ভেল উৎসব কি? বাংলায় কোথায় ভেল উৎসব হয়??
হুগলি জেলার ব্যান্ডেলে ’ খুব জনপ্রিয়।হুগলি জেলার ‘ভেল উৎসব" শতাব্দী প্রাচীন । ভেল উৎসব মেলা প্রতিবছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অর্থাৎ বাংলা নববর্ষের ৯ থেকে ১০ দিন আগে হয়। পশ্চিম বাংলার একমাত্র ব্যান্ডেলেই এই উৎসব হয়। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে , পার্বতী তাঁর পুত্র মুুরুগানকে বা কার্তিককে একটি ভেল দিয়ে ছিলেন। মুুরুগান এই শূল জাতীয় অস্ত্র দিয়ে দুষ্ট আত্মা সুরপদ্যমানকে পরাজিত করেন। মুরুগান ও সুরপদ্যমান এর যুদ্ধে, সুরপদ্যমানের সমস্ত মন্দের বাহিনীকে চূর্ণ করার জন্য মুরুগান এই ভেল ব্যবহার করেছিলেন।
এই "ভেল ভেল" উৎসব আসলে, তামিল জনগোষ্ঠীর একটি বাৎসরিক উৎসব।দক্ষিন ভারতের মুুরুগানের বা কার্তিকর মন্দিরগুলিতে এই উৎসব বিশেষ ভাবে পালিত হতে দেখা যায়।তামিলদের রাজরাজারা প্রাচীনকালে ভেল যুদ্ধে ব্যবহৃত করতেন। ভেল অস্ত্র আসলে বর্শা কিংবা শূলকে বলা হত।প্রাচীনকালে তামিলদের রাজরাজারা যুদ্ধে জিতেই এই ভেল ভেল বলে চিৎকার বা রণহুংকার দিতো।এই ভেলকে কেন্দ্র করেই এই উৎসব বলে একে ভেল বা ভেল ভেল উৎসব বলে।।
ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি মেনে প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তির আগে ব্যান্ডেলে এই উৎসব হয়।হুগলির ভক্তরা ভগবান শ্রী মুথু মারিয়ামমা বা মাতা ওলাইচন্ডী বা মা শীতলার পবিত্র অনুগ্রহ বা আশির্বাদ অর্জনের জন্য এই উৎসব পালন করেন। আনুষ্ঠানিক বলিদান এবং অর্ঘ্য দেন । ব্যান্ডেলের ওলাইচণ্ডী মন্দিরে সকাল থেকেই ভক্তদের ভিড় । এই স্থানীয় এলাকার মানুষ মিছিল বা দল গঠন করে ওলাইচন্ডিতলায়, নিজস্ব শৈলীতে সজ্জিত রথ নিয়ে তাদের দেবতাকে নিয়ে জড়ো হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের চড়ক বা গাজনের মতো এই ভেল উৎসব।
কেউ কেউ বলেছেন ব্যান্ডেল, নামটি “বান্দার” শব্দ থেকে এসেছে একথা ঠিক নয়। পর্তুগিজ ভাষায় ব্যান্ডেল শব্দের অর্থ হল, জাহাজের মাস্তুল। আসলে একটি মাস্তুল উপহার হিসেবে দেওয়া হয় চার্চে তাই থেকে এই নামকরন। পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিলো এখানে।ফলে তামিল জনগোষ্ঠীর অনেকেই হুগলি জেলার ব্যান্ডেলে বসবাস করেন। এই তামিল জনগোষ্ঠীর লোক জন বহু বছর আগে বাংলাতেও এই "ভেল ভেল"উৎসব শুরু করেন। এই ভেল উৎসবে প্রতিটি দলে প্রায় এক বা একাধিক লোক থাকে যারা মূল ভক্ত হিসাবে কাজ করেন। প্রথমে তারা ওলাইচণ্ডী তলার একটি পুকুরে স্নান করে এর পর ভক্তদের ওপর দেবতা বা ইত্যাদির অধিষ্ঠান হয়, যাকে বলা হয় ‘ভর’ ।
এরপর তাঁদের নিয়ে আসা হয় ওলাইচণ্ডী মন্দিরে। ওলাইচন্ডীমাতা মন্দিরে আশীর্বাদ গ্রহণকারে প্রধান ভক্ত অন্যান্য দলের সদস্যদের সাথে নিয়ে শোভাযাত্রার শুরু করেন। এরা মুখ দিয়ে বর্শা বিদ্ধ করে, শুধু তাই নয়, সেখানে তাঁরা তাঁদের জিভ, কপালে, শূল বিদ্ধ করা হয়। বঁড়শি গাঁথা হয় পিঠে, বুকে, বঁড়শির নীচে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন সামগ্রী।আবার কেউ কেউ তাদের পিঠের মাংসের সাথে হুক রথের দড়ি আটকে , রথকে টানতে থাকে।এই রথে তাদের দেবতা বসিয়ে তারা এলাকা পরিক্রমা করায় । বাংলার গাজন উৎসবের মত ভক্তরা নিজেদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে যন্ত্রণা দিয়ে , কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ইষ্ট দেবতাকে তৃপ্ত করার চেষ্টা করেন আশির্বাদ আশায়।
ওলাইচন্ডী তালায় সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে, শোভাযাত্রার দল , বালিকাটা শীতলা মন্দির দিকে যাত্রা করে।এই যাত্রাপথের দূরত্ব 3 কিলোমিটারেরও বেশি।এই যাত্রাপথে অনেক মানুষ তাঁদের পায়ে জল দেন। শোভাযাত্রায় অবিরাম বলে চলা হয় ভেল ভেল। এবং মাটিতে শুইয়ে দেন তাদের শিশুদের ভক্তদের পদধূলি নেওয়ার জন্য।
No comments:
Post a Comment