Friday, 28 January 2022

মেচা সন্দেশ

  মেচা সন্দেশ  পাওয়া যায়বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রামে । লোকজন বলে মেচা খেলে নাকি একটার বেশি খাওয়া যায় না কারণ এতে নাকি গলা গজগজ করে। বেলিয়াতোড়ের বাজারে একটি দোকান থেকে গাওয়া ঘি দিয়ে বানানো মেচা ধারণা বদলে যাবে। বেলিয়াতোড়ে গেলে মেচা কিনতে ভুল বেন না।বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় ছাড়াও  শালতোড়াতে বিখ্যাত মেচা ।মেচা সন্দেশ তৈরি করছে এবং এমনকি একটি খুব রক্ষণশীল হিসাব বলছে, এটি 200 বছরেরও বেশি পুরনো।
বেসন গাঠিয়ায় ভেজে  গুঁড়ো করে। তারপর ক্ষীর ও চিনি দিয়ে গলদা করে রান্না করা হয়। পিণ্ডটি ঘি এবং সবুজ এলাচ দিয়ে লাড্ডুতে তৈরি করে। লাড্ডু চিনির সিরাপে ডুবিয়ে শুকনো করে, মেচা সন্দেশ খাওয়ার জন্য প্রস্তুত।

জাঁতাল উৎসব

সুন্দর বনের রাজা দক্ষিণেশ্বর।


বাবা দক্ষিণরায় বাবার আবির্ভাব দিবস,১ মাঘ।  ৺জাতাল উৎসব, বাবা এই দিন কল্পতুরু হন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ধপধপি দক্ষিনেশ্বর মন্দির  অনেক এর মতে ৩৫০ বছরের পুরানো ।ধপধপিতে


দক্ষিনেশ্বর মন্দিরটি স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাজেন্দ্রনাথ


চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেন করেন । এখানে লক্ষণীয় সেগুন কাঠের


তৈরী বিগ্রহের সিংহাসনটি প্রায় ১২ - ১৪ ফুট


লম্বা এবং ৫ - ৬ ফুট চওড়া। সিংহাসনের উপর


অধিষ্ঠিত বিগ্রহের উচ্চতা প্রায় ৯ থেকে ১০ ফুট।


.


সহজেই ধপধপি স্টেশন থেকে ভ্যান যোগে ১০-১৫


মিনিটের পথ পর মন্দির টি,  আবার বারুইপুর স্টেশন


থেকেও অটোরিক্সা বা ম্যাজিক


গাড়িতে ধপধপি দক্ষিনেশ্বর মন্দির যাওয়া যায়।

প্রায় ৪০০ বছর আগের কথা ,তখন বারুইপুরের জমিদার ছিলেন মদনমোহন রায়চৌধুরী দেখলেন বারুইপুরের অদূরে বেশ কিছুটা এলাকা জঙ্গল হয়ে পড়ে রয়েছে। যেখান থেকে কোনও রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। তাই তিনি ওই এলাকার জঙ্গল সাফ করার মাধ্যমে ধবধবে পরিষ্কার করে ছিলেন। তাই এই জায়গার নাম ধপধপি।এই জঙ্গল সাফ করার কাজ ধীরে ধীরে এগচ্ছিল। এক জায়গাতে এসেই জমিদারের কর্মীরা বাধার সম্মুখীন হলেন। দেখা গেল, একটা উঁচু পাথরের চারপাশে কাঁটা জাতীয় গাছে বোলতা-ভীমরুল-মৌমাছি বিরাট সব চাক বেঁধে রেখেছে। সেখানে ঢোকাই যাচ্ছে না। কিন্তু স্থানীয় মানুষজনের কোনও অসুবিধা হয় না। জমিদারের বাহিনী যতই আগুন জ্বালিয়ে  চাকগুলিকে নষ্ট করা গেলো না । এক তরুণ গাছেকোপ মারে। অলৌকিক কাহিনির শুরু তখন, গাছের গা থেকে রসের বদলে বেরিয়ে আসে রক্ত। আর সেই তরুণ  মৃত্যুর  হয়।  রাতে জমিদার স্বপ্নে এলেন বাঘের রাজা। তিনি জমিদারকে নির্দেশ দিলেন, "আমার নাম দক্ষিণরায়। আমি এখানেই থাকি। আমাকে প্রতিষ্ঠা করো। "তারপর পয়লা মাঘ মন্দির প্রতিষ্ঠা করে শুরু হল লোকদেবতা দক্ষিণরায়ের পুজো। যে দিনটি আজও জাঁতাল উত্সব হিসেবে পালন হয়ে আসছে।


গোচরন একটা ঐতিহ্য কথা না বলেই নয়। এই অঞ্চলের বনবিবি , ও সত্ নারায়ণ বা কেওড়া দের মেলা র কথা আমি আপনাদের আগেই বলেছি। কিন্তু বলা হয়নি একটা বিশেষ উৎসবের কথা।বারুইপুর জয়নগর সদর রাস্তায় বেলে চণ্ডীর বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে খাকুড়দহ হাট। সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার গ্রামের অলিগলি । এখানে একটা মাঠ মন্দির আছে হঠাৎ এর কথায় আসার কারণ কি বলবেন।১ মাঘ জাঁতাল উৎসবের কথা সবাই জানেন। বনবিবির প্রভাব মুক্ত তখন সুন্দর বন। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি লৌকিক সংস্কৃতি বিশ্বাস কোন মেন স্টিম ধর্ম এর সাথে মেলে না। পুরান , বেদ , উপনিষদ, বাইবেল হোক কোরান কিংবা হদিস মতো উপধর্ম গ্রন্থেও এর উল্লেখযোগ্য থাকে না। বনবিবি তাৎপর্যপূর্ণ এখানেই বঙ্গ ভুমিতে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষরা হিন্দু বামুন সম্প্রদায়ের কাছে থেকে বিভিন্ন ভাবে অপমানিত হতেন। গাজীরা বা ধর্ম যোদ্ধারা এই সুযোগে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন এই অঞ্চলে। কিন্তু বহিরাগত এই নতুন সংস্কৃতিকে আপনার করতে এদের সময় লাগে ছিলো। মূর্তি পূজা কিংবা এক কথায় দৈনন্দিন যে কোন সমস্যায়  তাদের দেবদেবী পাশে থাকার প্রভাব ভুলে যেতে পারছিলো না তাঁরা। অথচ দৈনন্দিন জীবনকথা ভুলে নিয়ম নিষ্ঠা মেনে প্রার্থনা করে মূত্যু পরে ৭২ হুর পাবার স্বপ্ন দেখানো ইসলামকে তাঁরা আপনার করতে পারছিলো না। লক্ষ্মী, গোপাল কিংবা দূর্গা পূজা করা বাঙালি র দেবদেবী ছিলো তাদের ঘরে ছেলে মেয়ে মতো, তাদের সুখ দুঃখের সাথী।


বনবিবির ও দক্ষিণ রায় লড়াই আসলে সেই মানসিক দ্বন্দ লড়াই। এবং এই ভাবেই নিম্ন শ্রেণীর হিন্দু ও  মুসলিম সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি র মিলনের ফল হলো বনবিবি। অবাক করার বিষয় এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মহিলাদের সম্মান করে দেবীর স্থান  প্রদান  করেছে। কিন্তু মুসলিম ধর্মীয় সংস্কার মেয়েদের অতোটা গুরুত্বদেয়নি। তাই বনবিবি সাথে কিন্তু দক্ষিণ রায় লড়াই কখনো হয়নি। দক্ষিণ রায়ের মা নারায়নী লড়াই করতে যান এখানে। কিন্তু তাঁরা হয়ে গেলেন সই।


যাইহোক সেই সব গল্প। দক্ষিণ রায়ের একাই রাজা সুন্দরবনের বনবিবি আসার আগে। তাই দক্ষিণ রায় আবির্ভাব দিবস ১মাঘ দক্ষিণ এর সব গ্রামেই প্রচলিত ছিলো। দক্ষিণ রায় আসলে সুন্দর বনের বাঘ নৈবেদ্য তাঁর রান্না করা খাশির মাংস, শোল মাছের মত আমিস খাবার হওয়াই স্বাভাবিক।কিন্তু এই গ্রাম এই জাঁতাল উৎসবের অন্য রিতি। এই মঠ মন্দির থেকে । এই গ্রামের আর  সাতটি মন্দিরে পাঠানো হয় ফলপ্রসাদ। অর্থাৎ বৈষ্ণব প্রভাবিত হয়ে যাচ্ছে লোক সংস্কৃতি। তবে দক্ষিণ রায়, নারায়নী , বারা মুর্তি , নামে বাস্তূ পূজাতে নিরামীষ নৈবেদ্য দেওয়ার নিদর্শন পাওয়া যায়, এরকম কথা   জানান কয়েক জন পর্যবেক্ষক।


