েছিল বাংলায় ‘ছেনা’, এখন বলা হয় ‘ছানা’। সংস্কৃত ভাষায় ছানার কোনো রকম উল্লেখ নেই। অন্য ভাষাতেও ছিল না। আগে অজ্ঞাত ছিল বলেই শাস্ত্রসম্মত দেবপূজায় ছানা দেওয়ার বিধান নেই।"
তবে আগেও সন্দেশ তৈরি করা হতো চিনির বা মিষ্টি সাথে বেসন, নারকেল ও মুগের ডালের মিশিয়ে। শুধু চিনি দিয়ে তৈরি এক ধরনের চাকতিকেও অনেক সময় সন্দেশ বলা হতো এখন পূজা তে এগুলো ব্যবহার করা হয়। নীহাররঞ্জন রায়ের" বাঙালির ইতিহাস "বইয়ে বাঙালির মিষ্টিজাতীয় যে খাদ্যের বিবরণ দিয়েছেন, তাতে তাই ছানার কোনো মিষ্টির উল্লেখ নেই। দুধ থেকে তৈরি মিষ্টির বলতে দই, পায়েস ও ক্ষীরের কথা। সন্দেশের উল্লেখ আছে, তবে সেই সন্দেশ ছানার নয়। তিনি বলেছেন, ‘কোজাগর পূর্ণিমা রাত্রে আত্মীয়-বান্ধবদের চিপিটক বা চিঁড়া এবং নারিকেলের প্রস্তুত নানা প্রকারের সন্দেশ পরিতৃপ্ত করিতে হইত এবং সমস্ত রাত বিনিদ্র কাটিত পাশা খেলায়।’
যাইহোক চিনির সঙ্গে ছানার মিশিয়ে সন্দেশ ও রসগোল্লার তৈরি করে বাঙালি অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে। হুগলিতে যেহুতু পর্তুগিজরা প্রথম এসেছিলেন তাই এই আধুনিক সন্দেশ আবিষ্কর্তা হুগলির হালুইকররা। পরে কলকতায় তৈরি হয় , লেডি কেনি, রসগোল্লার মতো মিষ্টি। প্রথম দিকে সন্দেশের মিষ্টি কম থাকতো তাই এই ছানার সন্দেশকে বলা হতো ‘ফিকে সন্দেশ’ । শাস্ত্রসম্মত নয় বলে ছানার সন্দেশ অনেকে খেতে চাইত না। কলকাতার ময়রাদের সৃজনশীলতায় কড়াপাক, নরমপাক, কাঁচাগোল্লা, চন্দন সন্দেশসহ হাজার রকম সন্দেশের তৈরি করেছিলেন। এরা সন্দেশ বৈচিত্র্যময় করে তোলে গুড়ের ব্যবহারে। শীতকালের সন্দেশ আর গ্রীষ্মের সন্দেশে তো পার্থক্য আছেই,। পরে এরা ফলের ব্যবহার শুরু করে মিষ্টিতে।
গোপাল গোল্লা ছিলো রসগোল্লার আদি নাম । পরে চিনির রসে ডোবানো ছানার গোল্লাকে নাম হয় রসগোল্লা। আর রসগোল্লার সর্বশেষ নিরীক্ষাধর্মী সংস্করণ হলো স্পঞ্জ রসগোল্লা। ছানা ও চিনির রসায়নে নানা আকৃতি ও স্বাদে নানা নামে বৈচিত্র্যময় হয়মিষ্টির সম্ভার । লেডিকেনি, চমচম, পানিতোয়া, কালোজাম, আমৃতি, রসমালাই—হরেক রকম। । লোকমুখে এর চলতি নাম লেডিকেনি আসলে। রসগোল্লার মতোই গোলাকার লাল রঙের লেডিকেনি নামে মিষ্টিটি তৈরি হয়েছিল ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিংয়ের স্ত্রীর সম্মানে। ছানার মিষ্টি বাংলায় জনপ্রিয় হলেও ভারতের অন্যত্র এখনো ছানার মিষ্টি তেমন তৈরি হয় নাবএখনো লাড্ডু মিষ্টি প্যাড়া, মেওয়ার শুকনো মিষ্টি ।
বাংলাতে আসলে তিন ধরনের মিষ্টি পাওয়া যায়।
