ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ ভারতে কার্তিকের পূজা অধিক জনপ্রিয়।কার্তিকেয় বা কার্তিক হিন্দু যুদ্ধদেবতা। তিনি শিব ও পার্বতীর সন্তান। তিনি পৌরাণিক দেবতা। প্রাচীন ভারতে সব জয়গায় কার্তিক পূজা প্রচলিত ছিল। কার্তিক কিন্তু কুমার নয়।ভগবান কার্তিকের স্ত্রী হলেন দেবসেনা ও বালি(বল্লী)। সুরাপদ্মনকে বধ করার পর দেবরাজ ইন্দ্র নিজ কন্যা দেবসেনার সঙ্গে কার্তিকের বিয়ে দেন। পরে নম্বিরাজের কন্যা বালি-র সঙ্গে কার্তিকের বিয়ে হয়।
বাংলা য় ধারণা আছে,কার্তিক ঠাকুরের তার কৃপা পেলে পুত্রলাভ , ধনলাভ হয় ৷সেজন্য বিয়ে হয়েছে কিন্তুু এখনও সন্তান হয় নি এমন দম্পতির বাড়ির সামনে কার্তিক ঠাকুরের মূর্তি ফেলা হয় ।সুঠাম গড়নের ল্যাংটো কাটোয়ার কার্তিক লড়াই খুব বিখ্যাত। কাটোয়ার কার্তিক পুজো বিখ্যাত , এখানে এক পুজোর সঙ্গে অন্য পুজোর প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কার্তিক লড়াই বলে।
বাংলা মাসগুলির মধ্যে একমাত্র কার্তিক মাস বাদ দিয়ে আরও কোনও মাসের নাম কোনও দেবতার নামে উৎসর্গ করা হয়নি। হেমন্তকালের মাস কার্তিকই ছিল প্রাচীনবাংলার সমাজে বছরের প্রথম মাস এবং লক্ষ্মীর পাশাপাশি কার্তিকই ছিলেন প্রধান দেবতা। এই কার্তিক কিন্তু মা দুর্গার সন্তানরূপে পূজিত কার্তিক নন, বরং প্রজনন ও কৃষির দেবতা তথা রাঢ়দেশীয় কৃষিসংস্কৃতির প্রধান প্রতিভূ। তাই রাঢ়বঙ্গে অঘ্রান মাসে নবান্নের প্রধান দেবতাও কার্তিক ।
অঘ্রান মাসেই বাঙালি চাষির ঘরে থাকত ফসলের প্রাচুর্য, তাই মুঘল আমলে পয়লা অঘ্রান ছিল বাঙালি নববর্ষ। মূলত কৃষিপ্রধান ও নদীতীরবর্তী অঞ্চল শস্য উৎপাদনে শ্রেষ্ঠ হয় বলেই গঙ্গা তীরবর্তী কাটোয়া, পূর্বস্থলী ও বাঁশবেড়িয়া অঞ্চলে আদিকাল থেকে কার্তিক পূজার খ্যাতি দেখা যায়।
কাটোয়া মহকুমার গ্রামাঞ্চলে কৃষিদেবতা রূপে পূজিত হলেও শহর কাটোয়ার সঙ্গে কার্তিক জড়িয়ে আছেন বণিক ও বারবনিতাদের সম্মিলিত প্রয়াসের সঙ্গে। এক সময় কাটোয়া একটা সমৃদ্ধ শহর ছিলো।ফুর্তির জন্যও প্রচুর রক্ষিতা থাকত। আর তৎকালীন কাটোয়া ছিল কিছু অঞ্চল বন আর কিছু অংশ কৃষিক্ষেত অঞ্চল। তাই ভাগীরথী তীরে সেই বারবণিতাদের অন্ধকার জীবনে একটা আশ্রয় খুঁজতে তারা তাদের প্রিয় বাবুদের কাছে বায়না করে সন্তানলাভের জন্য। যদিও সমাজব্যবস্থায় গণিকার সন্তানকে কেউ মেনে নেয় না। বাবুরা নিষিদ্ধপল্লিতে কার্তিক পুজোর আয়োজন করে। কার্তিক এমনিতেই প্রজননের দেবতা, প্রাচীনকালে নিষিদ্ধপল্লিতে তাঁর পুজোও হত। কাটোয়ার নিষিদ্ধপল্লির সেই গণিকাদের বাসনার ঠাকুর নেংটো কার্তিক বা অনেকে বলেন খোকা কার্তিক ক্রমেই জনপ্রিয়তা লাভ করে।
কাটোয়া মহকুমার কার্তিক মূলত ন্যাংটা কার্তিক বা খোকা কার্তিক,। একজন শিশুকে ভুলিয়ে রাখার মতো এই কার্তিককে পূজায় দিতে হয় বিভিন্ন ধরণের খেলনা, বেলুন, মোয়া, কদমা, লাড্ডু। মানতকারী মানুষের শিশুলাভের কামনা থেকেই এই উপকরণগুলিকে পূজায় উঠে এসেছে বলে মনে করা হয়।
সাবেক কার্তিক লড়াই ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে থিমের লড়াইয়ের। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে শহর ও শহরতলি জুড়ে তৈরি হচ্ছে দেবসেনাপতির মণ্ডপ। প্রতি বছরই বাজেট বাড়ছে পুজো কমিটিগুলির, বাড়ছে আড়ম্বর।
কে কত ভালো থিম করতে পারে তা নিয়ে রীতিমত যুদ্ধ চলছে। আর তাতেই উঠে আসছে নিত্যনতুন বিষয় ভাবনা। বড় পুজোগুলি যেখানে বাইরে থেকে থিমের মণ্ডপ আনছে, ছোট পুজো স্বল্প খরচে বানিয়ে ফেলছে নিজেদের থিম। কেউ কাউকে জায়গা ছাড়তে রাজি নয় ।
No comments:
Post a Comment