এবার জাঁতাল পুজো নিয়ে  আমার বন্ধু প্রিয় সারদা  একটা নতুন দিক দেখায়।নাম জাঁতাল শব্দটা এসেছে জাঁতার থেকে । আগেকার সময় ধান ,গম বা ওই জাতীয় শস্য ভাঙ্গাতে একমাত্র জাঁতার ব্যবহার হতো । যেহেতু পয়লা মাঘে নতুন ধান ঘরে আসার উৎসব হয় যা হিন্দু বাঙালি দের কাছে বিশেষ দিন । বাংলার ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসব কিন্তু হয় অন্য নামে  । আর শুধু ধান বা গমের খোসা নয় সেগুলোকে পিসে গুঁড়োও করতে জাঁতাই ব্যবহার হতো । আর পয়লা মাঘ আমরা তো জানিই পিঠেপুলি উৎসবের দিন । আপামর বাঙালির কাছে পয়লা মাঘ মানেই চালের গুঁড়ো আর তাই দিয়ে বানানো পিঠেপুলি । আর ওই চাল এবং তার গুঁড়ো আসে জাঁতার সাহায্যেই তাই এখনও গ্রাম বাংলায় সেই রীতিকে সম্মান করে জাঁতাকে পুজো করা হয় তার সাথে ঢেঁকি, মই, গোলা এমন সবকিছুরই পুজো করা হয় যা ধান থেকে চাল  হতে সাহায্য করে । তবে আসলে জাঁতা দেখতে অনেকটা শিব ও শক্তির লিঙ্গ রূপ মানে শিবলিঙ্গের মত তাই পয়লা মাঘে শিব ও শক্তির যে সমস্ত মন্দির আছে সেখানে পুজো দেওয়া হয় ।


গোচরনের ঐ  গ্রামের বাড়িতে তবে শিব মন্দিরে ঐ দিন পুজোর সকলে দক্ষিণেশ্বর ও শিবের  ঠাকুরের পুজো হয় ,তারপর আবার নতুন ও শুদ্ধ পুজো সামগ্রী নিয়ে এই গ্রামে প্রতিষ্ঠিত আরো 6 টি মন্দিরে পুজো হয় ,তার মধ্যে সব কটিই দক্ষিণেশ্বর,শিব ও কালী মন্দির । আর প্রত্যেক মন্দিরে পুজো হওয়ার পর আবা দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ফিরে নতুন সামগ্রী নিয়ে পুনরায় অন্যান্য মন্দিরে যাওয়া হয় ।


জাতাল আসলে দক্ষিণেশ্বরের আর এক নাম । জাঁতার সাথে যে প্রতীকি আমার চোখে পড়ছে তার সাথে শিব ও শক্তির মিল পাওয়া যায়  কিনা জানিনা না ? তবে ধর্ম বিশ্বাস কে আঘাত না দিয়ে বলি, শিব লিঙ্গ দেখে এবং পার্বতীর  শাকম্ভরী রূপ নিয়ে যে গল্প শুনি তাতে আমার ধরানা, শিব ও  পার্বতী আসলে  কৃষি কাজ ব্যবস্থা থেকে ই সৃষ্টি। লিঙ্গ আসলে লাঙ্গল , অতীতে তে পাথর দিয়ে কৃষি কাজ করা হয়েছিল সেই গুলো পুজিত হয়েছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের দ্বারা পরে তা লিঙ্গের রূপ নেয়। আর মা অন্নপূর্ণা বা শাকম্ভরী বা পার্বতী হলো কৃষি ভুমি।


জয়নগর মজিলপুরে দেবী ধ্বন্বন্তরী কালী পুজো উপলক্ষে মেলা বসে।বীজতলায় অঙ্কুরোদ্গম হয়ে তখন তা মাঠে রোপণ করতে হবে। আষাঢ়ের মাঝামাঝি অম্বাবতীর ঠিক পরেই হয় ‘জাঁতাল’ পুজো। গরাম থানে গ্রাম দেবতার পুজো হয়।বীজতলায় অঙ্কুরোদ্গম হয়ে তখন তা মাঠে রোপণ করতে হবে। আষাঢ়ের মাঝামাঝি অম্বাবতীর ঠিক পরেই হয় ‘জাঁতাল’ পুজো। গরাম থানে গ্রাম দেবতার পুজো হয়।

বৌ পুতুল

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বারুইপুরের শিখরবালি গ্রাম, বিখ্যাত মৃৎশিল্পী মহিতপালের বাড়ি।কথায় বলে " মাটি টাকা , টাকা মাটি, " কিন্তু মৃৎশিল্প আজ মুল্য পায় না।    বারুইপুর, কাছে শাশন  নাম শুনেছেন। সেখানের কাছে ,  শিখরবালি, পালপাড়া আমাদের গন্তব্য। পথে বহু বাড়ি চোখে পরবে  যেখানে মাটির টব, মালসা, হাড়ি, প্রদীপ স্টেন্ড, ঘট, তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আমার খোঁজ বৌ পুতুল।ছাঁচ তৈরি হয় কিছু পুতুল,  তবে কিছু  পুতুলগুলি হাতে টিপে টিপে ও তৈরি, তবে আগুনে পুরিয়ে পরে রঙিন করে করা হয়। পুতুলগুলি নির্মানে গ্রামীণ ছোঁয়া আছে। 
Sagar Chattopadhyay স্যারের বইতে উল্লেখ শিখরবালি গ্রাম নাম ধর্মমঙ্গলের পুঁথিতে শিহরবালি বলে উল্লেখ ছিল লেখকের গ্রাম্য ভনিতাতে৷ 

এখন তাঁরা গ্রামের নাম শিকারবালিও বলছেন৷ 
গ্রামের নালতের হাঁট গায়েন পাড়ায় পাশাপাশি তিনটি আটচালা পরিতক্ত মন্দির বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ৷ গ্রামটিতে পালেদের বহুপত্রাকার খিলানসহ দুর্গাদালান এখন আর নেই ৷ আছে বিশশতকের প্রথমে তৈরী ব্যতিক্রমী শীতলা মন্দির 
বারুইপুর কাছে,শিখরবালি পালপাড়ায়  এখানে তৈরি হতো আগে, ঘরে ঘরে।আজ তা হয় মাত্র দুই টি ঘরে। শিয়ালদহ থেকে লক্ষীকান্তপুর ডাউন লোকাল ধরে বারুইপুরের পরের স্টেশন শাসন৷  সাইকেল ভ্যান ও অটো করে শিখরবালি গ্রামে গ্রামের পালেদের শীতলামন্দিরের সামনে নেমে উল্টো দিকে  পাড়াতুতো রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে  স্থানীয় মানুষ দেখিয়ে দেবে বাড়ির টা।এলাকায় এখানে প্রায় সব বাড়িতে মাটির জিনিস পত্রের তৈরি হয়।  আগে কম বেশি সব পালপরিবারের মহিলা রা, বৌপুতুল এবং পুতুল বানানোর সাথে যুক্তছিল৷ এখন যদিও দুইটি ঘর পুতুল বানায়। এক দিদা, আর বয়স্ক স্বামী-স্ত্রী তারা অবশ্য এখন অসুস্থ্য। গ্রামে আর কেউ এই বউপুতুল বানায় না৷
 তাই হয়তো মাটির পুতুলগুলি দ্রুত হারিয়ে যাবে। শিল্পীরা অর্থনৈতিক কারনে, বাজারের অভাবে, অপ্রকাশ্যে বিক্রেতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে শিল্প। 
কারণ গ্রামীণ। মেলা গুলো একমাত্র  নির্ভর  করে থাকে এরা।তাই শুধু ডাসা পিয়ারা জন্য নয় , মৃৎশিল্প জন্য একটা প্রচারের আলোয় আসা উচিত শিয়ার বালীকে।

আবার শিখর বালির কথা বলতে ই হয়।১৭০০ খ্রীষ্টাব্দে বারুইপুরের শিখরবালি গ্রাম কথা শোনা যায়। জগাদি ঘাটায় নদীর দুপাশে ঘনবন জঙ্গল  পরিষ্কার করে গড়ে উঠেছিল জনবসতি ধনবেড়িয়া গ্রাম। এলাকায় বার বার মহামারী  হয়ে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয় ।আশে পাশের অনেক গ্রাম মানুষ শূন্য হয়ে যায়। ডাক্তার বৈদ্য কোথায় তখন ।মহামারী রোগকলেরা,হাম,বসন্ত,সাপের কামড়ে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে সেই সময় গ্রামের মোড়ল মাতব্বররা ঠিক দেবদেবীকে সন্তুষ্ট করে পূজো দিলেই এমন সব বিপদের হাত থেকে নিস্তার মিলবে। ২০০ বছর আগে গ্রামবাসীরা  এলাকার মোড়লরা মাতব্বরদের নিয়ে জগাদিঘাটায় 
জঙ্গল লাগোয়া নদীর তীরে একটি বট ও অশ্বথ গাছের নীচে পুরাতন  সুন্দরবনে প্রাচীন লৌকিক দেবদেবী প্রকৃতির  ‘মা শীতলা’  পূজা শুরু করেন। সাথে সুন্দরবনের  বাদাবনের লৌকিক দেবদেবী ‘ঘন্টাকর্ণ’(শীতলার স্বামী),‘জরাপাত্র ও বসন্ত’(শীতলার দুই পুত্র), ‘রক্ত প্রতীম’(শীতলার দাসী, ‘মনসা’ ,‘বনবিবি’ , ‘সজঙ্গুলি’ , ‘পদ্মাবতী’ , ‘পঞ্চানন’ , ‘দূর্বাবতী’ ,  ‘কালী’ সহ  দেবদেবীরা পুজো পাওয়া শুরু করলেন।উল্লেখ্য ফকির সম্প্রদায়ের এই জগাদি ঘাটে বনবিবি পূজা করে থাকেন  । নিয়ম অনুযায়ী এই পুজোর দিনে এলাকার প্রতিটি পরিবারে অরন্ধন পালিত হয়।
ঐতিহাসিক জগাদিঘাট  থাকলেও প্রবাহমান নদী মজে গিয়েছে।তবে প্রাচীন সেই বটবৃক্ষ আজও প্ দাঁড়িয়ে আছে। এমানুষজন নানান সমস্যা,বিপদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রাচীন বট গাছে আজও মানত করে কাপড়ের গীট(আঞ্চলিক ভাষায় “মুদো”) বেঁধে আসেন। উদ্ধার হলেই পুনরায় সেই কাপড়ের গীট খুলে যাঁকজমক ভাবে পুজো দিয়ে থাকেন।
যাইহোক আমি শিখরখোলা এসেছি বৌপুতুলের খোঁজে। এখানে পালরাও শীতলা মন্দির তৈরি করেছিল তবে সেটা ১৯৪০ সালে।
শিখরবালীর ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনের এক প্রতিফলন এই শীতলা মন্দির গুলি।
 এখানে মুনাসা পূজা ও বিখ্যাত।শিখরবালী তুলোরবাদা মনসা মায়ের পূজাতে বিশাল নরনারায়ণ সেবার আয়োজন  করা হয়। শিখরবালীর সমগ্র অধিবাসীবৃন্দের রইল আমন্ত্রণ।মহাদেবের মানস কন্যা ও সর্প কুলের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মা মনসা । সাপের সঙ্গেই  ঘর করতে হয় গ্রামগঞ্জের মানুষকে, তাই মনাশা পূজা র চল আছে এখানে।আগের রাতে অমাবস্যা তিথি তে  বাড়ির সবাই একত্রিত হয়ে সারা রাত ধরে কুটনো, বাটনা, রান্না ও পর দিন মা মনসাকে নিবেদন করে তবে খাওয়া।  বাংলার নিতান্তই এই আন্তরিক অরন্ধন ব্রত বা রান্না পূজা । জগদ্ধাত্রী পূজা, হয় ।এখানে এখনো চলে, বারোমাস তেরো পার্বণ, চলে গ্রামীণ মেলা ,  যা এই অঞ্চলের পুতুল শিল্পের ফুসফুস বলতে পারেন।
Manab Mondal

