পরিব্রাজক গবেষক সায়ন রায়ের সংগ্রহ এর চীনা মাটির প্রদীপ, রুই মাছ দেখে মনে পরে গেলো , বাংলায় একসময় চীনামাটির পুতুল তৈরি হতো খুব। পুতুল আসলে কি পরিস্কার করে বলে নেওয়া উচিত।পুতুল কখনও মানুষের চেহারার কাছাকাছি আবার কখন কোনো পশুর চেহারার অনুকরণে হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে বৃহত্তর দৃষ্টিতে মাটি, কাঠ, মোম, প্লাস্টিকের বানানো পশুপাখি থেকে ফল, গাছ সব কিছুকেই পুতুলের শ্রেণিভুক্ত করা যায়।
এবার চীনা মাটির পুতুল এর কথা য় আসা যাক। চীনা মাটির নাম থেকে ই বোধহয় বুঝতে পরেন এটি বাংলার মাটি নয়। চীনামাটির সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয়।চীনারা সর্বপ্রথম মাটি দিয়ে পাত্র তৈরি করে। এটি একটি সাদা মাটি আর এ কারণেই এ মাটিকে চীনামাটি নামে নামকরণ করা হয়। তবে ক্যাওলিং টিলা থেকে সংগ্রহ করার জন্য কোথাও কোথাও এটি ক্যাওলিন বলা হয় । চীনামাটি হচ্ছে বিশেষ ধরনের মাটি, যা বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। এই মাটিতে আছে ৪৬ শতাংশ বালু, ৪০ শতাংশ অ্যালুমিনা ও ১৪ শতাংশ জল থেকে।
উচ্চ তাপে আগুনে পোড়ালে চীনামাটি সাদা, মসৃণ ও চকচকে হয়। এ বৈশিষ্ট্যের জন্যই এ মাটি দিয়ে কাপ, প্লেট, বাটি ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং দক্ষিণ আমেরিকার খনি থেকে প্রচুর পরিমাণে চীনামাটি সংগ্রহ করা হয়। পশ্চিম ইংল্যান্ডে কর্নওয়ালে ও পশ্চিম ডেভনে চীনামাটির পলি তলানি পাওয়া যায়। এ জন্য এসব এলাকায় নানা ধরনের মৃৎশিল্প গড়ে উঠেছে। মৃৎশিল্প বা মাটির তৈরি শিল্পের পাশাপাশি চীনামাটি কাগজ, রাবার, রঙ, প্রসাধনসামগ্রী ইত্যাদি তৈরিতেও ব্যবহার করা যায়।
তবে এই মাটির ও একটা ইতিহাস আছে। মনে হয় সুকুমার রায়ের কোন প্রবন্ধে পড়ে ছিলাম।দশ হাজার বৎসর আগে মিশরে মাটির বাসন তৈরি হত, তাহ্ সুন্দর সুন্দর দেখতে ছিলো। বাসনগুলি সমস্তই হাতে গড়া, কারণ, কুমারের চাকে মাটি গড়িবার কায়দা সে সময়ে জানা ছিল না। কিন্তু এ কাজে তাহাদের হাত এমন সাফাই ছিল যে, বড় বড় জালার মতো পাত্রগুলির গড়নেও কোথাও খুঁত ধরিবার যো ছিলো। বড় বড় জাহাজী নৌকা করিয়া এক সকল বাসন দেশ-বিদেশে রপ্তানি ও হতো । বাসনগুলির উপর চকচকে কালো পালিশ থাকিত, তার গায়ে সাদা রঙের কারুকার্য করা থাকতো।
মাটির বাসন নানারকমের। আমাদের দেশে সাধারণ 'মেটে বাসন' যা অল্প আঁচে পুড়িয়ে তৈরি হতো। গেলাস, ভাঁড়, সরা, মালসা আরম্ভ করে কুঁজা, জালা পর্যন্ত ভারতবর্ষের প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায় এখনো। কিন্তু 'সাধারণ মাটির' জিনিসও যে কত সুন্দর হইতে পারে, তাই নিয়ে ই আমাদের চর্চা।