সুকুমার সেন বাংলার মিষ্টিকে দু'ভাগে ভাগ করেছেন ।
একক উপাদানে তৈরি মিষ্টি। এ ধরণের মিষ্টিতে গুড় বা চিনির সাথে আর কিছু মিশ্রিত থাকে না। যেমনঃ গুড় বা চিনির নাড়ু ও চাকতি, পাটালি, বাতাসা, খাজা, ছাঁচ ইত্যাদি।
দ্বিতীয় ধরণের মিষ্টিকে আরো দু' রকমে ভাগ করেছেন ।
গুড় বা চিনির সাথে দুগ্ধজাত উপকরণ ( ছানা , ক্ষীর) ছাড়া অন্য দ্রব্য সহযোগে তৈরিকৃত মিষ্টান্ন। যেমনঃ নারকেল, তিল এসবের নাড়ু, চিঁড়া, মুড়ি, খৈ-এর মোয়া ইত্যাদি।
দুগ্ধজাত দ্রব্যযোগে মিষ্টি । মানে চিনির বা গুঁড়ের সাথে ছানার মিশিয়ে তৈরি হয় সন্দেশ ও মন্ডা। আবার এই ছানা রসে মাখিয়ে তৈরি হয় রসগোল্লা, দুধে ডোবালে রসমালাই। বেসনের ছোট ছোট দানা ঘিয়ে ভেজে তৈরি হয় বুন্দিয়া, যা দেখতে ছোট বিন্দুর মতো। কড়া পাকে প্রস্তুতকৃত বুন্দিয়াই মতিচুর, লাড্ডুর কাঁচামাল। দুগ্ধজাত নানান ধরণের মিষ্টি রসিক ও মিষ্টিপ্রিয় বাঙালির কাছে প্রিয়। এবং জগৎ বিখ্যাত।
Saturday, 24 September 2022
মহালয়া কে কেন "শুভমহালয়া " বলা হয় না ???
আমার মতে মহালয়াকে পবিত্র শুভদিন বলা যেতে পারে ৷ এই দিন পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তির জন্য পবিত্র গঙ্গাজল দেওয়া হয়৷ তাই এটি একটি পূন্যতিথি৷ দেবীপক্ষের সূচণাও এই দিনেই হয়৷
আসলে আর্য ও অনার্য জনজাতীর মেলবন্ধনের একটা বড় উদাহরণ এটি ৷যার সাথে সম্পর্কযুক্ত পূর্বপুরুষ পূজা৷ যেটি পৃথিবীর বিভিন্ন জনজাতীর মধ্যে বিভিন্নরূপে লক্ষ্যণীয়৷ ১লা মাঘ মাসে সমগ্র সুন্দরবনের আদিম জনজাতীর মধ্যে তথা অস্র্টিক জনজাতীর মধ্যে পূর্বপুরুষ পূজার নিদর্শন দেখা যায়৷ যদিও বাস্তুপূজা হিসাবে ধরা হয় সেটিকে।৷
কৈলাস রহস্য
Friday, 23 September 2022
কলকাতার গিন্নী মা
কলকাতার গিন্নি মা কথা বলতে গেলে প্রথমে যে কথা মনে পরে সেটা হলো।শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব এই মন্দিরে আসতেন । ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ বলতেন, "ওরে এই মা সকলের মনবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। তোদের যা যা কামনা তাই তিনি পূর্ণ করতে পারেন।" যখন ব্রাহ্মসমাজের কেশবচন্দ্র সেন মরণাপন্ন অসুস্থ হয়েছিলেন । তখন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর রোগমুক্তির কামনায় এখানে মানত করেন। এবং তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।এই মন্দিরের দেবীকে ‘উত্তর কলকাতার গিন্নি’ বলতেন নাট্যসম্রাট গিরিশচন্দ্র ঘোষ।