জোড়া শিবমন্দির

বারুইপুর থানার শাসন গ্রামের জোড়া মন্দির
  শিবমন্দির দাঁড়িয়ে আছে টেরাকোটার পুরাকীর্তির  হিসাবে। আছে একটি দূর্গা দালান।

 গ্রামের পূর্বদিকে আদিগঙগা মজা গেছে তার ঠিক পশ্চিমে যুবকসমিতির পাশেই এই শিবমন্দির দুটি আছে। 

শশ্মান থেকে নাম এসেছে শাশন, যদিও শাশন গ্রামটির নামকরণ ঘিড়েও অনেক মতবিরোধ আছে৷ গ্রামের কিছু দূরে কীর্তনখোলা মহাশ্মশান হিসাবে অনেক পুরনো চৈতন্য দেবের সময় নাকি এখানে খোল ভেঙে গিয়েছিল৷ 
বরুইপুর থানার গোবিন্দ পুর  গ্রাম থেকে আবিস্কৃত হয়েছে লক্ষনসেনের একটি তাম্রসাসন ৷ তাতে বিড্ডর শাশন ও ধর্মনগর নামের দুটি গ্রামের উল্লেখ পাওয়া যায়৷ ধর্মনগর গ্রামটিও বারুইপুরের কাছেই অবস্থিত ৷শাশন নাম এখান থেকে এসেছে বলে পন্ডিতদের ধারণা।ধর্মনগর থেকে ধামনগর হয়েছে৷ আসলে ধোপাগাছি- ধামনগর হিসেবেই পরিচিত৷ গ্রামে প্রচলিত আছে আগে কোনো ধর্মরাজের থান ছিল৷ তবে বেশকিছু  পঞ্চানন্দ ও ধর্মরাজের থান আছে।

অন্যদিকে  "বিড্ডর"  বিড়াল গ্রামে পরিনত হয়েছে বলে ধারণা করা যায়৷ ধোপাগাছি গ্রামের কাছে বিড়াল গ্রাম৷
বিড্ডর পরবর্তীতে বিড়াল হয়েছে তার জোরদার প্রমান, চিহ্নিত  হয়েছে ঢিপি যার তলায় সুপ্রাচীন দুর্গের নিদর্শন বা দুর্গপ্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ বলে অনুমান করেছিলেন শ্রদ্ধেয় কালীদাস দও৷ যা নিয়েও অনেক অনুসন্ধানের প্রয়োজন ।
 
এই শাসন গ্রামের পাশের গ্রাম শিখরবালি, কুন্দরালি , দক্ষিণ কল্যাণ পুর যার পুরাতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে৷ আর মৃৎশিল্প একটি জনপ্রিয় জায়গা এই শিখর বালি।

Tuesday, 25 January 2022

জয় চন্ডী

জয়নগর কিন্তু সারা দেশের প্রাচীনতম পৌরসভাগুলির মধ্যে অন্যতম।১৮৬৯ সালে বেঙ্গল মিউনিসিপাল অ্যাক্ট অনুযায়ীসাথে জয়নগর মজিলপুর পৌরসভা তৈরিহয়। দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের সভাপতিত্ব ১৮৬৪ সালে যে জয়নগর টাউন কমিটি গড়ে উঠেছিল। তবে বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর (১৮৪৭-১৯১৯) পিতার ভুমিকা ছিলো অন্যতম ,তার পিতা পণ্ডিত হরানন্দ ভট্টাচার্য (১৮২৭-১৯১২) ছিলেন জয়নগর মজিলপুর পৌরসভার প্রথম পৌরপ্রধান। দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ (১৮১৯-১৮৮৬) শিবনাথ শাস্ত্রী র মাতুল বা মামা ছিলেন। সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সোমপ্রকাশ’এর সম্পাদক ছিলেন দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের (১৮১৯-১৮৮৬) ।১৮৫৭ সালের সিপাই বিদ্রোহের পর ভারতবর্ষের জাতীয়তাবাদী মানসিকতা ও স্বদেশপ্রেমের জন্য স্বায়ত্বশাসনের নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে বাংলার গুনীজনরা, সেই সেই সমৃদ্ধশালী নগরী জয়নগর-মজিলপুর ও সেখানকার কৃতি সন্তানদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতিতে প্রদান কেন্দ্র স্বায়ত্বশাসনের অধিকার ছিনিয়ে আনার প্রস্তুতিপর্বে ১৮৬৫ সালে প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর পিতা পণ্ডিত হরানন্দ বিদ্যাসাগরের সভাপতিত্বে প্রথম তৈরি হল জয়নগর টাউন কমিটি। সেই কমিটি গঠনের মাত্র চার বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৮৬৯ সালে ১লা এপ্রিল তা জয়নগর পৌরসভা।
জয়নগর অতীতে অনেক সমৃদ্ধ শহর ছিলো।বিদেশী মগ, পর্তুগীজ, ফরাসী জলদস্যুরা জয়নগরে লুট সন্ত্রাস চালাত এবং এরা নিকটবর্তী জঙ্গলে ঢেকে থাকা মগরাহাট এলাকায় লুকিয়ে থাকত। এই মগ দস্যুদের নামানুসারে মগরাহাটের নামকরণ ।প্মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য আদিগঙ্গার তীর ধরে চক্রতীর্থ ভ্রমণ করে শ্রীক্ষেত্র পুরীধামে গমন করেন। পণ্ডিত মানুষদের বসবাস এর কারণে একে দ্বিতীয় নবদ্বীপ বলা হত।
১৭৭৫ সালে যখন মুর্শিদকুলি খাঁ অদূরদর্শিতা ফলে বেতরের কাছে খাল কাটা হয়। গঙ্গার মূল ধারা ঘুরিয়ে সরস্বতী নদীর মরা খাত দিয়ে বজবজ, রায়চক, ফলতা, ডায়মণ্ডহারবারের পাশ দিয়ে সাগরের মুড়িগঙ্গায় নিয়ে গিয়ে মেশায় তার আদিগঙ্গার মৃত্যু ঘণ্টা বাজতে শুরু করে।একসময় অথচ জয়নগর ও মজিলপুরের বুক চিরে প্রবল ধারায় প্রবাহিত হয়ে যেত আদিগঙ্গার ধারা। চাঁদ কিংবা ধনপতি মতো সওদাগর বানিজ্য তরী বাইতো এখন দিয়ে। আজ মৃতপ্রায় গঙ্গা মানুষের অধিগ্রহণ করে নিয়ে মিত্রগঙ্গা, ঘোষগঙ্গা, বোসগঙ্গা নামে পুকুরের মতো স্মৃতি চারণ করছে।