আর একরকম মাটির জিনিস হয় ভারতে, তাহাকে পাথুরে মাটি বলা যায়। এগুলোকে কড়া আগুনে পোড়ালে পাথরের মতো মজবুত হয় এবং তাহাকে অসংখ্য প্রকার দরকারী কাজে লাগান যায়। বাড়ি বানাইবার টালি, ড্রেনের পাইপ, নানারূপ খেলনা প্রভৃতি কত জিনিস তৈয়ারি হয়। তাহাতে আবার নানারকম রং দেওয়া ও ইচ্ছামত পালিশ ধরান চলে।
সাদা মাটির বাসন কথায় আসি এবার চীনে মাটির বাসন এক সময়ে কেবল চীন দেশেই ত পাওয়া যেতো। প্রায় সাত শত বৎসর আগে মুসলমান সম্রাট সালাদিনের কাছে চীন সম্রাট কতগুলো উপহার পাঠিয়েছিলেন, তাহার মধ্যে কতগুলা চীনা মাটির বাসন ছিল। তেমন বাসন কেউ চোখে দেখেননি। পাতলা ঝিনুকের মতো স্বচ্ছ, ডিমের খোলার মতো হালকা, সে আশ্চর্য বাসনের কথা চারিদিকে রটে গেল।
গ্রীস প্রভৃতি দেশে এক সময়ে অতি সুন্দর মাটির ঘড়া ও ফুলদানি তৈয়ারি হইত কিন্তু গ্রীক ও রোমান সাম্রাজ্য ধ্বংস হইবার পর এই শিল্প নষ্ট হইয়া যায়। এই সময় আবার দক্ষিণ ইউরোপে, বিশেষত ইটালিতে নানারূপ শিল্পের বাসন তৈরি আগ্রহ দেখা দিতে থাকলো। তখনও তাহারা চীনা মাটি গড়িতে পারে নি কিন্তু মাটির উপর সাদা পালিশ চড়াইয়া তাহার চমৎকার নকল করেছিলেন। বহুদিন পর্যন্ত এই ব্যবসায় ইটালির একচেটিয়া ছিল। যাহাদের চেষ্টায় ও যত্নে এই শিল্পের ব্যবসা ইউরোপের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তাদের মধ্যে প্যালিসির নাম বিশেষভাবে করা যায়।
তাই সাত কান্ড রামায়ণ বলে যেটা প্রমান করতে চাইছিলাম, বাংলার হস্তশিল্প ও সংস্কৃতি কৃতিত্ব এটাই যে এই চীনা মাটি দিয়ে বাংলার শিল্পী রাত কিন্তু গেয়ে তুললো নানা ধরনের পুতুল। যা একটি শৈল্পিক নিদর্শন। সবচেয়ে বড় কথা যা আবার বাংলার সংস্কৃতি প্রতীক, যেমন বাঙালি র প্রিয় মাছ রুই, ভুড়িওয়ালা বৈষ্ণব, না খেতে পাওয়া রাগা শিব ঠাকুর।
চীনামাটির পাত্র বা পতুল তৈরি সহ কাজ নয়। চীনামাটির পুতুল তৈরির জন্য প্রথমে কোয়ার্টজ ও ফেলসপার চূর্ণ চীনামাটির সাথে মেশাতে হয়। পরে জল দিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়। সে মণ্ড থেকে তৈরি হয় নানা ধরনের মৃৎপাত্র বা পুতুল এর আকার দিতে হয়। এরপর পাত্রগুলো শুকানোর পর ১৩০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় পোড়ানো হয়। এরপর সেগুলোতে দেয়া হয় কাচের প্রলেপ; সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের রঙ ব্যবহার করে নকশাও করা হয়। এভাবেই চীনামাটি থেকে পাওয়া যায় বিভিন্ন দ্রব্য মানে পুতুল বাসন পত্র। এগুলো বেশ জনপ্রিয় এখনো।
Nice work
ReplyDelete