লোক কথা অনুযায়ী ১৬০০ খ্রিস্টাব্দেরও আগে কুমোরটুলি অঞ্চলে হোগলা পাতার ছাউনির নীচে মা সিদ্বেশ্বরী কালী মূর্তিটি পুজো করতেন কালীবর তপস্বী নামে এক সন্ন্যাসী । তাই এই মূর্তির সঠিক প্রতিষ্ঠাকালের আজও হদিশ পাওয়া যায় নি । তবে ১৭৩০-৩২ মধ্যে কুমোরটুলির গোবিন্দরাম মিত্র মন্দিরটি তৈরি করেন বলে জানা যায়। এটি আগে নবরত্ন মন্দির ছিল। ১৮৪০ সালের ভূমিকম্পে তা ভেঙে যায়।
সাহেবরা মায়ের নাম দেন "ব্ল্যাক প্যাগোডা" ।
ব্ল্যাক প্যাগোডা আর গোবিন্দ রামের গল্পটা বলা দরকার। সাহেবরা বলতেন 'গোবিন্দরাম মিটারস প্যাগোডা'। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসিত বাংলাতে শ্রী গোবিন্দরাম মিত্র ছিলেন সরকারি ট্যাক্স কালেক্টর। ১৬৯৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা যখন সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের কাছ থেকে কলিকাতা, গোবিন্দপুর ও সুতানুটি, এই তিনটি গ্রাম কিনে নিয়ে তাদের নিজস্ব জমিদারি প্রতিষ্ঠা করে, তখন তারা কর আদায়ের জন্য ভারতীয় ডেপুটি ট্যাক্স কালেক্টর নিয়োগ করে শ্রী নন্দরাম সেনকে । শ্রী নন্দরাম সেন প্রথম ভারতীয় ডেপুটি ট্যাক্স কালেক্টর ছিলেন । তাঁর ঠিক পরেই কোম্পানি শ্রী গোবিন্দরাম মিত্র কে ট্যাক্স কালেক্টরের পদে নিয়োগ করে। ট্যাক্স কালেক্টর হিসাবে শ্রী গোবিন্দরাম মিত্র প্রচুর অর্থ উপার্জন করে ছিলেন । গোবিন্দ মিত্র বাবুর প্রাসাদসম বাড়ি ছিল কলকাতার কুমোরটুলি অঞ্চলে। এই বাড়িটি প্রায় ৫০ বিঘা জমি জুড়ে ছিল। এছাড়া নন্দন বাগান বলে অন্য একটি স্থানেও তার আর একটি প্রাসাদসম বাড়ি ছিল। তার বাড়িতে ধুমধাম করে দূর্গা পূজা হত। মা দূর্গার মূর্তিটি সোনা ও রুপার অলংকারে সুসজ্জিত ছিল। মন্দিরে প্রতিদিন প্রায় ৩৭ কেজির অন্নভোগ দান করা হত। প্রায় হাজার ব্রাহ্মন দূর্গা পূজার প্রতিদিন তার গৃহে অন্ন গ্রহণ করতেন ও দামি উপহার পেতেন। 'গোবিন্দরামের ছড়ি', এই প্রবাদ বাক্যটি গোবিন্দরাম মিত্রের সাথেই সম্পর্কিত। আগে বাংলায়, বিখ্যাত লোকেদের নিয়ে একটি ছড়া ছিল। সেটি হল-
"বনমালী সরকারের বাড়ি,
গোবিন্দরাম মিত্রের ছড়ি,
উমাচন্দের দাড়ি,
হুজুরীমালের টাকাকড়ি"।
শ্রী গোবিন্দরাম মিত্র নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি দেখাবার জন্যই, কলকাতার কুমোরটুলিতে গঙ্গার ধারে, এই সুবিশাল নবরত্ন কালী মন্দিরটি বানান ১৭২৫ খ্রিস্টাব্দে কেউ বলেন ১৭৩১ খ্রিস্টাব্দে। মন্দিরটি প্রায় ১৬৫ ফুট বা তার বেশী উঁচু ছিল। মন্দিরের চূড়ায় বসানো ছিল, গঙ্গায় চলা জাহাজের জন্য দিক নির্দেশক চিহ্ন। তবে গোবিন্দরাম, মন্দিরটিকে কখনোই সম্পূর্ন রূপে নির্মাণ করে যেতে পারেন নি। তার মৃত্যুর পরে, এই সুবিশাল মন্দির রক্ষণ করাও তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয় নি। পরে মন্দিরটির মূল চূড়া সমেত অংশটি ভেঙ্গে পড়ে যায়। ধীরে ধীরে ভগ্ন হয়ে যায় মন্দিরটি।