জয় নগরের অত্যন্ত জাগ্রত হলেন চণ্ডীতলার জয়চণ্ডী,দেবীর নাম অনুসারেই জায়গাটির নামকরণ জয়নগর। গাছগাছালিতে ঘেরা প্রাচীন শহর জয়নগর। দক্ষিণমুখী শ্রীশ্রী জয়চন্ডী মাতার মন্দির, প্রায় তিনশো বছর আগে জয়চণ্ডীদেবীর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতার মতিলাল পরিবারের গুণানন্দ মতিলাল। জয়নগরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী চণ্ডীর আবির্ভাব নিয়ে বেশ কিছু কিংবদন্তী ছড়িয়ে আছে। গুণানন্দ ও জৈনক টুনুপণ্ডিত একদিন নৌকাযোগে আদিগঙ্গা দিয়ে যাওয়ার সময় নদীর তীরে এক সুন্দরী মহিলা কে একাএকা ঘুরতে দেখেন । তাঁরা নৌকা থেকে তীরে নামার পর ওই রমণীকে আর দেখতে না পেলেও, সেইরাতেই গুণানন্দ স্বপ্নাদেশে জানতে পারেন যে, ওই মহিলা হলেন দেবী শ্রীশ্রীজয়চণ্ডী। স্বপ্নাদেশে তাঁর মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করে সেবাপুজোর ব্যবস্থা করলেন। 
আবার শোনা যায় জয়নগরের শ্রীশ্রীজয়চণ্ডী পাঁচশ বছর আগে থেকেই জয়চণ্ডী এখানে আছেন।নিকটবর্তী পুকুরের জল থেকে মাকে এক গরীব ব্রাহ্মন উদ্ধার করেন স্বপ্ন পেয়ে ।ব্রাহ্মনকে তিনি তাঁর পূজার দায়িত্ব দেন।কিন্তু সে তো অত্যন্ত গরীব বলে মা কে তিনি একটি খড়ের চালা নির্মান করে রাখেন।পরে ভক্তরা মন্দির নির্মাণ করে দেন।মা তাঁকে এক নির্দিষ্ট বকুলবৃক্ষতলে স্থাপন করতে বলেন।পরে মা সেই বকুলবৃক্ষ দিয়েই তাঁর বিগ্রহ নির্মাণ করতে বলেন। এবং এইভাবে মা'র দারুবিগ্রহ নির্মিত হয়। শোনা যায় , মা'র মন্দিরের সামনে এক কদম্ববৃক্ষ আছে যেখানে একটি মাত্র ফুল ফোটে তাও আবার জৈষ্ঠ্যমাসে।ওই সময় বেশের মেলা হয়ে থাকে।যদিও ফুলটি গভীর রাতে দেখা যায় এবং তা দিয়ে মা'র পূজা হয়।এখানকার লোকজন বলেন মা এখনও রোজ রাতে ভ্রমনে যান।খুব কম সৌভাগ্যবান মানুষই তা দর্শনের সুযোগ পেয়েছেন। শ্রী জগন্নাথদেবের স্নান যাত্রা থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থানার জয়নগর মজিলপুর গ্রামে অতিজাগ্রত জয়চণ্ডী দেবীর ১৫ দিন ব্যাপী বাৎসরিক পূজা ,উৎসব ও মেলা হয় |

দেবীর বর্তমান দক্ষিণমুখী মন্দিরটি ১৯৫০ সালে কলকাতার মহেন্দ্র শ্রীমানি নির্মাণ করেন।আর নাটমন্দিরটি নির্মাণ করেন নিত্যহরি মতিলাল। গর্ভমন্দিরে একটি সিমেন্টের বেদিতে কাঠের মঞ্চের উপর বকুল গাছের নির্মিত আড়াই ফুট উঁচু শাড়ি পরিহিত দেবীর দারুবিগ্রহ আজও আছেন জয়নগর বাসীদের মা ।গৌরবর্ণের ত্রিনয়নী দেবীর হাতদুটি অলঙ্কার শোভিত। অভয় ও বরাভয় মুদ্রায় রতা,মাথায় মুকুট কিশোরী মেয়েমতো দাড়িয়ে আছে। । দেবীর আর একটি স্বপ্নাদেশে প্রাপ্ত ওই দিব্য শিলাখণ্ডটিও ওই এই অপরুপ দারুবিগ্রহের নিত্যসেবিত হয়।।
জয়নগরের ইতিহাস জানতে 
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=324785392992661&id=100063836075071

Wednesday, 19 January 2022

বন বিবির মেলা

ঘুরে এলাম রামরুদ্রপুরের বনবিবির মেলা
          বারুইপুর জয়নগর সদর রাস্তায় বেলে চণ্ডীর বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে খাকুড়দহ হাট। সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার গ্রামের অলিগলি আর মেঠো রাস্তা পেরিয়ে বেলা একটার দিকে পৌঁছে গেলাম বনবিবির মন্দিরে। শুনলাম, সকাল হতেই দোকানিরা মন্দিরের চারিপাশে তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন মেলা দর্শনার্থী তথা খদ্দেরের অপেক্ষায়। নানান ধরনের কাঠের সামগ্রী, পোড়ামাটির জিনিসপত্র, বিবিধ প্রকারের খেলনা, বেত ও বাঁশের ধামা-পালি-পাতি-কুনকি-পোয়া-কুলো-ঝুড়ি, কাঠের নাগরদোলা কী নেই সেখানে! দেখলাম, এলাকার তালের গুড় দিয়ে আড়াই প্যাঁচের জিলিপি তৈরি হচ্ছে। ওদিকে স্থানীয় গজা, চপ ফুলরি পাল্লা দিচ্ছে এগরোল, চাউমিনের সঙ্গে। মেলার অন্যদিকে গোটাকতক কাঠের নাগরদোলা যখন বনবন করে ঘুরে দুপুরের রোদ্দুরে গায়ে বাতাস লাগিয়ে বেড়াচ্ছে তখন তারই একপাশে খানদুই মিকিমাউস যাতে নিজেদের দম ফুরিয়ে না যায় সেই কারণে পিছনদিকে লাগিয়ে রেখেছে একটি করে পেসমেকার, থুড়ি জেনারেটর। এই না হলে বিশ্বায়ন!      
         মন্দিরের অদূরে একদিকে মাথার উপর তেরপল টাঙিয়ে বসেছে তরজাগানের আসর। তরজা বনবিবিমেলার পুরাতন ঐতিহ্য। শোনা যায়, স্থানীয় বাসিন্দা ছোটুলাল মণ্ডলের সৌজন্যে সেই ১৯৫৪ সাল থেকেই এই তরজা অনুষ্ঠানের প্রচলন। ‘লুনোজমি’তে দীর্ঘদিন ভালো ফসল না হওয়ায় তিনি গ্রামবাসীদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তাঁর জমির ফলন বৃদ্ধি পেলে মেলায় তরজাগানের যাবতীয় খরচা বহন করবেন। হলোও তাই, বনবিবির দয়ায় তাঁর জমির ধান বিঘাপ্রতি তিন-চার মণ থেকে বেড়ে হলো আট-দশ মণ। সেই থেকে এখানে আজও তরজাগানের রেওয়াজ। ছোটুলাল মণ্ডল আজ জীবিত নেই। তাঁর অবর্তমানে এই গানের খরচা চালান তাঁরই সুযোগ্য পুত্র শ্রীগোবন্দ মণ্ডল।    
          মেলায় ঘুরে ঘুরে খিদেয় পেটের নাড়িভুঁড়ি তখন সব ‘অগ্নি সহায়’ হয়ে গেছে। চারি দিকে এতো খাবের দোকান, ভাবছি কোনটা ফেলে কোনটা খাই। এমন সময় নজরে এলো রাস্তার উল্টোদিকে দর্শনার্থীদের খাওয়ার আয়োজন চলছে। সময় নষ্ট না করে বসে পড়লাম খাওয়ার সারিতে। বিনি পয়সায় এমন ভুরিভোজ আমি কখনই ছাড়িনে। ছেলেবেলায় এমন অতুল কীর্তি রাখতে গিয়ে বড়োদের তাড়াও খেয়েছি বহু জায়গায়। একবার গঙ্গাসাগর মেলাতে গ্যাঁটের কড়ি গ্যাঁটে গুঁজে গাণ্ডেপিণ্ডে গিলে বহু অন্নসত্রের মালিককে পুণ্যসঞ্চয়ের সুযোগ করে দিয়েছি। যাইহোক, এখানে সদ্য ফসল তোলা জমিতে বসে স্থানীয় মানুষের চাষের চালের ভাত, অঢ়হলের ডাল আর বাগানের সব্জির ঘণ্ট খাওয়া, সে এক অন্য অভিজ্ঞতা। আশা করি শুচিবাইগ্রস্থ ব্যক্তিরা এই অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হবেন। 
          দেখলাম দুপুর থেকেই পুণ্যার্থীরা মন্দিরের সামনের পুকুরে হাতমুখ ধুয়ে মেলা থেকে বাতাসা, পঞ্চমিষ্টি ইত্যাদি কিনে মন্দিরে যাচ্ছেন পুজো দিতে। মন্দিরের ভিতরে তিনটি বড়ো আকৃতির সিমেন্টের বনবিবিমূর্তি। তিনজনই ব্যাঘ্রবাহনা। একটি মূর্তির পাদদেশের একপাশে বনবিবির ভাই শাজঙ্গলি এবং অন্যপাশে তাঁর প্রথম ভক্ত দুখে। অন্য মূর্তি দুটি একক। এগুলি ছাড়াও ভক্তরা মানতস্বরূপ এইদিন একাধিক বনবিবি, গোপাল ঠাকুরের মূর্তি দিয়ে যান, যা মন্দিরের উঁচু চাতালে সার দিয়ে সাজানো থাকে। এখানে বনবিবির নিত্যপুজো হয় না, তবে এই বিশেষ উৎসবের দিন ছাড়াও প্রতি মঙ্গল ও শনিবার বনবিবি ভোগ পেয়ে থাকেন। পুজোর নির্দিষ্ট কোনো মন্ত্র বা পুরোহিত নেই। ভক্তিভরে মায়ের পায়ে ফুল-বাতাসা ছুঁইয়ে এবং থানের মাটি স্পর্শ করে ভক্তরা তাঁদের ভক্তি জ্ঞাপন করেন।    
          এবার আসি গৌরীসেনদের কথায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উত্তরোত্তর পুজোর খরচাও বাড়ছে। যেমন গতবছর(২০১৯ সাল) পুজোর খরচ হয়েছিল আশি হাজার টাকা এবছরে তা বেড়ে বাজেটে দাঁড়িয়েছে এক লাখ। তবে এই বিপুল পরিমাণ টাকার জন্য কোনো গ্রামবাসীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাঁদা আদায় করা হয় না, কমিটির লোকজন এবং মেলার অসংখ্য দোকানদাররা সেই গৌরীসেনের ভূমিকা পালন করেন। 
          সবশেষে বলি, এতাদঞ্চলে বনবিবি পুজোকে কেন্দ্র করে ঘুড়ি ওড়ানোর রেওয়াজ বিশেষ নজর কাড়ে। রামরুদ্রপুর ছাড়াও ধপধপি দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের তিন কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত মুর্শিদতলা মাঠে ১লা মাঘ বনবিবিপুজো উপলক্ষেও এই ঘুড়ি ওড়ানোর রেওয়াজ লক্ষ করেছি। সারা শীতকাল জুড়ে ফসল তোলাফেলার হাড়ভাঙা খাটুনির পরে একদিন সকলে মিলে এই ঘুড়ি উৎসবে মেতে ওঠা -এর সঙ্গে নিছক বিনোদন ছাড়া ধর্মের কোনো যোগ দেখিনে। 
(১৭ই জানুয়ারি, ২০২০)

