ব্যারাকপুর অন্নপূর্ণা মন্দিরের কথা বলছি । বারাকপুরে গঙ্গার তীরে অবস্থিত এই মন্দিরের দেখতে একদম দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের মতো। দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণীর মন্দিরের একেবারে অবিকল ছাঁচে তৈরি এই মন্দিরের পিছন দিয়ে বয়ে চলেছে হুগলী নদী। তবে ব্যারাকপুরের আগের নাম ছিল চানক। আমার মতে অন্নদামঙ্গল কাব্যে বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক কাব্য। বাংলায় অন্নপূর্ণা পুজোর বেশ জনপ্রিয়। জনশ্রুতি অনুযায়ী বাংলায় অন্নপূর্ণা পুজোর প্রচলন করেন নদিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদার । পরে কালে কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় অন্নপূর্ণা পুজো। তবে, বাংলায় অন্নপূর্ণার মন্দির বিরল তাই ব্যারাকপুরের অন্নপূর্ণা মন্দির একটা গুরুত্ব অনেক খানি। তবে এই মন্দির নির্মাণ নিয়ে কয়েকটি লোককথা আছে।
মথুর মোহন বিশ্বাস এই মন্দির তৈরী শুরু করে ১৮৭০ সালে এবং আনুমানিক ৫ বছর পর ১২ই এপ্রিল ১৮৭৫সালে এই মন্দিরের উদ্বোধন করেন ।মথুর মোহন বিশ্বাস কে । ইনি হলে রাণী রাসমণির কনিষ্ঠা কন্যা জগদম্বার স্বামী । মথুর মোহন বিশ্বাস ও জগদম্বা এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা।এখানে অষ্টধাতুর অন্নপূর্ণা দেবী ও রূপোর মহাদেব অধিষ্ঠিত আছেন। মন্দিরের পিছনের দিক একটি গঙ্গার ঘাটে আছে যা স্থানীয়দের কাছে রাসমণি ঘাট নামে পরিচিত।
কথিত আছে । রানি রাসমণি প্রয়াত হয়েছেন, তখন ,শ্রী রামকৃষ্ণ দেব নিয়ে মথুরামোহন কাশী দর্শন করতে গেছেন ।। কাশীর ঘাটে মথুরামোহন বসে, দেবী অন্নপূর্ণা দর্শন পেলেন । তাঁকে দেবী অন্নপূর্ণা ভাগীরথীর তীরে তাঁর মন্দির নির্মাণ করার আদেশ দিলেন।
মথুরামোহন কলকাতা ফেরার পর শুরু করলেন জমির খোঁজ করছে। কোনো জমিই হয় না। অবশেষে মনমতো জমি পেলেন ব্যারাকপুরে। মথুরামোহন মৃত্যুর পরে রানিমার কনিষ্ঠা কন্যা জগদম্বা দেবী উদ্যোগে, পুত্র দ্বারিকানাথের তত্ত্বাবধানে মন্দির নির্মাণ শেষ হয় । রামকৃষ্ণ দেব এসেছিলেন, মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটনে ।
তবে আরো একটি কাহিনী আছে। বলা হয় রাসমনি স্বপ্নাদেশ পেয়ে কাশীযাত্রা বন্ধ করেন ও মা ভবতারিণীর মন্দির তৈরী করেন। অনুরূপভাবে নাকি নৌকা করে গঙ্গার জগদম্বা দেবীও ওপর দিয়ে কাশীযাত্রার সময়
চানক গ্রামের কাছে মা অন্নপূর্ণার স্বপ্নাদেশ পান " আর কাশী যাওয়ার দরকার নেই এখানেই আমায় প্রতিষ্ঠা কর।"
পঙ্খের কাজ যুক্ত ন’টি চূড়াবিশিষ্ট নবরত্ন অন্নপূর্ণা মন্দিরের , সাথে ছ’টি আটচালার শিবমন্দির, দু’টি নহবতখানা, নাটমন্দির, ভোগের ঘর, গঙ্গায় স্নানঘাট ইত্যাদি তৈরি হয়েছিল। তবে এই নির্মাণ নিয়ে একটিলোক কথা প্রচলিত আছে। এই অন্নপূর্ণা মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে ছ’টি শিবমন্দির –কৈলাসেশ্বর, কাম্বেশ্বর, কল্যাণেশ্বর, , , কেদারেশ্বর,কিন্নরেশ্বর ও কপিলেশ্বর। জগদম্বা দেবী মন্দিরপ্রাঙ্গণে চেয়েছিলেন দক্ষিণেশ্বরের মতোই বারোটি শিবমন্দিরই তৈরি করতে । এমন সময় তিনি স্বপ্নাদেশ পান । তাতে তাঁকে বলা হয় তিনি যেন তাঁর মা লোকমাতা রাসমণি অতুলনীয় কীর্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই মন্দির নির্মাণ না করেন। তাই তিনি ছ’টি শিব মন্দির তৈরি করেছিলেন।
তবে এই মন্দির নিয়ে বিবাদ হয়েছিল ব্রিটিশ শাসকের সাথেও । তোরণদ্বারের ওপর স্থাপিত রয়েছে এক সিংহমূর্তি। কথিত আছে, এই সিংহমূর্তি ব্রিটিশ শাসকরা সরিয়ে নেওয়ার জন্য নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করেছিল। কারণ ব্রিটিশদের দাবি ছিল, সিংহ তাদের রাজশক্তির প্রতীক। কিন্তু পরে তা সরানো হয় নি।
ব্যারাকপুর ষ্টেশনে নেমে টোটো করে, একদম মন্দিরের সামনে চলে যাওয়া যায়। কাছেই আছে দর্শনীয় স্থান গান্ধীঘাট, জহর কুঞ্জ।
সময় সূচী-সকাল ৫টা থেকে দুপুর ১ঃ৩০টা।
বিকাল -৪টা থেকে রাত্রি ৮টা।
No comments:
Post a Comment