দেবী মূর্তি কালো মৃন্ময়ী। বিবস্ত্রা নন। বিশেষ লক্ষনীয় দেবীর দুই পা আগে পিছে না হয়ে পাশাপাশি। তবে দেবীর বাম পা মহাদেবের বুকে।এক হাতে খড়্গ ও এক কাটা নরমুন্ডু।
শোনা যায় কালীপুজোর রাতে আজও এখানে তন্ত্রোক্ত বিধিতে দেবীর পুজো হয়। ১৬০৪ সালে পর্যন্ত নাকি এখানে নরবলি হয়েছে। পরে এখানে পশুবলি হতো । কার্তিকী অমাবস্যা , বুদ্ধপূর্ণিমায় ফুলদোল এবং জ্যৈষ্ঠ মাসের ফলহারিণী কালীপুজো এখানে বড় করে পালিত হয়। রাজা নবকৃষ্ণ দেবের সময় থেকে আজো শোভাবাজার বাজার থেকে সব্জি আসে ভোগের জন্য। কালীপুজোর দিন সুধা ভোগের থাকে। এইভোগে থাকে খিচুড়ি, ভাজা, সাদাভাত, ডাল, নানা ধরনের তরকারি, ডালনা, মাছ, চাটনি পায়েস ইত্যাদি থাকে।
Tuesday, 20 September 2022
বিশ্ব কর্মা পূজা ও ঘুড়ি ওড়ানো
Friday, 16 September 2022
মা মনসার স্বরূপ
রান্না পূজা
অরন্ধন উৎসব বাঙালির একটা ঐতিহ্য।যদিও পশ্চিমবঙ্গে বছরে দু'বার 'অরন্ধন' উৎসব পালিত হয়। একবার মাঘ মাসে শ্রীপঞ্চমী তথা সরস্বতী পূজার পরের দিন শীতলষষ্ঠীতে। কোথাও কোথাও শিলনোড়া পূজা বলে। তবে রান্না পূজা বলতে আমরা ভাদ্র সংক্রান্তিতে মনসা পূজার দিনকে বুঝি ।মনসা পূজার অবিচ্ছেদ্য অংশই হল - 'অরন্ধন' উৎসব বা রান্না পূজা। তবে পশ্চিমবঙ্গের স্থানভেদে বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসব্যাপী যে কোন শনিবার বা মঙ্গলবারে এবং নাগপঞ্চমী হতে প্রতি পঞ্চমী তিথিতে মনসাদেবীর পূজা শুরু হয় এবং ভাদ্র সংক্রান্তিতে মনসাদেবী ও অষ্টনাগপূজা সমাপন ও ভাসান হয়। সেই উপলক্ষে সংক্রান্তি দিন পালিত হয় 'অরন্ধন'। যেহেতু ভাদ্র মাসের শেষ দিনে রান্না করা হয়তাই অরন্ধন উৎসবকে ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়ার উৎসব-ও বলা হয়।ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে মনসা পূজোর দিন অরন্ধন উৎসব পালিত হয় তাকে উনুন পূজো বলা হয় । এই দিন বাড়িতে উনুন জ্বালাবার নিয়ম নেই। তাই আগের দিন রান্না করে সেই বাসি খাবার খাওয়ার রীতি অরন্ধন উৎসবে।
পূজার ব্যবস্থা অনুযায়ী অরন্ধন দুই ধরনের রান্না দেখা যায়। ইচ্ছারান্না, ও ধরাটে রান্না বা আটাশে রান্না । ইচ্ছা রান্না - ভাদ্র মাসের মঙ্গলবার ও শনিবার রাতে এই রান্না পুজো হয়। যেহেতু নিজেদের ইচ্ছে মতো দিনে এই রান্না পুজো হয় তাই ইচ্ছে রান্না বলে। আর গাবড়া রান্না বা আঠাশে রান্না - দখনো বা দখিনারি দের বাড়িতে হয়ে থাকে ভাদ্র মাসের আঠাশ তারিখে এই রান্না পুজো হয় তাই একে আঠাশে রান্না।