নৌকা সংক্রান্ত

ছবির নৌকাগুলি পূর্ববঙ্গের নদী হাওরে চলা জলযান। সুন্দরবনে ঘুঘুডিংগী , শালতি, টাবুরে, জেলে ডিঙ্গি , বাওয়ালী নৌকা - গোল, গরাণ , ঘাস  বইবার জন্য, ছিপ নৌকা , বাছারী - বাইচ খেলার বা ডাকাতির কাজে ব্যবহার হত, আর ছিল কোষা নৌকা।
সুন্দরবনের নদী,জঙ্গল ও তার জনজীবনে ব্যবহৃত চলিত শব্দাবলি

বাংলাদেশ সুন্দরবনেও প্রচলিত শব্দ  

সুন্দরবনের নদী,জঙ্গল ও তার জনজীবনে ব্যবহৃত চলিত শব্দাবলি

*বাংলাদেশ সুন্দরবনেও প্রচলিত শব্দ  

                       

জঙ্গল সংক্রান্ত

আইট / আট - জঙ্গলের মধ্যে প্রাচীন বসতির চিহ্নযুক্ত উঁচুভূমি।

আঁচঘর - যেখানে বাঘ বাচ্চা প্রসব ও লালন করে।

আড়া / হেলা - পুরুষ বাঘ।

আড়া - ডাঙা বা উঁচু স্থান (ভিজে আড়া < ভিজেয়াড়া < বিজেয়াড়া)।

ওঁত - আত্মগোপন করে শিকারের জন্য প্রস্তুত অবস্থা।

কস্তুরা - বড়ো ঝিনুক,এই ঝিনুকে সুন্দরবনবাসীরা কাজল তৈরি করে। পুড়িয়ে চুন তৈরির অন্যতম উপাদান।

কঁচা - নিবিড় জঙ্গলপূর্ণ অরণ্যভূমি।

কালাবন/কালকবন - নিবিড় বন।

খাস জঙ্গল - সংরক্ষিত অরণ্য।

খোঁচ - নরম মাটিতে পায়ের ছাপ।

গণ্ডি - মন্ত্রবলে যে স্থান বাঘের থেকে নিরাপদ করা হয়েছে।

গাছাল - গাছে বসে শিকার করা।

*গ্যাড়া/গাড়াল - গন্ডার।

গ্যাঁড়া - গোল শামুক।

চট/চইট - বন্য জন্তুর চলাচলের পথ।

*চাড়া - জঙ্গলের যেখানে বাঘের অত্যাচার আছে।

চোট - বন্দুকের গুলি ছোঁড়া।

জঙ্গল গরম - জঙ্গলে বাঘের উপস্থিতি।

জ্যাংড়া/জোংড়া - ছোট ঝিনুক, চুন তৈরি করা হয়।

জ্যাংড়া/জোংড়া খুঁটা - জঙ্গলে ঝিনুক কুড়ানি।

মাল/মহাল/মায়ের বাগান/ মায়ের খামার - সুন্দরবনের জঙ্গলভূমি।

*টোপ - গর্তে বসে কাঁচা ডালপালায় গর্তের মুখ চাপা দিয়ে আত্মগোপন করে শিকার করা।

*ট্যাঁক/ ঠোটা- দুটি জলরাশির সংযোগ স্থলে সৃষ্ট বদ্বীপের কোণাকৃতি জঙ্গলভূমি বা বাদাবন।

তারকেল - গোসাপ।

পড়া - বাঘের আক্রমণে জঙ্গলে মানুষের মৃত্যু (জঙ্গলে মানুষ পড়েছে)।

পাড়বন্ধ - নোঙর করে রাত্রি যাপনের সময় মন্ত্র পড়ে নৌকোর চারপাশে গণ্ডি দিয়ে রাখা।

পাড়া - বাঘের পায়ের ছাপ।

বড়ো মিঞা/মামা/বাবু/বড়ো শিয়াল/ফকির সাহেব - বাঘ।

বয়ার - সুন্দরবনের জল মহিষ,এখন সম্পূর্ণ অবলুপ্ত।

বাওন - নৌকা বা জলযান থেকে কূলে বা তীরে শিকার করা।

বেড় - জঙ্গলের মধ্যে মানুষকে লক্ষ্য স্থির করে বাঘের চক্রাকারে ঘুরে মানুষের পিছনে আসা।

বেড়ালা/কুপনি - জঙ্গলের মধ্যে প্রাচীন বসতির চিহ্নসহ উঁচু ভূমি।

মাছি - ডাকাত।

*মাঠাল - পায়ে হেঁটে শিকার করা।

মায়া হরিণ - স্ত্রী হরিণ।

মেচি বাঘ - স্ত্রী বাঘ।

রশি - দূরত্ব। দড়ি।

শিঙেল - পুরুষ হরিণ।

সরা - যাওয়া। যাই’ ক্রিয়াপদের মধ্যে অমঙ্গলের ছায়া কল্পনায় জঙ্গলে এর ব্যবহারের বদলে ‘সরা’ শব্দের ব্যবহার হয়।

হুলোর মাথা - দুটি জলরাশির সংযোগস্থলে সৃষ্ট বদ্বীপের কোণাকৃতি আবাসভূমি বা আবাদ জমি। জঙ্গল এলাকার এমন কোণকে ট্যাঁক বলা হয়।

সূত্রঃ সুন্দরবন ও নদীকথা — অনিমেষ সিংহ 

সুন্দরবনের জঙ্গল সংক্রান্ত কোন শব্দ বা শব্দাবলি কেউ যুক্ত করলে কৃতজ্ঞ থাকবো
                     

নৌকা সংক্রান্ত

সুন্দরবনে ব্যবহৃত নৌকার রকমফের - 
বালাম, গোধা, সুপ, সম্পান, কোঁদা, ছিপ, গুরাব, বজরা, ভড়, মাসুয়া, পাতিলা, কিস্তি, পানসি, ময়ূরপঙ্খি, ডিঙি, ডোঙা, ঘুঘু।

আগাড়ি - সামনে।

আহ্নিক, গলুই - জলযানের সূচালো প্রান্ত।

এরাফ - জলযানের সামনে আহ্নিক থেকে 
তলদেশ পর্যন্ত কোণাকৃতি আকার।

কাঁকড়া কাঠ -কাঠের তৈরি নোঙর।

কাড়াল - নৌকোয় মাঝির বসার জায়গা।

কাড়াল দেওয়া - কান্ডারির কাজ করা বা হাল ধরা।

গলুই - নৌকোর সামনের অংশ।

গালায় - নৌকোর পাশে বা ধারে।

গুন - নৌকোয় দড়ি বেঁধে স্রোতের প্রতিকূলে টেনে নিয়ে যাওয়া।

গুন টানা - স্রোতের বিপরীতে বা উজানে নৌকা নিয়ে যাবার জন্য নৌকার মাঝখানে কাঠের লম্বা দণ্ড বা মাস্তুলের শীর্ষ প্রান্তে দড়ি বেঁধে সেই দড়ি নদীর কিনারা দিয়ে টেনে নৌকো বেয়ে নিয়ে যাওয়া।

গুড়া/রো - নৌকোর আড় কাঠ।

গুমতি - নৌকো থেকে জল সেঁচার খালাসি।

গেরাফি - লোহার তৈরি নোঙর।

ঘুঘু - ছোট্ট ডিঙি নৌকো।

*চ’ড়/*চইড়/লগি - নৌকো ঠেলে সরাবার বা অল্প জলে চালিয়ে নিয়ে যাবার জন্য ব্যবহৃত সরু লম্বা লগি বা লাঠি।

