Tuesday, 23 November 2021

হরিনাভি

আদি গঙ্গা নিয়ে কথা বলতে গেলে  দেখবেন  ষোলো শতাব্দী পর্যন্ত এর গর্ব বজায় ছিলো ধরে নেওয়া যেতে পারে। কালিঘাট বোড়াল, রাজপুর, হরিণাভি, মাহীনগর, বারুইপুর, বাহারু, জয়নগর, মজিলপুর, ছত্রভোগ ইত্যাদি পাঁচ শত বছরের পুরনো জনপদ এদাবিও করতে পারি। বিপ্রদাস পিপিলাইএর মনসবিজয়, 1495 সালে রচিত, এই অঞ্চলে অনেক জায়গার উল্লেখ করেছে। “চাঁদ সদাগর, এর বণিক চরিত্র মনসবিজয়পুরাতন ভাগীরথী এই শাখা  হয়ে কালীঘাট থেকে বারুইপুর পৌঁছেছিল। সেখান থেকে তিনি ছত্রভোগের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং তারপরে হাতিগড় পরগনা হয়ে খোলা সমুদ্রে পৌঁছে গেলেন। ” চৈতন্যদেব (1486-1534) এই পথ দিয়ে গেছে। নৌকায় ভ্রমণ পুরী তিনি বারুইপুরের নিকটবর্তী আতিসারা গ্রামে থামেন। "তার শেষ স্টপেজ 24 পরগনা ছত্রভোগে ছিল, এখন এই শহরটির অধীনে একটি গ্রাম মথুরাপুর থানা পুরানো ভাগীরথী নদীর তীরে ছত্রভোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ নদ-বন্দর ছিল বলে মনে হয়। "রমা চন্দ্র খান, দ্য জমিদার ছত্রভোগের চৈতন্যদেবকে তাঁর যাত্রা চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন।

কলকাতার দক্ষিণে ২৪ পরগণার অন্তর্গত হরিনাভী গ্রামে অবস্থিত ঘোষেদের জমিদার বাড়ী। ষ
হরিনাভী অঞ্চলটি সেইসময়ের "মদন মল্ল" পরগণার অন্তর্গত ছিল। মদন রায় ছিলেন মহারাজ প্রতাপাদিত্যর ঢালি ও সেনানায়ক।  মহারাজ প্রতাপাদিত্যর মোঘলদের কাছে পরাজয়ের পরে মদন রায় এই গ্রাম গড়ে তোলেন। নাভি পর্যন্ত প্রোথিত কষ্টি পাথরের বিষ্ণু মূর্তি পাওয়া যায় এই গ্রাম থেকে তাই এই গ্রামের নাম হয় হরিনাভী।    

১৭৫২ সালে শ্রী রামচন্দ্র ঘোষ হরিনাভী গ্রামের কিছু জায়গা কিনে নেন কলকাতার সিংহ পরিবারের কাছ থেকে। তাঁর পুত্র হরমোহন ঘোষ বর্তমান দূর্গামন্ডপ সহ বসতবাড়ি তৈরি করেন এবং পৌত্র নবীনচন্দ্র ঘোষ ১৬টি স্তম্ভ সহ নাটমন্দির তৈরি করেন। এরপরেই শুরু হয় রাসের মেলা, তাই লোকমুখে এটি রাসবাড়ি নামে পরিচিতি পায়। এই রাসবাড়ির নিকটেই অবস্থিত দূর্গাদালান। তবে আজ তার শোচনীয় অবস্থা দেখে সত্যিই কষ্ট হয়। নবীন ঘোষের আমলে গৃহদেবতা গোপীনাথ জিউ ও রাধাকে বসিয়ে রথ যাত্রার সূচনা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৩৭ সালে একটি লোহার রথ তৈরি করেন হীরালাল ঘোষ ও সেই রথ টানার জন্য ৩০ জন লোকের প্রয়োজন হত। তবে বর্তমানে সেই রথ রাসবাড়ির সামনেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।         
      
 বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের হরিনাভীর সাথে বেশ স্মৃতি জড়িয়ে আছে। হরিনাভী স্কুলে তিনি ১৯২০ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। এখানে তিনি মাত্র ২ বছর শিক্ষকতা করেন। এখানে থাকাকালীন তাঁর সাহিত্যিক প্রতিভার বিকাশ ঘটে। প্রথমদিকে তিনি হরিনাভীর কাছেই রাজপুরে থাকতেন। তাঁর বাড়ির কাছেই ছিল একটি বকুল গাছ। মাঝে মাঝেই এই গাছের তলায় তাঁর সময় কেটেছে। "পথের পাঁচালি" থেকে "চাঁদের পাহাড়" অনেক গল্পের পটভূমিই  এই হরিনাভী গ্রাম। 

1 comment: