Sunday, 9 April 2023

রাঢ়েশ্বর শিবমন্দির

জানেন কি কোন পুকুরে শিব ঠাকুর রোজ স্নান করতে আসতেন??

বাংলা বুকে সেখানে আজো আছে মন্দির। এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করে সুস্থ হয়েছিল রাজার কঠিন অসুখ। ইতিহাস বলে সম্রাট বল্লাল সেন রাঢ়েশ্বর শিবমন্দির দ্বাদশ শতাব্দীতে তৈরি করেন । শাক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে বলা হতো মহাদেবের বরপুত্র।কথিত আছে গৌড়েশ্বর বল্লাল সেন প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে ছিলেন এক সময়। । এই অসুস্থ অবস্থাতেই একদিন রাতে বল্লাল সেন মহাদেব স্বপ্নাদেশে পেলেন - "আমি কালদিঘির পাশে বর্তমান, প্রতিষ্ঠা করো আমাকে ঐ কালদিঘির পাশেই"। এরপর তিনি অলৌকিক ভাবে সুস্থ হয়ে জান।

তবে এই মন্দিরের কোন প্রতিষ্ঠা ফলক না থাকায় আরো একটি কাহিনী প্রচলিত আছে।এই অঞ্চলেটি আসলে আগে রাঢ়াপুরী নামে একটি রাজ্য ছিল। ঈশান ঘোষ বা ইছাই ঘোষের প্রপিতামহ ধূর্ত ঘোষ এই রাঢ়াপুরীর রাজা ছিলেন। পরিচিত ছিলেন রাঢ়াধীপ নামে। তিনিই রাঢ়াপুরীতে এই শিব মন্দিরটি নির্মাণ করেন। সেই হিসেবে এই মন্দিরটির বর্তমান বয়স হবে হাজার বছর।
লোক বিশ্বাস প্রতিদিন মহাদেব কালদিঘিতে স্নান করতে আসতেন। তবে বল্লাল সেন স্বপ্নদেশ অনুযায়ী এখানেই 'রাঢ়েশ্বর শিবমন্দির' তৈরি করেছেন এটা জনপ্রিয় তত্ত্ব।মন্দিরটির বেলে ও ঝামা পাথর দিয়ে তৈরি । পূর্বভারতের পাথর দিয়ে মন্দিরের মধ্যে এর কারুকার্য জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করে।। পাল আমলে প্রচলিত দেউল স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। গৌড়ীয় স্থাপত্য রীতিতে পীরা দেউল নিদর্শন ।

দুর্গাপুরের রাঢ় গ্রামই ছিল বল্লাল সেন রাজধানী। লোকমুখে রূপান্তরিত হয়ে আড়া নামে পরিচিত হয়। বল্লাল সেন ছিলেন সমগ্র রাঢ়ের অধিপতি । তিনি নিজ রাজধানী রাঢ় অর্থাৎ বর্তমানের আড়ায় শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। রাঢ দেশে মন্দির প্রতিষ্ঠা হওয়ায় নাম দেওয়া হয় রাঢ়েশ্বর শিব মন্দির।
বর্ধমান জেলার Steel City of India দুর্গাপুরের কাঁকসা থানার অন্তর্গত আড়া গ্রামে অবস্থিত এই 'রাঢ়েশ্বর শিবমন্দির'। প্রায় ৮০০ বছর প্রাচীন ও ভারত সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের অন্তর্গত ASI দ্বারা সংরক্ষিত এই মন্দির ।

মূল মন্দিরের গর্ভগৃহের পরিসরের স্বল্প । তবে ভিতরে আছে বিশালাকার গ্রানাইট পাথরের শিবলিঙ্গ। পিনাক বা শিবের ধনুক আছে। প্রতিদিন সকালে এখানে মহাদেবের রুদ্রাভিষেক' শৃঙ্গার হয় ১১ টায় । এরপর হয় পুজো ও আরতি। তার আগে পর্যন্ত গর্ভগৃহের গেট বন্ধ থাকে। প্রতি সোমবার এখানে ভোগের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতেও ভোগের আয়োজন থাকে। এছাড়াও মানত সম্পূর্ণ হলেও ভক্তরা ভোগ দেন। এখানে বসে বিশাল মেলা মাকুরি সপ্তমীতে । বৈশাখ মাস ও শ্রাবণ মাসের প্রতি দিনই থাকে ভীষণ ভীড়। মন্দিরের ডান পাশে অবস্থিত মানতবৃক্ষে ভক্তরা মানত করে ঢিল বাঁধে।
মন্দিরের বাইরে রয়েছে বিশাল চত্বর। রয়েছে অনেক বড় বড় গাছ যাদের নিচে বাঁধানো বসার জায়গা। চোখে পড়লো কয়েকটি সাম্প্রতিক কালে নির্মিত মন্ডপও।ষ স্থানীয় বিশ্বাসে জাগ্রত এই রাড়েশ্বর শিবমন্দির প্রাঙ্গনে বসে চৈত্র মাসে গাজনের মেলা, শ্রাবন মাসের প্রতি সোমবার ভক্তেরা আসেন শিবের মাথায় জল ঢালতে আর শিবরাত্রিতে ঘটে বিশাল ভক্ত সমাগম।

বেন কিভাবে::-
দুর্গাপুর স্টেশন, সেখান থেকে জয়দেবগামী বাসে আড়া শিব মন্দির। অথবা দুর্গাপুরের মুচিপাড়া বাসস্ট্যান্ড, সেখান থেকে টোটো, ট্রাকার বা বাসে আড়া শিব মন্দির

No comments:

Post a Comment