চাপান -নৌকো বেঁধে রাখা।

চাপান দেওয়া - নোঙর করা।

চাপান সারা - মন্ত্র দ্বারা নৌকোর চারপাশে গণ্ডি টেনে দেওয়া।

চেলি - নৌকোর পাটাতনের কাঠ।

ছই - নৌকোর উপরের ছাউনি।

ডরা খোপ - নৌকোর মাঝ বরাবর দুটি আড় কাঠের মাঝের খোপ।

ডালি - নৌকোর গালায় বা দু-পাশের উপরিভাগে বেশ পুরু নৌকো সমান লম্বা যে তক্তা লাগানো থাকে।

*ডিঙা - ব্যবসায়ীদের বড়ো নৌকো।

ডিঙি - ছোট ছাউনিহীন নৌকো।

তেকাঠ - তিনটি কাঠের ত্রিকোণাকৃতি ছোট মই। যুগোতে ঝুলিয়ে রাখা যায়।

নবডালি/দাঁড়া - জলযানের আহ্নিক থেকে তলদেশ হয়ে পিছনে পাখা বা প্রপেলার পর্যন্ত লম্বা কাঠ, যা নৌকোর ভারসাম্য রক্ষা করে।

*নল ছেয়/নল ছাও - স্রোতের বিপরীতমুখী টান এড়াবার জন্য নৌকোর কোনাকুনি নদী পার হওয়া।

নায়ে-নৌকোয়।

*পলোয়ার - বড়ো ঢাকাই নৌকো।

পাটাতন - তক্তা দিয়ে নৌকোর উপরিভাগে আচ্ছাদিত অংশ।

পাড়ি/পাউড়ি - পার হওয়া।

*পিঠেম বাতাস - পিছন থেকে প্রবাহিত বাতাস।

পিটেল বোট - বনদপ্তরের পাহারারত বােট।

বাদাম - পাল।

বাঁও - নৌকো চলাচলের জন্য জলের গভীরতা মাপার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শব্দ। ভূমির সমান্তরালে দুই বাহু ছড়িয়ে দিলে যে দূরত্ব তৈরি হয়, যা প্রায় ছয় ফুট দীর্ঘ। এটাই ১ বাঁওয়ের পরিমাপ।

বাঁক/বাঁক গোছা - নৌকোর ভিতর তলদেশে চেলির আড়াআড়ি দু-পাশে যে কাঠ থাকে।

*বেতনাই - কাঠ বা গোলপাতা বহনোপযোগী বড় নৌকো।

বিড়ে - খড় বা দড়ি দিয়ে গোল করে পাকিয়ে তৈরি করা হয়। তার উপর সাধারণত গোলাকৃতি ভরা কলসি রাখা হয়,যাতে কলসি গড়িয়ে না পড়ে। এছাড়া হেঁতালের শুকনো ও কাঁচা পাতা শক্ত করে বেঁধে তাতে আগুন ধরিয়ে তীব্র ধোঁয়া তৈরি করে মৌলেরা মৌচাক থেকে মৌমাছি তাড়ায়।

বোঠে - বইঠা।

যুগো - (Capstan) জলযানের দু-পাশে নোঙরের কাছি বাঁধার শক্ত খুঁটি।

শিরা - নদীর বুকে স্রোতের প্রধান ধারা।

সারেং - লঞ্চের পরিচালক।

সাঁই - অনেক ডিঙি নৌকোর একসঙ্গে চলা বা আড্ডা।

সাঁইদার - অভিযানের দলপতি।

সাঁড়া - হিসনেতে ঝুলিয়ে রাখা দাঁড় ঢোকানোর গোল দড়ির বিড়ে।

সুগান - যন্ত্রচালিত জলযানের স্টিয়ারিং।

হিসনে – নৌকোর গালায় আড়াআড়ি ঢোকানো কাঠের টুকরো,যার উপর ভর করে বা আটকে দাঁড় টানা হয়।

সূত্রঃ সুন্দরবন ও নদীকথা — অনিমেষ সিংহ 

সুন্দরবনের জঙ্গল সংক্রান্ত কোন শব্দ বা শব্দাবলি কেউ যুক্ত করলে কৃতজ্ঞ থাকবো
সুন্দরবনের নদী,জঙ্গল ও তার জনজীবনে ব্যবহৃত চলিত শব্দাবলি

*বাংলাদেশ সুন্দরবনেও প্রচলিত শব্দ  

                       ।। পর্ব ২ ।।

নদী সংক্রান্ত

অত্রাযোগ - ঝড় বাদলা।

আউলি - জোয়ার বা ভাটায় পাড়-লাগোয়া উলটো স্রোত।

আগাড়ি - খাঁড়ির শেষ প্রান্ত।

আদানে জোয়ার - অর্ধেক জোয়ার।

আফসানি - ঢেউ।

আবানে খাল – যে খালে অনেকদিন মাছ-কাঁকড়া ধরা হয়নি।

উজান - স্রোতের বিপক্ষে।

একানী/মরাণী খাল - সংকীর্ণ যে খাল জঙ্গলের ভিতর মরে বা শেষ হয়ে গেছে।

এড়ো - আড়াআড়ি। 

ওঁসারো - চওড়া।

*কেরেচ - আড়াআড়ি।

কোটাল - পূর্ণিমা বা অমাবস্যার আগের দুদিন এবং শেষ পাঁচ দিন বা ত্রয়োদশী থেকে পঞ্চমী পর্যন্ত জলতলে দ্রুত সর্বাধিক হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে,এই সময়কে কোটাল বলে।

খাল - নদীর তুলনায় অপ্রশস্ত স্বল্প দৈর্ঘ্যের জলপথ।

খাঁড়ি - এক মুখ বন্ধ শাখা বা পাশ খাল।

গণ - কোটাল। অনুকূল নদীপ্রবাহ।

গাঙ - ভাঙন সঙ্কুল স্বল্প দৈর্ঘ্যের নদী।

গুতি খাল - নোনা জলের সরু প্রবাহ।

ঘাল - খালের সরু অংশ।

*ঘাউলা বাতাস / আউল্যা বাতাস - এলোমেলো পাক-খাওয়া বাতাস।

ঘোঘ/ঘোঘা - নোনা নদী বাঁধে কাঁকড়া বা এক ধরনের সাদা পোকার তৈরি যে সরু ছিদ্রপথে জল প্রবাহ পথ করে নেয়।

ঘোলা -নদীর ঘূর্ণিময় অংশ। অতিরিক্ত মাটি,বালি মিশ্রিত অসচ্ছ জল।

চটা খাল - অগভীর খাল।

চাতান/চটক - মরাণীতে শুকিয়ে নোনা ওঠা প্রায় বৃক্ষশূন্য উঁচু জঙ্গলভূমি।

জুলি খাল - যৎসামান্য প্রস্থ ও দৈর্ঘ্যে ছোট কিন্তু গভীর খাল।

জোগার গণ - পূর্ণিমার জোয়ার।

জোল - সরু নালা।

জোয়ার/জো - চাঁদের আকর্ষণে সমুদ্রের জল 
স্ফীত হওয়া। দিনে দুবার জোয়ার হয়।

ঝোরা - ধল বা টাট থেকে সার ভাটায় নেমে আসা জলের ধারায় তৈরি হওয়া ছোট্ট খাঁড়ি খাত।

তেদাড়ি - নরম পাঁক।

ত্রিমোহানি - তিনটি বড়ো খালের মিলনস্থল।

দয়/দহ - নদীর ঘোলা বা ঘূর্ণায়মান অংশ। 
অতি গভীর ঘূর্ণি সঙ্কুল ছোট্ট নদী। অতি গভীর জলাশয়।

*দোখালা - গাঙ বা খালের যেখানে দু-পাশেই শাখা খাল জঙ্গলে ঢুকে গেছে।

দোয়ানি/দুনে - দুটি বড়ো খালের সংযোগকারী খাল। এর দুই প্রান্ত সাধারণত পূর্ব-পশ্চিমমুখী হয়। এর দুই প্রান্ত দিয়েই জোয়ারে জল ঢোকে এবং ভাটায় জল বেরিয়ে যায়।

দোমা - ঢেউয়ের ঝাপটা।

ধল - বৃক্ষশূন্য নিচু অরণ্যভূমি। কোটালের পূর্ণ জোয়ারে প্লাবিত হয় এবং কেবলমাত্র তখনই ডিঙি নৌকো বাওয়া যায়।

পগার - খাত বা নালা/গভীর গদ বা পাঁক।

পাকনা/ ঘোল/ঘোলা - জলের ঘূর্ণি।

*পাতারি - প্লাবন আটকানোর জন্য ছোট বাঁধ।

পাশ খাল - জঙ্গলে ঢুকে যাওয়া ছোট খাল অথবা শাখা খাল।

ফোড়ন – স্বল্প দৈর্ঘ্যের সরু খাল,কোটালের ভরা জোয়ারেই কেবলমাত্র জঙ্গল ভেদ করে বা ফুঁড়ে অপর প্রান্তে যাওয়া যায়।

বকচর/*কোলা- নদীর বা খালের কূলে প্রশস্ত স্থান,যেখানে বক পাখিরা মাছ-কাঁকড়া খুঁটে খায়।

*বাওটা- জলে ডুবন্ত মানুষের হাত নেড়ে বিপদসংকেত জানানো।

বে গণ - মরাণী/প্রতিকূল নদীপ্রবাহ (Against current)।

ভরণা - পূর্ণ জোয়ারের স্থিতিশীল অবস্থা।

ভরাণী - অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর সঙ্গে একই সরলরেখায় অবস্থান করে। এ সময় এদের মিলিত আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি,ফলে জোয়ার ও ভাটা দুটিই শক্তিশালী হয়।

