Saturday, 20 November 2021

কাঠালিয়া পুতুল

মুর্শিদাবাদের কাঠালিয়াতে পুতুলের মুখ তৈরি হয় ছাঁচে, দেহ তৈরি হয় কুমোরের চাকে। খড়ির সঙ্গে অভ্র মিশিয়ে চকচকে করা হয় পুতুলগুলি। তারপর রোদে শুকিয়ে লাল-কালো ডোরাকাটা রঙ করা হয়। চোখ মুখ আঁকা হয়।কাঁঠালিয়ার কুমোরেরা তৈরি করেন গ্রাম জীবনের অন্দরমহলের নানা দৃশ্য,যেমন-জাঁতা পেশাইরত মহিলা,গয়লানি,খোঁপা বাঁধা ইত্যাদি। এই সব পুতুলের দেহটা নির্মিত হয় চাকে, মুখটা তৈরি হয় ছাঁচে,হাত-পা ও অন্যান্য অংশ তৈরি হয় হাতে।



বাংলা র শৈশব একটা নিজেস্য বৈশিষ্ট্য ছিলো আগে , খেলানাতেও ছিলো শিল্পের ছোয়া । যেমন টেপা পুতুল।মাটি দিয়ে কুমোরর তৈরি একটি উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম হলো টেপা পুতুল। নরম এঁটেল মাটি দিয়ে হাতের নৈপুণ্য হাত দিয়ে টিপে তৈরি করে বলে এ পুতুলকে টেপা পুতুল বলে।  মাটির বুটি দিয়ে বা কাঠির রেখা টেনে এ পুতুলের অলংকার ও পোশাকের আভাস ফুটিয়ে তোলা হয়। পরে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। শুকানো হয়ে গেলে পোড়ানো হয় আগুনে।


সাধারণত বাচ্চাদের খেলনাসামগ্রী হিসেবে টেপা পুতুল বানানো হয়। উল্লেখযোগ্য কিছু খেলনা পুতুল হলো বউ-জামাই, কৃষক, নথ পরা বউ। শৌখিন ব্যক্তিরা গৃহসজ্জার জন্য এ পুতুল সাজিয়ে রাখেন। গ্রামবাংলার মেলায় টেপা পুতুলের দেখা মেলে এখনো। বর্তমানে শহুরে মেলায়ও এ পুতুল দেখা যায়।পুতুল। ছাঁচে ফেলে পুতুল সাথে এর পার্থক্য আছে হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞানের মাধ্যমে টিপে টিপে এই পুতুল তৈরি হয় এটি।টেপা পুতুল বাংলার ঐতিহ্যের একটি অংশ। কবে, কোথায় এ পুতুল বানানাে শুরু হয়েছে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে মূলত মেয়েরাই টেপা পুতুল তৈরি করতো প্রথম দিকে। পুতুলের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হাতের সাহায্যেই গড়ে তােলা হয় মাটি দিয়ে।


এখন এই ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে? একটা কারণ, চাহিদা কমেছে। শৌখিন পুতুলের সঙ্গে লড়াইয়ে অনেক দিন ধরে হারছে মাটির পুতুল। মেলা, হাটে রমরমা কমেছে। সেখানে মাটির পুতুলের চাহিদা প্রায় নেই বললেই চলে। মাটিরও অভাব। এখন মাটি কিনতে হয়। দাম বেশি পড়ে। শুধু পুতুল নয়, মাটির তৈরি অন্য জিনিসপত্রের চাহিদা কমেছে। মুর্শিদাবাদের হাতে টেপা পুতুল বেশ জনপ্রিয়৷ প্রথমে পুতুল তৈরির মাটিটা তৈরি করে তাকে হাত দিয়ে প্রয়োজনমতো নানান আকার দেওয়া হয়৷ আঙ্গুলের সাহায্যে লম্বা গোল নানান শেপ তৈরি করা হয়৷ মুর্শিদাবাদের কাঁঠালিয়া, পাঁচমোরাতে এই হাতে টেপা পুতুল তৈরি করা হয়৷ এইসব পুতুলে উঠে আসে গ্রামীণ সমাজ জীবনের চিত্র৷
এটি বাংলার সব থেকে প্রাচীন পুতুল বলে দাবি করতে পারেন। রাজা শশাঙ্ক এর সময় থেকে তৈরি হতো এই পুতুল। কারণ কর্নসুবর্ণথেকে এরকম পুতুল পাওয়া গেছিলো। তাইরাজা শশাঙ্কের আমল থেকেই এই পুতুলের আবির্ভাব বলে অনেকে মনে করেন । তবে  রাজা শশাঙ্কও পোড়া মাটির পুতুল কে সংস্কৃতির একটি অঙ্গ হিসেবে মনে করেছিলেন কারণ শুধু মাটির পুতুল নয় , মাটির বাসন , এছাড়াও সেই সময়ে অনেক বড় বড় প্রসাদ , মন্দির গাত্রেও পোড়ামাটির কাজ দেখতে পাওয়া যায় । তিনি মৃৎ শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে ছিলেন।
তাই এই পুতুলকে প্রাচীন কালের ঘরানা বলে মনে করা যেতেই পারে।


    কাঠালিয়া পুতুলে সমজের বিভিন্ন চরিত্রকে খুঁজে পাওয়া যায় । যেমন গোয়ালিনী , সন্তান কোলে এক মা , মেয়েদের একে ওপরের মাথার উকুন বাছা, বাচ্চাকে পায়ে শুইয়ে তেল মাখানো , দারোগা বাবু ,আরো বিভিন্ন রকমের ।

   


No comments:

Post a Comment