বিশ্বকর্মা পূজার দিন পালিত হলে সেই অরন্ধনটিকে ‘বুড়োরান্না’ বলা হয়ে থাকে।রান্না করে পান্তা খাওয়ার রীতি আছে বলে অনেক জায়গায় একে পান্তা পুজোও বলে।
হেঁশেলের একস্থানে পরিষ্কার করে ফণিমনসা কিংবা শালুক গাছের ডাল সাজিয়ে মনসার ঘট সাজিয়ে বিশেষ পুজো করা হয়। বিশ্বকর্মা পুজোর (Vishwakarma Puja) আগের দিন প্রায় সারা রাত জুড়ে চলে রান্নাবান্নার চরম ব্যস্ততা সাথে।সারারাত ভোগরান্নার পরে সিঁধ বৃক্ষের বায়মনসা গাছের পাশে রান্নাপুজোর ভোগ রাখা হয়। মনসার ঘট বা পাঁচফণার ঘট পেতে মাটিতে গোবর ছড়া দিয়ে , কুলোয় পদ্মপাতা বা কলাপাতা বা পাথরের বা কাঁসার থালাতে সবরকম ভোগ সাজিয়ে দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। ঘরের উনুনেকেও এইদিন মনসা ডাল , শাপলা র মালা ও আল্পনা দিয়ে সাজানো হয় ও পুজো করা হয়।পুজোর জায়গায় চমৎকার আল্পনা দিয়ে ফুল সাজিয়ে দেওয়া হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি রাখির পাশাপাশি অরন্ধন উৎসব কেও জনপ্রিয় করে তোলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি রাখির পাশাপাশি অরন্ধন উৎসব কেও জনপ্রিয় করে তোলেন। আসলে যেটা হয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের বঙ্গভঙ্গ নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছিল ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর। আগে থেকেই আন্দোলনকারীরা ওই দিন ব্যাপক হরতাল ও জাতীয় শোক দিবস পালন করবেন ঠিক করে ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে প্রস্তাব রাখেন, ১৬ অক্টোবর কোনো বাড়িতে রান্নাবান্না হবে না। অরন্ধন এবং উপবাস পালন করা হবে বাংলা জুড়ে।
বর্ষা পর যেহেতু চারিদিকের নদী নালা জলে ভরে । এসময় গ্রাম বাংলায় বাড়িতে সাপের উপদ্রব বাড়ে যেতো। তাই অতীত কাল থেকে মা মনসাকে তুষ্ট করতে এই বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ বঙ্গের সব বাড়িতে মা মনসার মঞ্চ দেখা যায়।
তবে বাংলা আরো দুইটি রান্না পূজা দেখা যায়। ষষ্ঠীর দিন এই রান্না পুজো হয় তাই একে ষষ্ঠী রান্না , প্রচলিত আছে তাকে দূর্গা রান্না বলা হয়। যেটি দূর্গা পুজোর সময় হয়।
প্রায় সব রান্না পুজোতেই কমবেশি এক ধরনের রান্না হয়। যেহেতু পান্নার দিন বাসি খেতে হয় তাই মূলত ভাজা বেশী হয়। তাহলে দেখা যাক কি কি রান্না করা হয়।