ভাটা - চাঁদের আকর্ষণে সমুদ্রের বিপরীত প্রান্তের জল স্ফীত হওয়ায় অন্য প্রান্তের জল সরে যাওয়া বা জলস্ফীতি হ্রাস হওয়াকে ভাটা বলে। দিনে দু-বার ভাটা হয়।

*ভাটিগার গণ - অমাবস্যার জোয়ার।

ভারাণী - উত্তর-দক্ষিণমুখী দুটি বড়ো নদীর সংযোগকারী খাল। এই খালের এক প্রান্ত একটি নদীর দক্ষিণ দিক থেকে শুরু করে সমান্তরাল অন্য নদীটির উত্তরদিকে আড়াআড়ি গিয়ে যুক্ত হয়। এর যেদিক থেকে জোয়ারের জল ঢোকে,সেদিক দিয়েই ভাটায় জল বেরিয়ে যায়।

মেলা - খালের চওড়া অংশ।

মরাণী - চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর দু-পাশে এক সমকোণ থেকে আকর্ষণ করে,ফলে ষষ্ঠী তিথি থেকে দ্বাদশী পর্যন্ত সাত দিন ধীরে ধীরে জলতলে সর্বনিম্ন হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে, এই সময়কে মরাণী বলে।

মুলম খাল - শাখা-উপশাখার জনক যে মূল খাল।

টাট - পলি জমে যে খাঁড়ির তলদেশ উঁচু হয়ে জঙ্গলভূমির প্রায় সমান হয়ে গেছে এবং কেবলমাত্র কোটালের পূর্ণ জোয়ারেই যে খাঁড়িতে ডিঙি নৌকা বাওয়া যায়।

মাগনা জোয়ার - ট্র্যাক বা ভাঙনের মুখে যেখানে স্বাভাবিক প্রবাহ বাধা পেয়ে স্রোত উলটো খাতমুখী। স্রোতের উলটোদিকে নৌকা যেতে হলে মাঝি এ খাতই খুঁজে নেয়।

শীষে - গভীর জঙ্গলে ঢুকে যাওয়া সরু খাঁড়ির মজে-যাওয়া শীর্ষ প্রান্ত।

ষাঁড়া - শিব।

ষাঁড়ি - দূর্গা।

যাঁড়াষাঁড়ির গণ - বছরে দু-বার আসে,আশ্বিন ও চৈত্র মাসের কোটালে।

সুজন/সুজান - স্রোতের পক্ষে।

সারভাটা -ভাটায় জল সরে যাওয়ার শেষ মুহূর্তকে বা জোয়ার শুরুর প্রাক্-মুহূর্তকে সার ভাঁটা বলে।

সারেং - পলি জমে যে খাঁড়ির তলদেশ উঁচু হয়ে জঙ্গলভূমির প্রায় সমান হয়ে গেছে এবং যেখানে মাটির উর্বরতার কারণে গাছের ঘনত্ব ও দৈর্ঘ্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, ঘন পাতার রং কালচে সবুজ এমন এলাকাকে সারেং বলে। / জলযানের চালক।

সুঁসি মারা/সঁসা মারা - জলের অল্প গভীরে ডুবে থেকে দ্রুত সোজা যাওয়া।

হাসি খাল - সরু খাল।

হোড় - গদ বা পাঁক।

সূত্রঃ সুন্দরবন ও নদীকথা — অনিমেষ সিংহ 

সুন্দরবনের জঙ্গল সংক্রান্ত কোন শব্দ বা শব্দাবলি কেউ যুক্ত করলে কৃতজ্ঞ থাকবো



মুসিটগাজির মন্দির বা মুর্শিদতলার মুর্শিদ গাজী

মুসিটগাজির মন্দির বা মুর্শিদতলার মুর্শিদ গাজী সম্পর্ক বিশ্বজিৎ হালদার, মশাই, এবং সঞ্জয় ঘোষ মহাশয় লেখা পড়ে,মাঘ মাসের পয়লা তারিখটি বেরিয়ে পড়লাম  মেলার উদ্দেশ্যে। 
      বারুইপুর কয়েকটি  সূর্যপুরের স্টেশন , আরো অন্তত তিন-চার কিলোমিটার ভিতরে শেষে একটা মেঠো রাস্তা পেরিয়ে একটু সামনে এগোলেই ঘুড়ির ভরা আকাশের নিচে মাঠের মাঝে একটা মেলা। এখানে একটা ভিটেতে মুর্শিদতলা।  মাঠটির চারিদিক ঘিরে আছে তেউড়হাট, নবগ্রাম, ওলবেড়িয়ার, গোপালপুর গ্রাম। 
লোকজন অসংখ্য মূর্তি মাথায় করে আনছে মুর্শিদতলায়।মুর্শিদ -বনবিবি, গাজি সাহেব মূর্তি। 
 এনাকে বনবিবির ভাই সাজঙ্গলি দেখেছিলেন বিশ্বজিৎ বাবু । যদি সঞ্জয় ঘোষ কথায় এই গাজীর কথা উল্লেখ নেই কোথায়। একে আমি সমর্থন করি কারণ ক্ষেত্র সমীক্ষা সময়, কেউ এই গাজী কোথায় থাকে এসেছেন কেউ বলতে পারলেন না।
বনবিবি-সাজঙ্গলি নিজেরা গাজি বা ধর্মযোদ্ধা এবং দক্ষিণরায়ের সাথে যুদ্ধ হয়। প্রবাদ অনুযায়ী বনবিবি ও দক্ষিণ রায়ের মা নারায়ণীর যুদ্ধ হয়েছিল আর গাজির সাথে দক্ষিণ রায়ের যুদ্ধ হয়েছিল খনিয়ার প্রান্তরে।  আসলে ইসলাম ধর্মের প্রচার আটকাতে দক্ষিণ রায় আর বন বিবির যুদ্ধ হয়েছিল। এখন সব মিশে গেছে মানে এটা সুফিবাদের খুব ভালো প্রভাব।মুর্শিদ আরবি শব্দ যার অর্থ পথপ্রদর্শক" বা শিক্ষক, র-শ-দ মূলধাতু থেকে উদ্ভব বিশেষত সুফিবাদে এটাকে আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক হিসেবে বোঝানো হয়।
      তবে একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন এখানকার মুর্শিদ-গাজি পশুকুলের দেবতা। তবে তার সাথে মানিক পীরের কোনো সম্পর্ক নেই বোধহয়। গবাদি পশু অসুস্থ হলে, গরুর বাছুর ঠিকমতো দুধ না পেলে লোকেরা মানত করেন তাঁর কাছে।  যদিও বর্তমানে মানুষ তাদের অসুখ বিসুখ সাড়া মানত করে। কারণ অন্তত নতুন স্নান ঘাট টি তার প্রমান। 
       মুর্শিদতলার মুর্শিদেরা বড়ো জাগ্রত। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস আজও প্রতিবছর হাজতের আগের দিন রাতে তাঁদের ‘মা বনবিবি মা’ এখানে আসেন। তখন সারা মাঠ তাঁর গাঁয়ের ছটাই আলোকিত হয়ে যায়।  মন্দিরটি আগে মাটির ছিলো। মাটির ঢিবিতে হাজত হতো। যাই হোক, আনুমানিক শতাধিক বছরের এই পুজো । তবে এখন মন্দির টি পাকা।
https://fb.watch/aDKwyv2CqS/

Monday, 17 January 2022

পাঁচু গোপাল , পেচাপেচির পুজা

বারুইপুর নিকটবর্তী সূর্যপুরের দশ কিলোমিটার দূরে একটা গ্রাম আছে, সেই তেউড় গ্রামের মসিদ গাজীর মন্দির দেখতে গিয়ে। আরো একটি লোকসংস্কৃতির নিদর্শন দেখতে পেলাম। পুঁচু ঠাকুর, এখানে উনি পাঁচু। গোপাল নামে পরিচিত হয়েছে। এখানে হরি লুট সাথে ছলন হিসেবে গোপাল ঠাকুর দেওয়া হয়।

এখানে পাঁচু মূর্তি পঞ্চানন প্রভাবিত হলেও নীল রঙের ব্যবহার করা হয়েছে মূর্তি। এর উল্টো দিকে এক মৃত শিল্পী র কর্মশালা। সামান্য দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বিষয় টি। কিভাবে মূর্তি গুলো পরিবর্তন হয়ে যায় তা বুঝতে পেরবেন আপনি ও।
তবে কলিকাতা শহরের কেষ্টপুরে পাঁচু গোপালের মন্দির আছে। পাঁচু গোপালের এই 150 বছরের পুরানো মন্দিরকে স্থানীয় সম্প্রদায় একে পেচো পচি তালা বলে। মন্দিরটি সাধারণত সকাল 8 টা থেকে সন্ধ্যা 6 টা পর্যন্ত খোলা থাকে। নিঃসন্তান মহিলারা এখানে আসেন , পূজা দিতে ভগবান পঞ্চু গোপালকে  আসলে সন্তান জন্মদানকারী ঈশ্বর হিসেবে দেখেন । এ কৃপা পেতে যাতে মহিলারা একটি শিশু গর্ভধারণ করতে পারে।বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে মাঘের 1লা দিনে প্রতি বছর একটি বিশেষ  পূজা অনুষ্ঠিত হয় ।প্রচুর লোক হাজির হয় প্রার্থনা করার জন্য ।
এবার আসি লোক বিশ্বাসের কথায়। গর্ভধারণের সমস্যা হলে মেয়েরা পেচা পেচির থানে আসেন। এবং সন্তান জন্ম হলে। মানসিক অনুসারে পূজা দেন। এবং অনেক সময় অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠান ও এখানে ই করেন তারা।

Sunday, 16 January 2022

কুমীর পূজা

সৈকত রাজ্য এই গোয়াকে খ্রীষ্ট ধর্মের লোকজনের বাসভুমি হিসেবে জানলে ও এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস আছে। এখানে লোকসংস্কৃতি সাথে বাংলার সংস্কৃতি একটা মিল আছে। গোয়ার লোক সংস্কৃতি মানজেম থাপনি ,এই  শব্দের অর্থ হল  যদি বুৎপত্তি করা হয় তাহলে দেখা যাবে মানজেমের অর্থ  কুমির এবং  থাপনি শব্দের অর্থ হল মাটির তাল থেকে তৈরি । মাটি দিয়ে এখানে তৈরি করা হয় কুমীর এবং সেই টিকে পূজা করা হয়।এই পুজো করা  হয় পৌষ মাসে, তাঁদের গ্রামকে রক্ষা করার জন্য , ভালো ফসল আর।মাছ উৎপাদনের জন্য। 
এবার আসি সুন্দর বনের কথা, কালু রায় কুমীর দেবতা। চড়ক পূজা তে ঠিক এইভাবে মাটির কুমির পূজা হয়। তবে উত্তর ২৪ পরগনা আর নদীয়া জেলাতে কুমির পূজা হয় বাস্তু পূজা হিসেবে। তবে লোক সংস্কৃতি উৎসব বলা চলে একে। গান গেয়ে ভিক্ষা করে পূজা সামগ্রী সংগ্রহ করে পূজা করা হয়। যদিও এই লোক সংস্কৃতি উৎসব টি হারিয়ে যাওয়া । 
মকর অর্থ হলো কুমীর। দুই পরগনায় বাস্তু পূজা করা হয়। বলা হয় বাস্তু দেবতার বাহন মকর। বাস্তু দেবতা সংক্রান্তিতে পূজা পান। বাস্তু পূজা মা লক্ষ্মী পূজা হয়। দেবতার বাহন কুমির এর মাটির মূর্তি গড়ে তাকে পূজা দেওয়া হয়। পূজার পর তাকে বধ করা হয় বা মস্তক ছেদন করা রিতি আছে । এটা একটা লোক সংস্কৃতির অঙ্গ । গ্রামের ছেলে ছোকরা গান গেয়ে চাল ডাল সংগ্রহ করে ভোগ হয়। আমার এক বন্ধুর গ্রামের পূজা ছবি দিলাম।  

যদিও কেউ কেউ বলছেন।মোকর অর্থ কুমীর নয়। মোকর অর্থ শুশুক। তা আজ কুমীরে পরিণত হয়েছে। দুর্গার বাহন হিসেবে যেমন সিংহ না দেখার কারণে ঘোড়ার মতন এক জানোয়ার এককালের কুমোররা বানাতেন, ঠিক তেমনি শুশুক না চেনার ফলে কুমীর বানানো হয়।

Saturday, 8 January 2022

আল্লাদী পুতুল

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের রাজনগরের মৃৎশিল্পীরা একসময় তৈরি করতেন কাঁচা মাটির আহ্লাদী পুতুল। এখন নেই। যতদূর জানি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর-মজিলপুরের বিখ্যাত শিল্পী ছিলেন মন্মথ দাস। তিনি যদিও এই অঞ্চলে এক নিজস্ব ঘরানায় পুতুল তৈরি শুরু করেছিলেন। তাঁর পৌত্র শম্ভুনাথ দাস এখনও পোড়ামাটির রঙিন পুতুল বানিয়ে থাকেন। আগে মজিলপুরে টেপা পুতুল পাওয়া যেত, তবে বর্তমানে এখানকার পুতুলগুলো এক-খোল আর দু-খোল ছাঁচে প্রস্তুত করা।  এখানে মজিলপুরে নানা বিষয়ের পুতুল পাওয়া যায়, পাওয়া যায় আহ্লাদ-আহ্লাদী পুতুল ও।
তবে একটি বিশেষ পুতুল কে আহ্লাদী পুতুল কেন বলা হয় জানি না।আহ্লাদি পুতুল মানে যে পুতুলগুলো সত্যি বেশি আহ্লাদি  কিনা তা জানি না। কিন্তু  সব পুতুলই   আহ্লাদে কে মন ভুলিয়ে আমাদের রেখেছে যুগের পর যুগ ধরে তা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়

Monday, 3 January 2022

মূর্তি ও পুতুল

গোছানো মানুষ না আমি। বলতে পারেন চঞ্চল নদীর মতো। আমার লেখা ছন্ন ছাড়া নিজের গতি এবং মর্জিনুসারে চলি। কিছু দিন ধরে কিছু জ্ঞানি গুনী মানুষ আমাকে একটু গোছাতে বলছেন। তাঁরা ভালো বাসেন আমি তাই  বলছেন আমার ছড়ানো ছেটানো লেখা নিয়ে কয়েকটি বই প্রকাশিত করতে। বিষয় পুতুল আর দারুবিগ্রহ। দারুন বিগ্রহ মানে গোদা বাংলায় কাঠের মূর্তি। যাইহোক মোদা কথা পুতুল আর মূর্তি। হঠাৎ তাই মনে র মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে আচ্ছা #পুতুল আর #মূর্তি র মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
আচ্ছা অ্যানিকোনিজম বা ইব্রাহিমীয় ধর্মের লোক জন মূর্তি পূজা বিরোধী আপনার জানেন। কিন্তু জানেন কি হিন্দু ধর্মের এক সময় মূর্তি পূজা হতো না?
গ্রিক শব্দ  "এইদলন" যার অর্থ ছবি বা পুতুল এবং লাত্রেইয়া শব্দের অর্থ পূজা"। "এইদললাত্রিয়া" শব্দের অর্থ এইভাবে "মূর্তির পূজা"। এই থেকে  এটা বলতে  প্যালিওলিথিক যুগে অর্থাৎ যিশু খ্রীষ্ট জন্মের চার হাজার বছর আগে মিশর গ্রীক মূর্তি পূজা চালু হয়েছে। তবে সিন্ধু সভ্যতাতে মূর্তি পূজা হতো।প্রকৃতির প্রতীক, উপকারী প্রাণী বা ভীত প্রাণী উভয়ই তখন পূজিত হতো । গ্রীক রা বোধহয় মানুষ রূপে ঈশ্বর পূজা শুরু করে।
হিন্দুধর্মের বৈদিক সাহিত্য সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ রচনা হয়েছে১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দতে। কিন্তু সেখানে মন্দিরের কোন উল্লেখ নেই বা তাদের মধ্যে ধর্মানুষ্ঠান (অর্চনা)-এ ছবি বা মূর্তি পূজা নেই। পাঠ্য প্রমাণের বাইরে, প্রাচীন ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলিতে এখনও খুব প্রাচীন কোন মন্দির আবিষ্কৃত হয়নি।
 প্রথম দিকের বৌদ্ধ ও জৈন (খ্রিষ্টপূর্ব ২০০) ঐতিহ্য একইভাবে মূর্তিপূজার কোন প্রমাণ দেয় না। বৈদিক সাহিত্যে অনেক দেব -দেবীর উল্লেখ রয়েছে, সেইসাথে হোম বা আগুন ব্যবহার করে ভোটদানের অনুষ্ঠান কথা বলা হলেও কিন্তু এতে ছবি বা তাদের পূজার উল্লেখ নেই। এমনকি প্রাচীন বৌদ্ধ, হিন্দু ও জৈন গ্রন্থে অস্তিত্বের প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, ঋগ্বেদের নাসাদীয় সুক্তের মতো স্রষ্টা দেবতা আছে কি নেই, তারা ধ্যানের বর্ণনা দেয়, তারা সাধারণ সন্ন্যাসী জীবনযাপনের সুপারিশ করে এবং .স্ব-জ্ঞান, তারা ব্রহ্ম বা সুনয়তা হিসাবে পরম বাস্তবতার প্রকৃতি নিয়ে বিতর্ক করে, তবুও প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে ছবিগুলির ব্যবহার উল্লেখ নেই।প্রাচীনকালে ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্বকারী বিগ্রহ, মূর্তি বা চিত্রের কোন প্রমাণ নেই" ভারতের ধর্ম। ভারতীয় ধর্মের মধ্যে মূর্তিপূজা পরে বিকশিত হয়।
তাই শিশু কালে মথুরায় চলে যাওয়া শ্রীকৃষ্ণের, রাধার  প্রেম লীলা বিগ্রহ আমরা দেখতে পাই। পতিপরমেশ্বরের গায়ে পা লাগায় জীহ্বা বের করা মা কালিকে দেখতে পাই। আসলে আমরা আমাদের প্রয়োজন মূর্তি তৈরি করেছি। তবে অতীত ভারত পাথর খন্ড কে পূজা করতো যেটি এখনো লোকসংস্কৃতি র অংশ।
ছবি - বাপ্পা পাইক ও সুপ্রান্তিকা